আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগকে কেন্দ্র করে ইবিতে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষ : গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫০]]

দূরে অাছি......তার্হ ফেরা সহজ....কাছের মানুষ কখনো ফেরে না......... ইবি প্রতিনিধি: গতকাল সোমবার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলে ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষের সময় প্রায় ৪৫ রাউন্ড গুলি ও বোমার শব্দ শোনা যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধসহ উভয় পক্ষের প্রায় ৫০ জন আহত হয়েছে। আহতদেরকে ইবি মেডিকেল সেন্টার এবং গুরুতর আহতদের কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান সাগর, রেজোয়ান, মান্নান ও ফরিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ ও ৱ্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, লালনশাহ হলের ডাইনিং ম্যানেজার তোতা মিয়ার পরিবর্তে নতুন ম্যানেজার নিয়োগের কথা ছিলো। এ নিয়ে বেলা ১টার দিকে ছাত্রলীগের ও ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে বেলা ২টার দিকে লালন শাহ হলের ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্ট কামরুজ্জামান, ছাত্র উপদেষ্টা ড. মেহের আলী, সহকারী প্রক্টর মো. মহব্বত হোসেন, সহকারী প্রক্টর মোস্তফা জামাল হ্যাপী, ছাত্রলীগ ইবি শাখার সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন, লালন শাহ হলের ছাত্রশিবিরের সভাপতি আসাদুল্লাহসহ উভয় দলের নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মীমাংসার জন্য হলের প্রভোস্ট অফিসে জরুরি বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক চলাকালে উত্তেজনার এক পর্যায়ে উভয়দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে।

সংঘর্ষের এক পর্যায়ে শিবিরের ধাওয়ার মুখে টিকতে না পেরে হল ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী শেখপাড়ায় অবস্থান নেয় ছাত্রলীগ কর্মীরা। সংঘর্ষের সময় লালন শাহ হলের সামনে থাকা ছাত্রলীগের দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় শিবিরের নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্র উপদেষ্টা, ছাত্রলীগ সভাপতি, সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, প্রেসক্লাব সভাপতি আলতাফ হোসেন, সাংবাদিক কাজল, সাংবাদিক রনি, সাংবাদিক অনু, সাংবাদিক জুয়েলসহ কয়েকজন সাংবাদিক প্রভোস্ট রুমে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বহিরাগতদের নিয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে লালন শাহ হলের সামনে দিয়ে পুনরায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে চাইলে শিবির আবারও তাদের ওপর হামলা করে। এভাবে বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উভয় দলের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ চলতে থাকে এবং প্রায় ৫০ রাউন্ড গুলি বিনিময় হয়।

এ সময় ৫টি বোমার আওয়াজ শোনা যায় । সংঘর্ষে ছাত্রলীগ নেতা, লেলিন, বকুল, সাগর, বেলাল, মেহেদী, তুর্কি, জুয়েল, রাসেল, এনামুল, শামীম, মাসুম এবং জিয়াউর রহমান হলের শিবির সভাপতি মাসুম, সাব্বির, রেজোয়ান, জুবায়ের, ফরিদ, মনির, গোলাম ইয়াহিয়া, মোকাদ্দেস, ওলী, মোয়াজ্জেমসহ উভয় দলের প্রায় ৫০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়ে জিয়ায়ুর রহমান হল, সাদ্দাম হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হল ত্যাগ করলে শিবির তা দখল করে রাখে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হলে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি বলে জানা যায়। এদিকে সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারারসহ প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য ঘটনাস্থলে আসেন; কিন্তু তারা সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও ৱ্যাব মোতায়েন করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রায় ৩০ রাউন্ড টিয়ারসেল এবং ২০ রাউন্ড শটগানের গুলি নিক্ষেপ করা হয় বলে জানান ইবি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির উদ্দিন মোল্লা। সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত রাখতে বিকেল ৫টা থেকে কুষ্টিয়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইকবাল আকতারের নেতৃত্বে লালন শাহ হল তল্লাশি করা হয়। হল তল্লাশি করে ২টি চাপাতি, ১টি ছোরা, ৪টি রড, ১০টি লাঠি উদ্ধার করা হয় বলে জানান ইবি থানার ওসি। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এ ব্যাপারে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, লালন শাহ হলে মিটিং চলাকালে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে শিবিরের ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। এ ব্যাপারে ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাঈনুল ইসলাম বলেন, লালন শাহ হলে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালালে আমরা তা প্রতিহত করি। ছাত্র উপদেষ্টা ড. মেহের আলী জানান, ডাইনিং ম্যানেজার নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে ঘটিত সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অফিসে আলোচনায় বসি। এমতাবস্থায় হলের বাইরে অবস্থানকারী ছাত্রলীগ-শিবির নেতাকমীদের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনগত সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আবু হেনা মুস্তফা জামাল হ্যাপী বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত ৱ্যাব-পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ভিসি প্রফেসর ড. এম আলাউদ্দিন বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুটি ছাত্র সংগঠনের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ভিসি, প্রোভিসি, প্রক্টর ও লালন শাহ হল প্রভোস্ট ছুটিতে থাকায় একটি মহল পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্চুক এক শিক্ষক দাবি করেন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.