চারপাশে আত্মমুগ্ধ আদিমতাবোধ, আর গ্রন্থিবদ্ধ চিন্তা; সেখান থেকে মুক্তির পথ খুঁজি... বিপ্লবের অন্য অর্থই হচ্ছে প্রগতি, তবে সেই প্রগতি রূপান্তরের পথে বড় একটা লাফ দেয়া। যদিও এ লাফ কোন মুহুর্তের ঘটনা নয়, এর পেছনে অব্যহত যত্নে গড়ে তোলা পরিকল্পনা ও চেতনা কাজ করে।
মানবেতিহাসে সমাজের রূপান্তর নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে গতিশীল। তাই একটি বিপ্লবী রূপান্তর শুধুমাত্র সময়ের প্রয়োজনীয় উৎকর্ষতা নয়, তা আরও একটি বিপ্লবে পৌছুবার সোপান। কারণ সময়ের সাথে সাথেই কোন একটি বিপ্লবের সুফল স্থির হয়ে পরে এবং তা পশ্চাদপদ হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে।
এমন কি সময়ের প্রেক্ষিতে যে বিপ্লবীরা প্রগতিশীল ছিল তারাই প্রগতির বিপক্ষে রক্ষণশীল অবস্থানে দাড়িয়ে যায়।
আরও সরলভাবে বলতে গেলে এর অর্থ দাড়ায় এক সময় প্রগতির সাথে যারা জড়িত ছিল, তাদের কেউ কেউ সময়ের আবর্তে পিছিয়ে পড়ে। যেমন জৈববিবর্তন তত্ত্ব বিজ্ঞান নির্ভর বস্তুবাদী তত্ত্ব; কিন্তু কোন কোন বিজ্ঞানী বিজ্ঞান গবেষক হওয়া সত্ত্বেও বিজ্ঞান চেতনা নির্ভর নাও হতে পারেন। তিনি বিশেষ সময়ে রক্ষণশীল আচড়ন করতে পারেন। এমন কি বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে যেতে পারে।
এই ''উইরবারফোর্স'' মানসিকতা যে শুধু অলৌকিক পন্থি ব্যক্তিরাই করে থাকেন তা নয় কখনো কখনো বাস্তববাদী ব্যক্তিরাও করে থাকতে পারে, কারণ তাদের পূর্ববর্র্তী সংস্কৃতির চেতনার সাথে বিপ্লবী বিশ্ববিক্ষা এবং শিক্ষার কিছু ফাঁক থেকে যায়। যার ফলেই এগুলো অনেক ক্ষেত্রে তাদের মানসিক ভাবে ইচ্ছাপুরণের বিপরীত ঘটনা্ ঘটার ফল হয় বলে ঐ সকল ব্যক্তি এরুপ আচড়ণ করে থাকেন । যেমন ভাবে কোন কোন বিজ্ঞানীকে আমরা দেখি বিজ্ঞানের সত্যের সাথে ধর্মীয় সত্যকে দাঁড় করাতে এবং আবেগকে বিজ্ঞানের আলোকে ব্যাখ্যা করতে; যা হয়ে পড়ে হাস্যকর। এসব ক্ষেত্রে ঐ সকল ব্যক্তির কৃতীত্ত্বও হয়ে পড়ে ম্লান। এ কারণগুলোর পিছনে উদ্দিষ্ট লক্ষ্যের অনুসারীগণ যদি শুধুমাত্র একটা সীমা অতিক্রম করার জন্য তৈরী হয় তবেই।
এ সব দিক থেকে বিচার করলে আমরা দেখতে পাই যে, বিপ্লব একটা গতিশীল এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া প্রতিনিয়ত গতি বৃদ্ধি করে চলছে এবং চলতেই থাকবে। এর গতি শ্লোথ হলেই বিপ্লব প্রক্রিয়া শ্লোথ হয়ে পড়ব্। তাই বিপ্লবের অর্থ একটি সাময়িক সমস্যার উত্তরণ নয় বরং ধারাবাহিক ভাবে প্রজন্মতর কাজ করে যাওয়ার এক সার্বজনীন চেতনা।
সামাজিক সমস্যা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়ালেই বিপ্লব হয় না বা এটা কোন দ্রোহ নয়, এর সত্যিকার অর্থ উন্নত জীবনের জন্য যুক্তিগ্রাহ্য কাজ করা।
অর্থাৎ সামাজিক সমস্যার উত্তরণে সমাজ রূপান্তরের প্রতিনিয়ত যে নতুন ধাপ সৃষ্টি হয় তাকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে সমাধানের পথ নির্ণয় করে বিপ্লবীরা।
ইতিহাসের বীরত্বপূর্ণ ঘটনার পুণরাবৃত্তির স্বপ্ন মনে লালন করে থাকে অনেকে। তবে বিপ্লবের সাধারণ ধারণা গুলোর মধ্যে এটা অতিমাত্রায় ক্রিয়াশীল। এ ক্ষেত্রে বিপ্লব বলতে কেউ কেউ বিপ্লবের প্রান্তিক পর্বটাই বুঝে থাকেন। অর্থৎ ঐ অংশটুকুই যেন বিপ্লব; কিন্তু ঐ ঘটনার পেছনের যে কাজ সেগুলো কিন্তু বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।
তাই বিপ্লবের ইতিহাসে সমস্যার উত্তরণে বীরত্বপূর্ণ সমাধান এবং সমাজ রূপান্তরের সবচেয়ে উত্তেজক অংশকেই যারা বিপ্লব ভেবে অনুপ্রাণিত হয় আর সমগ্র পরিকল্পনায় অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে তারা শুধুমাত্র ঘুণেধরা খুঁটিকে ফেলে দিতে সাহায্য করে।
বর্তমান বিপ্লব হতে হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য অর্জনের পেছনে শত শত অথবা হাজার হাজার ুদ্র সমস্যার সমাধান করে। এভাবেই তা সমন্বিত লক্ষ্যে উত্তরণ ঘটানোর মাঠ প্রস্তুত করবে। কোন কোন ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনের জন্য অচলবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। যেমন পারে দেশে যুদ্ধাবস্থায় খাদ্য সংকট তৈরী হতে।
কিন্তু তা লক্ষ্যহীন অচলবস্থার চেয়ে সুনিদৃষ্ট লক্ষ্যের অচলবস্থা শ্রেয়, কেননা দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত জাতির কষ্টস্বীকার বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনের জন্য সম্ভব হয়। এছড়া বিপ্লবের পথ প্রস্তুতের জন্য কি নেই প্রশ্নে যাওয়া হাস্যকর।
আমরা দেখি অনুন্নত বা স্বল্পন্নত সমাজের লোকেরা কোন উন্নত সমাজের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের প্রান্তিক পর্ব দেখে নিজেকে বিষ্মিত ও বিপন্নবোধ করে। কিন্তু তারা তো এ সিদ্ধান্তে আসে না যে প্রচলিত ও সহজলভ্য শক্তির উপরেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রায়োগিক প্রক্রিয়া অপ্রচলিত ও ব্যাপক যত্নে গড়ে ওঠা শক্তির সৃষ্টি করে। কাজেই শুধুমাত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন শক্তির সহজ ভোক্তা আত্মনিয়ন্ত্রণ হারায়।
কাজেই কি নেই এ প্রশ্ন নয় বরং কি আছে আর কি করতে হবে? এ প্রশ্ন সকল বিপ্লবীর আত্মজিজ্ঞাসা হওয়া প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।