রিজওয়ানুল ইসলাম রুদ্র ১.
শেষ থেকে শুরু করছি।
অনেককেই ঘটনা ঘটার পর "প্রথম আলোর" অসত্য প্রতিবেদন নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন এবং হতাশ হয়েছেন যারপরনাইভাবে।
প্রথম আলো কী কোনো "বাইবেল" না "কোরআন"... আট টাকার একটা খবরের কাগজ সবসময় সত্য তথ্য দিবে, এতটা আমরা আশা করি কীভাবে। প্রথম আলোর সম্পাদক, মতিউর রহমান কি কোনো ধর্মীয় নবী-রাসূল গোত্রের কেউ,নাকি চে গুয়েভারার মতো বিপ্লবী? যতদূর জানা যায়, বাংলাদেশের অন্যান্য পত্রিকার সম্পাদকদের মতো সে-ও একজন ধুরন্ধর, চালবাজ মানুষ। যে পত্রিকার ব্যবসা করে খায়, পত্রিকার হিট বাড়ানোর জন্য পত্রিকা ছাপানোর পাশাপাশি অন্যান্য বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সাথে তাল মেলায়।
আরো অনেক পত্রিকা আছে যারা এই প্রথম আলোর চেয়ে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মানুষের কাছে।
তাই প্রথম আলো'র সংবাদকে গুরুত্বসহকারে নেবার কোনো কারণ নেই। পারসোনার এমডির সাথে ওদের সম্পর্ক ভালো। নকশা পাতাতে একাধিকবার তাকে লিখতে দেখা গেছে। মানুষের স্বার্থের জন্য প্রথম আলো তার মতো একজন কলামিস্টকে হাতছাড়া করবে কেন? হোক সে পর্নো ভিডিও প্রস্তুতকারী! তাতে কী যায় আসে? পর্নো ছবির অভিনেত্রী প্রভা, এনামুল করিম নির্ঝর-চৈতী, অরুণ চৌধুরী এদের কী আমরা কিছু করতে পেরেছি? আমরা এদের কার্যকলাপ জেনেও আপন করে নিয়েছি।
ছোট্ট শিশু কারো শরীরে বাথরুম করলে, সে বরং খুশি হয়। এদেরও আমরা ছোট শিশুর মতো পবিত্র করে রেখেছি। বাংলাদেশি তো!
আচ্ছা, ঠিক আছে। আমরা ধর্মীয়ভাবে নিরপেক্ষ, আমরা সাদা-কালোর তফাত বুঝি না। আমরা ভদ্র, আমরা নম্র।
আমরা সেরা। কিন্তু আমরা একজন লেখিকাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিলাম। যার অপরাধ ছিলো, নারীর যৌন-স্বাধীনতা নিয়ে লিখা এবং ধর্মীয় ব্যাপারগুলোর সমালোচনা করা। তিনি কোনো পর্নো ভিডিও প্রস্তুত করেন নাই, লিখেছেন। অনেক ভালো লিখেছেন।
নাহ্, তিনি তথাকথিত মিডিয়ার মানুষদের মতো ব্যবসা করেও খান নাই। তাকে বাঁচতে হয়েছে অনিশ্চয়তায়। জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির তাঁর মাথার দাম ঘোষণা করেছে, প্রকাশ্যে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তারপরও তিনি পিছপা হন নাই। সরকারের নির্দেশে দেশ ছেড়েছেন ভদ্রভাবেই।
প্রশ্নটা এখানেই, যৌনতা-সংক্রান্ত উপন্যাস আমাদের সুশীল সমাজ-অসুশীল সমাজ-হুজুর-নাস্তিকরা মেনে নিতে পারে নাই, এসব পর্নো ছবির অভিনেত্রী-অভিনেতা-পরিচালকদের আমরা রাজার সিংহাসনে বসিয়ে রেখে যত্ম করে পা টিপে দিচ্ছি কীভাবে? আমরা দাবি করি, আমরা অপরাধের বিরুদ্ধে। এই কী আমাদের প্রতিবাদের নমুনা...
প্রতিবারের মতো সরকারের কোনো সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেই। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপিদের কোনো বয়ান-বক্তব্য নাই। যেন এটা "ধামাচাপা" দেবার মতো কিছু। জেনে গেলে সমস্যা।
মানুষ জানছে ফেসবুক, ব্লগের কল্যাণে। প্রথম আলো, মানবজমিন ব্যস্ত কানিজ আলমাসের সুনাম নিয়ে। কারণ কানিজ তাদেরই পোষ্য। প্রথম আলো, মানবজমিনও কানিজের পোষ্য। প্রত্যেকে একে অন্যের পরিপূরক।
সবার মনে রাখতে হবে প্রথম আলো, মানবজমিন, পারসোনা এ ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোর দরকার "ব্যবসা"। মানুষের কল্যাণ এদের মূল কর্মকাণ্ডের মধ্যে পড়ে না। কীভাবে কোটিপতি হওয়া যায়, অধিক মুনাফা লাভ করা যায় এটাই এদের টার্গেট। কার মান-ইজ্জত গেলো সেটা নিয়ে কারো মাথাব্যথা নাই।
২.
আওয়ামী সরকারের ভেতর স্বৈরাচারীর ছাপ দেখতে পাচ্ছি।
ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন, দিনমজুরের গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রমাণ করছে, সরকার ব্লগ-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, বাক-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। আমি নিশ্চিত, আর্মির একটি টিম, ডিজিএফআই বা অন্য কোনো গোয়েন্দা সংস্থা হয়তো-বা সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখছে সামহোয়ারইনসহ অন্যান্য ব্লগসাইটগুলোকে। কিন্তু কেন? বাংলাদেশি সরকার কি চীনের মতো হতে চায়? ওখানে ফেসবুক-ব্লগ ব্যবহার নিষিদ্ধ। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে তাহলে এই মুক্তবুদ্ধিচর্চার পরিণাম? যুক্তিবাদীদের আটকে রেখে সরকার সুবুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছে না। "শূকরের মাংস খাও কি-না" এ ধরণের উদ্ভট প্রশ্ন কোনো আর্মি অফিসার করতে পারে? এরা ভাবে কি নিজেকে! "রাষ্ট্রবিরোধীতার" মানে এরা বুঝে? থাইল্যান্ডের রাজা ভূমিবলকে নিয়ে কেউ যদি বাজে কথা বলে, তাকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ আছে।
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের আড়ালে কী চলছে? রাজতন্ত্র না পরিবারতন্ত্র। সত্যিই বিচিত্র আমাদের দেশটা!
৩.
কানিজ আলমাস "ধোয়া তুলসিপাতা" না। তার উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। সে শাস্তির যোগ্য। তাকে দেখেই আমরা বুঝতে পারছি ফ্যাশন মিডিয়াতে কত বিকৃতরুচির প্রসটিটিউশন এর মালিকেরা আছে।
পর্নো ভিডিও প্রস্তুতকারীরা আছে। তার সবার সামনে ক্ষমা চাওয়া উচিত। আর আমাদেরও এ ধরণের মানুষদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো উচিত। এসব নিয়ে ঘাঁটলে আরো অনেক কিছুই বেরিয়ে আসবে। পুলিশ আধুনিক হচ্ছে না।
সাব-ইন্সপেক্টর ছাগল মাসুদ হার্ডডিস্ক জব্দ করার পর সেটা অভিযোগকারীর হাতে দিয়ে দিলো কীভাবে? পুলিশ কোনোকিছু জব্দ করলে তা কখনোই বাদীর হাতে দিতে পারবে না। সেটা নিজেরা নিরীক্ষণ করবে, নিশ্চিত হবে। সে অনুযায়ী পুলিশ নিজেই মামলা করতে পারে। সেটা হতো অনেক শক্তিশালী। কানিজের ভিত্তি নড়ে যেতো।
ব্যবসা শেষ হয়ে যেতো! কিন্তু ছাগল মাসুদ সেটা তো করেই নাই, উল্টা বাদীর বদমেজাজি স্বামীর হাতে দিয়ে আলামত নষ্ট করে প্রমাণ করেছে সে একজন ভোদাই ছাড়া আর কিছু নয়। পুলিশের চাকরিতে এ ধরণের বোকা মানুষকে নিয়োগ দেয়া উচিত না।
এ ব্যাপারে ব্লগে অনেক পোস্ট পড়া হয়েছে। আশা করি, আমরা সাতদিনেও এই ঘটনা ভুলবো না। অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা আমরাই করবো জনমত গড়ে তুলে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।