আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা গল্প আর সাথে বাবলী

গল্পটা বলা ঠিক হবে কি না তাই ভাবছি। আসলে এই গল্পটা একটু অন্যরকম। আচ্ছা বলেই ফেলি। তখন আমি রাজশাহী সিটি কলেজ-এ পড়ি। আপনারা তো জানেনই যে আমি কলেজ এ একটু অন্য রকম ছিলাম।

আমার ক্লাসে ১১/১২ জন মেয়ে পড়তো। সবাই আমার বন্ধু ছিলো এবং ওদের মধ্যে আমার একটা মেয়ে বন্ধু ছিলো আর সে আমার ছোট বেলার বন্ধু। ওর নাম বাবলি। ওর সাথে আমি চতুর্থ ক্লাস পর্যন্ত পড়েছি আর তারপর আর দেখা নাই। কলেজে এসে তার সাথে আমার দেখা।

কলেজে বাবলীর সাথে আমার প্রায়ই ঝগড়া লাগতো আর আমরা এক ওপর এর সাথে কথা বলতাম না। এই রকমই একটা সময় ছিলো তখন। আমাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিলো আর আমরা একে ওপর এর সাথে কথা বলতাম না। ঐ সময় আমার ফাস্ট এয়ার পরীক্ষা চলছিলো। সেই দিন ছিলো বাংলা পরীক্ষা।

আমার সিট বসেছে এক রুমে আর বাবলীর সিট বসেছে অন্য রুমে। যাহোক বাবলী যে রুমে পরীক্ষা দিচ্ছিলো সেই রুমেই এক মাস্তানের প্রেমিকা পরীক্ষা দিচ্ছিলো আর দুর্ভাগ্যবশত বাবলীর সামনের টেবিলে তার সিট ছিলো। পরীক্ষা চলাম আনুমানিক ৩০ মিনিট পর ঐ মেয়ের প্রমিক বাইরে থেকে ঐ মেয়েকে একটা কাগজ ছুড়ে মারলো (একটা প্রশ্নের উত্তর) আর ঐ কাগজ টা বাবলীর পায়ের কাছে এসে পড়লো। বাবলী তখন খুব ভয় পেয়ে স্যার কে বলে দিলো এবং এও বলল যে ঐ মেয়েকে দেবার জন্য বাইরে থেকে কাগজটা এসেছে। এর জন্য স্যার ঐ মেয়েকে খুব বকা দিলো এবং তার উপর বেশি নজর দিলো।

এর ফশশ্রুতিতে মেয়েটা খুব ক্ষেপে গেল এবং বাইরে থাকা তার প্রমিক বাবলীকে উদ্দেশ্য করে বলল যে, পরীক্ষা শেষ করে বাইরে আয়, তোকে দেখছি। ঐ ছেলে ছিলো নাম করা মাস্তান। তার নাম ছিলো মানিক। আমাদের কলেজটা ছিলো রাজারহাতা নামক জায়গায় এবং মানিক ঐ এলাকার মাস্তানদের সাথে মিশতো। যা হোক, মানিক এর কথা শুনে বাবলী সম্পূর্ন ঘাবড়ে গেল এবং কোন রকম পরীক্ষা দিয়ে রুম থেকে বাহির হয়ে কান্না কাটি করতে লাগলো।

আমি তখনও পুরো বিষয়টা জানতাম না। আমি পরীক্ষা দিয়ে বাইরে এসে দেখি যে, বাবলীকে ঘিরে সবাই বসে আছে আর তার মধ্যে বাবলী কান্না কাটি করছে। তখন আমি আমার বন্ধু এরশাদ কে বললাম যে, দেখতো কি হয়েছে। তখন এরশাদ আমাকে সব বলল। কিন্তু আমি কোন এন্টারেস্ট দেখালাম না কারন সে আমার সাথে কথা বলে না।

আমি দুরে বসে থেকে দেখছিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম যে বাবলী আমার কাছেই আসবে এবং সাহায্য চাইবে। যা চিন্তা তাই হলো। ওরা সব বান্ধবীরা মিলে প্ল্যান করলো যে, রিপনই পারে মানিককে সামাল দিতে। তাই রিপন কে রাজী করাই বাবলীকে বাসায় পাঠানো।

রাজশাহীতে আমার নাম রিপন। কিছুক্ষন পর সুমি, সোমা, সীলা, চম্পা সহ আরো ২/৩ জন মেয়ে আমার কাছে আসলো এবং বলল যে, রিপন তুমি তো জানো যে বাবলীকে মানিক থ্রেট করেছে। তখন আমি বললাম যে, তাতে আমি কি করতে পারি। তখন তারা বলল যে, তুমিই পারো বাবলীকে কলেজ থেকে বাসাই নিয়ে যাইতে আর তুমি তো জানো যে মানিক কলেজ এর বাইরে দাড়াই আছে। আমি বলি যে, মানিক যদি কিছু করে তাহলে তো ওর সাথে আমারও ক্ষতি করবে।

আর এখন তো আমার পরীক্ষা চলছে। এই সময় গন্ডোগল করা আমার জন্য ঠিক হবে না। তখন তারা বলল যে, তুমি ছাড়া বাবলীকে কেই-ই বের করতে পারবে না। আর তুমি সাথে থাকলে মানিক সাহস পাবে না। আমি তখন কোনভাবেই ওদের বোঝাতে পারি না।

এমনিতে আমার বাসায় সব খবর যাই যে আমি কলেজে কি করি আর এর জন্য আমাকে অনেক মার এবং তার সাথে কথা শুনতে হয়। আমি কোন ভাবেই রাজি হচ্চিলাম না। এমন সময় বাবলী আমার কাছে আসলো। সে কাঁনছিলো। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যে, আমার মায়া হলো। তখন আমি চিন্তা করলাম যে, যা হবার হবে কিন্তু বাবলীকে বাসায় নিয়ে যাইতে হবে। আমি বাবলীকে বললাম যে,কান্দিস না, চল আমার সাথে,তোর কিছু হবে না। তখন আমি ভেবেছিলাম যে, আমার আর বাবলীর সাথে আমার বন্ধূরাও জাবে কিন্তু ওরা কেউই সাথে আসলো না। এমন কি বাবলীর মেয়ে বান্ধবীরাও।

যা হোক আমি পাত্তা দিলাম না। আমি আর বাবলী মেইন গেট এর দিকে যাচ্ছি আর সবাই আমাদের দিকে তাকাই আছে। সবাই হয়তো ভাবছিলো যে, মানিক বড় কোন ক্ষতি করবে আর রিপন তা হতে দিবে না। কলেজ এর মেইন গেট এর কাছে আসতেই দেখলাম যে, মানিক আর ৩/৪ জন ছেলে দাঁড়াই আছে এর সাথে মানিক এর প্রেমিকা। বাবলীকে দেখা মাত্রই মেয়েটা মানিক কে দেখাল যে, ঐ সেই মেয়ে।

কিন্তু মানিক কিছু একটা বলার পরই আমাকে দেখলো। ওর বন্ধুদের কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। আমি শুধু হালকা শুনলাম যে, যাস না, রিপন সাথে আছে। মানিক আমাকে ভাল ভাবে চিনে। আমি যে মানিক এর থেকেও এ্যডভান্স তা মানিক খুব ভাল করেই জানে।

যাহোক মানিকরা যেখানে দাঁড়াই ছিলো সেই খানেই রিকশা ছিলো। আমি বাবলীকে বললাম, আই আমার সাথে। রিকশার কাছে গিয়ে বললাম, এ্যাই রিকশা চল। বলেই বাবলীকে বললাম যে, উঠ রিকশাই। তখন আমার চেহারা আর গলাম ভয়েস টা সম্পূর্ন্য মাস্তান এর মত ছিলো।

রিকশায় উঠে আমি মানিক এর দিকে একবার তাকালাম। তারপর বাবলীকে নিয়ে চলে আসলাম। বাবলীকে বাসায় নামায় দেবার সময় বললাম যে, কাল তোর ভাইকে নিয়ে কলেজে যাস আর আজ রাতেই আমি সব ঠিক করে ফেলবো। একটা মজার কথা বলি। সেই সময় আমাদেরকে তেমন টাকা দেওয়া হতো না হাত খরচের জন্য।

অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমাইছিলাম আর সেই দিন আমার পকেটে ছিলো ৫ টাকা। বাবলীকে বাসায় নিয়ে আসতে আমার ৩ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিলো। অনেক খারাপ লেগেছিলো কিন্তু এখন সেই ৩ টাকার কথা মনে পড়লে খুব হাসি পায়। সেইদিন ৩ টাকার জন্য খারাপ লাগছিলো আর আজ পকেটে হাজার হাজার টাকা কিন্তু সেই ৩ টাকার কথা ভূলতে পারি নাই। তার পরও শান্তি যে বন্ধুর উপকার তো হয়েছে।

যাহোক, সেইদিন বাবলীকে বাসায় নামাই দিয়ে আমার বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি যে, আমার বাসায় এই খবর চলে গিয়েছে। আমার বড় ভাই এর বন্ধু বাসায় বলে দিয়েছে আর এর জন্য আমাকে অনেক কথাও শুনতে হয়েছে। যাহোক, সন্ধ্যায় এক বন্ধুকে নিয়ে মানিক এর বাসায় গেলাম। মানিক ডাকলাম আর বললাম যে, কাল থেকে ঐ মেয়ের সামনে তুই জাবি না।

এই শুনে মানিক অনেক রেগে গেল। বলল যে, রিপন তোকে কলেজে কিছু বলিনাই কিন্তু ওকে আমি ছাড়বো না। আমি বলি যে, দেখ মানিক, তুই বাড়াবাড়ি করছিস। সব এখানেই শেষ কর। আর তুই শেষ না করলে আমিও কিন্তু তোকে ছাড়বো না।

কিন্তু মানিক তাও শুনতে চাই না। অনেক তর্কাতর্কির পর আমি বলি যে, ঠিক আছে তুই যা পারিস করি নিস আর আমি যদি পারি তাহলে বাবলীকে বাঁচাই নিবো। এই বলে আমি চলে এসেছিলাম। পরদিন বাবলী তার ভাইকে নিয়ে কলেজে আসলো আর আমার সাথে পরিচয় করাই দিলো। বাবলীর ভাইতো আমাকে পেয়ে অনেক ধন্যবাদ দিলো আর বলল যে, ভাই তুমি আমার বোনকে ওদের থেকে বাঁচাইছো, তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।

আমি বলি যে, ও আমার বন্ধু আর এইটা আমি এমনিতেই করতাম। যাহোক আমি মানিক কে বলে দিয়েছি সে আর বাবলীর দিকে তাকাবো না। এই শুনে সে বলে যে, আমি মানিক কে দেখতে চাই। আমি বলি যে, তার আর দরকার হবে না। ওর জন্য আমি একাই যথেষ্ট।

তার পর থেকে মানিক বাবলীর দিকে তাকাই নি। আর সেই দিন থেকে আমার আর বাবলীর বন্ধুত্ব আরো বেড়ে গিয়েছিলো। এই হলো সেই গল্প। প্লিজ আপনারা কেউ এটাকে খারাপ ভাবে নিবেন না। ছোট বেলায় আমরা অনেক এ অনেক খারাপ কাজ করে থাকি কিন্তু আসল মানুষ হলো বাস্তবএ কে কেমন।

আমি এখন আর সেই রকম কিছু করি না। বড় একটা কোম্পানীতে জব করি, এক্সিকিউটিভ লাইফ স্টাইল মেইন টেইন করি। সবার সাথ ভদ্রভাবে মিশি। নিজেকে আর সেই জায়গাই নিয়ে যাইতে চাই না। মাস্তানী করা আর মানুষ মারা যে কত বড় খারাপ কাজ এই টা এখন বুঝি।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.