[প্রথমেই জানিয়ে রাখছি সোমালিয়ার স্মরণকালের ভয়াবহ দূর্ভিক্ষের দিকে সবার নজর দিতে এই লেখা আমি একজন মুসলমান হিসাবে লিখছি না; লিখছি মানবতার অনুসারী হিসাবে, জনস্বাস্থ্য ও বিশ্বসাস্থ্যের একজন চিকিৎসক এবং কর্মী হিসাবে। তবে ইসলাম বা মুসলমানদের নিয়ে কিছু বললেই যে লোকগুলো (বিশেষ করে বাংলাদেশের) তালকানা ষাঁড়ের মতো শিং উঁচিয়ে, দাঁত খিঁচিয়ে তেড়ে আসেন তাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ করে এই লেখা]
সোমালিয়া, আফ্রিকার শিং হিসাবে খ্যাত এই দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে প্রায় চারগুণ বড় হলেও লোক সংখ্যা মাত্র এক কোটির একটু ওপরে। এই লোক সংখ্যার ৯৯% মুসলমান। দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বেঁধে আছে। গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর খারায় আফ্রিকার শিং নামে খ্যাত দেশগুলো যেমন কেনিয়া, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া এই খরায় একেবারে পর্যুদস্ত।
কিন্তু সোমালিয়ায় যুদ্ধ আর খরার যৌথ-প্রভাবে দেশটির সবচেয়ে করুণ দশা-এখন জাতি সঙ্ঘের ঘোষিত দূর্ভিক্ষ পীড়িত এই দেশ। এখানে গত তিন মাসে শুধু শিশু মারা গেছে প্রায় ৩০ হাজার, ২০ লক্ষ শিশু মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে চূড়ান্ত পুষ্টিহীনতায় ভূগছে। জনসংখ্যার সবচেয়ে ভালনারেবল অংশ নারী আর শিশু। অধিকাংশ নারীই সন্তানধারণের বয়সী এবং অর্ধেকই অন্তঃসত্ত্বা। এইভাবে, এই অবস্থায় এখন পর্যন্ত ১৫ লক্ষ সোমালী আশ্রয় নিয়েছে আসেপাশের দেশগুলোতে যা অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু।
হাজার হাজার নারী আর শিশু মরছে প্রতিদিন। যারা এই ঘটনার আবার সূত্র জানতে চাইবেন (সেইসব স্ক্যাপ্টিক ষাঁড়েরা) তাদের জন্য একটা এলবাম করেছি। এখানে লিঙ্ক দিলাম দেখে নেয়ার জন্যঃ
Click This Link
এবার দেখি মুসলিম বিশ্ব কী করছে এই দুঃসময়ে! হালাল-হারাম নিয়ে তর্ক, কেউ তাদের গলতি ধরিয়ে দিলে তার দিকে গ্লাভস খুলে আক্রমণ, গালিগালাজ? না, না , তারা এতো খারাপ না! পৃথিবীর ৫৭ টি মুসলিম দেশ একসঙ্গে হয়ে তুরস্কে মিলিত হয়েছে (সূত্রঃ Click This Link)
কতলক্ষ টাকা খরছ করেছে সেই একসঙ্গে হওয়ার জন্য জানি না। কিন্তু তুলেছে মাত্র তুরস্কের টাকায় ২০০ মিলিয়ন, মাত্র ১০ টন ঔষধ, আর কি? তবে এটা পাকিস্তানের পত্রিকা এদের বিশ্বাস করা যায় না তাই আরো একটু অনুসন্ধান করে জানা গেল না, একটু বেশি টাকা ঊঠেছে, ও আই সি (Organizetions of Islamic Cooperation) বলেছে তারা ২৩০ মিলিয়ন ডলার দেবে। অথচ জাতিসঙ্ঘের মতে নূন্যতম পক্ষে দুই দশমিক চার বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
কী আর করা, দেখি বাংলাদেশ না হয় গরীব দেশ, আমাদের দাসত্বের (মানসিক) মালিকেরা কে কী করছেনঃ
পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ও বিলাসবহুল ইয়ট (জাহাজ আর কি!) কাদের দখলে আর এই জাহাজে কী ঘটে?
১। আল সাঈদ, সৌদী সুলতান কাবুস ওসমান পৃথিবীর সবচেয়ে বিলাসবহুল ইয়টের মালিক যার দাম প্রায় ৩০০ মিলিয়ন আমেরিকান ডলার (ছবিটি আমার আগের এলবামে দেয়া আছে)।
২। আল সালামাস, প্রিন্স সুলতান বিন আব্দুল আজিজ, সৌদি আরব, দাম ২০০ মিলিয়ন ডলার।
৩।
লেডি মুরা, নাসের আল রশিদ, ব্যবসায়ী, সৌদী রয়েল পরিবারের উপদেষ্টা, দাম ২১০ মিলিয়ন ডলার
৪। আল মিরকাব, শেখ হামাদ বিন জসিম আল থানি, কাতারের প্রধান মন্ত্রী, দাম ২৫০ মিলিয়ন ডলার
৫। দুবাই, শেখ মোঃ বিন রাশিদ আল মাখতুম, দুবাই এর প্রধান, দাম ৩৫০ মিলিয়ন ডলার।
৬। সবচেয়ে মজার টি হলো ১০০,০০০ কেজি সোনা ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুতে গড়া প্রায় ৫ বিলিয়ন ( ১০০০ মিলিয়ন এ এক বিলিয়ন, আপনারা গুণে দেখুন কতো) এর মালিক মালয়েশিয়ার একজন অজানা ব্যাবসায়ী।
মধ্যপ্রাচ্যের শেখ-সুলতানেরা প্রতি বছর শুধু বিশ্বের বিলাসবহুল বিপনী বিতানে ব্যয় করেন মিলিয়নস অব ডলারস, নানান দেশে তাদের নিজস্ব হেরেমখানা আছে যেখানে পৃথিবীর নামী দামী তারকা থেকে শুরু করে স্পেশাল নারীদের হাজার হাজার ডলারে ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয়।
আমাকে আর ফিরিস্তি দেয়ার দরকার আছে? পৃথিবীর যে কোন বিলাসবহুল ব্যায়ের জিনিস খুজে দেখুন কারা এগুলোর মালিক। কিন্তু বিজ্ঞান, জ্ঞান, মানবিকতায় এঁদের নিচের ১০০ জনের মধ্যেও পাবেন না।
এখানে মূল বক্তব্য হলো আপনি-আমি একা কিছু করতে পারবো না যতক্ষণ না এগুলো ইসলামী দেশগুলোর পলিসি লেভেল থেকে হবে। সেই পলিসি কন্ট্রোল করে কারা? এই সব দেশগুলো।
সোমালিয়ায় এখন পর্যন্ত যতো বড় সাহায্য তা গেছে নন-মুসঅলিম দেশ থেকে। যতোই অন্য ধর্মের বদনাম করে নিজেদের ভাল মানুষ ভাবি না কেন, শুধু আমেরিকাতেই খ্রীশ্চানরা প্রতি বছর দান করে ৯১ বিলিয়ন ডলার (১০০০ মিলিয়ন= এক বিলিয়ন)। সে তুলনায় আরব দেশগুলো গরীব বাংলাদেশ কে দেবে শুধু ঊচ্ছিষ্ট দুম্বার মাংশ, আর খেজুর আর কিছু রাষ্ট্রীয় খয়রাত। অথচ এরা বিজ্ঞান, গবেষণা, টেকনোলজি, শিক্ষায় এসব গবীর মুসলমান দেশ কে সাহয্য করতে পারতো। আপনারা কি জানেন যে সমগ্র আরব দেশ নিজেদের কে "শাদা" ক্যাটাগরিতে ফেলে আর অন্য মুসলমানদের কালো বা বাদামি (নিম্ন শ্রেনী, যেভাবে আগে শাদা রেসিষ্টরা আমেরিকাতে ক্লাসিফাই করতো) দলে ফেলে?
আমরা নিজেদের সম্মান অর্জন করতে না পারলে শুধু মানসিক দাসত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া আর কোন গতি নেই।
অন্য দিকে এই গরীব দেশএর লক্ষ লক্ষ ডলার ঠিকই হজ্জের নামে চলে যাচ্ছে ওদের পকেটে। ভাল করে ধর্মের নির্দেশনা পড়ে দেখুন বাড়ির পাশে না খেয়ে থাকলে তাদের সাহায্য না করে আমাদেরও হজ্জ হয় কি না!
আমার দিকে যারা এক্ষুনিই অঙ্গুলি নির্দেশের জন্য মুখিয়ে আছেন (আপনি কি করছেন? বলার জন্য) তাদের উদ্দেশ্যে আগেই বলিঃ আমি মুসলমান হিসাবে বেহেস্ত পাওয়ার জন্য কিছুই করি না। আমি যা করি তা মানুষ হিসাবে করি। আমার সাধ্য মতো আমার জ্ঞান দিয়ে, শারীরিক পরিশ্রম দিয়ে, মেধা দিয়ে, অর্থ দিয়ে যতটুকু পারা যায় করি। তার জন্য আমাকে বেহেস্তে যাওয়ার লোভ দেখানোর প্রয়োজন নেই।
সুতরাং যারা মুসলমান, ইসলাম ধর্মের রক্ষাকর্তার দায়িত্ব নিতে চান, আপনারাই বলুন আপনাদের এখন কি করনীয় (অন্তত বেহেস্তের জন্য হলেও)। সকলের মঙ্গল হোক।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।