এ যেন সেই রূপকথার চিত্র। ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে বাতাসে ভর করে সত্যি সত্যিই উড়ে চলেছে সেই জাদুর গালিচা (ফ্লাইং কার্পেট)। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা যেন সেই রূপকথাকেই বাস্তবতার ছোঁয়া দিতে চলেছেন। তাঁরা প্লাস্টিক-নির্মিত একটি ক্ষুদ্র ‘ফ্লাইং কার্পেট’কে গবেষণাগারে সফলভাবে উড্ডয়ন করাতে সক্ষম হয়েছেন।
চার ইঞ্চি লম্বা ফ্লাইং কার্পেটটির সম্মুখভাগ থেকে পেছন পর্যন্ত নিচের অংশে রয়েছে অনেকগুলো বাতাস-পকেট।
সেগুলো পরিচালনা করা হয় বৈদ্যুতিক তরঙ্গের সাহায্যে। অ্যাপ্লাইড ফিজিকস লেটারস নামক বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাদের ওই ‘ফ্লাইং কার্পেট’টি প্রতি সেকেন্ডে এক সেন্টিমিটার গতি তুলতে সক্ষম। তবে নকশার উন্নয়নের মাধ্যমে গতি প্রতি সেকেন্ডে এক মিটার পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব।
প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নোয়াহ জেফারিস ও তাঁর সহযোগী গবেষকেরা দুই বছর প্রচেষ্টার পর ডিভাইসটি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। নোয়াহ জেফারিস জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি নিয়ে পড়াশোনা শুরুর কিছুদিন পরই গাণিতিক সূত্রের ওপর একটি লেখা পড়ে তাঁর মাথায় এটি তৈরির চিন্তা আসে।
জেফারিসের গবেষক দলটির নেতৃত্বে ছিলেন অধ্যাপক জেমস স্টার্ম। তিনি জানান, একসময় এই প্রকল্পটিকে অসম্ভব কল্পকাহিনী বলে তাঁর মনে হয়েছিল। কারণ এটা নিয়ন্ত্রণ করা আসলেই কষ্টসাধ্য। তবে দুই বছর ধরে গবেষণার সময় সেটি উড্ডয়নের সময় কী কী জটিলতার সম্মুখীন হবে, তা খুঁজে বের করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গবেষণা প্রতিবেদনে যন্ত্রটির নামের ক্ষেত্রে জেফারিস এবং তাঁর সহযোগীরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ‘ফ্লাইং’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
তাঁরা ‘ফ্লাইং’ শব্দটি উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। কারণ বিমানের চেয়ে হোভারক্রাফটের (জেট ইঞ্জিনের মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুভর্তি গদির ওপর ভর করে জলে ও স্থলে চলনক্ষম যান) সঙ্গেই এটির মিল বেশি।
জেফারিস জানান, এটি ভূপৃষ্ঠের খুব কাছাকাছি দিয়ে উড়ে চলে। কারণ বাতাস ভূপৃষ্ঠ এবং ওই যানটির মাঝখানে আটকা পড়ে। যখনই তরঙ্গগুলো যানটির সঙ্গে সঙ্গে চলতে শুরু করে, তখনই সেটা বাতাসকে পেছন দিকে সঞ্চালন করে।
বাতাস সঞ্চালনের সময় সৃষ্ট প্রবল ধাক্কাই এটাকে সচল থাকার জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়।
গবেষক দলটির সাফল্যে এই প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার আলো দেখতে শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। ২০০৭ সালে ফিজিক্যাল রিভিউ লেটারস সাময়িকীতে প্রকাশিত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লক্ষ্মীনারায়ণ মহাদেবের একটি গবেষণা প্রতিবেদন পড়েই মূলত অনুপ্রাণিত হন জেফারিস এবং তাঁর সহযোগীরা। জেফারিসের সফলতায় তিনি নিজেও অভিভূত হয়েছেন। তিনি প্রশংসা করে বলেছেন, ‘আমাদের একটি সাধারণ তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দলটি এমন একটি ডিভাইস বানিয়ে ফেলেছে, যেটি সত্যি সত্যিই কাজ করছে।
’
তবে গবেষক জেফারিসের মতে, ডিভাইসটির সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভারী ব্যাটারিগুলো সুতার নোঙরের সঙ্গে বাঁধা থাকায় সেগুলো মাত্র কয়েক সেন্টিমিটার দূরে উড়ে যেত সক্ষম। তবে সৌরশক্তির মাধ্যমে ব্যাটারির বিকল্প জ্বালানির সরবরাহের ব্যবস্থার চেষ্টা চলছে। সেটি সম্ভব হলে দূরবর্তী স্থানে উড়ে যেতে সক্ষম হবে বলে তিনি জানান। বিবিসি অনলাইন।
prothom alo ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।