হাতেম তাইয়ের নাম শুনে নাই এমন কাউকে হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যে কিনা রুপালি পর্দার অঘোষিত রাণী হিসেবে বর্তমানে নিজ আসনে দ্যোতি ছড়াচ্ছে সারা বিশ্বে, তাকে হাতেম তাই রূপে নিশ্চয় কেউ কল্পনা করেনি। কিন্তু হলিউডের পর্দা কাঁপানো অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তাই সত্যি করে দেখিয়েছেন। না, অভিনেত্রী হিসেবে না-বাস্তবিক অর্থেই বিশ্বের দারিদ্র পীড়িত বিভিন্ন অঞ্চলে এবং বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরের মানুষের জন্য জোলি যেভাবে নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছেন তাতে জোলিকে গরিবের নি:স্বার্থ বন্ধু হিসেবে ভাবতে কারো দ্বি-মত নেই।
‘লুকিন টু গেট আউট’ চলচ্চিত্রে বাবা জন ভটের সঙে একটি শিশু চরিত্রে অভিনয় করার মাধ্যমে সিনেমা জগতে আবির্ভাব ঘটে মার্কিন এ অভিনেত্রীর।
জন্ম ৪ঠা জুন, ১৯৭৫। চলচ্চিত্রে দাপটে অভিনয়ের জন্য ইতোমধ্যে অর্জন করেছেন বেশকিছু নামকরা পুরষ্কার। কিন্তু তার এই অভিনয় জীবনের বাইরে ব্যক্তি হিসেবে জোলি অসহায় শিশু, দুস্থ ও শরণার্থী হিসেবে বাস করা মানুষের জন্য রয়েছে তার অকৃত্রিম ভালোবাসা। তার এই ভালবাসার জন্য ২০০১ সালে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার শুভেচ্ছা দূত মনোনীত হন জোলি ইউএনএইচসিআরের সহায়তায় বিশ্ব মানবতার জন্য অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেন। গরিব ও বিশ্ব মানবতায় জোলির অবদানের সারসংক্ষেপ নিম্নে তুলে ধরা হল:
১. ফেব্রুয়ারী ২০০১-এ তার প্রথম সফরে ১৮ দিনের জন্য সিয়েরালিওন এবং তাঞ্জানিয়া ভ্রমণ করেন।
২. পরবর্তী মাসগুলিতে জোলি কম্বোডিয়া ও পরে পাকিস্তানের আফগান শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি আফগান শরণার্থীদের জন্য ১০ লাখ ডলার অনুদান প্রদান করেন।
৩. ২০০২ সালে জোলি থাইল্যান্ডের থাম হিন শরণার্থী শিবির দেখতে যান।
৪. এরপর কসোভো ও কেনিয়ার কাকুমায় ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যান।
৫. বিয়ন্ড বর্ডারস্ ছবিতে কাজ করার সময় নামিবিয়ার অ্যাঙ্গোলান শরণার্থীদের সংস্পর্শে যান।
৬. ২০০৫ সালে তিনি ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবের অভিষেক অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর রিফিউজি অ্যান্ড ইমিগ্রান্ট চিলড্রেন’ নামে একটি সংস্থা গঠন করেন।
৭. জোলি ২০০৬ সালে দাতব্য সংগঠন ‘জোলি পিট ফাউন্ডেশন’ গঠন করেন যা গ্লোবাল অ্যাকশন ফর চিলড্রেন এবং ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস নামের দু’টি সংগঠনের প্রত্যেককে ১ মিলিয়ন ডলার করে অনুদান দেন।
৮. একই বছর জোলি ‘ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ’ এর অঙ্গ সংগঠন ‘এডুকেশন পার্টনারশিপ ফর চিলড্রেন অফ কনফ্লিক্ট’ এর কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
৯. ২০১০ সালে হাইতির ভূমিকম্প বিধ্বস্ত মানুষের জন্য জোলি এবং পিট যৌথভাবে ১০ লাখ ডলার সাহায্য প্রদান করেন।
১০. একই বছর পাকিস্তানের একটি খাদ্য সরবরাহকারী ত্রাণ প্রকল্পে সহায়তার জন্য জাতিসংঘের মাধ্যমে ১ লাখ ডলার অনুদান দেন।
১১. জোলি মানবতার জন্য বিশেষ অবদানের জন্য ২০০৩ সালে ইউনাইটেড নেশন্স করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন তাকে নতুন ঘোষিত পুরষ্কার সিটিজেন অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড প্রদান করে।
১২. ২০০৫ সালে তিনি ইউএনএইউএসএ কর্তৃক গ্লোবাল হিউম্যানিটেরিয়ান পুরষ্কার প্রদান করে।
১৩. কম্বোডিয়ার রাজা নরোদম সিহানুক ২০০৫ সালে পরিবেশ সংরক্ষণমূলক কাজ করার জন্য জোলিকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব প্রদান করেন।
বিশ্ব মানবতার জন্য জোলির এই অসামান্য অবদান তাকে এনে দিয়েছে এক নতুন পরিচয়। হলিউডের রাজকন্যা এখন গরীব দু:খী নিপীড়িত মানুষের কাছে বন্ধু হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভক্তদের ভালোবাসা ছাপিয়ে জোলি এখন লাখো নতুন মানুষের হৃদয়ে গরীবের বন্ধু হিসেবে স্থান করে নিয়েছে যারা হয়তো জোলির কোন মুভিই কোনোদিন দেখেনি। জয় হোক জোলির এই ভালবাসার জয় হোক বিশ্ব মানবতার। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।