আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেইলী রোডে এক রাত

I am a disciplined man ! গত রোববার রাত সাড়ে দশটা। অফিসে বসে ঝিমুচ্ছি। ঝিমানোর কারণ হচ্ছে এই মাত্র বাড়ী থেকে আসলাম। দুপুর দুইটায় বাসে চেপে রওয়ানা হয়েছি। দীর্ঘ সাত ঘন্টার জার্নিতে শরীরটা কাহিল লাগছে।

তার পর আবার এসেই চোখে মুখে পানি দিয়ে সাপার সেরেছি। ব্যস শরীরের পেশী ছেড়ে দিল। হঠাৎ খবর কানে আসে। বেইলি রোডে ছিনতাই হয়েছে। শুধু ছিনতাই না দু’জন তরুণকে গুরুতর আহত করেছে ছিনতাইকারীরা।

সাথে সাথে ছুট লাগাই। প্রথমে ঢাকা মেডিক্যাল। সেখান থেকে জানানো হয় একজনের আবস্থা খুব খারাপ। তাকে ধারাল চাকু দিয়ে স্ট্যাব করা হয়েছে। কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠিয়েছে।

আবার ছুট হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে। পথে শোনা গেল সে এই মাত্র ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেছে। সত্যি সত্যি তাকে হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাওয়া গেল না। তার ডেডবডি পাঠানো হয়েছে মর্গে। আবার ছুট ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে।

না: সেখানেও নেই। তবে? রমনা থানায়। আবার ছুট রমনা থানায়। সেখানে লোকে ভরপুর। পুলিশ কমিশনার আমাদের ঘটনার বিবরণ দিলেন।

Ñরাত নয়টার দিকে মোটর সাইকেল আরোহী তিন বন্ধু এলিফ্যান্ট রোড থেকে শপিং সেরে বাড়ী ফিরছিল। সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের সামনে আসতেই ছিনতাইকারীরা তাদের গতি রোধ করে। মোটর সাইকেল থেকে তারা পড়ে গেলে ছিনতাইকারীদের সাথে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে মোটর সাইকেলের চালক বন্ধুটির গলায় ছুরির পোচ মেরে পালানোর চেষ্টা করে ছিনতাইকারী। এ সময় রুবেল নামের এক ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশ।

আহত তরুণটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে ছুরি ও মোটর সাইকেলসহ একজনকে আটক করেছে পুলিশ। ছিনতাইয়ের চেষ্টাকারী অপর সহযোগীকে আটক করে উভয়কে বিচারের মুখোমুখি করবেন তারা। নিহত যুবক সিদ্ধেশ্বরী ডিগ্রী কলেজের ছাত্র। তবে তার মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে রহস্যের ধূম্রজাল।

তার বন্ধুদের দাবী কোন সংঘবদ্ধ চক্র পূর্বপরিকল্পনা থেকে তাকে হত্যা করে থাকতে পারে। তাকে হত্যার ঘটনায় রমনা থানায় মামলা হয়েছে। এবার নিহতকে দেখার পালা। তার বাসায় যাই। সেখানে কান্নার রোল।

মা তার ছেলের লাশ নিয়ে আহাজারী করছেন। বড় ভাই আর ছোট্ট বোনটি শোকে নির্বাক হয়ে গেছে। তাদের কিছু জিজ্ঞেস করতেও কষ্ট হয়। কি প্রশ্ন করব? আর কী উত্তর তারা দেবে? আসলে ছেলেটাকে দেখার পর খুব মায়া হয়। কতই বা বয়স হবে? বাইশ কী তেইশ।

এ বয়সেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হলো? তাও আবার আস্বাভাবিভাবে। আমাদের সমাজ থেকে আজ স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারন্টি কমে গেছে। হয়ত একারণেই একটা কচি মুখ অকালে এভাবে ঝড়ে গেল। ফেরার পথে বেইলী রোড হয়ে আসলাম। রাত তখন আড়াইটা।

গাড়ীর হেড লাইটের আলো ফেলতেই দেখা গেল ফুটপাতের ওপর চাপ চাপ রক্ত। লাল টকটকে। মনে হয় মুরগী জবাই করা হয়েছে। এর পর হিঁচড়ে নেবার দাগ। সেখানেও রক্তের ছিট ছিট দাগে পিচঢালা পথ লালচে কালো হয়ে আছে।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।