আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবচেয়ে কম খরচে বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্ভব

আতাউর রহমান কাবুল অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী প্রফেসর অব হেপাটোবিলিয়ারি প্যানক্রিয়াটিক সার্জারি অ্যান্ড লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন; মহাসচিব, লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ১৯৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়া ও জাপান থেকে লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশে ফিরে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চিকিত্সা শুরু করেন। তার উদ্যোগেই ঢাকার বারডেম হাসপাতালে দেশের প্রথম লিভার সার্জারি চালু হয়। ১৯৯৯ সাল থেকে এখানেই লিভার সংশ্লিষ্ট পিত্তনালী সংযোজন, পেনক্রিয়াস রিসেকসেশনসহ অন্যান্য অপারেশন সম্পন্ন হচ্ছে। তিনি লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব। ২০০৮ সাল থেকে জেনেভার ওয়ার্ল্ড হেপাটাইটিস এলায়েন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন।

তিনি ওই সংস্থার পাবলিক হেলথ প্যানেলের অন্যতম সদস্য। এছাড়াও ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভৃতি দেশে গিয়ে লিভারবিষয়ক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কনফারেন্সে নিয়মিত লেকচার প্রদান করছেন। ঢাকার বারডেম হাসপাতালে এরই মধ্যে দুটি সফল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন হয়েছে অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর তত্ত্বাবধানেই। সম্প্রতি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিষয়ে ‘আমার স্বাস্থ্য’র পক্ষ থেকে কথা হলো বাংলাদেশের বিশিষ্ট লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি বলেছেন সম্ভাবনা ও সমস্যাা নিয়ে নানা কথা।

আমার স্বাস্থ্য : দেশে কি পরিমাণ লিভার রোগী রয়েছে এবং কোন পর্যায়ে গেলে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রয়োজন হয়? অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী : ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুসারে বাংলাদেশের ৪-৭ ভাগ লোক হেপাটাইটিস বি, ২-৩ ভাগ লোক হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত। এছাড়াও ফ্যাটি লিভারের কারণে সিরোসিস, ওষুধ ও অ্যালকোহলজনিত অন্যান্য প্রতিক্রিয়ায় লিভারের নানা রোগ, জণ্ডিস, পিত্তনালীর ডিফেক্ট, মেটাবলিক লিভার ডিজিস প্রভৃতি নানা রোগ তো আছেই। বলা যায়, শতকরা ১০ জন লোক লিভারের নানা রোগে আক্রান্ত। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বের ইন্টারমিডিয়েট জোনে আছি। তবে লিভারের সবরোগে ট্রান্সপ্ল্যান্ট দরকার হয় না।

১০০ রোগীর লাস্ট স্টেজ লিভার ফেইলর বা শেষ পর্যায়ে গেলে তাতে হয়তো ২০ জনের ক্ষেত্রে ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্ভব। লিভারে টিউমার হলে কোন সময় পিত্তনালী ব্লক হলে, অগ্নাশয়ের টিউমার হলে, কোন কারণে অগ্নাশয় নষ্ট হলে, ক্যান্সার হলে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা জটিল সার্জারি করতে হয়। তবে এসব রোগে এর আগে বিনা চিকিত্সায় মানুষ মারা যেত, আবার সামর্থ্যবানরা বিদেশ গিয়ে চিকিত্সা করাত। আমার স্বাস্থ্য : প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আপনারা দুটি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন করেছেন। এ বিষয়ে আপনাদের অভিজ্ঞতা কেমন? অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী : বারডেম-এ আমরা অত্যন্ত সীমাবদ্ধতার মধ্যেই দুটো লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফলভাবেই সম্পন্ন করেছি।

বর্তমানে লিভার দাতা ও গ্রহীতারা সবাই সুস্থ ও ভালো আছেন। তবে এখানে যন্ত্রাংশের দারুণ অভাব রয়েছে। প্রথম লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের বেলায় ৪টি এবং দ্বিতীয় ট্রান্সপ্ল্যান্টের বেলায় ২টি প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এনে ওইসব রোগীর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন করতে হয়েছে। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের পুরো সেটিংসের জন্য কমপক্ষে ১৫-১৬ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি লাগে, যা আমাদের নেই। আমরা বর্তমানে ওই যন্ত্রপাতিগুলো ম্যানেজ করার চেষ্টাসহ পূর্ণমাত্রায় সেটআপ সম্পন্ন করার চেষ্টায় দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি।

যাতে বারডেম হাসপাতালে স্বয়ংসম্পূর্ণ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্ভিস চালু করা যায়। সরকারও আশ্বাস দিয়েছে, বারডেম-এ পরিপূর্ণ লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগ করতে সহযোগিতা করবে। এখন যন্ত্রপাতিগুলো পেয়ে গেলেই আমরা নিয়মিত ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম শুরু করতে পারি। আমার স্বাস্থ্য : লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টে খরচ কেমন হয়? এ বিষয়ে ভয়াবহতা বা ঝুঁকি কতটুকু? অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী : লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে বর্তমানে সিঙ্গাপুরে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা, ভারতে ৪৫ থেকে ৫০ লাখ টাকা, ইউকে-ইউএসএ’তে ২ থেকে আড়াই কোটি টাকা খরচ পড়ে। বাংলাদেশে ২৫-৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হয়।

এখানে অনেকগুলো ডিসিপ্লিন মেইনটেইন করতে হয়, ২টা টিম কাজ করে। তবে আমরা নিজেরা এখন পর্যন্ত কোনো টাকা-পয়সা বা বেনিফিট নিচ্ছি না। এখানে বিজনেস নয়, বরং টেকনোলজি ডেভেলপ করে ভবিষ্যতে পরিপূর্ণভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট চালু হলে হয়তো টাকা-পয়সা নেয়ার বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। তবে আমরা চাচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষ যাতে নিজ দেশে অতি অল্প খরচে আন্তর্জাতিক মানের লিভার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট করাতে পারে। লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট অনেক ঝুঁকিপূর্ণ এবং জটিল সার্জারি।

এতে সাধারণত ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা সময় লাগে। একজন সুস্থ লোকের দেহ থেকে লিভারের কিছু অংশ কেটে নিয়ে সংযোজন করা হয়। এতে সাধারণত ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই দাতার লিভার গ্রো করে বা আগের মতো পূর্ণ হয়ে যায়। বিশ্বে লিভার গ্রহীতার মৃত্যুঝুঁকি ১০ শতাংশের মতো হলেও লিভার দাতার তেমন কোনো মৃত্যুঝুঁকি নেই বললেই চলে। যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ০.৫ শতাংশ বা তারও কম।

এ পর্যন্ত পৃথিবীতে হাজার হাজার লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট হয়েছে যেখানে ডোনারের মৃত্যু হয়েছে ১৬/১৭ জন। আমার স্বাস্থ্য : লিভারের রোগ না হওয়ার জন্য সাধারণত কী কী সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার? অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী : প্রথমত দরকার গণসচেতনতা, যার মাধ্যমে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য হেপাটাইটিস বি’র জন্য টিকা নেয়া, সব গর্ভবতী মায়ের হেপাটাইটিস বি ও সি’র স্ক্রিনিং করা উচিত। এক্ষেত্রে মায়ের পজিটিভ থাকলে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে টিকা দিতে হয়। যদিও বাংলাদেশে একটি ভুল নিয়ম চালু আছে যে, এক্ষেত্রে ৬ সপ্তাহের মধ্যেই হেপাটাইটিস বি’র টিকা দিলেই হয়।

কিন্তু এটা সঠিক না, এটা সম্পূর্ণ ভুল তথ্য যা সরকারি টিকা কার্যক্রমেই অন্তর্ভুক্ত। লিভার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বারবার বলা সত্ত্বেও এই ভুল এখনও সংশোধন হচ্ছে না। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত। সাক্ষাত্কার : আতাউর রহমান কাবুল মুল লিঙ্ক : Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.