আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগিং ছাড়ার আগে দু’টি কথা: বাকস্বাধীনতার হন্তারক কারা?



অনেক শখ করেই ব্লগে লিখতে এসেছিলাম। কিন্তু এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে বিদায় নিতে হবে জানতাম না। এই লিখাটাও লিখতাম না। তবে লিখতে হচ্ছে কারণ ব্লগে একটি লিখা এসেছে আমার ব্লগের সব লিখা মুছে ফেলার বিষয় নিয়ে। জবাব দেওয়া তাই জরুরী।

না, প্রায় এক বছর ধরে আমার লিখা ব্লগগুলো কর্তৃপক্ষ মুছে দেয়নি। আমি মুছেছি। রাগে দু॥খে অভিমানে আর ক্ষোভে। ব্লগারদের কাছে এই জন্য ক্ষমা চাই। কিন্তু সেগুলো মুছা ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিলনা।

বাকস্বাধীনতার কথা বলে যারা গলা ফাটায় তারা যখন নিজেদের হাঁড়ির খবর ফাঁস করলে গলা টিপে ধরার জন্য হন্যে হয়ে ওঠে, তখন আমার বাকস্বাধীনতা নাই বা থাকলো। আমার বুকে না হয় একদলা থুথুই জমা হয়ে থাকলো ওদের জন্য। আমি ঘেন্না করি ওইসব নপুংসকদের যারা নিজেরা বাকস্বাধীনতার বড় বড় বুলি আউড়ে অন্যের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দিতে চায়। হায়, গণতন্ত্রের মহাপুরুষের ছদ্মবেশ ধারন করে যারা সবচেয়ে বড় ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠে তাদেরকে মারার জন্য যোগ্য একটি পাটি জুতাও যে আমার নেই। দৈনিক সমকালে সম্পাদকসহ শীর্ষ পদে রদবদল সংক্রান্ত পর পর দু’টি পোস্ট আমি দিয়েছিলাম।

আগেই বলেছি আমি কোন পত্রিকার মানুষ না। তবে আমি লিখালিখি করি। এর জন্যই অনেক পত্রিকা আর টিভি চ্যানেলের মতো দৈনিক সমকালেও আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুবান্ধব আছেন। একসাথে আড্ডা দিই অনেক সময়। সেখানে আলোচনায় অনেক তথ্য পাই।

ব্লগে সেইসবই তুলে দিতাম। এই কারণে শুধু সমকাল নয় গোলাম সারোয়ার, মতিউর রহমান, প্রথম আলো বা যুগান্তর নিয়ে বেশ কিছু লিখা আমি ব্লগে দিয়েছিলাম। এর ধারাবাহিকতায় সমকাল বিষয়ে যা শুনেছি সেইসব কথা দু’টি পোস্টে তুলে ধরেছিলাম। আমি কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য বা কাউকে ছোট করার জন্য কিছু করিনি। কিন্তু যখন আমি লিখা দিই তখন চিন্তাও করতে পারিনি আমার এই লিখাগুলো কারো চাকরির জন্যও হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে।

যদি করতাম তাহলে লিখাগুলি দিতাম না। আমার লিখা প্রকাশের পর তা জেনে দৈনিক সমকালে কর্মরত আমার একজন বন্ধু একদিন হন্তদন্ত হয়ে এসে আমাকে দোষারোপ করে জানাল আমার জন্য নাকি তাদের অফিসে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এটা ঠিক যে তাদের কেউই আমাকে ব্লগে প্রকাশের জন্য তথ্যগুলি দেয়নি। সে আমাকে সেটাও বলল। রেগেমেগে বন্ধু আমাকে জানাল অফিসে নাকি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

তারা খুজে বের করছে কারা এর সাথে জড়িত। ব্লগে আমি আমার আসল নাম দিইনি। তবে নামটা ভুয়াও না। আমার পরিবারে প্রচলিত নামের সাথে আমার ভালো নামের শেষ অংশ লাগিয়ে দিয়ে এই ব্লগ খুলেছি। তাই আমার বন্ধুর ভয় আমাকে ধরা খুব সহজ এবং আমি তার বন্ধু তা জানলে অফিসে তার চাকরি নিয়ে টানাহেচড়া শুরু হয়ে যাবে।

আমার বন্ধুর এমন অসহায়ত্ব আমি কোনদিন দেখিনি। তখনই মনে হল আমাদের দেশের পত্রিকাগুলি কতোটা মিথ্যাচার করে। তারা নিজেরা বাকস্বাধীনতা আর গণতন্ত্রের কথা বলে আর নিজেদের বেলায় চর্চা করে স্বৈরতন্ত্র আর ফ্যাসিজমের। সমকাল পড়তাম কারণ ভাল লাগত। প্রথম আলোর সুবিধাবাদি চরিত্রের কারণে এই একটি পত্রিকাই ভালো লাগত।

কিন্তু যখন সামান্য ব্লগের কারণে আমার বন্ধুকে এতটা অসহায় দেখলাম তখন মনে হল সমকালও আসলে সেই একই লাইনের জিনিস। মুখে যা বলে (অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস) তারা তা বিশ্বাস করেনা। আমাদের দেশের মিডিয়াগুলি অনেক শক্তিশালী। তারা যা ইচ্ছা তাই করে। আমরা সাধারণ জনগণ নিজের পকেটের পয়সায় ওইসব ভন্ডামী বাচিয়ে রাখি।

আমি চেয়েছিলাম মিডিয়ার ভিতরের কিছু চিত্র তুলে ধরতে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি কাজটা অনুচিত হয়েছে। আমি কে? আমি তো আমজনতা। অসঙ্গতি দেখার দায়িত্ব তো শুধু পত্রিকাওয়ালাদের। আমি ক্ষমা চাচ্ছি।

আমার ভূল হয়েছে। আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নেয়া আমার দায়িত্ব না। সে কারনে বন্ধুর কথা শুনে সব পোস্ট মুছে দিলাম। কারণ ব্লগে পোস্ট দিয়ে যদি কারো ক্ষতি হয় তাহলে তা না করাই ভাল। আমি ব্লগ থেকে বিদায় নিচ্ছি।

আর কোনদিন লিখবোনা। হয়তো ব্লগে লিখা দেখবো। আর নতুন নিক নিয়ে ফিরার ইচ্ছাও নাই। কাজেই সবার জন্য অনেক শুভকামনা রইলো। আর সবার আগে দৈনিক সমকালের পাঠক থাকা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলাম।

এর বেশি প্রতিবাদ করার সাধ্য আমার আর নাই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.