লালসা-প্রেম মিলেমিশে একাকার, চোখের সামনে খোলা নরকের দ্বার... জোছ্নালোকে সহস্রফালী শুভ্র স্মৃতির উন্মোলিত জাগরনে ভাটা না পড়তেই আমার পরিজন প্রিয় সাদা লোকটি আজ অন্যলোকে।
গত মঙ্গলবার সকাল আটটার সময় আমার নানা মোহাম্মদ আব্দুল হাই প্রধান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্ন----------রাজিউন) । তিনি গত ৩ বছর আগে গ্রামের বাড়িতে (গফরগাঁও এ) একটি শালিস/দরবারে প্রধান অতিথি হিসেবে গিয়েছিলেন। সেখানে হঠাৎ মাথা ঘোড়ে পরে যান। পরদিন আমাদের কাছে (বরমীতে) নিয়ে আসা হয়।
এপোলো হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে এম.আর আই করার পর জানতে পারি যে, দুই চোখের রক্তনালির সংযোগ স্থলে টিউমান হয়েছে। এর পর থেকে ধিরে ধিরে চোখে দৃষ্টি কমে যেতে থাকে । আমার বাবা মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম ১২ থেকে ১৫ জন দেশী-বিদেশী ডাক্তারদের নিয়ে একটি মিটিং করেন। তারা সবাই এক মত হয় যে এই ব্রেন টিউমান অপারেশনে বাচার সম্ভাবনা মাত্র ৩ % এবং ৯৭ % সম্ভাবনা মারা যাওযার।
আমার বাবা মালয়শিয়ার ডি.এক্স.এস কম্পানীর তৈরি দুটি ঔষধ যা মাসরুম এর নির্জাস দিয়ে তৈরি হয়েছে তার একটির নাম REISHI GANO (RS) অন্যটি এই মুহুর্তে মনে পরছেনা।
এই দুটি খাওয়াতে থাকে। কিছু দিন পর আমার বড় ভাই সামুর ব্লগার মোঃহেমায়েত উল্লাহ শুভ ডাঃ আলী আহমদ নামে এক ডাক্তারের সন্ধান দেন যিনি হোমিও চিকিংসা দিয়ে থাকেন। এই ডাক্তারের চিকিংসায় ৩ দিনেই পরিবর্তন দেখা দেয়। নানা ধিরে ধিরে পরিস্কার দেখতে শুরু করেন এবং মাথা ব্যথাও আগের চেয়ে কম হয়।
এভাবে ৫ মাস যাওয়ার পর নানা অন্য কারো সাহায্য ছাড়াই বাজারে যাওয়া, নিজে নিজে খাওয়া সহ সাধারন কাজ করতে পারত কিন্তু একেবারে ভাল হয়ে যায়নি ।
ডাক্তার বলেছিল ৩ বছরে ঔষধ খেলে একেবারে শুস্থ হয়ে যাবেন।
কিন্তু আমার নানা নিয়ম অমান্য করলেন। তিনি ধুমপান করা শুরু করলেন। দেখা গেল দিনে ৮-১০ টা সিগারেট শেষ হয়ে যায়। আবার সেই একই অবস্থায় ফিরে যায়।
একেবারে অন্ধ তারপর মাথা ব্যাথা। অনেক ডাক্তার দেখানো হয়েছে কিন্তু কোন লাভ হযনি।
দির্ঘ দেরটি বছর অর্বননিয়-অকল্পনিয় যন্ত্রনা সহ্য করেছেন। তিনি আমাদের সামনে ধিরে ধিরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়েছেন অথচ আমাদের যেন কিছুই করার ছিলনা।
যিনি সকাল হলে বাড়ীর সবাইকে ডেকে তুলে সবাইকে একসাথে নিয়ে নামাজ পড়তেন, কাজ করতেন তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে পায়খানা পশ্রাব করেছেন।
যিনি প্রতি মাসে আমাদের বাড়ীতে এসে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সবার নাম ধরে ডাকতে পরম স্নেহভরা কন্ঠে তিনি বিছানায় শুয়ে শুয়ে কেঁদেছেন, কখনো বা নির্বাক চেয়ে ছিলেন আমার দিয়ে, ভাইয়ার মুখের দিকে। জীবনের অনেক মজার সময় কাটিয়েছি আমার নানার সাথে। বয়স হযেছিল ৬৯ কিন্তু দেখে যে কেউ বলত মাত্র ৪৫ বছর বয়স হবে।
আজ তিনি নেই কিন্তু রয়ে গেছে তাঁর অসংখ্য স্মৃতি। যখন নানার বযস ১১ বছর তখন তিনি একটি মকতব (মাদ্রাসা) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যা এখনো আছে।
তিনি গ্রামের অনেকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করেছেন প্রয়োজনে নিজের অর্থ ব্যায় করে। যে কোন সমস্যার সমাধান এমন নিখুদ ভাবে করতেন সবাই আশ্চাযান্নিত না হয়ে পারতনা। একবার এক ডাকাত আমার নানাকে বুমা মেরে মারা জন্য রাতে এসেছিল। জনতার হাতে ধরা পরলে জনতা মেরে ফেরতে চায়। কিন্তু নানা সবাইকে অনুরুধ করে ২দিন পর্যন্ত বাচিয়ে রাখতে পেরেছিল।
প্রতি দিন মুরগীর গোসত দিয়ে খাইয়ে ছিল।
প্রায় ২২ একর সম্পদের মালিক হয়েও সাদামাটা জীবন যাপন করতেন। থাকতে হয়েছে সারাটি জীবন সম্পুর্ন একা। নিজের অতি আপন জনেরা অনেক কষ্ট দিয়েছে আমার নানাকে কিন্তু কোনদিন কোন প্রতিবাদ করেননি। শুধু নিরবে কেঁদেছেন।
মৃত্যুর পূর্ব মৃহুর্তেও চোখ বেয়ে পানি ঝরেছে অঝোর ধারায়। কিন্তু কেউ কি বুঝতে পেরেছে এই কান্নার মানে??? হাজার হলেও নিজের পারিবারিক কথা, গোপন রাখতেই হচ্ছে। কিন্তু বুকে চেপে রাখা আগুন ও যন্ত্রনাটা ধরেও রাখতে পারছিনা। আমি শুধু এটুকুই বলব আমি তাদের কাউকে কখনো ক্ষমা করব না। আমার কাছে চির দিন তারা খুনি-অপরাধী হয়ে থাকবে।
গতকাল গ্রামের বাড়ীতে নানার সেই মাদ্রাসায় মিলাদ/দুআ করানো হযেছে। আজকে আমাদের বাড়ীতে ছোট করে মিলাম/দুআ করানো হয়েছে। ঈদের পর বড় করে দুআর করানো হবে সমস্ত গ্রাম বাসী নিয়ে। আমি ও ভাইয়া মোঃ হেমায়েতুল্লাহ থাকতে পারব কিনা জানি না।
কারন আমি এখনো বিশ্বাস করি, এইতো আগামীকার নানা আসবে।
আমার নাম ধরে ডাকবে....। ভাইয়ার নাম ধরে ডাকবে....। আমরা দৌরে যাব, বুকের সাথে বুক মেলাব এবং গলার সাথে গলা মেলাব। নানা আমার কপালে স্নেহের চুম্বন একে দিয়ে জিজ্ঞেস করবেন কেন আছেন নানু ভাই...
ইতিঃ-
মোঃ হেমায়েত উল্লাহ (শুভ)
মোঃ এনায়েত উল্লাহ (হৃদয়)
.............................................................................
...................................................................
.........................................................
..............................................
...................................
........................
...............
.........
...
আমার মরহুম নানার জন্য এক গুচ্ছ পঙক্তি নিবেদিত করলেন আমার বন্ধু
মুহম্মদ আশরাফুল ইসলাম
সাদার জন্য এলিজি
উড়াল থেকে কেউ নামল কি? যতির খোলসে মোড়ে
শোণীতের শ্বাপদটি যে ঢোকরে উঠল;
দীর্ঘশ্বাস প্লাবিত ভোরের উঠোন জোরে
তরল কান্না রেখে, স্থির অন্ধকারে কে ছুটল!
শূন্যতার ফসিল তবে পেরেক বিদ্ধ থাক
কতোকাল যে জোছনাহীনতায় ভোগেছে রক্তচক্ষো শকুন
আমার যে দায় নেই; জেনে গেছে চৈত্রের কাক:
মগজে তাই কিলবিল করে বখাটে আগুন।
কেউই মরে না (?) স্থবিরতা গ্রাস করে রাখে
চির প্রত্যয়ে ভাস্বর হয় সাদা বা কালোর বাঁকে।
। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।