আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জলদি মড়ির ভাগা টানতে ছুট লাগাও

ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের প্রতি নির্দেশ দিলেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড ‘সুটকেস গোছান, দ্রুত লিবিয়ায় ছুটে যান। ’ স্বৈর-শাসক গাদ্দাফি বিদায়ে বিধ্বস্ত লিবিয়ার পুনর্গঠনের কাজের নামে মড়ির ভাগা বাগানোর জন্য। বিবিসির চ্যানেল রেডিও ফোরকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, গাদ্দাফিকে উৎখাতে প্রধান ভূমিকা ছিল ব্রিটেনের। এখন ভগ্নপ্রায় লিবিয়াকে গড়ে তোলার কাজের টানাবাজীতে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলিকে ‘এক নম্বর’ থাকতে হবে। ব্রিটেনের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দপ্তরের নগদ ধান্ধার হিসাব, আগামী এক দশকে লিবিয়ার তেল, গ্যাস, শিক্ষা ও পুনর্গঠন খাতে ২০ হাজার কোটি পাউন্ডের লুটের চুক্তি হবে।

এমনই দাও মারার সময় উপস্থিত হওয়ায়, দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে উপনিত ব্রিটিশ অর্থনীতির প্রতিরক্ষামন্ত্রী অক্সিজেনের আশায় চিৎকার জুড়েছে স্বরবে। লিবিয়ার জিডিপি ৭৬,৫৫ বিলিয়ন মাথাপিছু আয় ১১,৮৫৬ ডলার। জনসংখ্যা কমবেশী লাখ পয়ষট্টি এবং বেকারত্বের পরিমাণের দিক দিয়ে এই অঞ্চলের মধ্যে বেশী যা জনসংখ্যার ২১% ভাগ। তেলের উপর নির্ভরশীল দেশটার মোট রফতানী আয়ও আসে তেলের রাজস্ব থেকে। যা জিডিপির চার ভাগের একভাগ।

বিশ্ব সুদেদাসী ওয়ার্ল্ডব্যাংকের ভাষায় উচ্চ-মধ্য শ্রেণীর দেশ ছিল। তাকে অগ্রবর্তী বলে তুলনা করা হয়েছিল ইতালি, সিংগাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন ও নিউজিল্যান্ডের সাথে। সমাজিক নিরাপত্তা হিসাবে বাসস্থান ও শিক্ষা ইত্যাদি উভয়ই রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত। পাশ্চাত্যের মনযোগ আকর্ষণ করতে বাজার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার টোপে ডাব্লুউটিও সদস্য পদের চেষ্টা চালানো। উদার অর্থনীতির নামে ২০০৩ সাল থেকে শতভাগ মালিকানার সরকারী নিয়ন্ত্রিত শিল্প-কারখানা, তেল শোধনাগার, পর্যাটন ও রিয়েল স্টেট কোম্পানীগুলো বিক্রয় করে।

যাহার মধ্যে ২৯টা আবার শতভাগ বিদেশী মালিকানার। অন্যান্য সরকারী মালিকাধীন ম্যানুফ্যাকচারিং এবং রিয়েল স্টেট ইত্যাদিতে জিডিপির অবদান ২০ ভাগ। এছাড়াও পেট্রোকেমিক্যাল, স্টীল, আয়রণ এবং এ্যালুমিনিয়াম শিল্প-কারখানা গড়ে তুলেছিল লিবিয়া। দেশটির প্রায় ৭৫% ভাগ খাদ্য আমদানী নির্ভর ও প্রায় ২৮% ভাগ জনসংখ্যা এখনও নিরাপদ পানী থেকে বঞ্চিত। গত শতাব্দীর ১৯১২ সালে নিজের মোরগা হিসাবে উত্তর আফ্রিকার লিবিয়াকে দখলে নিল ফারাসিদের অনুকরণে ইতালি।

২য় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময় বৃটেন ও ফ্রান্স যৌথভাবে ইতালির দখলকৃত মোরগাকে ভাগ করে নেয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ধ্বংসপ্রাপ্ত ইউরোপকে বর্তমানের মতো বেইল আউট প্রোগ্রামের সময় মার্কিনীরা বাজারটি উপরি পায়। জগতে মার্কিনীরা একমাত্র ভারত ছাড়া তার পূঁজির নাক ঢুকিয়ে চলে ইউরোপীয় দুর্বৃত্তদের দখলদারী মালিকানার বাজারগুলোতে। কিন্তু ১৯৬৯ সালে লিবিয়া থেকে আমেরিকা ও ব্রিটিশ নৌঘাটি প্রত্যাহারে বাধ্য করে। জাতীয়করণ করে বিদেশী তেল কোম্পানী ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুবিধাগুলো।

এতে করে লিবিয়া প্রকারান্তে ইউরোপীয় ফ্লাটারদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে পোষাকি বৈরীতা সত্বেও। ১৯৭৩ সাল থেকে তেলের দাম বাড়ান এবং মার্কিনীদের তেল অবরোধ শুরু করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। শুরু থেকে পশ্চিম ইউরোপের ঘুটে হিসাবে মার্কিনীদের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে থাকে ক্ষমতা দখলদার কর্নেল গাদ্দাফি। আরব অঞ্চল এখন আর আগের মতো প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিতে পাশ্চাত্ব্যের শক্তিগুলো বিরত আছে। তারা জেনে গেছে এতে জনমনে সন্দেহ বাড়বে, বরং হিতে বিপরীত হতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের ও আফ্রিকার আরব স্বৈর-শাসককূল সাধারণ আরবদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই আরবদের সম্পদ কুক্ষিগত রাখতে নতূন কৌশল অবলম্বন করছে। ইউরোপ ও আমেরিকা তাদের অনুগত লেঠেলদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে বা রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করাচ্ছে বিভিন্ন স্বৈরাচারী আরব শাসকদের দেশের মধ্যে। ব্রিটিশ ও ফরাসিদের অনুগত নীল রক্তের ইরাণ। অন্যদিকে দৃশ্যপটে মার্কিনীদের মুখপত্র সাজলেন কাবার খাদেম।

সাম্রাজ্য দখলের লড়াইতে মধ্যযুগে বোগদাদের খেলাফত থেকে আব্বাসিয়রা উমাইয়াদের বিতাড়িত করে। আবারও বিভিন্ন জার্সির আরব আঞ্চলে একই দ্বন্দ্বের রাজনৈতিক অরাজকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। পশ্চাত্যের শকুনের পদচারণায় আরবরা পুনরায় বঞ্চিত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। বিগত একশত বছরের মত সামগ্রিক আরব কল্যাণে সম্পদ ব্যবহার থেকে প্রকৃত হিসাবে পিছায় আছে ! উন্নয়নতো পাশ্চাত্যের প্রকল্প ও প্যাকেজের খাতায় বাক্সোবন্দী হিসাব। পশ্চিম ইউরোপের অনুচর আলহাসি বলেন, আমরা তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারতাম।

তারা বেশিরভাগই ছিল স্বেচ্ছাসেবক ও প্রবাসী লিবীয়। প্রত্যেকেই লিবিয়ার মুক্তির জন্য কিছু করতে চাইছিল। ওই সকল স্বেচ্ছাসেবকদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে পশ্চিম পাহাড়ে। কিন্তু ফ্রান্সের গোয়েন্দা ‘কর্মকর্তা’ এনিক ডিনেন্স জানান, বিদ্রোহীদের এলিট ফোর্সের ট্রেনিং লিবিয়ার ভিতর এবং পশ্চিমাদের ঘাঁটিতেও অনেক ট্রেনিং হয়েছে। ট্রেনিং পরবর্তী তাদের লিবিয়াতে পাঠানো হয়েছে।

ডিনেন্সের মতে, ১০০-২০০ বিদেশি কর্মকর্তা ট্রেনিং দেওয়ার জন্য লিবিয়াতে গিয়েছিল। আবদেল মজিদ ম্লেগতাও এই পরিসংখ্যানের পক্ষই সমর্থন করে। সুতরাং মড়ির ভাগার পরিকল্পনা শকুনেরা অনেক আগেই শুরু করেছিল। কয়দিন আগে অস্ত্র বিক্রয় করতে ভাঙ্গা হাটে (মিশর) বা বান্ধা-বক্‌রি কুয়েতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে ছুটতে দেখলাম। কারণ নিজ দেশের অস্ত্র কারখানার ঝাপ বন্ধ হবার আশংকায় দিশেহারা হয়ে তার এই দৌড়-ঝাপ তদবির।

ব্রিটিশ ব্যয় সংকোচন একতিয়ারে জন নিরাপত্তার হাতিয়ার পুলিশের দশ শতাংশ ছাটাই করা এবং কর্মোক্ষমদের বোনাস কমাবার প্রস্তাব। ইউরোপের সংবাদ ভাল নয়, ওদের অর্থনৈতিক অক্সিজেন দরকার। সুতরাং ইরাকের মত বড় ধরনের দাও মারা মুলুক ছাড়া প্রায় দেউলিয়া পাশ্চাত্যের কোন গন্তব্য নাই। কেবলই বেইল আউটের অপেক্ষায় ছিল পাশ্চাতের ঐতিয্যবাহী ট্রেইটর দেশগুলো। এবার লিবিয়া মড়ির সংবাদ তাদের রক্ষাকবজ হিসাবে বিবেচনা করছে ব্রিটেন, ইতালি ও ফ্রান্স ইত্যাদির বহুরূপী মোড়ল গং।

অন্যদিকে নাদুস-নুদুস অর্থনৈতিক ‘লিবিয়া’য় আন্দোলনরত জনতার কাছে ধরা পড়েছিল ফ্লাটার ক্যামারুনের গুপ্তঘাতক এমআই-৬এর ক্যাডার। এখানে পাশ্চাত্যের ভূমিকা ছিল ‘চোরকে বলে চুরি করতে গৃস্থকে বলে সজাগ থাকতে। ’ আবারও কি একই ঘটনা পুনরায় ঘটবে আরব দেশগুলোতে ? উত্তর আফ্রিকা ও মধ্য প্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রগুলো কি আবারও ‘চক চক করিলে সোনা’ হয় গীত গাওয়ায় সমবেত হবে। শতবছর পূর্বে ঘটতে দেখা যায় সম্পদের মালিকানা বজায় রাখতে আরব জাতীয়তাবাদের নামে শিখন্ডী শাসক নিয়োগে করতে ! তাই বলা চলে, আরব জাতীয়তাবাদীদের অবস্থা ‘জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ’ পরিবেশের মধ্যে ঘেরাও হয়ে আছে এক শতাব্দীর মতো। বিদ্রোহীদের হাতে ত্রিপোলি পতনের পরপরই ব্যবসায়িক স্বার্থ নিশ্চিতের কাজে মনোযোগ দেয় জগতের প্রৌঢ় শকুন ব্রিটেন।

লিবিয়ায় ছুটতে দেখা যাচ্ছে তার নেকড়ে বাণিজ্যমন্ত্রী লর্ড গ্রিনকে। তার সঙ্গে ছিল চিনে-জোকের আড়ত বৃহৎ তেল কোম্পানী বিপি ও শেলের কর্মকর্তারা। তারা লিবিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের (এনটিসি) সাথে বৈঠক করে। তারা লিবিয়ায় মড়ির ভাগ পেতে ইউরোপের অন্যান্য গিন্নি-শকুন ফ্রান্স ও ইটালির জোর তৎপরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। এনটিসি কর্মকর্তারা বুড়ো শকুনের প্রতিনিধিকে আশস্ত করে, লিবিয়ার মরুভূমিতে তেল অনুসন্ধানের বিদ্যমান চুক্তিগুলো বহাল রাখা হবে।

কারণ দেউলিয়ার দারপ্রান্তে অবস্থান বৃদ্ধ শকুনের গাদ্দাফি উৎখাতে দাদন ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি পাউন্ড। কে করবে ভাগ বাটোয়ারা তাই নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে জগতের শকুন, হায়না ও নেকড়েদের মধ্যে ? পাশ্চাত্যের লুটেরা শাসকবৃন্দের সংশয় ! নিকট অতীতের (ইরাক ও আফগান) হরিলুটের ভাগায় মার্কিন প্রভাবিত কর্মকান্ডে ভাগিদারদের অতৃপ্তি। এখন দেখার বিষয় লিবিয়ার সম্পদ লুটে কে বানরের দায়িত্ব বাগাতে পারবে ? লেখাটি খুলনা জার্নালে পুর্বে প্রকাশিত। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.