মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন,মহেশখালী
মহেশখালীর পাহাড়ের মাটি কেটে পাশ্ববতী বদরখালীতে একটি জলাশয় ভরাট করার অভিযোগে পরিবেশ অধিদপ্তর মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত দুটি এসকেবেটার জব্দ ও মাটি কাটা বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনায় বদরখালী সমিতিকে পরিবেশ অধিদপ্তর ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। একই সাথে ভরাটকৃত মাটি অপসারণেরও নিদের্শ দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে মাটি বিক্রয়কারীদের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত দেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর।
পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ, স্থানীয় লোকজন ও একাধিক দায়িত্বশীল সুত্রে জানা যায়, চকরিয়াস্থ বদরখালী সমবায় কৃষি ও উপনিবেশন সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকসহ সমিতির গুটিকয়েক পরিচালক মিলে স¤প্রতি বদরখালী বাজারের সাথে লাগোয়া দীর্ঘদিনের পুরানো বিশালাকার একটি জলাশয় ভরাট করে দোকান ঘর নিার্মনের জন্য প্লট বরাদ্ধে হাত দেয়। মোটা টাকার বিনিময়ে বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা ও অন্যন্যদের ম্যানেজ করে গত ১ সাপ্তাহ ধরে মহেশখালীর পাহাড়া ও পাহাড়ের খাদ থেকে এসকেবেটার দিয়ে মাটি কেটে শতশত ডাম্পারযোগে মাটি নিয়ে জলাশয় ভরাট করে।
১৩ অক্টোবর বিকালে পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ এখানে অভিযান চালিয়ে ২টি এসকেবেটার জব্দ কওে কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। গতকাল ১৫ অক্টোবর পাহাড় কাটা ও জলাশয় ভরাট কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের ঢাকাস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে তলব করা হয়েছিল।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মুনির চৌধুরী জানান, মহেশখালীর উত্তর নলবিলা নামক স্থানের পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে বেআইনীভাবে মাটি কেটে চকোরিয়ার একটি পুরাতন জলাশয় ভরাটের অপরাধে পরিবেশ অধিদপ্তর এ টাকা জরিমানা করে। একইসঙ্গে জলাশয়টির ভরাটকৃত অংশ থেকে মাটি অপসারণ করারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অধিদপ্তরের পরিচালক(মনিটরিং এন্ড এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বদরখালি সমবায়, কৃষি ও উপনিবেশ সমিতির কর্মকর্তাদের ঢাকাস্থ পরিবেশ অধিদপ্তরে তলব করে এ দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
তিনি জানান, স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর এবং মহেশখালৗ ও চকোরিয়া উপজেলা প্রশাসনের তদন্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৪টি স্থানে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ৯৮ হাজার ঘনফুট বালি উত্তোলন করা হয়েছে। এসব বালি পাহাড়ী পানি নির্গমনের পথ বন্ধ ও কৃত্রিম বাঁধ তৈরী করে জমা করা হয়েছিল, যা পরিবেশের জন্য বিপর্যয়কর। এ ব্যাপারে কঠোরভাবে হুশিয়ার করে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি সমিতির কর্মকর্তারা এ ঘটনাকে তাদের অজ্ঞতা বশতঃ ভুল হিসেবে অভিহিত করে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন বলে জানান।
পরিবেশ অধিদপ্তর এর আগের দিন বিকেলে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে জরুরী রিপোর্ট চাওয়া হলে মহেশখালী ও চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে সরেজমিন প্রতিবেদন পাঠানো হয়, রিপোর্টে বলা হয়, অনতিবিলম্বে বালু উত্তোলন ও সংরক্ষিত বনের পাহাড়ে বসতিস্থাপন বন্ধ করা না হলে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়সহ পাহাড়ধ্বসের আশংকা রয়েছে। রির্পোটে বালু বিক্রয়কারী ও উত্তোলনকারী বদরখালী কৃষি সমবায় ও উপনিবেশ সমিতির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ করা হয়েছে।
বদরখালী এলাকার বাসিন্ধারা জানান, জলাশয়টি হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রাধীন ১১নং সøুইচ গেইট দিয়ে পানি চলাচল করে। এটি বদরখালী ইউনিয়নের একমাত্র পানি চলাচলের জায়গা। জলশয় ভরাট ও পাহাড়ের মাটি কেটে পরিবেশের মারাতœক বিপর্যয় ঘটানো হচ্ছে,এমনটি হলে ওই এলাকার লোকজনের জন্য বিষয়টি বেশ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
এব্যাপরে সমিতির এক সদস্য জানান, দেশের বৃহত্তম এই বদরখালী সমিতি প্রতিষ্টা হয় ১৯২৯ সালে। তখন থেকে এখানে এখানকার লোকজন অন্য লোকজনের কাছ থেকে জমি বেঁচাকে কেনা করতে পারেননা।
এই এলাকায় জন্ম হওয়া কন্যা সন্তানরা অন্যত্র বিয়ে হলেও সম্পদের ভাগ পাননা। শুধুমাত্র সমিতির দেড় হাজার সদস্য পরিবারের লোকজনের ভেতরেই সমিতির রেজুলেশনের মাধ্যমেই জমি বিনিময় করাহয়। এদিকে ওই এলাকায় প্রশাসনের দফায় দফায় পরিদর্শনের কারণে মহেশখালী ও বদরখালীর ওই এলাকায় সাধারণ লোকজনের মধ্যে এক প্রকারের তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা সহকারি পরিচালক আব্দুল্লাহ আলমামুন জানান,জব্ধ করা এসকেবেটারগুলো আপতত জব্ধ অবস্থায় রয়েছে। জরিমানার টাকা আদায় হওয়ার পর এনিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এটিএম কাউছার হোসেন জানান, পাহাড় কাটা এবং জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের এই অভিযানের ফলে সাধারণ লোকজনের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।