আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন মরণের সীমানা পেরিয়ে..........

পড়ালেখা ছাড়া আর সব কিছুই অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে করি........... এখন আমাদের টেস্ট পরীক্ষা চলছে। পরশু রাতে পড়ছিলাম। হঠাৎ মারুফার ফোন এল,''শুনেছ অলিদ নাকি মারা গেছে?''ভাবলাম মনে হয় ভুল শুনছি। আবার জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়ল। না ভুল শুনিনি ,অলিদ মারা গিয়েছে।

বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আসলে আমার কোন রিঅ্যাকশনই হচ্ছিলনা। মনে হচ্ছিল হয়ত খবরটা ঠিক নয়। কি করি কি করি--ভেবে নিয়ে ঠিক করলাম উর্মিকে ফোন দিই। কারণ ও ছিল অলিদের খুবই ভাল বন্ধু।

ফোন দিয়ে বললাম,''অ্যাই অলিদ নাকি মারা গেছে?''ওর কানে গেল বলে মনে হল না। ও খুব খুশী মনে বলল,''দেখলি বাংলাদেশ কেমন পেটাল?''আমি ওকে আবার প্রশ্নটা করলাম। আমার গলা কাপছিল। এবার বুঝতে পেরে ও পুরো থমকে গেল। ওর হতবিহবল গলা শুনতে পেলাম,''কী বলছিস?আমি ....আমি কিছুই জানিনা......৫ মিনিট পর কল দিচ্ছি....''দশ মিনিট পেরিয়ে গেল,কোন খবর নেই।

শেষে আবার কল দিলাম। ওপাশ থেকে কান্নায় ভেঙে পড়া গলা শুনে বুঝলাম সত্যিই অলিদ আর নেই। ওকে কী সান্তনা দেব...আমি নিজেই......কিন্তু একটু পরে শক্ত হলাম। না,কাঁদব না। একের পর এক ফোন আসতে লাগল।

সবারই কেমন ঘোর লাগা কন্ঠ,কেউ কাঁদছে। সবাই জানতে চাইছে কীভাবে হল। কী জবাব দেব,আমি নিজেই তো ঠিকভাবে জানিনা। আর একটুও পড়তে পারলামনা। শুয়ে পড়লাম কিন্তু ঘুম আসছিলনা।

পড়া বেশ খানিকটা বাকি ছিল। সকালে উঠে পড়ছি আবার ফোন পেলাম। অলীদকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হবে। সাড়ে আটটার ভেতর যেন পৌছে যাই। আমাদের পরীক্ষা দশটায়।

সাড়ে আটটার ভেতর পৌছতে হলে তখনই গোছাতে হবে। কিন্তু তখনও আমার পড়া শেষ হয়নি। একবার ভাবলাম যাব না। পরক্ষণেই খুব অপরাধী মনে হল। শেষ দেখা দেখব না?গুছিয়ে রওনা হয়ে গেলাম।

আমার সাথে আম্মুও গেল। স্কুলে পৌছে দেখি ক্লাসের মেয়েরা সব মাঠের এককোণে দাঁড়িয়ে। সবারই মুখ থমথমে,চোখ লাল। তখনও অলীদ আসে পৌছায়নি। খানিকক্ষণ পর অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌছাল।

মাঠের অপর কোণে দাড়াল। ওখানে এত ভীড় জমে গিয়েছিল যে আমরা কিছুই দেখতে পারছিলামনা। ওখানেই ওর জানাযা পড়ানো হল। এতদিন যে মাঠে অ্যাসেম্বলি করেছে সেখানেই ওর জানাযা পড়ানো হচ্ছে,যাদের সাথে এতদিন একসাথে পড়েছে তারাই আজ ওকে শেষ বিদায় জানাচ্ছে,ছোট ছোট ছেলেরা জানেনা কীভাবে জানাযার নামায পড়তে হয়,তারই আজ বড় ভাইয়ের জন্য নামাজ পড়ছে। আমরা দূর হতে দাঁড়িয়ে দেখছি।

কান্নার শব্দ। বান্ধবীরা কাদছে। আম্মুরা আরও বেশি। আমার চোখে সবই ঝাপসা হয়ে এল। সবাই লাইন করে ওকে দেখছিল।

একজন স্যার এসে আমাদের ডেকে নিয়ে গেলেন। যাকে ইউনিফর্ম ছাড়াদেখার অভ্যাস নেই তাকেই দেখলাম কাফনে জড়ানো,যেন কতই না শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। কেমন ঘোরের মত ওকে পেরিয়ে এলাম। আর পারলাম না..........চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে অবিরাম......আমার একার না,সবার। পরে মনে হচ্ছিল ওকে শেষবারের মত ভাল করে দেখে নেয়া উচিৎ ছিল....... আর তো কখনও দেখতে পাবনা।

আল্লাহ ওকে জান্নাতে যাবার তৌফিক দান। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.