Set sail, ye hearts~ into the sea of hope.. ক্লাস ফাইভ কি সিক্সের ইংরেজী বইতে ছোট্ট একটা কবিতা পড়েছিলাম, আপনাদের মনে আছে কি না জানি না। কবিতাটার নাম ছিলো ফেরি মি অ্যাক্রস দ্যা ওয়াটার, ক্রিস্টিনা রোজেটির লেখা। বারো লাইনের ছোট্ট রাইমটার সারমর্ম ছিলো এরকম, ছোট্ট একটা মেয়ে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ফেরীওয়ালাকে অনুরোধ করছে যে তাকে যেন সে নদীটা পার করে দেয় ফেরীওয়ালা তখন বলছে, এই মেয়ে! তোমার কাছে কি ভাড়া দেয়ার মতো টাকা আছে? মেয়েটা উত্তরে বলছে, হ্যা ফেরীওয়ালা…আমার পার্সে টাকা আছে, আর তাকিয়ে দেখো আমার চোখের রঙ নীল তখন ফেরীওয়ালা উত্তরে বলছে, ফেরীতে উঠে আসো, তোমার চোখের রঙ নীল না কালো সেটা আমার দেখার বিষয় না, সাথে যদি টাকা থাকে, তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে পার করে দিবো।
সেসময় একজন স্যার আমাকে বাসায় এসে পড়াতেন। এই কবিতাটা পড়ানোর সময় হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলেন, আচ্ছা বলোতো…মেয়েটা তো ভাড়া দিয়েই নদী পার হবে, তাহলে কেন সে তার চোখের রঙের কথা বলছে? আমি বরাবরের মতো সেই বিখ্যাত “জানিনা স্যার…” এক্সপ্রেশনটা দিলাম স্যার তখন মুচকি হেসে বললেন, নীল রঙের চোখ হচ্ছে আভিজাত্যের প্রতীক।
ইংরেজী একটা প্রবাদ আছে না ব্লু ব্লাড? সেই রকম যাদের চোখের আইরিস নীল, বহুদিন পর্যন্ত ফিরিঙ্গি সমাজে তাদেরকে আলাদাভাবে কদর করা হতো। এই কারনে তাদের অনেকে সামান্য চোখের রঙের পার্থক্য নিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করতো। এই কবিতায় নিজেদের আভিজাত্য নিয়ে গর্ব করা মানুষদেরকে হালকা বিদ্রুপ করা হয়েছে। তবে যা-ই বলা হোক, নীল চোখের সৌন্দর্য্য যে অতুলনীয় সেটা অস্বীকার করার উপায় নাই।
আজকে একটা নিউজ পড়তে পড়তে কবিতাটা, আর স্যারের সেই কথাগুলা হঠাৎ মনে পড়ে গেলো।
কবিতার কয়েকটা লাইন মাথায় ছিলো, সেটা ধরে গুগলে খোজ লাগিয়ে বের করে ফেললাম। আর যে নিউজটার কারনে মূল্যবান সময় নষ্ট করে আপনাকে আমার গ্যাজানি মার্কা লেখা পড়তে হচ্ছে সেটা হলো, একদল বিজ্ঞানী দাবী করেছেন যে তারা বাদামী রঙের চোখকে নীল করে ফেলার একটা উপায় বের করে ফেলেছেন। মানে যদি সব কিছু ঠিকঠাক থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আপনি চুল রঙ করানোর মতো চোখের রং-ও পালটে ফেলতে পারবেন, বিরক্তিকর লেন্স না পরেই বেশ মজার, তাই না? উহু এতো সহজ ভাববেন না..ছোট্ট একটা সমস্যাও কিন্তু আছে এখানে। সেটা হলো বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত শুধু বাদামী চোখকেই নীল করতে পারছেন, অন্যগুলাকে না। আর নীল করার পর কিভাবে সেটাকে আবার বাদামীতে ফিরিয়ে আনা যায় সে কৌশলও জানা নেই তাদের সত্যি বলতে কি, নীল রঙ আইরিস হলো নীল আকাশের মতো একটা দৃষ্টিভ্রম মাত্র।
তাদের চোখের গাঢ অংশে যে মেলামিন থাকে সেটা বড় আলোর কনাগুলোকে এবজর্ব করে ফেলে বলে আমরা সেটাকে নীল দেখি। বিজ্ঞানীরাও সম্ভবত মেলামিন এর পরিমানে তারতম্য করেই এই কাজটা করছেন, যে কারনে আমার মতো বাদামী চোখের অধিকারীদের পক্ষেই সম্ভব এই অপারেশনটা করানো
ব্রিটেনের পার্লামেন্টের ক্ষমতা বুঝাতে এক মনীষী একবার বলেছিলেন, they could pass a Bill saying all blue eyed baby’s, born in July must be killed, and that would be the law and the baby’s would be killed. সেই মনীষী কি ভাবতে পেরেছিলেন ক্ষমতার পাল্লায় বিজ্ঞানীরা একদিন ব্রিটিশ পার্লামেন্টকেও ছাড়িয়ে যাবে? যাই হোক, অনেক কিছু লিখে ফেললাম। বরং আমরা অপেক্ষা-ই করি আপাতত, বলা তো যায় না একসময় হয়তো ঢাকার রাস্তাতেই হেঁটে বেড়াতে দেখা যাবে কনভার্টেড নীলাঞ্জনাদের যে কবিতাটার কথা প্রথমে বলেছি, সেটা এখানে ক্লিক করে পড়ুন, অনেকেই হয়তো নস্টালজিক হয়ে যাবেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।