আমি সত্যের এবং সুন্দরের পুজারী। কজন মানুষের সাথে হাসিমুখে মিষ্টি ভাষায় যারা কথা বলে তাদের প্রতি আমার অপরিসীম শ্রদ্ধা । আর যারা নিজেদের অনেক বড় ভাবে, তাদের প্রতি আমার রয়েছে করুণা । যেটা আমার কাছে ভুল মনে হয় , তার তাত্ক্ষণিক যুক্তিসম্মত প্রতিবাদ করতে আমার ব প্রথম পর্ব: “দ্বিতীয় নেবুলা আর ভাগ্যের খেলা”
সে অনেক কাল আগের কথা। একবিংশ শতাব্দী শুরু হইয়াছে, মানবজাতি, বিভিন্ন অন্যায় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করিয়াছে কেবল।
সেই সময়ে এশিয়া মহাদেশ এর এক সাগর পাড়ে একজোড়া মানবসন্তান ঘর বাধিয়াছিল। স্বামীটির নাম “দ্বিতীয়” আর স্ত্রী টির নাম “নেবুলা”। অতি দারিদ্র্যের মাঝে টানাটানির সংসারে বড়ই কষ্ট করিয়া দিনাতিপাত করিতেছিল তারা। তাই বলিয়া তাহাদের ভালবাসার কোন কমতি ছিল না কিন্তু।
তো যাহাই হউক, এই “দ্বিতীয় নেবুলা” একদা মনস্থির করিল তাহারা শহরে যাইবে, তাহারা শুনিয়াছে শহুরে নেতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করিতে পারিলে ইহজীবনে আর কষ্ট থাকে না।
এরূপ চিন্তা করিয়া তাহারা রাজধানীর পথ ধরিল।
রাজধানীতে তাহারা আসিয়া পৌঁছাইল ২ দিন পর এক ভোরবেলায়। মেঘমুক্ত আকাশ আর সূর্যের হাসি দেখিয়া তাহারা মনে মনে ভাবিতে লাগিল তাহাদের ভাগ্যাকাশের মেঘ ও বুঝি চলিয়া যাইবে। অতীব খুশি হইয়া, তৃষিত নয়নে তাহারা শহরে নেতার সন্ধান করিতে বাহির হইল।
এইরকম ২ ঘন্টা যাবত তাহারা পথে চলিতে চলিতে একটা হাসপাতালের নাম শুনিয়া চমকাইয়া গেল।
এ হাসপাতালের নাম এ জীবনে “দ্বিতীয়” বহুত শুনিয়াছে। সেই ছোট্টবেলা হইতে। আজ সচক্ষে দর্শন করিয়া সে অতীব প্রীত হইয়া উঠিল। ঈষত হাস্য করিয়া সে তাহার “নেবুলা”র দিকে গর্বভরে চাহিয়া কহিল , “নেবু, হাস্পাতাল দেখছইন? তোমরারে আইজ হাসপাতাল দেখাইলাম”। স্বামীর দিকে তাকাইয়া মুচকি হাসিয়া, সে কহিল, “কত্ত বড় হাসপাতাল রে বাবা! তয় এখানে তো খালি ডাক্তার আর রোগী ! নেতা পামু কই !”
তাহারা হাঁটিতে হাঁটিতে হাসপাতালের পেছনের অডিটোরিয়ামে চলিয়া আসিল।
এমন সময় তাহারা দেখিতে পাইল সেখানে প্রচুর মানুষ ভিতরে ঢুকিবার অপেক্ষায়। তাহাদের সবার ধোপদুরস্ত পোশাক, সবার গলায় পরিচিতিমূলক কার্ড। হঠাত ই তাহারা শুনিতে পাইল এইখানে আজ সরকারী দলের অনেক বড় নেতা আসিবে। এই কথা শুনিয়া তাহারা ভিতরে যাইবার জন্য উদ্গ্রীব হইয়া উঠিল। ঠেলা ঠেলি করিয়া তাহারা সুযোগ খুঁজিতে লাগিল।
গলায় পরিচিতি কার্ড নাই। ভিতরে যাওয়া যাইবে কিনা, ইহা লইয়া নেবুলার মাঝে ব্যাপক সন্দেহ উপস্থিত হইল। সে পারলে পালাইয়া বাঁচে। কিন্তু দ্বিতীয়’র মনে অনেক সাহস। সে বুদ্ধি ও রাখে বৈকি।
পাহারাদারদের চোখের আড়ালে আড়ালে থাকিয়া সে ঠিকই নেবুলার হাতকে শক্ত করিয়া ধরিয়া মঞ্চের দিকে টানিতে লাগিল।
ভিতরে ঢুকিয়া মঞ্চের সামনে বসিতে পারিবে না, সে বুঝিয়া গেল। সুবিধা করিতে না পারিয়া সে একটু পেছনের দিকের সারিতে নেবুলাকে লইয়া বসিল। এই জায়গাটায় আলোক একটু কম, “দ্বিতীয়” ভাবিল, গলায় পরিচিতি কার্ড না থাকিলেও এই আলো আধারের মাঝে কাহারো চোখে পড়িবার ভয় কম। তাহাছাড়া শহুরে নেতার কথা শুনিতে শুনিতে এই বেলা এত মানুষের মাঝে বসিয়া থাকা বড় ব্যাপার, আধারের মাঝে নেবুলার হাত ধরিয়া রংগ করিবার বাসনা ও তাহার মাঝে রহিয়াছে।
যাহাই হউক, ঘন্টা বাজিয়া উঠিলে মঞ্চের সামনের পর্দা সরিয়া গেল। চেয়ারে উপবিষ্ট নেতাদের দেখিয়া দ্বিতীয় নেবুলা আরো একবার চমকিত হইল। মাঝখানের ঐ নেতাটিকে কত বার পাশের বাসার টিভিতে দেখিয়াছে।
গরীবের জন্য এই নেতাটির অনেক ভালবাসা, তাহার মুখের হাসি দেখিলেই প্রাণ জুড়াইয়া যায়, কথা শুনিলেই মনটা ভাল হইয়া যায়, তাহাদের নেতাভাগ্য কি এতই ভাল একেবারে এই নেতার সামনে আসিয়া পড়িয়াছে! নাকি সৃষ্টিকর্তা ই তাহাদের কাছে এই নেতাকে প্রেরণ করিলেন! সৃষ্টিকর্তার মহিমা বুঝা অসম্ভব বৈকি! ”দ্বিতীয় নেবুলার” চক্ষু জোড়া অশ্রু সিক্ত হইল, কিন্তু মুখে তাহাদের বিজয়ের হাসি। তাহারা নেতার ভাষণ শুনিতে একটু ব্যস্তই হইয়া উঠিল।
একে একে ২ জন বক্তব্য দেয়া শেষ করিলে একজন এইবেলা নেতাকে বক্তব্য দিতে আহবান জানাইলেন। নেতা মুচকি হাসিয়ে উঠিয়া দাঁড়াইতেই চারিদিকের জনতা যেন পাগল হইয়া উঠিল। তাহারা মুহুর্মুহু শ্লোগানে ভবন কাপাইয়া নেতার প্রতি সমর্থন জানাইতেছিল। দ্বিতীয় নেবুলাও অনভ্যস্ত কায়দায় সদ্য শেখা স্লোগান দিতে লাগিল। নেতা জনগণকে কয়েক মিনিট তাহার গুনগাণ করিতে দিলেন।
অতঃপর হাত তুলিয়া সবাইকে শান্ত করিলেন, এরপর নেতা বক্তব্য দিতে শুরু করিলেন। দ্বিতীয় নেবুলা নেতার কথা শুনিতে সমস্ত মনোযোগ ঢালিয়া দিল।
(চলিবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।