আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বুমেরাং

সকাল আর আসেনা গোলাপ হয়ে ফোটেনা কিশোরীর হাতে ১ -সম্মানিত দর্শক ও শ্রোতামন্ডলী আপনারা যার বয়ান শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন তিনি এখন আপনাদের সামনে তার মূল্যবান বয়ান তাশরিফ আনবেন- আল্লামা ছদররুদ্দি ছাহেবের আগমন শুভেচ্ছার স্বাগতম'''' নারায়ে তাকবির- -আল্লাহু আকবার দ্বীন ইসলাম- -জিন্দাবাদ। আউযুবিল্লাহি মিনাশাই ..... আম্মাবাদ। উপস্থিত মুসল্লিয়ানে কেরাম রাসুলে আশেকিন 'আসসালামুআলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ' ................................................................... .................................................................. তো যা বলছিলাম-আল্লাহপাক যাদেরকে বেহেস্ত নসিব করবেন তাদেরকে কম করে হলেও সত্তরটি হুর দান করবেন। আপনারা জানেন সেই হুর কেমন হবে? বান্দারা সেই হুর এমনই খুবসুরত হবে-এমনই রুশনাই হবে তাদের শরীরে তারা যদি আল্লাহর আসমানে তাদের একটি কনিষ্ঠা আঙ্গুল মেলে ধরতেন তাহলে সূর্যের রোশনি ম্লান হইয়া যাইত- -সোবহানাল্লাহ -তারা যদি পৃথিবীর দিকে থুথু দিত সাগরের সব পানি মধু হইয়া যাইত- -সোবহানাল্লাহ -আপনাদের আল্লাহপাক এমন হুর প্রদান করবেন। আর তাদের সাথে আপনাদের একবারের সঙ্গমকাল হবে চল্লিশ হাজার বছর।

এখানেই শেষ না -অন্যান্য হুরগুলো সঙ্গমের জন্য একের পর এক লাইন ধইরা থাকবে- .......................... -ছি! মাশরুর কিছুটা শব্দ করেই ধ্বনিটা উচ্চারণ করে। শব্দটা তৌফিক সাহেবের কান এড়ায় না। - কি হলো ইয়াং ম্যান? মাশরুর একটু সময় নেয় । -না, স্যার কিছু না। তৌফিক সাহেব হাসেন।

-বুঝলে আমাকে অনেক কিছুই করতে হয়। বেশ্যালয়ে বেশ্যাদের স্বার্থের কথা বলে দীর্ঘ বক্তৃতা দিতে হয়। মসজিদে এসে আবার এসব অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়। জনপ্রতিনিধি হলে সবার কথাই ভাবতে হয। কৌফিক সাহেব এ নসিহত অনুষ্ঠানের আয়োজক।

বড় ব্যবসায়ী,রাজনীতিক, সমাজসেবক। মাসরুর, তৌফিক সাহেবের ব্যক্তিগত সহকারী। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিটা দেখেই মাসরুর ভাইভাতে এটেন্ড করে। একটা চাকরি তার খুবই দরকার। সাধারণ বেশভূষা,সহজ সরল কথায় প্রশ্নের উত্তর দেয়।

তৌফিক সাহেবের এটাই ভাল লাগে। তৌফিক সাহেবের এমন ছেলেই দরকার ছিলো। মেধাবী ও সরল। তার ধারণা এরাই প্রকৃত কাজের। তৌফিক সাহেব মাসরুরের সাথে সম্পর্কটা সহজ রাখেন।

মাসরুরের সরলতা সততা প্রায়ই তৌফিক সাহেব কে অবাক করে। তিনি রহস্য নিয়ে তার দিকে তাকান আর মিটমিট হাসেন। নসিহতের অনুষ্ঠান শেষ করে মাসরুর কে নিয়ে গাড়িতে উঠেন। শহরে ফিরতে হবে। - -বুঝলে মাসরুর এসবই লোভের টোপ।

বোকারা এটাকে ধর্ম জ্ঞান করে। তারা ধর্মের মারেফাত জানেনা। ধর্ম কি?কেন?এসব তারা জানতে চায় না তারা শুধু মানার পক্ষে। আবার ধর্মের যারা মারেফাত-হাকিকত বুঝে তারা আবার সেটা পালন করে না কারণ তখন সেটা পালন করা না করা তাদের কাছে দুইই সমান। তৌফিক সাহেব বলে চলেন ।

মাসরুর হু-হার ভেতরে জবাব দেয়। তৌফিক সাহেব বলে চলে- সমাজটা চিরকালই অসাম্যের। সাম্যের ধারনাটা সুন্দর ,চমৎকার কিন্ত্ত অবাস্তব। ধর্মও সেটার সমাধান করতে পারেনি। পারেনি বলেই যাদের বেশি আছে তাদেরকে বলা হলো তোমরা যাদের নেই তাদের দাও।

আবার যাদের নেই তাদেরকে বলা হলো ধৈর্য্য ধরো এখানেই শেষ নয়। ওখানে সব পাবে। মাসরুর কেবল শুনে যায়। সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করা কখনোই সম্ভব না। কেননা যারা শক্তিশালী তারা সিদ্ধান্তে অটল।

শক্তিতে অটল। সময়ে সময়ে দুর্বলেরা কেবল কাই কুই করেই ক্ষ্যান্ত দেয... তৌফিক কথাটা বলেই ফেলে। -যদি জানেন ই এসব অনুষ্ঠান বৃথা তাহলে টাকা খরচ করেন কেনো? -হাহা । ভাল বলেছ। আমি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করি।

আমাকে প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজেনী কাজ করতে হয়। মাসরুর প্রায় ই তৌফিক সাহেব কে বুঝতে পারে না। মাঝে মাঝে মনে করে তৌফিক সাহেব লোক খারাপ না। সকল কথা অকপটে স্বীকার করেন । অনেক খোলা মনের।

তবুও সময়ে সময়ে তাকে বুঝতে কষ্ট হয়। ২ -সব ঠিক ঠাক করে রেখো যাতে মানুষ বেশি হলেও মারা না পড়ে। মানুষ নিয়ন্ত্রনের যথেষ্ট ব্যবস্থা কর। -জ্বি স্যার সব ঠিক আছে অসুবিধা হবে না। তৌফিক সাহেব একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন।

ক'িদন পর গ্রামে তার এলাকায় গরীব দুঃখীদের মাঝে কাপড় বিতরণ করবেন। কয়েক ট্রাক কাপড় পাঠানো হয়ে গেছে। গাড়িতে যেতে যেতে মাসরুর তৌফিক সাহেবকে কিছু বলার জন্য উসখুস করতে থাকে। তৌফিক সাহেব চোখ দেখেই ভেতরটা পড়তে পারেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন কিছু বলবে ইয়াং ম্যান? -একটা কাপড় হাজার হাজার মানুসকে দেয়া আর ২০ জন মানুষকে স্বাবলম্বী করা কোনটা বেশি ইফেক্টিভ? তৌফিক সাহেব মিষ্টি হাসেন।

তারপর চোখে সহজ দৃঢ়তা নিয়ে বলেন- -দেখো কাউকে স্বাবলম্বী করার জন্য আমি কাপড় বিলাই না। সহজ কথায় যদি বলি বলব আমি নিজেকে প্রকাশ করতে চাই। অনেকটা ঈশ্বর যেমন করেছেন। তো সেটা বিশ জন না হয়ে বিশ হাজার হলেই ভালো। হা হা... -কিন্ত্ত? -কিন্ত্ত আবার কি?' মানুষ হাত পেতে নেবে আমি হাত বাড়িয়ে দেব' তাতেই রাজ্যের আনন্দ।

তৌফিক সাহেব মাসরুরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলেন- মন খারাপ করো না মাসরুর। আমি সহজে কঠিন সত্য কথাগুলো বলি। তুমি অনেক সরল আর সৎ আছো। সাথে থাকো আরো কত কিছু দেখবে। কাপড় বিলানো হবে ঘোষনা শুনে দশ বিশ গ্রামের মানুষ ভেঙ্গে পড়ে।

যার গায়ে শক্তি বেশি সে পায় দশটি আর যার শরীর দুর্বল দিন শেষে তারা খালি হাতে বাড়ি ফেরে। বিষয়টা নিয়ে মাসরুর কৌফিক সাহেবর সাথে কথা বলেন। -কে পেল আর না পের তা নিয়ে আমি ভাবছি না। দশ গ্রামের লোক জানলো আমি কাপড় বিলি করেছি। দ্যাটস এনাফ!যার শক্তি আছে সে পাবে যার নাই সে পাবে না।

এটাই হল সারভাইবাল অফ দ্যা ফিটেস্ট! কথাগুলো বলতে পেরে তিনি মিটমিট করে হাসেন। বাঁকা চোখে মাসরুরের দিকে তাকান। ৩ একদিন রাতের বেলা তৌফিক সাহেবের রুমে মাসরুরের ডাক পড়ে। তিনি টিভি দেখছেন। মাসরুর রুমে প্রবেশ করতেই তৌফিক সাহেব ইশারায় সোফায় বসতে বললেন।

টিভি চলছে। অ্যানিমেল প্লানেট স্যাটেলাইট চ্যানেল। দেখানো হচ্ছে জগতের শক্তিধর প্রাণীরা কিভাবে দুর্বলদের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। কোথাও একই প্রজাতির মধ্যেও ব্যাপারটি ঘটে। সবল আর দুর্বল দুটি ছানার মধ্যে সবলটি দুর্বল ছানাটিকে মেরে ফেলে।

কিংবা মা পাখির দেয়া খাবারের পুরোটাই খেয়ে নেয়। দুর্বলটা কাছেও ভিড়তে পারেনা। ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অনুষ্ঠান শেষ হলে তৌফিক সাহেব মাসরুরের দিকে তাকান। বলেন 'বুঝলে মাসরুর এটাই প্রকৃতির নিয়ম'।

মাসরুর বুঝতে পারে ইচ্ছে করেই তৌফিক সাহেব মাসরুরকে অনুষ্ঠানটি দেখালেন। মাসরুর কী বলবে বুঝে পায় না। মনটা বিষিয়ে উঠে। তৌফিক সাহেব বলেন- 'তুমি অনেক বেশি সেন্টিম্যান্টাল আর তোমার এইসব ইনোসেন্ট সেন্টিম্যান্ট আমার সাথে কাজ করতে গেলে কাজের সমস্যা করবে তাই তোমাকে প্রকৃতির প্রকৃত নিয়মটা জানতে হবে'। মাসরুর কিছুটা শ্লেষের সাথেই বলে 'কিন্ত্ত মানুষ তো আপনার বনের পশু না'।

তৌফিক সাহেব দৃঢ় হন। বলতে থাকেন। -আলবত পশু। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যেভাবে দেখ মানুষকে পশু থেকে আলাদা করতে পারবে না। মানুষের মধ্যে সুকুমার গুণ যা আছে পশু সমাজের ভিতরেও এমন দেখতে পাওয়া যায়।

তুমি এক কাজ করো মাসরুর আরো ভাবো আর দেখো তোমার ম্যান্টালিটির একটা চ্যাঞ্জ দরকার। আর সেটা আমার সুবিধার জন্যই। তুমি আমার সাথে কাজ করবে আর আমার অনেক কিছুই তুমি হজম করতে পারবে না। আমাকে একটা খারাপ মানুষ ভেবে আড়ালে নাক সিটকাবে সেটা হলে ব্যাপারটা ভাল লাগবে না। আর যদি শেষ মেষ মানতেই না পারো তবে আমাকে বলো কোথাও বেটার জব হবার প্রসিবিলিটি থাকলে আমি সুপারিস করব।

মাসরুর নীতিবান ছেলে। সে সৎ থাকা একটা কর্তব্য মনে করে। বিবেক থেকে । নিজের কাছে নিজে সৎ থাকার জন্য। আর কিছু না।

পরকালের শাস্তি কিংবা পুরস্কার তাকে আকৃষ্ট করে না। কিন্ত্ত সে ধীরে ধীরে একটা পরকালের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। সকল অনাচারের প্রতিশোধের জন্য হলেও। চিন্তাটা করে সে নিজেই হাসতে থাকে। রহস্যময় হাসি...... ৪ তৌফিক সাহেবর সাথে কাজ করতে গিয়ে আর কোন কনফ্লিক্ট হয় না।

বরঞ্চ ক্ষেত্র বিশেষে মাসরুর তার স্যারের মনের মত ব্যাখ্যা দেয়। তৌফিক সাহেব খুশি হয়। মাসরুর ধীরে ধীরে তৌফিক সাহেবের নাড়ি- নক্ষত্র আয়ত্তে নিয়ে আসে। মিডল ক্লাস ফ্রামিলির ম্যান্টালিটির অপরাধবোধ গুলো ঝেড়ে ফেলে প্র্যাকটিক্যাল ও স্মার্ট আচরণ করে। তৌফিক সাহেবের ইচ্ছে আগামী দিনে নির্বাচিত প্রতিনিধি হবেন।

বিগতদিনের মত। বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়। স্ত্রী পুত্ররা সবাই আমেরিকাতে বাস করেন। মাঝে মাঝে দেশে বেড়াতে আসেন। এ নিয়ে কথা হয় ।

-বুঝলে মাসরুর চারা যদি বুনতে হয় উর্বর মাটিতেই বুনবে'। (বলে একটা হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ে তার চোখে মুখে। ) -অসাম বলেছেন স্যার। ৫ তৌফিক সাহেব বিশ বিঘা জমি কিনবেন। তার নির্বাচনী এলাকায়।

একটা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরী করবেন। ইতোমধ্যে এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া হয় সে কথা। মানুষ ভাবে তাহলে ভালোই হবে। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে। সে উছিলায় রাস্তাঘাট মেরামত হবে।

নারীরা কাজ পাবে। কিছুদিনের মধ্যে টাকা পরিশোধ করে জমি রেজিস্ট্রি করে নেবেন। টাকা ক্যাশ দিতে হবে। ৬ একদিন সকাল বেলা মাসরুর তৌফিক সাহেবের রুমে এসে হাজির। -স্যার আমার ভালো একটা জব হয়েছে।

আমি আপনার অনুমতি নিয়ে চাকরিতে জয়েন করতে চাই'। তৌফিক সাহেব কিছুক্ষণ ভাবেন। তারপর হাসিমুখে বলেন গুড নিউজ। কবে জয়েন করতে চাও? -আগামী দুই দিনের মধ্যে'। -ভালোই হলো আমিও তোমাকে নিয়ে চিন্তা করছিলাম।

পারমান্যান্ট একটা জব তোমার দরকার ছিলো। তো জয়েন করে ফেল। মাঝে মাঝে এসো। জব ভালো না লাগলে যখন খুশি চলে এসো। আমার ব্যবসার কোন কাজে লাগানোর সুযোগ তৈরী হলে তোমাকে জানাব।

যোগাযোগ রেখো। উইস ইউর গুডলাক। ৭ তৌফিক সাহেব দলবল নিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে বের হন। যখন মেঘনা ব্রিজের উপর গাড়ি তখন একদল লোক তার গাড়ি আটকে দাঁড়ায়। চেতনানাশক রুমাল চেপে ধরে প্রত্যেকের মুখে।

৮ মাসরুর তার নতুন চাকরির অফিসে বসে চা খেতে খেতে পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছিলো। হঠাৎ তার চোখ আটকে গেলো একটা হেডিং এ 'ট্রাক এবং মাইক্রোর সংঘর্ষে বিশিষ্ট শিল্পপতির মৃত্যু' মাসরুর বিস্তারিত পড়ে আর মুখের কোণে মৃদু হাসির উদয় হয়। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।