জেগে, ঘুমিয়ে, আড্ডায়, গল্পে, প্রার্থনায়, কবিতায়, সিনেমায়- সবখানে শুধু স্বপ্ন দেখি। আসিফ মহীউদ্দিনের ব্লগ বাতিল করা হয়েছে।
:কেন বাতিল করা হয়েছে? – কারণ সরকারের পক্ষ থেকে চাও এসেছে।
:কেন সরকার ব্লগ বাতিলের চাপ দিলো?- কারণ সরকার আরেকটা “থাবা বাবা ইনসিডেন্ট” দেখতে চায় না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে এই বাতিলের ঘটনাটা কি “বাকস্বাধীনতার উপর আঘাত নাকি বাকস্বাধীনতার রক্ষায় পদক্ষেপ?”
বাকস্বাধীনতার উপর আঘাতঃ
যখন কারও ব্লগ, ব্লগার এবং ব্লগের মডারেটর বাদে অন্য কারও চাপে ব্যান করা হয়, তখন সেটা অবশ্যই বাক স্বাধীনতার উপর আঘাত।
কারণ এটা ব্লগের সংজ্ঞার পরিপন্থী।
ব্লগ মানে হচ্ছে যেখানে মানুষ নিজের মত করে নিজের চিন্তাভাবনা আরও কিছু মানুষের সাথে শেয়ার করতে পারবে কোন ধরনের বাঁধা ছাড়াই। এর ফলে সমাজ এগিয়ে যাবে। মুক্তচিন্তার চর্চা হবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ হবে। এখন রাষ্ট্রশক্তি যদি ব্লগের উপর আঘাত হানার সুযোগ পেয়ে যায় তবে এর কোনটাই হবে না।
কারণ কেউ রাষ্ট্রের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তার কন্ঠরুদ্ধ করা হবে, যা বাক স্বাধীনতার পরিপন্থী।
এই হিসেবে বলা যায়, ব্লগার আসিফ মহীউদ্দিনের ব্লগ বাতিল তার এবং আমাদের সকল ব্লগারদের বাকস্বাধীনতার উপর আঘাত।
বাকস্বাধীনতার রক্ষাঃ
আরেক অর্থে বলা যায়, এই পদক্ষেপে বাকস্বাধীনতার রক্ষাই হয়েছে। কিভাবে?
আমাকে নিয়েই ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই।
আমি খুব ভালো মানের ব্লগার নই।
ব্লগেও তেমন সক্রিয় না। আজ থেকে কয়েকমাস আগে ব্লগ কি জিনিস তা জানতামও না। যখন ব্লগে জেনারেল হই, তখন থেকেই ব্লগ সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করি। প্রায়ই দেখতাম কিছু ব্লগার পোষ্ট দিলেই পাঠকরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। মনে মনে ভাবতাম, “আমার লেখাও যদি এভাবে কেউ পড়ত !!” তখন এক ব্লগার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিভাবে ব্লগে হিট লেখক হব।
উত্তরে সে বলল, “তুমি ভালো লিখলে এমনিতেই তোমার লেখা সবাই পড়বে। আর অন্যের ব্লগে কমেন্ট করবা বেশি। অন্যের লেখা পড়লে তখন তারাও তোমার লেখা পড়তে আসবে। আর যদি শর্টকাটে হিট পাইতে চাও তাইলে গালি দিয়ে ব্লগ লেখো !!”
আমি কিছুটা অবাকই হলাম। সে তখন মজা করে বলল,” আরেহ, সিরিয়াসলি নাও কেন !! তবে ব্লগে হিট হওয়ার সবচেয়ে সস্তা পথ হচ্ছে কাওকে গালি দিয়ে পোস্ট দেওয়া।
আর সেটা যদি ধর্ম হয় তাহলে তো কথাই নেই !!”
আমি ব্লগে এসে বাস্তবেও দেখলাম তাই। ধর্মকে গালি দেওয়া পোস্টই হিট হত বেশি। কিছু মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ত প্রতিবাদের জন্য, কেউ যেত পোস্টদাতাকে গালি দেওয়ার জন্য আবার কেউ কেউ পোস্টদাতাকে ডিফেন্ড করতে যেত। এর ফলে সেই পোস্টের হিট হয়ে যেত আকাশচুম্বী !!
এখন এই যদি হয় ব্লগের অবস্থা তাহলে সেই ব্লগকে কি বাক স্বাধীনতার ধারক-বাহক হিসেবে অভিহিত করা যায়?
ব্লগে মডারেটর থাকেন, তাদের দায়িত্ব হচ্ছে অযৌক্তিক/ অসহিষ্ণু ব্লগিংয়ের প্রতিরোধ করা। অথচ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের ব্লগগুলার মডারেটররা এই ধরনের ব্লগিং রোধ করতে ব্যর্থ হয়েছেন।
কিংবা আরও ভালোভাবে বললে এই ধরনের ব্লগিংকে পরোক্ষভাবে উৎসাহই দিয়েছেন। কারণ এতে ব্লগসাইটের ট্রাফিক বাড়ে। বিজনেস ভালো হয়।
ব্লগকে যদি একটা পরিবার হিসেবে ধরা হয় তাহলে ব্লগের মডারেটররা হচ্ছেন সেই পরিবারের কর্তাব্যক্তি। তাদের দায়িত্ব পরিবারের সবাইকে শাসন করা যাতে এই পরিবারের সকল সদস্য সমাজে ভালোভাবে চলতে পারে।
এইভাবে ভাবলে বলা যায় যে, আমাদের মডারেটররা ব্যর্থ নিজ সংসারের দায়িত্ব নিজের হাতে রাখতে। তাদের উচ্ছৃঙ্খল সন্তানদের তারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তাই এখন বাইরের লোকেরা এসে নাক গলাচ্ছে।
তাহলে অবস্থা হচ্ছে এই যে, সরকার আসলে ব্লগের পরিবেশ সুস্থ রাখার মাধ্যমে বাকস্বাধীনতার রক্ষা করছে !!
ব্লগের উপর এর প্রভাবঃ
অবস্থা যেটাই হোক না কেন, ব্লগের উপর এই ঘটনার সুদূরপ্রসারী প্রভাব ভালো নয়। কারণ বাইরের লোকের হাতে ঘর-সংসারের দায়িত্ব থাকা উচিত না, এতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা থাকে না।
আজকে আসিফ মহিউদ্দিনের ব্লগ বাতিল হল, কালকে বাতিল হবে আমার- আপনার ব্লগ, যদি তা সরকারের দৃষ্টিতে ভালো না হয় !!
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, এর আগেওতো অনেকের ব্লগ বাতিল হয়েছে। তখন কি বাক স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ হয় নি ?- না হয়নি। কারণ তখন ব্লগের মডারেটরদের হাতেই তারা ব্যান খেয়েছে। সরকারের নাক গলানো লাগেনি। আর এখন সরকার নীতিমালা তৈরি করছে ব্লগ নিয়ন্ত্রণের জন্য !! এই নীতিমালার ফল কি হবে ভাবতেই গা শিউরে উঠে, কারণ আজকাল অধিকাংশ মানুষের মনে ধারণা (সরকারী আমলা, শিক্ষিত সম্প্রদায় সহ) ব্লগার মানেই নাস্তিক !! যেখানে ব্লগের এক লাইন পড়ারও কারও ধৈর্য নাই সেখানে সেই নীতিমালার খড়গ থেকে যে ভবিষ্যতে কোন ব্লগারই বাঁচবেন না তা এখনই বলে দেওয়া যায়।
প্রতিকার:
এই অদ্ভুত অবস্থার জন্য দায়ী কিন্তু আমরা সবাই !! কারণ আমরা আমাদের পরিবারের দায়িত্ব আরেকজনকে কেড়ে নেওয়ার অনুমতি দিয়ে দিয়েছি। তবে এখনও সময় শেষ হয়ে যায় নি। আমরা এখনও পারলে সব ব্লগ মিলে নিজস্ব একটা নির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি করতে পারি। এবং সেটা করা উচিত অতিশ্রীঘ্রই !!
নীতিমালা কেমন হবে সেটা ভাবার জন্য অনেক জ্ঞানী লোক এই ব্লগেই আছেন আমি শুধু একটা ছোট্ট উদাহরণ দিতে পারি এখানে।
“কেউ নাস্তিকতা নিয়ে লিখতে চাইলে সেটাতে তার পূর্ণ অধিকার আছে, কিন্তু সেটা যদি কাউকে গালি দেওয়া কিংবা নিম্নমানের স্যাটায়ার টাইপ হয় তাহলে তার সাথে বাংলা চটির কোন পার্থক্য নেই।
তাই একজন সাধারণ ব্লগার হিসেবে এই ধরনরে ব্লগ বাতিল হোক এটাই আমার চাওয়া। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সবার অধিকার যেন সমুন্নত থাকে। “
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।