কি বলব মহান আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে আমাদের এ সোনার দেশে কোনোকিছুরই অভাব নেই। মাটিতে বীজ পড়ে অটোসিস্টেমে গাছের জন্ম হয়। এরপর গাছ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পত্র-পল্লবে হয় আচ্ছাদিত। ফুলে-ফলে হয় সুশোভিত।
কী উর্বর মাটি। পৃথিবীর খুব কম দেশেই এমন মাটি আছে। বৃষ্টির পানিতে নদী-নালা, খাল-বিল ভরে যায়। সেই পানিতে আপনাআপনি জন্ম হয় সুস্বাদু মাছের। মাটির তলদেশে মূল্যবান গ্যাস-তেলসহ খনিজ সম্পদে ভরপুর।
দেশে জনসম্পদও মাশাআল্লাহ প্রচুর। প্রচুর জনশক্তি, মূল্যবান অর্থকরী ফসল ও প্রাকৃতিক সম্পদে ঠাসা এমন স্বপ্নপুরীতে শুধু নাই নাই, খাই খাই, খাবলা-খাবলি, খামচা-খামচি, টানাহেঁচড়া, ধর মার কাট অবস্থা দেখলে গা শিউরে না উঠে পারে না। অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমাদের দেশের সম্পদ কয়েকজন পুঁজিপতি কুক্ষিগত করে নিয়েছে অত্যন্ত সুকৌশলে। তারা একেকজন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। দিন দিন তাদের এসব পাহাড় সমান সম্পদের পরিমাণ ফুলে-ফেঁপে স্ফীত থেকে স্ফীততর হচ্ছে।
লুণ্ঠন করার কৌশলও তাদের জানা আছে। লুটেরাগোষ্ঠীর দলও আছে। যারা লুটেরা তারা ক্ষমতায় গেলে বেপরোয়াভাবে লুট করে আর বিরোধী দলে গেলে সরকারি দলের লুটেরাদের সঙ্গে সুকৌশলে লিয়াজোঁ করে লুণ্ঠিত মালামালে নিরাপদে তা দেয়। সময়-সুযোগমত সমঝোতার মাধ্যমে আবার লুটপাটে অংশ নেয়। এ লুটেরাদের সংখ্যা সীমিত হলেও তাদের শক্তি অসীম।
চোর-ডাকাত-ছিনতাইকারী তাদের পেশাগত কাজ পরিচালনার সময় হাতে-নাতে ধরা পড়লে তাদের উত্তম মধ্যম গণপিটুনি কিংবা পুলিশের হাওলা করে দিয়ে শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু প্রতিনিয়ত সুকৌশলে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা এবং অঢেল সম্পদ যারা লুণ্ঠন করছে তাদের শাস্তি হওয়া তো দূরের কথা, তারাই সমাজ ও রাষ্ট্রের সবচেয়ে উঁচুস্তরের নাগরিক হিসেবে গণ্য।
মজার বিষয় হচ্ছে, নিচ মহলে বা বটম পর্যায়ে যারা ঘুষ, দুর্নীতি, লুটতরাজে লিপ্ত তারা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অংশ দিয়ে খুশি করেই তাদের কার্যক্রম দিব্যি চালিয়ে যেতে থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভাগ পেয়ে খোশমেজাজে তাদের আস্কারা দেয়। এভাবে ঘুষ, দুর্নীতি বা লুণ্ঠনের অংশ ধাপে ধাপে চেলার মতো হেঁটে হেঁটে উপরের সারির রথি-মহারথিদের পকেটেও সন্তর্পণে ঢুকতে থাকে এবং শেষসীমা পর্যন্তও নাকি পৌঁছানোর সুবন্দোবস্ত করা হয়।
প্রশাসনের রাঘব বোয়ালসহ আমলা-কামলাদের সিংহভাগ অংশ ঘুষ, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনে লিপ্ত থাকায় ক্ষুদ্র অংশ যারা সততার মাধ্যমে দেশের জনগণের সেবা করতে চায় তারা বরাবরই থাকে কোণঠাসা। প্রশাসনের লুটেরা অংশ স্থায়ীভাবেই চালিয়ে যায় তাদের লুটপাট ব্যবসা। যারা ক্ষমতায় আসে বা দেশ পরিচালনা করে তাদের সবার অথবা সিংহভাগের মধ্যে যদি সততা থাকত তবে আমলা-কামলারা ঘুষ, দুর্নীতি ও লুণ্ঠন করে পার পেতে পারত না। মূল কথা হচ্ছে দেশ পরিচালনাকারী সবাই অসত্ বা লুটেরা নয়। কিন্তু লুটেরাদের অংশ সবসময়ই থাকে শক্তিশালী, দুর্দমনীয় ও দুর্দান্ত।
তাই এদের দমন করা সম্ভব হয় না। আমাদের দেশে একবার যারা মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা হওয়ার মহাসৌভাগ্য অর্জন করতে সক্ষম হন তাদের সিংহভাগই রাতারাতি কোটিপতি না হওয়াটাই বরং আজগুবি খবর বলে মনে করেন অনেকেই।
দেশে যে কোনো সরকার পরিবর্তন হলেও লুটেরাগোষ্ঠী সবসময়ই থাকে ফুরফুরে মেজাজে। পরবর্তী সরকারের লুটেরাদের সঙ্গে তাদের আগে থেকেই দহরম-মহরম থাকায় সমন্বয় করতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না। প্রবাদ আছে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই।
সিলেটী একটা প্রবাদ হলো, চোরে চোরে আলি (হালি), এক চোরে বিয়া করে আরেক চোরের হালি (শালী)। এই যখন আমাদের দেশের সার্বিক অবস্থা তখন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপায়ইবা কী। আর এই উপায় নিয়ে ক’জনইবা ভাবেন। তবে যারা সত্যি সত্যিই ভাবেন তারা থাকেন সদা সর্বদাই ক্ষমতাহীন। যে সরকারই ক্ষমতায় আসে তাদের সামনাসামনি সেই সরকারপ্রধান, তার কর্তাব্যক্তি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও চৌদ্দ-পনের পুরুষের যত বেশি কিংবা মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা বা তোষামোদ করা যায় তিনি তত বেশি হন উত্ফুল্ল।
লাগান হাততালি। চামচারা বলে জোরসে বাজাও তালিয়া। তারা মূলত তোষামোদ করে মালামালে টইটুম্বুর হওয়ার জন্যই। যত বেশি তোষামোদ করা যায় লাভের পাল্লাটাও তত বেশি ভারী হতে দেখা যায়। নির্বাচনী টিকিট থেকে শুরু করে দলীয় বড় বড় পদ কিংবা চাকরি, হরকিসিমের সুযোগ-সুবিধা এমনকি মন্ত্রণালয় বা উপদেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও বাগিয়ে আনতে তোষামোদই হলো অন্যতম প্রধান অস্ত্র।
পার্লামেন্ট পরিচালনায় কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। সেখানে দেশের মানুষের ও দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি সমস্যা সম্ভাবনার কথা বলার পরিবর্তে তোষামোদ বা পামপট্টিকেই অগ্রাধিকার দেন অনেকেই। এতে ব্যয় করেন জনগণের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত সংসদ অধিবেশনের মহামূল্যবান সময়। বাজেট অধিবেশনে জনৈক পার্লামেন্ট মেম্বারের মহামূল্যবান ভাষণ টেলিভিশন শুনছিলাম। বরাদ্দকৃত সময় ছিল বোধ হয় দশ মিনিট।
ফ্লোর পেয়ে পকেট থেকে বের করে সঙ্গে নেয়া কাগজ আবৃত্তি করতে শুরু করলেন হাসিমাখা মুখে। সেকেলে যুগে ওঝা যেভাবে সাপে কাটা বা অন্যান্য রোগীকে ঝাড়ফুঁক শুরু করার আগে বন্দনা গাইত, পয়লা বন্দনা করি...। এভাবে বন্দনা গাইতে গাইতে বরাদ্দ পাওয়া সময়টুকু হাওয়া হয়ে গেল, নিজের নির্বাচনী এলাকার সমস্যার কথাগুলো আর আবৃত্তি করার সুযোগ পেলেন না বরং বাতিটাও ধপ করে নিভে গেল। এ সময় তার নির্বাচনী এলাকার জনগণও হয়তো সিমাহীন আবেগ নিয়ে টেলিভিশনের সামনে বসেছিলেন নিজের এলাকার সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তাদেরই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি দেশ ও জাতির সামনে কীভাবে উপস্থাপন করেন তা উপভোগের জন্য। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়ে বালি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।