আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিপ্লবের অনির্বাণ শিখা

বিপ্লবের স্বপ্ন পুরুষ চে গুয়েভারা'র প্রয়াণ দিবস আজ।

সারা বিশ্বে বিপ্লবের প্রতীক চে যেন বিপ্লবের অনিবার্ণ শিখা। তার পুরো নাম এর্নেস্তা চে রাফায়েল গুয়েভারা দে লা সেরনা। বিশ্বজুড়ে তার পরিচিতি চে গুয়েভারা কিংবা শুধু চে নামেই। চে গুয়েভারা বিশ্বের মানুষের কাছে এক জীবন্ত বিপ্লবের নাম।

বিশ্বের নিপীড়িত, শোষিত মানুষের মুক্তির অগ্রদূত তিনি। সাম্যবাদী চিন্তা আর শোষিতের বঞ্চনার বিরুদ্ধে অবিনাশী সংগ্রামের মূর্ত প্রতীক তিনি। সংগ্রাম আর আদর্শের লড়াইয়ে অপরিসীম আত্দত্যাগ চে নামটিকে অমরত্ব এনে দিয়েছে। ষাট ও সত্তর দশকে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, এশিয়া তথা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে বিপ্লবের সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছেন। শুধু তখনকার বিশ্বই নয়, আজকের আধুনিক বিশ্বেও বৈশ্বিক আর আদর্শিক চেতনার প্রতিশব্দ চে।

চে কেবল একজন ঐতিহাসিক বিপ্লবীই নন, এখন তিনি সবার আদর্শের প্রতীক। ঠোঁটের ওপর হালকা গোঁফের উঁকি-ঝুঁকি। মুখে দাড়ির দাপট, চোখের ভেতর বিষণ্নতা অথচ অপরিসীম দৃঢ়তা। অবিন্যস্ত লম্বা চুলের ওপর চ্যাপ্টা লাল রঙের গোল টুপি। কোনো কিছু না ভেবেই বলে দেওয়া যায় এটি চে'র ছবি।

অন্যায়, নিপীড়ন আর শোষণবিরোধী সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছে ছবিটি। দেশ-কাল-পাত্রের সীমানা পেরিয়ে সেই ছবি আজও হৃদয়পটে চির অম্লান। ১৯৬০ সালের ৫ মার্চ চে'র বিখ্যাত সেই ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী আলবার্তো কোর্দা। তখন কে জানত এই আলোকচিত্রই একদিন অন্যায়, নিপীড়ন ও শোষণের প্রতিবাদের প্রতীক হয়ে উঠবে? কোথায় নেই চে? উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম- সর্বত্রই চে'র জয়জয়কার। তুমুল জনপ্রিয়তা এ বিপ্লবীর।

লাতিন আমেরিকায় তো বটেই, আছেন এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা, আমেরিকায়ও। যে বলিভিয়ার সৈনিকদের হাতে চিরবিদায় নিয়েছিলেন চে, সেই বলিভিয়া থেকে শুরু করে কানাডা, ফিলিস্তিন, নেপাল হয়ে বাংলাদেশ- সব অঞ্চলের মানুষের হৃদয়েই স্থান করে নিয়েছেন তিনি। ক্লাব, গাড়ি, টি-শার্টে শোভা পায় এ বিপ্লবীর ছবি। তার শৈল্পিক সেই বিখ্যাত ছবিটির অনুলিপি সংস্কৃতির বিশ্ব প্রতীক হয়ে উঠেছে। ১৯৬৭ সালের ৮ অক্টোবর মার্কিন সমর্থনপুষ্ট বলিভীয় সেনাবাহিনীর হাতে আহত অবস্থায় বন্দী হন তিনি।

পরদিন ৯ অক্টোবর বলিভিয়ার সেনাবাহিনীর এক মদ্যপ সৈনিক তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। মৃত্যুর আগে চে বলেছিলেন, 'আমি জানি তোমরা আমাকে গুলি করে মারবে। আমি জীবিতাবস্থায় বেরুতে পারব না। ফিদেলকে বল, এই পরাজয় বিপ্লবের শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বিপ্লবের বিজয় হবেই।

সালেইদাকে (চের স্ত্রী) বল, ব্যাপারটি ভুলে যেতে। সুখী হতে বল। বাচ্চাদের লেখাপড়ায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে, আর সৈন্যদের বল যাতে আমার দিকে ঠিকভাবে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। '

তার নতুন ভাবনাগুলোকে নিয়মিত তার দিনপঞ্জি 'দ্য মোটরসাইকেল ডায়রিজ'-এ লিখে গেছেন। ডায়েরির এক জায়গায় লিখেছেন, 'মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক কার্যকলাপ আমাকে যুগপৎ বিস্মিত ও অস্থির করে তুলেছে।

আমার চিন্তারও অধিক পরিমাণ বদলে দিয়েছে আমাকে। ' কী অকুতোভয় অবিচল বিপ্লবী। সে দিন তার দৈহিক মৃত্যু হয়েছিল ঠিকই কিন্তু আসলে সেটা ছিল চে'র পুনরুত্থান। তিনি জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন, বিপ্লবীর মৃত্যু আছে, কিন্তু বিপ্লবের মৃত্যু নেই।

 

 



সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।