মানুষে মানুষে সমানাধিকারে বিশ্বাস করি সম্প্রতি সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দু'দিনব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। ২ দিনে মোট ৫টি ছবির ৬টি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। দর্শক এসেছিল ২৯৫২ জন। হলরুমের আসন ৪৫০ এর সাথে বাইরে থেকে ১০০ চেয়ার প্রতিটি শো'তেই রাখতে হয়েছে। প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন বিকালে স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রদর্শিত হয় 'দ্যা টার্মিনাল' চলচ্চিত্রটি।
একই দর্শককে সব ছবি না দেখিয়ে সোসাইটি অনেক সব দর্শককে একটি করে ছবি দেখানোর চেষ্টা করায় সিনেমাগুলোকে এভাবে ভাগ করে দেখানো হয়েছিল। যাই হোক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে টার্মিনাল ছবিটি সিলেক্ট করতে আমিই মুখ্য ভূমিকা রাখি। তাই এর উপর একটি লেখা দেয়ার দায়িত্বও আমার উপর বর্তায়। লেখাটি আমি ব্লগে শেয়ার করলাম।
ভিক্টর নভরস্কি, পূর্ব ইউরোপের রাজনৈতিক অস্থিরতার একটি ক্ষুদ্র দেশ ক্রোকোজিয়ার (কাল্পনিক) নাগরিক।
একটি বিশেষ উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক আসার পথে নিউইয়র্ক এয়ারপোর্টে নেমেই এক অদ্ভুত সমস্যার মুখোমুখি হতে হলো তাকে। ভিক্টর দেশ ছাড়ার পরপরই সেখানে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের ঘটনা ঘটায় আমেরিকা দেশটির স্বীকৃতি স্থগিত করে। অর্থাৎ সেদেশের পাসপোর্ট যুক্তরাষ্ট্র আর গ্রহণ করছে না। তাহলে ভিক্টর কী করবে? সে ফেরতও যেতে পারবে না, এয়ারপোর্টের ইন্টারন্যাশনাল জোনের বাইরেও বের হতে পারবে না! এয়ারপোর্টের নিরাপত্তা প্রধান যে কিনা তার দক্ষতার কারণে প্রমোশন প্রত্যাশী তিনি ভিক্টরকে বললেন, যতক্ষণ না তার ‘স্ট্যাটাস’ নির্ধারিত হচ্ছে ততক্ষণ সে যেন এয়ারপোর্টেই থাকে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজি জানা ভিক্টর ধীরে ধীরে টার্মিনালের অভ্যন্তরে নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করে।
কিন্তু এয়ারপোর্টের টার্মিনালে এই অনাহুত অতিথি নিরাপত্তা প্রধানকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলবে এবং তার প্রমোশনের পথে অন্তরায় হতে পারে ভেবে তিনি ভিক্টরকে নানভাবে টার্মিনাল থেকে বিতাড়িত করার চেষ্টা শুরু করেন। অন্যদিকে ভিক্টর তার সহজাত বন্ধুবৎসলতা এবং চারিত্রিক উচ্ছ্বলতা দিয়ে সেখানে কর্মরত সাধারণ কর্মচারীদের সাথে চমৎকার বন্ধুত্ব তৈরি করতে সক্ষম হয়। একজন সুন্দরী ফ্লাইট এটেনডেন্টের প্রতি ভিক্টরের দুর্বলতা তৈরি হয়। সে যখনই এয়ারপোর্টে আসে ভিক্টর সে দিকে ছুটে যেতে থাকে। ঘটতে থাকে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা।
ভিক্টর কী পারবে নিউইয়র্কে আসার তার যে উদ্দেশ্য তা পূরণ করতে?
ফ্রান্সের একটি এয়ারপোর্টে একজন ইরানি নাগরিকের এভাবে আটকে যাওয়ার বাস্তব ঘটনা ঘটেছিল, যা এই ছবির প্লট তৈরিতে প্রেরণা যুগিয়েছে বলে ধারণা করা হয়। ‘দ্যা টার্মিনাল’ ছবিটি একটি রোমান্টিক কমেডি হলেও এর মধ্য দিয়ে মানবিকতা, বন্ধুত্ব এবং ত্যাগের মহিমাকে শৈল্পিকভাবে তুলে ধরেছেন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সিনেমা নির্মাতা স্টিফেন স্পিলবার্গ। স্পিলবার্গের অসাধারণ নির্মাণশৈলীর সাথে এ ছবির সেরা সংযোজন কেন্দ্রীয় চরিত্রে টম হ্যাংকসের অনবদ্য অভিনয়। একজন অভিনেতার সেরা গুণ যদি হয়ে থাকে মনোযোগী শ্রোতা হওয়া তবে হ্যাংকস অবধারিতভাবেই সেই অসাধারণ অভিনেতাদের অন্যতম। সমালোচকদের প্রশংসা তিনি কুড়িয়েছেন তার ‘এভরিম্যান’ কোয়ালিটি এবং সময় উপযোগী কমেডির জন্য।
টার্মিনাল চলচ্চিত্রটি টম হ্যাংকসের অনবদ্য অভিনয়গুণের এক অনন্য উদাহরণ। এ ছবিতে দর্শকের সাথে তার নিঃশব্দ যোগাযোগ স্থাপন এককথায় অসাধারণ। প্রখর বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কিন্তু একেবারেই সাধারণ একজন মানুষের চরিত্রকে চমৎকারভাবে তুলে ধরার পাশাপাশি তার টার্মিনালে বসত এবং সেখানে টিকে থাকার সক্ষমতা অর্জন ও সর্বাগ্রে মানবিকতা এবং বন্ধুত্ব টার্মিনাল ছবিতে ভিক্টরের চরিত্রটিকে অনবদ্য রূপ দিয়েছে। স্পিলবাগের্র সিনেমার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ক্রমেই বৃহত্তর আবেগকে মূর্ত করে তোলা। আর হ্যাংকস হচ্ছেন ছোট ছোট বিশেষ মুহুর্তকে শৈল্পিক মানে নিয়ে যাওয়ার সেরা অভিনেতা।
যেমনটি তিনি নিখুঁতভাবে করেছেন এই ছবির শেষ দৃশ্যে দর্শকের চোখে পানি আনতে পেরে। বিশ্বসেরা নির্মাতা আর বিশ্বসেরা অভিনেতার যুগল দক্ষতার অনবদ্য কীর্তি ‘দ্যা টার্মিনাল’। ‘ফিলাডেলফিয়া’ এবং ‘ফরেস্ট গাম্প’ ছবিতে অসামান্য অভিনয়ের জন্য ব্যাক টু ব্যাক অস্কার জয়ের এক দশক পরে আরও পরিণত, ক্ষুরধার এক হ্যাংকসকে আমরা পাই টার্মিনাল ছবিতে। ২০০৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি ব্যবসায়িকভাবেও অত্যন্ত সফল।
ছবিটি দেখার পর অনেক শিক্ষার্থীই আমাকে জানিয়েছে তাদের টম হ্যাংকস এর অভিনয়ের প্রেমে পড়ার কথা।
টার্মিনাল হ্যাংকনের সেরা ছবি নয়, নয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিও কিন্তু অন্য ছবিগুলোর মতই এখানেও তাকে আমরা অসাধারণ অভিনেতা হিসেবেই পেয়েছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।