আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবলী আর বাবল ভূত

মনের এলোমেলো ভাবনাগুলোকে শব্দের ফ্রেমে বাঁধার এক অপচেষ্টা। বাবলীকে সবাই খুব ডাকাবুকো মেয়ে হিসেবেই জানে। পাড়াতো বান্ধবীরা যখন হিন্দি সিরিয়ালগুলো হা করে গিলতে থাকে, বাবলী তখন গালে হাত দিয়ে স্পোর্টস চ্যানেলের WWE দেখে। বাবলীর মা যখন ঘরের আনাচে কানাচে উড়ন্ত কোন তেলাপোকা দেখলে চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় তোলেন, বাবলী তখন গম্ভীর মুখে ঝাড়ু নিয়ে একের পর এক তেলাপোকা হেলিকপ্টার শট দিয়ে বাড়ির বাউন্ডারির বাহিরে ফেলতে থাকে। এমনকি ঘুষি মেরে এক ইভটিজারের নাক ভেঙ্গে দেয়ার পর থেকে পাড়ার ইভটিজারেরাও বেশ সামলে চলে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে এ হেন ডাকাবুকো মেয়েকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ থাকতে পারেনা। কিন্তু বাবলীর মায়ের চিন্তার অন্ত নেই। মেয়ের কপালে যদি বদ টাইপের কোন জামাই জুটে তাহলে কি হবে? না বাবলীর কিছুই হবেনা। যা হবার তা ওর জামাইয়েরই হবে। হয়তোবা হসপিটালের একটা কেবিন জামাইয়ের জন্য পারমানেন্টলি বুকড করে রাখতে হবে; যা মারমুখো মেয়ে তার।

বাবলীর মা তো এখন থেকেই ভেবে রেখেছেন, মেয়ের জামাই যেমনই হোক, বিয়ের পর পরই জামাইয়ের জন্য হেলথ ইনস্যুরেন্স নিতে ভুলবেন না। আজ বাবলী ঘরে সম্পুর্ন একা। একা থাকতে তার ভালোই লাগে। অথচ বাবলীর মা কিছুই বুঝতে চান না। আজ যদি নানু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে না যেতো, তাহলে দেখা যেতো বাবলীর মা বাবলীকে কান ধরে পড়তে বসিয়েছেন।

আজব তো, সে কি কোন ছোটখাটো ন্যাদা গ্যাদা বাচ্চা নাকি। আর ক’দিন পরেই এইচ এস সি দেবে সে। নিয়মিত যোগ ব্যায়ামও করে। একটানে পনের বিশ কেজি ওজন উঠিয়ে ফেলা তো তার কাছে দুধভাত। আর কোন চোর ডাকাত একবার এ মুখো হলেই হয়েছে।

এক হাতে পিটিয়ে একেবারে হালুয়া করে দিবে। মারপিটের কথা মনে হতেই বাবলীর হাত নিশপিশ করে উঠে; ইশ কতদিন যে মনের আঁশ মিটিয়ে কাউকে পেটানো হয়না। বাবলী কিছুক্ষণ ফাঁকা ঘরে একা একা ঘুরে কম্পিউটারে গেম খেলতে বসে যায়। হঠাৎ এক ধরনের পোড়া গন্ধ তার নাকে ঢুকে। উপরে তাকিয়ে দেখে পুরো ঘর ধোয়ায় আচ্ছন্ন।

কিন্তু এতরাতে ধোঁয়া এলো কোত্থেকে আর পোড়া গন্ধই বা ঢুকল কি করে। মা তো আগেই সব রান্না শেষ করে গিয়েছেন। তারপরও বাবলী রান্না ঘরের দিকে ছুট লাগায়। ভুলেও যদি কোনোকিছু পুড়ে থাকে, তাহলে আজকে তাকেই মায়ের হাতের হালুয়া হতে হবে। না চুলার উপর কিচ্ছু নেই।

তবে কি পাশের বাসা থেকে আসছে? আসতেই পারে। পাশের বাসার আন্টি রান্নার চেয়ে পোড়ানোতে বেশি পাকা। বাবলী ধোঁয়া কমার জন্য ফ্যানের স্পিডটা বাড়িয়ে দিয়ে আবার কম্পিউটারে বসে যায়। কিছুক্ষন পর তার মনে হতে থাকে ড্রয়িং রুমের সোফাটার উপর কেউ যেন খুব করে লাফাচ্ছে। কেমন একটা থপ থপ শব্দ আসছে ও ঘর থেকে।

বাবলী চোর ধরার আশায় আরেকবার দৌড় দেয়। কিন্তু এবারও সব ভোঁ ভোঁ। শুধু বসার ঘরের লাইটটা জ্বালানো। কিন্তু যতদূর মনে পড়ে ঘরের সব কয়েকটা লাইট তো নেভানো ছিলো। বাবলী এবার কিছুটা চিন্তিত মনে লাইট নিভিয়ে নিজের রুমের দিকে রওনা দেয়।

কিন্তু রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে সে যা দৃশ্য দেখলো, তাতে মনে হলো একটু পরেই সে দাতে দাঁত লাগিয়ে ফিট খেয়ে যাবে। মেঝের ঠিক মাঝখানে ঈদ উপলক্ষ্যে কেনা তার আঠারোশ টাকা দামের কোলাপুরি স্যান্ডেল্টা কেউ একজন ফালা ফালা করে কেটে সাজিয়ে রেখেছে। বাবলীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। মামার বিয়েতে পড়বে বলে ঈদের দিন স্যান্ডেলগুলো বের পর্যন্ত করেনি। কে করলো এই পাশবিক নির্মম কাজ? কিছুক্ষন আগেও তো এগুলো ছিলোনা।

জুতার শোকে কাতর বাবলী খেয়ালই করলোনা তার মাথার উপরের ধোঁয়াগুলো ঘরের এক কোনায় কুন্ডুলি পাকানো শুরু করেছে। জমাট বাঁধা ধোঁয়াগুলো থেকে ফুটে উঠছে এক ধরনের অশরীরী অবয়ব। কিন্তু যখন খেয়াল হল, তখন বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। অবয়বটা ততক্ষণে তীব্র গতিতে তার দিকেই ছুটে আসছিলো। বাবলীর এখন নিশ্চয়ই অনেক ভয় পাওয়ার কথা।

কিন্তু কাহিনী হল উল্টো। সে ধরেই নিলো তার সাধের জুতাজোড়ার মহাসর্বনাশের জন্য কুন্ডুলি পাকানো ধোঁয়াটাই দায়ী। সে টারজানের মতো গগনবিদারী চিৎকার করে সোজা তেড়ে গেলো জমাট ধোঁয়াটার দিকে। যেভাবেই হোক তার জুতার হন্তারক কে সে ঘায়েল করবেই করবে। বাবলী হাতের কাছে আর কিছু না পেয়ে একটা হাতপাখা নিয়েই ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ধোঁয়াটাও কিছু কম যায়না। বাবলীর সাথে পাল্লা দিয়ে সেটাও ঘরময় ছুটে বেড়াতে লাগলো। এইভাবে বেশকিছুক্ষন চললো ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ধোঁয়াটাকে বাবলী যখন প্রায় কাবু করে এনেছে তখনই ফটাশ করে ভীষন এক শব্দ হল। আর পুরো ঘর ধোঁয়ায় ধোঁয়ারন্য হয়ে গেলো।

ধোঁয়া কিছু কমে এলে দেখা গেলো ঘরের ঠিক মাঝামাঝি বৃত্তাকার কিছু একটা দাঁড়িয়ে আছে। যেন অনেক বড় একটা ফোলানো বাবল গাম, যে কোন সময় ঠুস করে ফুটে যেতে পারে। বাবলী চোখ কচলে আরেকটু ভালো করে তাকালো। বাবল গামটা যেন ধোঁয়া দিয়ে বানানো। এর ভেতর দিয়ে অন্যপাশের সবকিছুই আবছাভাবে দেখা যায়।

মশারীর ভেতরে বসে বাহিরটা যেমন দেখা যায় ঠিক সেই রকম। বাবলী হাতপাখা নিয়ে একটু সামনে এগিয়ে যেতেই বাবলটা কিচ কিচে স্বরে বলে উঠলো, "“আই কাছে আসবানা কিন্তু, নইলে কামড় দিবো”"। কামড় দিবে, মানে কি, বাবলী হাতপাখাটা ধরে রেখে ধমকের সুরে বলে, “"আই তুই কিরে? আই মিন কেরে? এতরাতে আমার ঘরে কি। আমার জুতার এই অবস্থা করলি কেন তুই? বল যলদি নইলে পাখা দিয়ে এমন বাতাস দিবো যে একেবারে বেলুনের মতো ফুটে যাবি”"। "আমি টেংরা" "টেংরা?? এই টেংরা তুই কি রে"? "আমি ভূত"।

"ফাইজলামি করিস? তোরে তো দেখতে পুরাই বাবলগামের মতো লাগতেসে"। "জানি, আগের বাসার পিচ্চিটাও তাই মনে করছিলো, সেইটা তো আবার এক কাঠি বাড়া। বাবলগাম মনে করে আমাকে তো খেয়েই ফেলতে চাইসিলো"। বাবলটা হঠাৎ গরম পানির মত ফুটতে শুরু করলো। ছোট ছোট বুদবুদে ঘর তখন প্রায় বুদবুদারন্য।

"এই, তুই এইরকম ফুটতেছিস কেন"? "আমি ফুটতেছিনা, আমি কাঁদতেসি, আমি কি মানুষ নাকি যে কাঁদলে আমার চোখ দিয়ে টপাটপ পানি পড়বে? এতো প্রিপারেশন নিয়া ভয় দেখাইতে আসলাম; উল্টা নিজেই ভয় পেয়ে মান সম্মানের ভর্তা বানায়ে দিলাম। আমার আর এই জীবনে ভূত হওয়া হইলনা"। "তুই না এক্ষন বললি তুই ভূত"। "আরে, জন্মাইলেই যেমন মানুষ হওয়া যায়না, তেমনি ঠুস করে মরে গেলেই ভূত হওয়া যায়না। ভুতের মতো ভূত হইতে হইলে পরীক্ষায় পাস দিতে হয়।

বুঝছো"? "ভুতেরদেরও পরীক্ষা দিতে হয়"? "বাবল ভুতটা এইবার ফস করে কতোগুলা ধোঁয়া ছেড়ে বলল, হুম, কি আর বলবো, মরেও শান্তি নাই। প্রথমে দিতে হয় ধড়ফরানি, তারপর ঠকঠকানি, এরপর ঝেড়ে দৌড়ানি, সবার শেষে ফিটকপাটি"। বাবলী চোখ গোল গোল করে জিজ্ঞেস করলো,"এই গুলা কি"? "ধড়ফরানি হল নতুন ভূতদের পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় এমনভাবে ভয় দেখাইতে হয় যাতে বুকের মধ্যে ধড়ফর শুরু হয়ে যায়। আরেকটু পুরান হলে দিতে হয় ঠকঠকানি পরীক্ষা।

যাতে ভয়ের ঠেলায় একেবারে ঠকঠকিয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে যায়। এইটাতে পাস করলে ঝেড়ে দৌড়ানি। এই পরীক্ষাটা অনেক মজার (বাবল ভুতটা একবার ডিগবাজি খেয়ে শুন্যে উঠে যায়, এইটা মনে হয় হাসি হবে) মানুষজন ভয় পাইলে কোনটা হাত কোনটা পা সেইটার আর খবর থাকেনা। পারলে নাক মুখ ব্যবহার কইরাও দৌড়াইত। আর সবার শেষে ফিটকপাটি"।

“"ফিটকপাটি"!!!” "ফিট খেয়ে এক্কেবারে দাঁতকপাটি"। বাবল ভুতটা আবারও ফস করে কতোগুলা ধোঁয়া ছাড়লো। এইটা নিশ্চয়ই দীর্ঘশ্বাস টাইপের কিছু হবে। "কিন্তু আমি তো ঠকঠকানিতেই আঁটকে গেলাম। তুমি ভয় পাইলানা আমারো পাশ করা হলোনা"।

"আহা! শখ কত? আমাকে ভয় দেখাতে আসছে! তার আগে বল, আমার জুতার এই হাল করলি কেন? জানিস কতদিন ঘ্যন ঘ্যন করার পর আব্বা এই বিগ বাজেটের জুতা কিনে দিয়েছিলো"? "খুব ক্ষুধা পাইছিলো; জুতার রঙটা মনে ধরছিলো ঘ্রাণটাও সেইরকম, তাই খাইতে গেসিলাম। কিন্তু স্বাদ একদম ভালো ছিলোনা। ভালো গন্ধ ছুটলেই খানা ভালো হয়না"। বাবলী দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে রেখেও হাসি চাপতে পাড়লোনা। আহারে ফেল্টুস ভূত বেচারা।

ভাগ্যিস তার চার হাজার টাকা দামের ঈদের জামাটা এই ভুতের চোখে পড়েনি তাহলে তো ওইটাও যেতো। "শোন তোকে একটা বুদ্ধি দেই। আমার বুদ্ধি মতো চললে শুধু পাশ না ভূত অফ দ্যা ইয়ারও হয়ে যেতে পারিস"। "সেটা কি রকম"? "শোন! আমাদের পাশের বাসায় মোটা করে একটা আন্টি থাকে। মহিলা ভীষণ দর্জাল।

সারাক্ষন গলা মোটা করে এর ওর সাথে ঝগড়া করতে থাকে। আর বাসার কাজের ছেলে মেয়েদের মেরে আধমরা করা তো তার হবি। কয়েকদিন আগে ১১ বছরের একটা মেয়েকে যা মারটা মারলো। মা যদি মেয়েটাকে ছাড়িয়ে এনে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা না করতো তাহলে মনে হয় মেয়েটা মরেই যেতো। অথচ কি নিষ্ঠুর মহিলা, একটাবার খোঁজও নিলোনা মেয়েটা বেঁচে আছে না মরে গিয়েছে"।

"আসলেও, মহিলাকে ধরে একেবারে ফিটকপাটি দেয়া উচিত"। "তুই গিয়ে অই মহিলাটাকে ভয় দেখা! গিয়ে বল যে তুই হচ্ছিস ফুলির নানী। তার নাতনীর উপর এইভাবে অত্যাচার করার জন্য প্রতিশোধ নিতে এসেছিস। অই মেয়েটার নাম ফুলি ছিলো"। "না না, আমি কারো উপর প্রতিশোধ টোধ নিতে পারবোনা।

আমি ভদ্রগোছের ভূত"। "আরে তুই কি আর সত্যি সত্যি প্রতিশোধ নিবি নাকি। তুই তো জাস্ট ভয় দেখাবি"। বাবল ভূতটা বার কয়েক ডিগবাজি খেয়ে নিয়ে আবার স্থির হয়ে দাঁড়ায়। "আমি তো এমনিতেও ফেইল অমনিতেও ফেইল।

একবার ট্রাই করে দেখলে মন্দ হয়না। বলেই ভূতটা একটা ডিগবাজি দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো"। কিন্তু পনের মিনিট হতে না হতেই আবার এসে হাজির। "বাবলীআপু বাবলীআপু যা মজাটা হল তুমি তো দেখলেনা"। "বাহ বাহ আমারও নামও জানিস দেখি, আবার আপুও ডাকা হচ্ছে"।

"বাহ ডাকবোনা! তুমি যদি ভূত হতে না আপু তাহলে তো এক চান্সেই ফিটকপাটি পাস দিয়ে ফেলতে"। "মানে"? "দাঁড়াও, পুরো কাহিনী শোনাই তোমাকে। আমি তো খুব আয়োজন করে গেলাম অই মোটু অ্যান্টিকে ভয় দেখাতে। গিয়ে দেখি, মহিলা হা করে টিভির সামনে বসে আছে। আমি কতক্ষণ মহিলার চুল ধরে টানলাম।

মাথার উপর কয়েক পাক ঘুরলাম অথচ সে দেখলোইনা। হা করে টিভি গিলতে লাগলো। তখন করলাম কি মহিলার হাত থেকে রিমোট নিয়ে নিচে ফেলে দিলাম। এইবার তার কিছু টনক নড়লো। নিচে ঝুঁকল রিমোট নেয়ার জন্য।

তারপর তো মজাই মজা। আমি মহিলার চোখের সামনেই রিমোট ধরে দিলাম টান। সে কিছুক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো, তারপর সোজা একটা লাফ দিয়ে পড়লো রিমোটের উপর। আমিও সাথে সাথে রিমোট টা আরো কয়েক ইঞ্চি দূরে সরিয়ে দিলাম। তারপর যদি দেখতা।

ঠকঠকানি কাকে বলে। ভয়ের চোটে এমনভাবে কাঁপতেছিলো যে আরেকটু হলে ভুমিকম্প শুরু হয়ে যাইতো। মহিলা তখন চিঁ চিঁ করে জামাইকে ডাকা শুরু করলো। এই শুনছো! রিমোটটা না পালিয়ে যাচ্ছে; ধরতে পারছিনা। অন্যঘর থেকে মহিলার জামাই বলল কি, তোমার যন্ত্রনায় তো আমার নিজেরই পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে, রিমোটের আর কি দোষ।

মহিলা তখন আরো জোরে চিৎকার করে কইলো, আরে সত্যি, রিমোট ধরতে পারছিনা। পালিয়ে যাচ্ছে। মহিলার জামাইও আরো জোরে ধমক দিয়ে বলল, চুপ থাকো তো, রিমোট কি তোমার সিরিয়ালের নায়িকা নাকি যে একবার শ্বশুর বাড়ি আরেকবার বাপের বাড়ি যাবে। দু দন্ড টিভিটারে একটু শান্তি দাও। দেখবা রিমোটও শান্তি পাবে, সাথে আমিও।

আমি তো তখন ভীষন মজা পেয়ে গেসি। এইবার করলাম কি রিমোটটা তুলে সোজা মহিলার নাকের সামনে ঝুলায়ে রাখলাম। আহা; সে কি দৃশ্য। তোতলানির চোটে সেতো এইবার জামাইকেও ডাকতেও পারলোনা। তারপর আমি শুরু করলাম আমার কাহিনী, নাকি গলায় বললাম, অঁই বঁদ মঁহিলা তোঁর এঁতো বঁড় সাঁহস তুঁই আঁমার নাতঁনীকে মাঁরিস! আঁজ আঁমি তোঁকে জাঁনেই মেঁরে ফেঁলবো।

অই মহিলা তোতলাতে তোতলাতে এদিক অইদিক তাকাতে তাকাতে বলে, কে তোমার নাতনী? আমি তো কাউকে মারিনি? তুঁই আঁমার মঁতো এঁকটা সিঁনিয়র সিঁটিজেন ভুঁতের সাঁথে মিঁথ্যা বঁলিস! আঁমি ফুঁলির নাঁনীর ভূঁত। ক্যাঁন মেরেঁছিস তুঁই ফুঁলিকে? ভুল হয়ে গেসে, আর কোনদিন মারবোনা! নাঁ এঁইসব কঁথা বঁলে তুঁই পাঁর পাঁবিনা! তুঁই আঁজ থেঁকে তোঁর বাঁসায় কোঁন কাঁজের লোঁক রাঁখতে পাঁরবিনা, সঁব কাঁজ তুঁই এঁকা কঁরবি! যঁদি এঁই কঁথার হেঁরফের হঁয় তাঁইলে কিঁন্তু...... না না না না, হবেনা হবেনা হবেনা। এইবার আমাকে রিমোটটা দেন না অ্যান্টি। এঁই চোঁপ তুঁই আঁমার মঁতো সিঁনিয়র ভুঁতকে অ্যাঁন্টি বলিস। মাঁরলাম তোঁর রিঁমোটকে এঁকটা আঁছাড়।

তোঁর টিঁভি দেঁখাই বঁন্ধ। না না না, আমাকে আছাড় মারো, তবুও আমার রিমোটকে না। বলতে বলতেই মহিলা পুরাই ফিটকপাটি"। ঘটনা শুনে তো হাসতে হাসতে বাবলীরই ফিটকপাটি খেয়ে যাওয়ার উপক্রম হল। বহুকষ্টে বলল," তোকে অই মোটু আন্টি দেখে নাই"।

"আরে না, আমি অদৃশ্য হয়ে ছিলাম না"। "ভালো একটা কাজ করেছিস টেংরা"। "হ্যাঁ, এইবার আমার পাশ ঠেকায় কে! আচ্ছা আমি এখন আসি। তুমি অনেক উপকার করেছো। তুমি যদি ভূত হইতা না, তাহলে তোমাকে হান্টিং হাউজে পচা মাছ খাওয়াতাম"।

"হইছে হইছে! আমার পচা মাছ খাওয়া লাগবেনা। তুই আমার জুতার যে সর্বনাশ করেছিস তার ক্ষতিপূরণ দে"। টেংরা এইবার গম্ভীর গলায় বললো," তোমার জুতা খেয়ে ফেলায় তুমি কি বেশি রাগ করেছো? আসলে এতো বেশি খিদে পেয়ে গিয়েছিলো যে কি বলবো! যা যা পেয়েছি খেয়ে ফেলেছি"। বাবলীর হঠাৎ সন্দেহ হয়, "যা যা পেয়েছিস মানে"? "না না কিছুনা! আচ্ছা আমি যাই পাশের খবরটা সবাইকে জানাতে হবে"। বলেই টেংরা যেভাবে ফট করে এসেছিলো সেইরকম ফট করে চলেও গেলো।

বাবলী এইবার সোজা দৌড় দিলো তার আলমারির দিকে। কিন্তু আলমারি খুলে মনে হল তারও এখনি ফিটকপাটি লেগে যাবে। আলমারির ভেতরের সবগুলো ড্রেস উল্টা পাল্টা। কোনটার হাতা নেই, কোনটার ওড়না ফালি ফালি করে কাটা। আর তার ঈদের চার হাজার টাকার জামা, সেইটার তো নাম নিশানাও নেই।

বাবলী চিৎকার করতে গিয়েও করলোনা। কি হবে চিৎকার করে, বোঝাই যাচ্ছে জামাটার স্বাদ তার জুতোগুলার চেয়ে ভালো ছিল।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।