আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুঠোফোনের কাছে অসহায় তরুণীরা!

বরিশাল ব্রজমোহন কলেজের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে সোমবার রাতে৷ বিবাহীতা এই তরুণী থাকত স্বামীর সঙ্গেই৷ এই বিয়ে মেনে নেয়নি তাদের পরিবার৷ তবুও দু’জন সংসার পেতেছিল ২০০৪ সালে৷ হঠাৎ এই তরুণীর আত্মহত্যার কারণ একটি ভিডিওচিত্র৷ নজরুল নামক এক যুবক সুযোগ বুঝে তরুণীটির নগ্ন দেহের ভিডিও করেছিল৷ এরপর সেটি ছেড়ে দেয় ইন্টারনেটে৷ হালের ইন্টারনেটযুক্ত স্মার্টফোনের কারণে তা ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত, সবজায়গায়৷ এরপর প্রতিবেশিদের কটু কথা আর সহ্য করতে পারেনি তরুণী৷ রাতের আধারে গলায় দড়ি পেচিয়ে ঝুলে পড়ে সে৷ ২. ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বসুন্ধরা দিবা শাখার এক নিয়মিত ছাত্রীর কথা বলব৷ ভালো ফলাফলের আশায় স্কুলের শিক্ষার্থীদের কাছে কোচিং করত সে৷ মে মাসের একদিন কোচিংয়ে যেতে দেরি হল৷ বাংলা শিক্ষক পরিমল জয়ধর তাকে অপেক্ষা করতে বললেন৷ ব্যাচের অন্য শিক্ষার্থীরা বিদায় নিলে তাকে পড়াবে জয়ধর৷ সেদিনের ঘটনা ছাত্রীটি জানিয়েছে এভাবে, ‘‘সবাই চলে যায় কিন্তু আমি রয়ে যাই। সবাই চলে গেলে আমি আগের পড়াটুকু পড়তে থাকি। স্যার মূল দরজা বন্ধ করে রুমে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দেন এবং আমি কিছু বুঝার আগেই আমার মুখ বেঁধে ফেলেন। মুখ বাঁধা থাকায় আমি কিছু বলতে পারিনি। হাত ছোড়াছুড়ি করতে যাওয়ায় তিনি আমার ওড়না দিয়ে আমার হাত পেছনে বেঁধে ফেলেন।

হাত বেঁধে সে আমাকে ভীষণ মারধর করে। মারধর করে সে আমাকে উলঙ্গ করে ফেলে এবং আমার ছবি তোলে। ছবি তোলার পর সে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করে”। পরিমল একাধিকবার ছাত্রীটিকে নির্যাতন করেছে৷ ভয় দেখিয়েছে কাউকে বললে এসবের ছবি ছেড়ে দেবে ইন্টারনেটে৷ আশার কথা হচ্ছে, পরিমল এখন কারাগারে৷ ছাত্রীটি সাহস করে অভিযোগ করায় বিচারের কাঠগড়ায় পরিমল৷ ৩. বাংলাদেশে মোটামুটি নামকরা এক মডেল কন্যার কথা৷ সদা হাস্যোজ্বল এই মডেলকন্যা বছর কয়েক আগে বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে বিবাহ করেছে৷ কিছুদিন আগে ইন্টারনেটে তার এক ভিডিওচিত্র প্রকাশ পেল৷ তরুণীটি নিজের পরকীয়া সম্পর্কের ভিডিও নিজেই করেছে (ভিডিওর বিবরণ তেমনটাই বলে) মুঠোফোনে৷ কিন্তু কিভাবে যেন ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে সেটি৷ এতে করে তার ক্যারিয়ারের আপাতত ইতি ঘটেছে৷ বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের এসব জোরপূর্বক কিংবা একান্ত গোপন ভিডিওচিত্র ইদানিং খুব বেশি ছড়াচ্ছে৷ প্রতিনিয়তই গণমাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে কোন না কোন তরুণীর সর্বনাশের খবর৷ এদের কেউ কেউ নিজের সম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷ নিজের কিংবা নিজের পরিবারের মানসম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যার বাইরে অন্য কোন পথ বোধহয় জানা নেই তাদের৷ প্রযুক্তির এই অপব্যবহারটাকে তুলনা করা যেতে পারে ছুরির ব্যবহারের সঙ্গে৷ এই ছুরি কেউ ব্যবহার করছে আপেল কাটার জন্য, ডাক্তার ব্যবহার করছে অস্ত্রপচারে আর দুষ্ট মানুষরা এটিকে ব্যবহার করে মানুষ হত্যার কাজে৷ ক্যামেরাযুক্ত মুঠোফোনগুলোর অবস্থাও তেমন৷ আরব বিশ্বে বিক্ষোভ দমনে সরকারি সেনাদের সহিংসতার তথ্য প্রমাণ ধারণ করা হচ্ছে মুঠোফোন ক্যামেরা ব্যবহার করে৷ এরপর সেগুলো ইউটিউবের কল্যাণে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের কাছে৷ বিশ্ব জানতে পারছে সেনাদের বর্বরতার কথা৷ সেই মুঠোফোনের অপব্যবহারটা আমরা দেখছি বাংলাদেশে, তরুণীদেরকে আত্মসম্মান জিম্মি করার মাধ্যম হিসেবে৷ মুঠোফোনের এই অপব্যবহার রোধের দুটো উপায় আমি দেখতে পাচ্ছি৷ প্রথমটি বেশ কঠিন৷ সেটি হচ্ছে, আমাদের বিবেককে জাগিয়ে তোলা৷ বাংলাদেশি তরুণ-তরুণীদেরকে সচেতন করতে হবে৷ এই কাজটি করা যেতে পারে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে৷ শুধু ফেসবুক-টুইটার এক্ষেত্রে সমাজের একটি অংশকে সজাগ করতে পারে৷ কিন্তু বড় অংশকে সজাগ, সচেতন করতে এগিয়ে আসতে হবে সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমকে৷ চালাতে হবে ব্যাপক প্রচারণা৷ দ্বিতীয় কাজটি হচ্ছে, কঠোর আইনী ব্যবস্থা৷ বাংলাদেশে সাইবার আইনের কথা শোনা যাচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে৷ এই আইনের দৃষ্টান্তমূলক প্রয়োগ অত্যন্ত জরুরী। সূত্রঃ বিডি ক্রাইম।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।