আমি একজন অরাজনীতিবিদ
আমার এইখানে একটা নামাজঘর আছে। জাপানিজ একটা বাসা ভাড়া নিয়া নামাজঘর বানানো হইছে। উত্তর পশ্চিম কোনাকুনি কেবলা ঠিক করা, তাই তেছরা হইয়া নামাজ আদায় করতে হয়। যিনি কোরান হাদিসের আলোচনা করেন তিনি অতি পরহেজগার আর জ্ঞানী লোক, বাংলাদেশের বড় এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসের মানুষ, বড়ই এলেমদ্বার। তার একখান ছোট পোলা আছে, বড়ই সৌন্দর্য।
বাপ পোলারে নিয়াই নামাজঘরে আসে, তিন চার বছরের ছাওয়াল, নামাজঘরে খেলে। নামাজের সময় দৌড়াদৌড়ি করে, ভালই লাগে।
গত রবিবার সন্ধ্যায় কোরান হাদিসের আলোচনা শেষে এশার নামাজে দাড়াইছি। হঠাৎই ছোট পোলাটার আর্তচিৎকার। আমার কাতারেই পোলাটার বাপও নামাজে দাড়াইছে।
পোলাটার বুকফাটা চিৎকারে সবাই বেসামাল, বাপেরে পাছড়াইয়া ধইড়া কানাতেছে, কান্না আর থামে না। আমার পাশের এক ভদ্রলোক নামাজের নিয়ত ছাইড়া বাচ্চাটারে ধরতে গেছে, কিন্তু বাচ্চা কিছুতেই বাপরে ছাড়া আর কেউর কাছে যাবে না, আর ঈমানদার বাপও নামাজের নিয়ত ছাড়তেছে না। আসলে বারান্দায় বাচ্চায় খেলতে গিয়া তার পায়ে লোহার কিছু একটা ঢুকে মারাত্মক ব্যথা পাইছে এবং রক্তপাত হইতেছে। খুবই খারাপ দশা, কিন্তু বাচ্চার ঈমানদার বাপজান কিছুতেই নিয়ত ছাড়বেন না। ইজিপশিয়ান বেটা ঈমাম, একেক সুরা পড়ে বিশাল লম্বা, আরো তিন রাকাত নামাজ বাকি, বাচ্চাটার আর্তনাদে নামাজঘর বো বো করতেছে, কিন্তু ঈমানদার বাপ দ্বীন দুনিয়া ভুইলা আল্লার লগে ভালবাসায় ব্যস্ত।
আরে উল্লুক আল্লায় কি তর ভালবাসা বেইচা আইজকা রাতের সদাই কিনব! আরে বেকুব, তুই আল্লারে এক বেলা না ডাকলে কি আল্লাহর বালটা ফালানি যাইব? ঐ শিক্ষিত ঈমানদার পরহেজগার বান্দা পুরা এশার নামাজ শেষ কইরা পুলারে ধরল। ততক্ষনে পুলার বারটা। মানুষরেই যে ভালবাসতে জানে না, সে আল্লাহরে ভালবাসবে কেমনে? এইসব নামাজী আর পরহেজগার ঈমানদাররা হচ্ছে মানবতার শত্রু। এরা আল্লারে ভালবাইসা নিজের ধনের চিপায় বোমা বাইন্ধা হাজারো মানুষ মাড়ার জন্য ঝাপ দিতে পারে, এরাই ৭০টা হুরের চিন্তায় পার্থিব জীবনকে একটা দোজখ বানাইয়া রাখে, পোলা মাইয়া সংসার বাদ দইয়া এরা নাকি আল্লারে পাইতে চায়, পোলাপানগুলারে নরকের কীট বানায়, দুনিয়ায়ই এরা একটা দোজখ তৈরি করে, এরাই প্রকৃত জাহান্নামবাসী। এইরকম কিছু কীট আমাদের আশেপাশে সবসময়ই থাকে।
চোখখান খোলা রাখলে এইসব কীটের সন্ধান আপানারাও পাবেন।
এই পৃথিবীতে যারাই আল্লারে (স্রস্টারে) ভালবাসছে সবচেয়ে বেশি, তারাই মানুষকে ভালবাসে সবচেয়ে কম। তাই আসেন মানুষরেই ভালবাসি, আল্লায় কোন যুগে কোন কালে বাল ছিড়তেও দুনিয়ায় আসে নাই, আসবেও না। যা করার আমরাই করব, আমরাই করছি, বরং মানুষের জন্য কিছু করলে যদি কোন আল্লা থাইকাও থাকে, তিনি ঐসব হুরপাগল ঈমানদারের চেয়ে আপনাকেই মূল্যায়ন করবে বেশি, এইটা গ্যরান্টি। আজব, তবে এটাই সত্য: যারা ঈশ্বরকে ভালোবেসেছে সবচেয়ে বেশি, মানুষের প্রতি ভালোবাসা তাদের সবচেয়ে কম।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।