আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! নাহ ! আর সহ্য করা যাচ্ছে না ! এই মেয়ের একটা কিছু করতেই হবে ! কোন ছাড়াছাড়ি নাই ! আর কোন ছাড়াছাড়ি নাই আমি সিদ্ধন্ত নিয়ে নিয়েছি ! কাল রাত থেকেই আমি ভাবলাম এমন কিছু একটা ! ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ! স্বপ্নেই পেয়ে গেলাম সেই সমাধানটা ! আসলেই তো তাই ! এমন করে গাধার মত জীবন টানার কোন মানে হয় না ! আমি এবার মুক্ত হতে চাই !! একেবারে মুক্ত ! নিশির সাথে ব্রেকআপের সিদ্ধান্ত তা নিয়েই নিলাম ! আজকে বিকালে ওর সাথে দেখা হবার কথা আছে ! আজকেই জানিয়ে দিব ! ওকে বলবো যে আমি তোমার প্রেমিক হতে এসেছিলাম ! তুমি আমাকে তোমার পোষ্য প্রানী বানিয়ে ফেলেছ ! সুতরাং আর না ! আজ থেকে নতুন কাউকে খুজে নিও ! আমাকে আর কলুর বলদ হতে পারবে না ! আমি জানি প্রথমে হয়তো ও বিশ্বাস করতে চাইবে না ! একটু চোখ গরম করবে ! কিন্তু হু কেয়াস ম্যান ? আমি আর ডরাই নাকি ? আমি আজ থেকে মুক্ত !! সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই মনটা ফুরফুরে লাগছে ! আমি গোসল করতে গেলাম ! ঠান্ডা পানি মাথায় পরতেই নিশির সেই দিনের কথা মনে পরে গেল । মনে আছে একবার নিশি আমাকে পরপর দুই সপ্তাহ গোসল করতে দেয়নি ! তখন নিশির সাথে সবে মাত্র রিলেশন হয়েছে । সারাদিন কেবল ওর কথাই মনে পরে ! সেদিন ওর সাথে কোথায় যেন যাওয়ার কথা ছিল ! ও হ্যা মন পড়েছে ! উত্তরার দিকে ! ওর নাকি কাজ আছে । আগের দিন নিশি আমাকে বলেছিল যে আমি সকাল বেলাতেই গোসল করেই রেডি হয়ে থাকি ! আমি একটু নাহু নাহু করতেছিল ! এমনিতেও শীতের বেলা ! তার উপর সকাল বেলা ! এতো সকাল বেলা কি ঠান্ডা পানি দিয়ে গোছল করা যায় নাকি ? আমি কি করলাম , একটু মাথা ভিজিয়ে চেলে গেলাম ! আমি ভেবেছিলাম নিশি হয়তো বুঝতে পারবে না ! কিন্তু নিশি ঠিকই বুঝে ফেলল ! তখন সে কি রাগ ! তার কেবল একটাই কথা ! আমি কেন তার কথা শুনলাম না ! কেন শুনলাম না ! তাই শাস্তি স্বরূপ বলল যে আমি যেন দুই সপ্তাহ গোছল না করি ! যদি করি তাহলে আমার খরব আছে ! আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো ও ঠাট্টা করছে কিন্তু যখন বুঝতে পারলাম যে সে সিরিয়াস, আমার তো অবস্থা খারাপ হয়ে গেল ! কত ভাবে বোঝানো চেষ্টা করলাম কিন্তু কে শোনে কার কথা ! তার কেবল একটাই কথা আমার যখন গোছল করতে এতোই কষ্ট তখন সেই কষ্ট যেন আমি নাকি ! তখনই একবার মনে হয়ে ছিল যে সব ল্যাটা চুকিয়ে দেই ! কিন্তু মন সাই দিচ্ছিল না ! ৭ দিন গোসল না করতেই গা দিয়ে বিকট সুঘ্রান হওয়া শুরু হল ! আমার রুম মেট আমার রুম ছেড়ে পাশের রুমে চলে গেল ! তবুও আমি গোছল করার সাহস পেলাম না ! পাছে নিশিকে হারাতে হয় ! ইস তখনই যদি করতাম এই কাজটা তাহলেই বরং ভাল হত ! তাহলে এতো ঝামেলা হতই না ! তারপর থেকেই আমি একটু সাবধান ছিলাম ! সব কাজেই একটু সাবধান থাকার চেষ্টা করতাম ! কিন্তু তবুও একটু এদিক ওদিক হয়ে যেত ! আমি চুপচাপ সহ্য করে নিতাম ! আমার কেন জানি মনে হত নিশি আমার সাথে যত যাই করুক এই মেয়েটা আমাকে ভালবাসে ! যখন ওর সাথে রিক্সায় উঠি অথবা ও যখন আমার হাত ধরে কেমন একটা অদ্ভুদ আনন্দের অনুভুতি হয় ! সব থেকে আশ্চার্য লাগে ওকে যখন হলে রেখে আসি তখন ! প্রতিবার যখন বিদায় নিয়ে চলে আসি তখনই কেমন লাগে ! নিশির মুখের দিকে যতবার তাকাই ততবারই এমন টা মনে হয় ! আর সব থেকে বড় কথা নিশির মুখটাও কেমন যেন মলিন হয়ে যায় ! এইটাও আমার কাছে ভাল লাগে ! তাই নিশিকে ছেড়ে যাই নি ! কিন্তু গত দিন ও আমাকে যা করতে বলেছে আমি সত্যি অবাক হয়েছি ! এই কাজটা ও কিভাবে করতে বলল কে জানে ? ওর সাথে নিউমার্কেটে গিয়েছিলাম ! যদিও শপিং করতে আমার একদম ভাল লাগে না ! একদম বিরক্ত লাগে কিন্তু কিছু করার নাই ! আমি ওর সাথে সাথে হাটছিলাম ! হঠাৎ দেখলাম নিশি কিছু সস্তা আর কেমন উৎকট টাইপের একটা কামিজ কিনল ! সাথে লাল রংয়ের একটা টাইস ! আমি ওকে বললাম -এটা কি কিনছো ? তোমাকে মানাবে না ! -এটা আমার জন্য না ! -ও আচ্ছা ! দোকান থেকে বের হতে হতে নিশি বলল -এটা তোমার জন্য ! প্রথমে মনে হল আমি হয়তো ভুল শুনছি ! আমি ওর দিকে খানিকটা অবাক হওয়ার চোখে তাকিয়ে বললাম -কি বললা ? নিশি মিষ্টি হেসে বলল -এটা তোমার জন্য ! -আমার জন্য ? -হুম ! তুমি এটা পরে আমার জন্য বিভিন্ন পোজে ছবি তুলবে ! তারপর আমাকে দিবা ! আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম ! -কেন ? -আমি আমার বন্ধুদের দেখাবো ? -মানে ? -মানে ! আমাদের বান্ধবীদের যাদের যাদের বয়ফ্রেন্ড আছে সবাই এটা করবে ! আমরা সব ছবি গুলো এনে একসাথে দেখবো কার বয়ফ্রেন্ড বেশি সুইট লাগে ! -এটা পাগলামো ! -হোক পাগলামো ! আমি যা বলছি করবা ! ঠিক আছে ? এই নাও ! নিশি আমাকে কামিজের প্যাকেট টা দিয়ে চলে গেল ! আমি বিমুঢ় হয়ে দাড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষন ! এই মেয়ের সমস্যা কি ? আমি মেয়েদের এমন উৎকট পোষাক পরে দাড়িয়ে আছি আর কয়েকটা মেয়ে আমাকে দেখছে আর হাসা হাসি করছে এটা ভাবতেই আমার গা কেমন গুলিয়ে আসলো ! নাহ ! এটা হতে পারে না ! আমি এই কাজ করবো না ! কিছুতেই না ! বিকেল বেলা নিশির সাথে দেখা হতেই প্রথমে আমার কাছে ছবি চাইলো ! আমি বললাম -নাই ! -নাই মানে কি ? আমি খানিকটা ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম -নাই মানে নাই ! তুলি নাই ! নিশি খানিকটা অবাব হওয়ার ভা নিয়ে বলল -তুলো না মানে ? -বাংলা কথা বুঝ না ? ইচ্ছা হয় নাই তাই তুলি নাই ! আগের থেকেও আরো বেশি অবাক হেয় নিশি বলল -আমি তোমাকে একটা কাজ করতে বললাম আর তুমি সেটা করলা না ? -দেখ, তুমি যাই বলবে তাই তো আমি করবো না ! তুমি যদি এখন বল দশতলা বিল্ডিং থেকে লাফ দিতে আমি কি দিবো ? -হ্যা দিতে হবে ! আমার সাথে রিলেশন রাখতে হলে তাই করতে হবে ! আমি একটু হাসলাম ! এই ভয়টা নিশি আমাকে অনেকবার দেখিয়েছে ! আর আমি ভয় পেয়েছিও বটে ! আমি হাসি মুখে বললাম -সেই দিন আর নাই গো মমিন ! -কি বলতে চাও তুমি ? -দেখ নিশি তোমাকে ভালবাসি তার মানে এ না তোমার সব অন্যায় আবদার আমি রাখবো ! এতে যদি তুমি আমার সাথে রিলেশন না রাখতে চাও, ফাইন ! গো টু হেল ! আমি দেখলাম নিশির কেবল একরাশ বিশ্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছি ! আমি আবার বললাম -আমি তোমার প্রেমিক হতে এসেছিলাম তুমি আমাকে পালতু কুকুর বানিয়ে দিয়েছ ! কিন্তু আর না ! আর থামলাম না ! -এই অপু ! যাবে না বলতেছি !! নিশি পেছন থেকে ডাক দিল ! কিন্তু এখন শোনার টাইম নাই !আসলেই নাই ! আজ আমি মুক্ত !! কারো কথা শোনার টাইম নাই ! কিন্তু দুদিন যেতে না যেতেই বুঝলাম আসলে ব্যপারটা তেমন সহজ হল না যেমন টা ভেবেছিলাম । নিশিকে যেন খুব বেশি মনে পড়তে লাগলো ! আচ্ছা নিশির কাছে কি ফোন করবো ? নাহ ! করবো না ! কোন দরকার নাই ! সত্যি কি দরকার নাই ? ভাবছি ভাবছি যে নিশিকে ফোন করবো কি না ঠিক তখনই নিশি ফোন করে ফেলল ! আল্লাহ ! ও কি আমার মনে কথা বুঝে ফেলল নাকি ? এখন যদি ঝারি মারা শুরু করে ? আমি ফোন রিসিভ করলাম ! -হ্যালো ! ওপাশ থেকে খানিকক্ষন নিরবতা ! তারপর কান্নার আওয়াজ ! আমি বললাম -কি হল ! কাঁদছো কেন ? -কাঁদবো না ! কি করবো ! হাসবো ? -কাঁন্না কাটির তো কিছু নাই ! -কান্না কাটির কিছু নাই ? নিশি যেন চিৎকার করে উঠলো ! তারপর বলল -আমার কাছের মানুষটি আমাকে ডাম্প করে চলে গেছে আর আমি কাঁদবো না ? আমি একটু যেন সাহস পেলাম ! নাহ ! এই মেয়ে কিছু বুঝে নাই ! আমি বললাম -এই কথা আগেই চিন্তা করার দরকার ছিল ! ওপাশে থেকে নিরবতা ! লম্বা নিরবতা ! আমি বললাম -কি কিছু বললবা নাকি আমি ফোন রেখে দিবো ! আগে এই ফোন রাখার কথা বললেই আমার খবর ছিল ! নিশি বলত কেন আমার কথা কথা বলতে ভাল লাগছে না ! অন্য কাউকে দরকার ! কিন্তু আজকে কিছু বলল না ! আমিও চুপ করে রইলাম ! একটু পরে নিশি নিজেই বলল -জানো এ দুই দিনে আমি আমি তোমাকে অনেক মিস করেছি ! অনেক বেশি ! বারে বার মনে হচ্ছিল কি যেন নাই ! আমার কি যেন হারিয়ে গেছে !! -তাই ? -তোমার মনে হয় নি ? -হুম হয়েছে ! -একটা কথা বলবো তোমাকে ? -বল ! -আসলে তোমার সোজা করার জন্য আমি এমনটা করেছি ! আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! -সোজা ?? আমাকে ? -হুম ! আমি এইটাই বলতে তোমাকে ডেকেছিলাম ! তুমি আমার সব কথা এমন বিনা বাক্যে মেনে নিতে কেন ? যা বলতাম তাই করতা ! কেন ? আমি কিছু বুঝলাম না নিশির কথা ! নিশি আবার বলল -ছেলে মানুষ হবে ছেলে মানুষের মত ! আমি তোমাকে যা বলি তুমি চুপ চাপ তাই মেনে নাও এটার কোন মানে হয় ! ভেড়া ! -ভেড়া ? -তা নয়তো কি ? শুনো মেয়েরা এমনি ভয় দেখায় কিন্তু কখনও ছেড়ে যায় না ! এটা একটা কথস বল ! তাই তো আমি এমন টা করেছি ! আমার জন্য কেন তুমি তোমাকে পরিবর্তন করবে ! তোমার যেটা পছন্দ হবে না সেটা কেন করবে ? -তাই ? -মেয়েটা ভেড়া মার্কা ছেলেদের পছন্দ করে না বুঝছো ! এখন মনে হচ্ছে আমি একটা ছেলের সাথে প্রেম করছি ! -এতো দিন কি মনে হয়েছে ? -বললাম না একটু আগে ! ভেড়া ! আমি তাড়াতাড়ি বললাম -আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ! আর বলতে হবে না ! আমি একদম বুঝে গেছি ! নিশি বলল -আচ্ছা ঠিক আছে ! আচ্ছা শুন ! কালকে আমার একটা কাজ আছে সাভারে ! আমার সাথে যেতে হবে ! -কখন ? -সকালে ! -আচ্ছা ! কোন সমস্যা নাই ! -আচ্ছা কালকে সময় মত পৌছে যাবা কিন্তু ! আমাকে যেন দাড়িয়ে থাকতে না হয় ! -হুম ! হুম ! কোন সমস্যা নাই ! আমি ফোন রেখে দিলাম ! তারপর মনে এইটা কি হলো ! যেই লাউ সেই কদু ! আমি রাজি হলাম কেন ? আমার কালকে সকাল বেলা ক্লাস আছে ! ফোন টা হাতে নিয়ে ফোন করতে গিয়েও করলাম না ! আসলে এতো দিনের অভ্যাস এতো সহজে কি যায় !!!! ফেবু লিংক
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।