বিজ্ঞানী শিমুল মেয়েদের মন আকাশের মত পরিষ্কার কারণ, তা ঘন ঘন বদলায়। আর আমাদের দৈনিক মতির আলোর মন মেয়েদের মনের চেয়েও পরিষ্কার। কারণ, কেউ বুঝতেই পারেনা এটি কখন পাল্টেছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের প্রথম দুই-এক দিনের চিত্র যেভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল, আজ সেটার প্রক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। দুইদিন কোটাবিরোধী আন্দোলনে বিরুদ্ধে লেখালেখি করে যখন সবার আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল, তখন আবার আজ আসিফ নজরুলের "কোটা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা" নামক বিশেষ কলামের মাধ্যমে নিজেদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত করল।
লেখাটির চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলঃ
১। বিদ্যমান কোটাব্যবস্থার কিছু অংশ সংবিধানবিরোধী। মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংবিধানবিরোধী, এটি বললে তাঁকে জামায়াত-শিবির ভাবা হতে পারে। ২০১০ সালে প্রথম তিনি এই বিষয়ে প্রথম আলোয় লিখেন। কিন্তু, দেখা যায় সাম্প্রতিক আন্দোলনকারীদের আসলেও ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে জামায়াত-শিবির হিসেবে।
কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন তাই বলে অযৌক্তিক হয়ে যায়নি।
২। আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনেই পুলিশ আর ছাত্রলীগ একসঙ্গে লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের শায়েস্তা করেছে। আগের রাতে হলে হলে গিয়ে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনে অংশ নিলে পিটিয়ে হলছাড়া করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আন্দোলনের বারুদটা আরেকটু বেশি জ্বলেছে।
"সরকারের দমননীতি ও কোটাকেন্দ্রিক বৈষম্যকে যৌক্তিকতা প্রদানের জন্য কোটা বাতিলের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইতিপূর্বে শেয়ারবাজারের লুটপাট, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি কিংবা ভারতের প্রতি নতজানুমূলক আচরণসহ সরকারের বিভিন্ন অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারীদেরও একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী হিসেবে ব্র্যান্ডিং করার অপচেষ্টা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এমন সুবিধাবাদী ব্যাখ্যা বহু বছর ধরে চলছে সমাজে। "
৩। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য ও অবিচার মেনে না নেওয়া।
অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের সবচেয়ে উৎকট প্রকাশ ঘটত উন্নয়ন বাজেট ও সরকারি চাকরিতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রায় একচ্ছত্র আধিপত্যে। বাঙালিদের মেধা থাকা সত্ত্বেও সরকারি চাকরিতে অধিকাংশ নিয়োগ দেওয়া হতো পশ্চিম পাকিস্তান থেকে। তারই প্রেক্ষিতে ১৯৭২ এর সংবিধান। ১৯৭২ সালের সংবিধানে অন্তত ছয়টি বিধানে সমতা ও বৈষম্যহীনতা প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা আছে। সংবিধানের ১৯ অনুচ্ছেদে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা, ২৮ অনুচ্ছেদে বৈষম্যহীনতা এবং ২৯ অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিতে সব নাগরিকের সুযোগের সমতার কথা বলা আছে।
অবশ্য ২৮ অনুচ্ছেদে নারী, শিশু ও ‘নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির’ জন্য এবং ২৯ অনুচ্ছেদে সরকারি চাকরিতে ‘নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর’ অংশের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে।
আর উপজাতিদের জন্য যতদিন না তাদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত না হয় ততদিন কোটা সুবিধা দেয়া যেতে পারে।
৪। ১৯৭২ সালের সংবিধানে মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা সম্পর্কে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে কিছু
বলা নেই। কেবল সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদের অধীনে নাগরিকদের সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান প্রসঙ্গে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়।
সামাজিক নিরাপত্তার উদার ব্যাখ্যা করলে পঙ্গু বা নিহত মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের জন্য চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ বৈধ হতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে মুক্তিযোদ্ধারা ‘অনগ্রসর শ্রেণী’ বলে বিবেচিত হতে পারেন না বলে তাঁদের জন্য ঢালাও কোটা সংরক্ষণ ১৯৭২ সালের সংবিধানের প্রত্যাশা হতে পারে না। ঢালাও কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন তাই কোনোভাবেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী হতে পারে না।
৫। ১৯৭৭ সালে তৎকালীন পে ও সার্ভিস কমিশনের একজন বাদে বাকি সব সদস্য তাই সরকারি নিয়োগে কোটাব্যবস্থার বিরোধিতা করেন।
কমিশনের সদস্যদের মধ্যে মাত্র একজন প্রচলিত কোটাসমূহ বহাল রেখে ১৯৮৭ থেকে পরবর্তী ১০ বছরে ধীরে ধীরে কমিয়ে তা বিলুপ্ত করার পক্ষে মত দেন। অথচ ১৯৯৭ সালেই এই কোটাব্যবস্থার আরও সম্প্রসারণ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের এর আওতাভুক্ত করা হয়, পরে তাঁদের পাওয়া না গেলে তাঁদের জন্য নির্ধারিত পদগুলো শূন্য রাখার নীতি গৃহীত হয়।
৬। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটার কোনো আইনগত ভিত্তি নেই। এই কোটা কেবল তখনই যৌক্তিক হবে, যদি প্রমাণ করা যায় যে মুক্তিযোদ্ধারা নাগরিকদের মধ্যে অনগ্রসর অংশ।
মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য এই কোটার ভিত্তি আইনগতভাবে আরও দুর্বল। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা বর্তমানে একটি দুর্নীতিবান্ধব প্রক্রিয়ায়ও পরিণত হয়েছে। এই কোটার সুযোগে দিনে দিনে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বেড়েছে, তাঁদের একটি অংশ যে ভুয়া, তা নিয়ে সন্দেহ করার কারণ রয়েছে।
অবশেষে বলা যায়, এসব কারণে সমাজে চরম বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি হচ্ছে, যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী। এটি পরিবর্তন করে, যুদ্ধাহত ও নিহত মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে শুধু তাঁদের সন্তানদের জন্য সমানুপাতিক কোটা রাখলে তা যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হবে।
জেলা কোটা বাতিল করে নারী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সীমিত কোটার ব্যবস্থাও সরকার করতে পারে। তবে কোনো বিচারেই কোটাধারীদের সংখ্যা মোট নিয়োগের এক- তৃতীয়াংশের বেশি হওয়া উচিত হবে না।
সংবাদসুত্রঃ নিচের কমেন্টে দেয়া হল। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।