একজন নির্বোধের বয়ান ‘কাশু বাই এমুন কইরা মাথায় হাত দিয়া বইসা আছো ক্যা?’
‘কুনো শান্তি পাইতাছি না গো মানিক বাই। ’
‘পাইবা ক্যামনে কাশু বাই, শান্তির মায় তো মরছে। ’
‘হু ঠিকই কইছো মানিক বাই। ’
কাশেম আর মানিক নামের দুই ব্যক্তি নিজেদের মধ্যে সাংসারিক আলাপ করতেছিল। তো সেময় বৃদ্ধা এক ভিারী তাদের পাশ দিয়ে হেঁটে যাইতেছিল।
আল্লাহ মালুম দুই ব্যক্তি কথা সেই বৃদ্ধার কানে গেল। হাতের সম্বল লাঠি খানা নিয়ে পরিমরি করে ছুটে এল। লাঠিখানা মাথার উপরে তুলে হংকার ছাড়ল।
‘গোলামের পোলা গোলাম কী কইলি, শান্তির মায় মরছে? তয় মুই কেডা? শান্তির মোর মাইয়া আর মুই মইরা গেছি? ও আল্লা মুই বলে মইরা গেছি! তোরা মোরে মাইরা হালাইছো? লাঠি দিয়া পিডাইয়া তোগো কফালের চাড়া ভাঙ্গাইয়া দিমু গোলামের পো। ’
ইতিমধ্যে দুই একজন পথচারীর ভিড় জমে গেল।
একজন দোষ দিতে লাগল ‘ঠিকই তো শান্তির মায় মরে নাই, তাও তোমরা শান্তির মায়রে মাইরা ফালাইলা?’ আর একজন এ কথার বিপক্ষে ‘ওরা এই শান্তির মায়ের কথা বলে নাই ভাই। সংসারে শান্তির কথা বলেছে। ’ কিন্তু কে শোনে কার কথা? এর পরের ঘটনা আমার জানা নাই। কারণ তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম তো। পরের ঘটনা আর মনে রাখতে পারি নাই, অন্যের মুখে শোনা কাহিনি তো !
কিন্তু ভাইগো আমার মনেও তো কোন শান্তি নাই।
ঘরে গেলে বউ বলে- ‘তোমারে কত দিন ধইরে কচ্ছি, মাইয়েডার জন্যি কয়েকটা প্যান্ট কিনে আন। আনতিছো না ক্যান?’ ‘ও বউ তোমারে কিরাম কইরে কই কও, আমার বুক পকেটে বা চিপায়-চাপায় এক কানা কড়িও তো নাই। ’
জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কিন্তু বলা হয়েছিল দশ টাকার মধ্যে চাল খাওয়ানো হবে। গরিবদের আর কোন কষ্ট হবে না।
যাদের চাকরী নাই, তাদের চাকরী দেওয়া হবে। আমার চাকরীর দরকার নেই। এক জায়গায় চাকরামী করে মাস শেষে কিছু টাকা পাই। আর সেই টাকা দিয়ে আমার বেশ করে চলে যাচ্ছিল কিন্তু দাম বাড়ার কারণে আমার যে চলছে না। তাই ঘরে ফিরেও আমি আর শান্তি পাই না।
বাইরে তো শান্তির ছিঁটেফোঁটারও নেই। না না ভুল বলছি আমি নির্বোধ মিয়া। নির্বোধ মানুষতো তাই ভুলবাল বলছি। আমাদের দেশের নেতারা মুখে ফেনা তুলে ফেলছে ‘আইন শৃঙংখলা অন্য সব সময়ের চেয়ে ভাল। আর আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় আমাদের বাজারে দাম সে অনুযায়ী বাড়ে নাই।
’ তো নিরীহ পাবলিকের বুকে পুলিশের বুট তোলার ছবি আমাদের কিসের কথা বলে? পথশিশুরা পর্যন্ত পুলিশের লাঠির আঘাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
অনেক আগে পৃথিবীর বুকে একটা সম্ভাবনাময় একটা দেশ ছিল। তো একদিন সে দেশের প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব দরবারে গিয়ে তার সরকারের সাফল্যের তালিকা তুলে ধরেন। নিজের ঢোল নিজে পেটানো আর কি! আগে মানুষ নিজের ঢোল নিজে পেটানোকে ভাল চোখে দেখত না। বলত, নিজের ঢোল নিজে পেটাতে হয় না।
কিন্তু দিন তো বদলেছে, পুরানো কথা আর চলে না। এখন নিজের ঢোল নিজেকেই পেটাতে হয়, নইলে অন্য আস্তে পিটাবে না হয় জোরে পিটিয়ে ফাটিয়ে ফেলবে। তো সে দেশ মাতা নিজের ঢোল নিজে পিটিয়ে ভাল করছেন। মুখে মুখে ভাত খাওয়ার কথা বললেই তো আর পেট ভরে না। পেট ভরতে হলে প্লেটে ভাত থাকতে হয়, হাত দিয়ে তুলে মুখে পুড়তে হয়।
তারপর পেট ভরবে। তো সেদেশের মাতা যদি মুখের বাণী দিয়েই দেশের উন্নতি করতে চান, তাহলে আর কিছু বলার নেই। এমনিতেই পাবলিকের কিছু বলার মতা নেই। একদিকে মুখে শান্তির কথা বলেছিলেন, অন্যদিকে তখন সারাবিশ্বে তাঁর দেশের শান্তির নমুনার চিত্র ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর দেশের কোন এক পুলিশ পা তুলে দিয়েছে, পাবলিকের বুকের উপর।
পত্রিকার পাতায়, টিভি পর্দায় এই দৃশ্য দেশবাসি দেখেছিল। কোন সভ্য দেশের চিত্র এমন হতে পারে কী? এই কী তবে শান্তির নমুনা? অথচ তিঁনিই বিশ্ববাসীর কাছে শান্তির মডেল উপস্থাপন করেন ছিলেন। বিশ্বে শান্তি আনার আহবান জানিয়ে ছিলেন। সে সময় তাকে বিশ্বের সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিল, ‘বিরোধী দলের সাথে আলোচনায় বসবেন না?’ ‘না, না, চোর-বাটপারদের সাথে কোন আলোচনা না। ’ এই হল দেশের হেড মাথার উক্তি!!
ভাইসব, উপরের গল্পটি পড়ে আপনাদের কী এখন আর একটা গল্পের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে না? ঐ যে খুব সকালে কোন এক পুকুর পাড়ের এক পাশের ঘাটে কোন এক মুসুল্লি নামাজের জন্য অযু করতে ছিল এবং অপর দিকের ঘাটে অন্য আর এক ব্যক্তি হাত মুখ ধুঁইতে ছিল।
যিনি ছিলেন পেশায় চোর। তো চোর ব্যাটা মুসুল্লিকে দেখে মনে মনে ভাবছে ‘ব্যাটা মনে কয় মোর জাত ভাই। চুর। হারা রাই চুরি-চামারি কইরে আইসে হাত-মুখ ধুঁইতেয়াছে। ’ অন্যদিকে মুসুল্লিও মনে মনে ভাবছে ‘লোকটাও আমার মত ভোরে উঠে অযু করছে নামাজ পড়ার জন্য।
’ কী বুঝলেন? ঘটনাটা অনেক পুরানো কিন্তু ডিজিটাল যুগে এসেও ঘটনাটার সাথে অন্য আরো কত ঘটনা বা কথার সাথে মিলে যাচ্ছে।
তো হে মহান পাঠককূল, ‘আপনারাও কী কোন মিল খুঁজে পাচ্ছে পুরানো দেশটার গল্পের সাথে? মনে কী হচ্ছে, আপনাদেরও এক শান্তির মা আছে? শান্তির মা মনে নাই, নতুন আর এক শান্তির মায়ের উদয় হয়েছে?’
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।