আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতি পদে পদেই যেন হতাশার ছোয়া। কেউ হতাশ তাদের জীবন নিয়ে, কেউ তাদের প্রেমিকাকে নিয়ে, কেউ বা পড়াশুনা নিয়ে, কেউ কর্মক্ষেত্রে বসের ঝাড়ি খেয়ে.........মোটকথা কেউ ই ঠিক মত জীবনের মর্ম এ ইহজীবনে উপলব্ধি করতে পারে না। আর আপনি যদি ঢাকা শহরের বাসিন্দা হন তাহলে তো আর কথাই নাই। এক জীবনের সব হতাশা মনে হয় এ শহরে থাকলেই বিনামূল্যে পাওয়া যায়। যানজটে অসহ্য, দ্রব্যমুল্যের উর্ধগতিতে অতিষ্ঠ, জীবনের সকল প্রকারের জটিলতায় পরিপূর্ণ এ শহরের বাসিন্দারা।
একটুখানি শান্তির পরশ পাওয়ার জন্য আকুলতায় ভরে ওঠে তাদের মন। আমি নিজেও এর ব্যতিক্রম নই। দুই বছরেই এ মর্ম হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু ছোট ঘটনা, কিছু সুন্দর অথচ চোখ এড়িয়ে যাওয়ার মত ঘটনা যেন এ যান্ত্রিক জীবনে যন্ত্রের কোলাহলকে দূরে ঠেলে দেয়। আজ তেমন একটি ঘটনারই অবতারণা করলাম।
কোচিং থেকে বাসায় ফিরছিলাম আজ। প্রতিদিনের মতই খিলগাও ফ্লাইওভার এর নিচে জ্যাম এ বসে আছি। শান্তিতে যে একটু বাসায় ফিরব তারও উপায় নেই। তার মধ্যে কিছুদিন আগে থেকে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে যেতেই ভয় লাগে, যদি এখনই ভেঙ্গে পড়ে......... পাশে গাড়ির ইঞ্জিনের গরম, আবার প্যা পু আওয়াজ......মোদ্দাকথা হল এই, প্রতিদিনের ঢাকা শহরের ট্রাফিক জ্যামের একটি খন্ডচিত্র।
বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে এক জায়গায় চোখ আটকে যায়।
দেখলাম, বাচ্চাদের স্কুলে আনা নেওয়া করার জন্য একটি মুরগির খাচা......মানে স্কুল ভ্যান গুলো। ওই খাচাতে চারটা সুন্দর নিষ্পাপ পাখি বসে আছে। তার মধ্যে একটা পাখি আইসক্রিম খাচ্ছে। কিন্তু দেখলাম সে একা খাচ্ছে না। কখনো তার চেয়ে ছোট্ট দুটি পাখিকে খাওয়াচ্ছে, কখনো বা তার সমান যে পাখিটি বসে ছিল তাকে খাওয়াচ্ছে।
এভাবে করে পুরো আইসক্রিমটি সে পাখিটি তার আশেপাশের পাখিদের সাথে ভাগ করে খেয়ে নিল। হঠাৎ করেই আমার ঘোর কাটল, দেখলাম রিকশা চলতে শুরু করেছে । আর পাখিগুলো কলকল করতে করতে চলে গেল।
ঘটনাটা হয়ত তেমন কোন বড় কিছু না। কারো জীবনে কোন প্রভাব ও পড়বে না।
কিন্তু পাখি গুলো থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর উপলব্ধি করলাম, এতক্ষণ আমার মধ্যে যে ক্লান্তি ছিল, যে অবসাদ টুকু ছিল সব নিমেষে উধাও হয়ে গেছে। যতক্ষণ ওই পাখিগুলো কে দেখছিলাম মনে হচ্ছিল যেন আমি প্রতিদিনের এ ঢাকা শহরে নেই, চলে গেছি দূরে কোথাও, যেখানে কোন যান্ত্রিকতা নেই, নেই কোন অবসাদ, নেই কোন হতাশা, নেই মানুষের সাথে মানুষের জটিলতা। আছে কেবল ভালোবাসা, আছে স্নেহ মমতায় ঘেরা একটি জগৎ। খুব ছোট্ট, খুব ক্ষণস্থায়ী অথচ মনের মধ্যে যেন গভীর একটা দাগ কেটে গেল। তখন অনুভব করতে পারি, আমরা যতই যান্ত্রিক হই না কেন, যতই জটিলতায় জীবন কে ভরিয়ে রাখি না কেন, এ যান্ত্রিক শহরে ভালোবাসা আজো জিইয়ে আছে।
হয়ত কিছু ছোট্ট পাখি এ কথা গুলো মনে করিয়ে দেয়, কিন্তু তারপরও এ অনুভব রয়ে যায় অনেক্ষণ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।