দিন কয়েক আগে এক স্বপ্ন দেখলাম। অনেকদিন বাদে চোখ ভিজে এলো। দেখলাম, আমার ট্রেনের জানালার পাশে পাশে, ছোট্ট সাকিবসহ আরো ক'জনা খুব দৌড়ুচ্ছে। সবার হাতে কিছু একটা আছে । গতির কারণে ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা।
দৌড়ুতে দৌড়ুতে, সাকিবের চশমাটা খুলে পড়েই যাচ্ছিল। সে চিৎকার করে বলল, 'স্যার.. ঠিক আছে.. বেশতো ভুলে আছেন আমাদের .. তাই থাকুন..'
আশ্চর্য গভীর বিষাদ তার চোখে মুখে। ট্রেনের একটানা ঘটাং ঘটাং শব্দে, তার শিশু কন্ঠটি ঢাকা পড়ে যাচ্ছিল।
বেশ অনেকদিন হয়ে গেছে, আমি ছবি আঁকার স্কুলের শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে এসেছি। প্রায় মাস চারেক তো হবেই।
অথবা তারও বেশি। সাকিব সহ,ওরা সবাই আমার ছাত্রছাত্রী। ওদের আমি ঠিক কতখানি ভালবাসতাম,তা আমি জানি। আর, ওরা আমাকে ঠিক কতখানি বাসত, শেষদিনটির আগে তা ওরা নিজেরাও বুঝে উঠতে পারেনি।
অনেকদিন ধরেই ওদের আমি বলে যাচ্ছিলাম , ''আমি আর তোমাদের মাঝে থাকব না।
'' কিন্তু, ওরা আমার কথাটাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারেনি। একদিন, ছোটটো কিছু উপহার নিয়ে ক্লাসে ঢুকে বললাম, 'আজই এখানে আমার শেষ দিন। তোমাদের জন্যে অন্য টিচার আসছেন। আমার চেয়ে অনেক অনেক ভালো তিনি।
এখানে তোমাদের জন্যে কিছু উপহার আছে।
নাও। আর, আমাকে ভুলোনা যেন। '
তারা কিছুক্ষণের জন্যে অবাক হয়ে চেয়ে রইলো। তারপর, অদ্ভুত এক কান্ড করে বসলো। হা হা হা...
একজন গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিল।
তারপর হুড়মুর করে সবাই এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরল। সাকিব ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে শুরু করলো।
সেদিন, আমার মনে হয়েছিল, আমার জীবনটা হয়ত অতটা অপাংক্তেয় নয় ,যতটা ভেবেছিলাম।
কিন্তু, অত ভালবেসেও ওরা আমাকে ধরে রাখতে পারেনি শেষটায়। আমি, কেন জানিনা, ভীষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম।
ক্লান্ত মানুষ খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে থাকে।
স্বপ্নদৃশ্যে ফিরে আসি। সাকিব কথা কটা বলবার পর আমি এক অবিশ্বাস্য কান্ড করে বসলাম। স্বপ্নদৃশ্য বলেই ব্যাপারটা সম্ভব হয়েছিল। আমি ট্রেন থেকে ঝাঁপ দিয়ে নেমে পড়লাম।
পদার্থবিজ্ঞান,ওদের আমার পেছন হতে দৌড়ে আসবার কথা বলে। কেননা, ট্রেনের গতি ছিল অধিক। কিন্তু স্বপ্নদৃশ্যেরা, প্রায়ই পদার্থবিজ্ঞান অস্বীকার করে চলে। ওরা দৌড়ে এলো আমার সম্মুখ দিক হতে। ধন্যবাদ স্বপ্নদৃশ্যকে।
কেননা, তাদের সামনে হতে দৌড়ে আসবার সেই পরাবাস্তব দৃশ্যটি, আমার জীবনের শেষদিন অবধি সুখানুভূতির চিহ্ন হয়ে রবে।
আমি হাত বাড়িয়ে, হাঁটু গেঁড়ে বসে পড়লাম। ওরা আমার বাহুতে এসে ধরা দিল। সাকিব বলল, 'স্যার..!'
আমি বললাম, 'সবার আমার ওপর এত অভিমান কেন? আমিতো সবাইকে অনেক ভালবাসি..। '
আমার চোখ ভিজে উঠলো।
দেখলাম, ওরা সবাই আমার জন্যে, একটা করে ছবি এঁকে এনেছে। সবার মুখ হাসিহাসি। ওদের হাসিমুখ দেখে আমিও হেসে ফেললাম। সাকিব তার হাতের ছবিটা আমার সামনে মেলে ধরল। আর
তখনই স্বপ্নটা মুছে গেল।
বাস্তবে চোখ চেয়ে দেখি , মাথার ওপর নিরেট ছাদ থমকে তাকিয়ে আছে । গত বর্ষার প্রভাবে, কিঞ্চিত নোনা ধরেছে তাতে । আর.. চোখের কোণ ছুঁয়ে দেখি, উষ্ণ জলবিন্দুটি তখনও গড়িয়ে পড়েনি। টলমল করছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।