আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার নমুনা। রাজ্য সরকারের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিয়োগে ৮৩৪ জনের মধ্যে মুসলিম মাত্র ১৬ জন!

সুস্থ সংস্কৃতির অনন্ত পথের যাত্রী বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের তথা ইসলামের শত্রুদের কাছে বিষয়টি জানা থাকা সত্ত্বেও কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটা সংবাদ বিশ্লেষণের দিকে সুবিবেচক পাঠকদের দৃষ্টি আকষর্ণের জন্য এটি প্রকাশ করা হলো। জাইদুল হক, আপনজন নিউজ এজেন্সি, কলকাতা পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘুদের কিভাবে সংরক্ষণ দেওয়া যায় তা নিয়ে যেমন বিস্তর আলোচনা চলছে সরকারি মহলে তেমনি সাম্প্রতিক চাকুরি নিয়োগে সরকারের আন্তরিকতা নিয়েও ব্যাপক প্রশ্ন উঠতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পাবলিক সার্ভিস কমিশন কর্তৃক গ্রুপ ডি বিভাগে সাম্প্রতিক কর্মী নিয়োগে আবারও মুসলিমদের নগণ্য নিয়োগের দৃষ্টান্ত সামনে এসেছে। গত ১৬ মার্চ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজ্যের সরকারি দফতরের লোয়ার ডিভিশন কর্মী নিয়োগের যে তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে মুসলিমদের হার দু শতাংশেরও কম। বিভিন্ন দফতরের লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক নিযোগের যে দুটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে মোট নিয়োগের সংখ্যা হল ৮৩৪ জন।

এর মধ্যে মুসলিম মাত্র ১৬ জন। মাস কয়েক আগে কলকাতা পুলিশে নিয়োগে মুসলিমদের স্বল্প সংখ্যক উপস্থিতি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সহ সংখ্যালঘু বিষয়ক ও মাদ্রাসা শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী আবদুস সাত্তারকে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। ২০০১ জনগণনা অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যার হার ২৫.৫ % সেখানে চাকুরিতে নগণ্য উপস্থিতি কেন সে প্রশ্ন সাচার কমিটির রিপোর্টেও উঠে এসেছে। কিন্তু সরকারের তরফে বারে বারে বলা হযেছে সাচার কমিটির রিপোর্ট ঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি। ফলে প্রকৃত তথ্য অধরাই থেকে গেছে।

এরপর রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য প্রথমে মুসলিমদেরকে হতাশ করে দেয়। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেন, চাকুরিতে মুসলিমদের সংরক্ষণ দিয়ে খুব বেশি লাভ হবে না। আর জাতিগতভাবে মুসলিমদের সংরক্ষণ দেওয়ার নানা অসুবিধার কথাও তিনি তুলে ধরেন। মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হলে তিনি ঘূরে গিয়ে সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের চিন্তাভাবনা চলছে বলে জানা। এবং পরবর্তীতে ওবিসি-র আওতায় কম আয়ভুক্ত মুসলিমদের সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেন।

এ রাজ্যে মুসলিমদের মধ্যে ওবিসি আওতাভুক্ত হল ২ শতাংশের মতো। তাদের মধ্যে আবার বেশি আয়ের মুসলিমরা সংরক্ষণ পাবে না। শিক্ষা সহ বিভিন্ন জরুরি দফতরে আবার এই সংরক্ষণ প্রযোজ্য নয়। এ নিয়ে প্রখ্যাত আই.এ.এস নুরুল হককে অনগ্রসর জাতি হিসাবে মুসলিমদের কিভাবে চিহ্নিত করা যায় তার জন্য দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকারি চাকুরিতে কেন মুসলিমদের ৩ শতাংশ উপস্থিতি সে বিষয়ে বরাবরই পাশ কাটিয়ে চলেছেন কি মুখ্যমন্ত্রী কি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী।

তারা বারে বারে বলার চেষ্টা করেছেন সাচার কমিটিতে উল্লেখ হওয়া চাকুরিতে মুসলিমদের নগণ্য উপস্থিতি সঠিক নয়। এর প্রত্যুত্তরে তারা সঠিক তথ্য জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারেন নি। আসলে তারা ঠারে ঠোরে বলতে চেয়েছেন এ রাজ্যে সরকারি চাকুরিতে মুসলিমদের ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য রাখা হয়নি। কিন্তু তথ্য জানার আইন আসার পর এখন অনেক সরকারি তথ্যই সাধারণ জনগণের হাতে আসতে থাকায় তাদের বক্তব্য আর ধোপে টিকছে না। পাবলিক সার্ভিস কমিশন, পশ্চিমবঙ্গ দু দফায় গ্রুপ-ডি লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিসট্যান্ট নিয়োগ করে বিভিন্ন দফতরে।

এই নিয়োগ করা হয় ২০০৬ সালে ক্লার্কশিপ পরীক্ষায় উত্তীর্ণের ভিত্তিতে। এ বছর ওই পরীক্ষায় সফল হওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ তালিকা প্রকাশ করা হয় ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১০. নোটিশ নং: A-37- PSC (A) এই তালিকায় প্রথমে উল্লেখ করা হয় 'SECRETARIAT OF THE PUBLIC SERVICE COMMISSION, WEST BENGAL' দফতরের কথা। এই দফতরে যে ৩৬ জনের তালিকা প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে একজনও মুসলিমের স্থান হয়নি। তার পর দেওয়া হয় 'P & A R DEPARTMENT,(C C WING),BLOCK-I, 2ND FLOOR, WRITERS’ BUILDINGS, KOLKATA – 700 001. ' দফতরের নিয়োগ তালিকা। এই তালিকায় রয়েছে ৫২০ জনের নাম।

তার মধ্যে মুসলিম স্থান পেয়েছে মাত্র ১৩ জন। অর্থাৎ পিএসসির দুই দফতর মিলিয়ে মোট নিয়োগের সংখ্যা ৫৫৬ আর মুসলিম নিয়োগ মাত্র ১৩! অর্থাৎ মুসলিম নিয়োগের হার মাত্র ২.৩%। নিয়োগ তালিকায় স্থান পাওয়া ওই ১৩ মুসলিম হলেন: ১. হাসনাল হক। ২. মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। ৩. কায়েস আলি মিয়া।

৪. আবদুল্লাহ নিসার। ৫. সেখ মনিরুল হক। ৬. শামিম ইয়াসমিন। ৭. তানিয়া গাজি। ৮. সেখ মুহাম্মদ শফিক।

৯. মুহাম্মদ নাসিম। ১০. সৈয়দ নাসিরুদ্দিন। ১১. ফকরুদ্দিন সরদার। ১২. সেখ সাহেব আলি ১৩. মসিউর রহমান। এরপর সম্প্রতি ২০০৬ সালের ক্লার্কশিপ পরীক্ষার ভিত্তিতে লোয়ার ডিভিশন অ্যাসিসটেন্ট নিয়োগের দ্বিতীয় তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ১৬ মার্চ, ২০১০।

নোটিশ নং: A-61/PSC (A) . এই তালিকায় রয়েছে মোট ২৭৮ জনের নাম। তার মধ্যে মুসলিম মাত্র ৩ জন! অর্থাৎ মুসলিম নিয়োগের হার এক শতাংশেরও কম। প্রথমেতালিকায়স্থানপায় 'WEST BENGAL LEGISLATIVE ASSEMBLY SECRETARIAT, “ASSEMBLY HOUSE”, KOLKATA –1.' বিভাগে নিয়োগকৃতদের। এই তালিকায় মোট ১০ জনের নাম থাকলেও একজনও মুসলিমের স্থান হয়নি। এর পরের তালিকায় রয়েছে 'FOOD & SUPPLIES DIRECTORATE UNDER THE FOOD & SUPPLIES DEPARTMENT, “KHADYA BHABAN” (1ST FLOOR), 11/A, MIRZA GHALIB STREET, KOLKATA –87. ' বিভাগে নিয়োগকৃতদের নাম।

এতে রয়েছে ২৬৮ জনের তালিকা। তার মধ্যে মাত্র তিনজন হলেন মুসলিম। এই তিনজন হলেন : ১. সেখ দীন ইসলাম। ২. মুহাম্মদ নাসিমুদ্দিন। ৩. মো. মুদাস্‌সার।

সম্প্রতি খাদ্য সরবরাহ বিভাগে নিয়োগ নিয়ে স্বজন পোষণের অভিযোগ ওঠে। আর এই তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর মুসলিম বৈষম্যের অভিযোগ চরম পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে। কারণ বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন ও বুদ্ধিজীবী মহল বারে বারে চাকুরিতে এ রাজ্যে মুসলিম বঞ্চনার অভিযোগ তুলে আসছিলেন। এবার সেই অভিযোগ আরও দৃঢ় হবে বলে বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে। সেই সঙ্গে তারা দাবি তুলে আসছেন এ রাজ্যে জনসংখ্যার অনুপাতে চাকরি দিতে হবে মুসলিমদের, তা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে এই তালিকা বেশ ভাবিয়ে তুলতে পারে বাম সরকারকে।

এমনিতেই বামফ্রন্টের বরাবরের মুসলিম ভোট ব্যাংক-এ ব্যাপক ধস নেমেছে। সামনে ২০১১ সালে বিধান সভা নির্বাচনে মুসলিম ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে উঠবে। কারণ রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ মুসলিম ভোটের ওপর নির্ভর করছে ২০১১ সালে কে এ রাজ্যে চালকের আসনে বসবে। ৩২ বছরের শাসন করে আসা বাম সরকার না তৃণমূল-কংগ্রেস জোট? প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বামজোটের অন্তর্গত ফরোয়ার্ড ব্লক দল মুসলিমদের সংরক্ষণের জন্য জোর সওয়াল করে আসছে। বিশেষ করে তাদের নেতা অশোক ঘোষ জোরালো করে মুসলিম সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা বাম সহ বিভিন্ন মহলে ব্যক্ত করেছেন।

বলে রাখা ভাল, খাদ্য মন্ত্রক ফরোয়ার্ড ব্লক-এর অধীনে রয়েছে। একদিকে যখন চাকুরিতে মুসলিমদের সংরক্ষণের জন্য জোর সওয়াল করে চলেছেন শ্রী অশোক ঘোষ মহাশয় তখন তার দলের অধীনে থাকা দফতরে নিয়োগে ২৬৮ জনের মধ্যে মাত্র ৩ জন মুসলিম স্থান পেয়েছে। এর পর অশোক ঘোষের মুসলিম সংরক্ষণের বিষয়ে সওয়াল নিয়ে প্রকৃত আন্তরিকতার প্রশ্নে ঘোর সন্দেহ দেখা দিতে পারে। আগামী ২০১১ সালের বিধান সভা নির্বাচনের আগে এভাবে চাকরিতে মুসলিমদের করুণ উপস্থিতি চলতে থাকলে তা ক্রমশই বাম সরকারের চিন্তা হয়ে দাঁড়াবে। তাই এ রাজ্যে সার্বিক ভাবে পশ্চাদপদ ঘোষণা করে সমগ্র মুসলিমদের সংরক্ষণের আওতাভুক্ত না করলে এই চিত্রের কোন হেরফের হবে না বলে সমাজবিদ ও অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.