আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি বনাম আমার প্রেমিকার ছোট ভাই

'কিছু মাতাল হাওয়ার দল... শুনে ঝড়ো সময়ের গান... এখানেই শুরু হোক রোজকার রূপকথা... / কিছু বিষাদ হোক পাখি... নগরীর নোনা ধরা দেয়ালে কাঁচ পোকা সারি সারি... নির্বান নির্বান ডেকে যায়...' সব সময় প্রেমিকের প্রধান শত্রু হয় প্রেমিকার বড় ভাই। এটাই পৃথিবীর নিয়ম। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঘটনা উলটা। আমার প্রধান ও একমাত্র শত্রু হলো প্রেমিকার ছোট ভাই। বয়স চার বছর।

তার সাথে আমার প্রথম কথা হয় আমার প্রথম ডেটিং এর দিন। আমার প্রেমিকাকে তার মা বিকেলে একা বাসা থেকে বের হতে দেন না। বের হতে হলে কাউকে সাথে নিতে হয়। সেদিন সাথে এসেছিলো এই পিচ্চি। পিচ্চির মাথায় ক্যাপ।

নাদুস নুদুস লাগছিলো দেখতে। আমি দেখে গাল টিপে দিয়ে বললাম, - এই যে লক্ষি বাবু, তোমার নাম কি সোনা? - মিস্টার খামোশ। আমি ভাবলাম আমাকেই হয়তো বলছে খামোশ। কিন্তু সেটা না। সে নিজেই তার এই নামের ব্যাক্ষা দিলো।

- আমার নাম খাজা মোহাম্মদ শমশের। আমি সংক্ষেপ করে ফেলেছি - খামোশ। এখন আমার নাম মিস্টার খামোশ। আমি ৪ বছর বয়সি মিস্টার খামোশের কথা শুনে চমকৃত হলাম। আমি প্রেমিকাকে বললাম তোমার ভাই তো বিরাট পাকনা।

সে বললো, "ওর পাকনামীর দেখেছো কি! আমার দুলা ভাইয়ের নাম হলো বদরুল হাসান লোদি । সে সংক্ষেপ করে বলে "বলদ"। বদরুলের "ব" লোদি'র ল আর দ। আমি পিচ্চির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এই পিচ্চি আমার নাম জানলে কি করবে কে জানে! আমার প্রথম ডেটিং এর দিন পিচ্চি তেমন ঝামেলা করেনি।

সারাক্ষন হা করে আমার আর আর প্রেমিকার কথা শুনেছে। কিন্তু কে জানতো তার এই শোনাই আমার জন্য পরবর্তিতে কাল হয়ে দাঁড়াবে! ও হ্যা! আমার প্রেমিকার নামই তো বলা হয় নি। ওর নাম হলো মিতু। যাই হোক, একদিন রাতে মিতুকে ফোন করলাম। রাত হলো রোমান্টিক সময়।

আমি গলায় যথেষ্ট রোমান্টিক ভাব এনে বললাম, - হ্যালো জান! ওপাশ থেকে শোনা গেলো অপরিচিত কন্ঠ। - ঐ তুই কে? আমি খাজা মোহাম্মদ শমশের বলছি। - ও ইয়ে! বাবু... মিতুকে একটু দাও তো! - এই মিতু কি রে! আমি মিতুকে বড় আপু ডাকি। তুইও ডাক। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।

প্রেমিকাকে আমার বড় আপু ডাকতে হবে। আমি ভাগ্যকে মেনে নেয়াই যুক্তিসংগত মনে করলাম। - হ্যা বাবু। বড় আপুকে দাও। - আচ্ছা দিচ্ছি।

তবে একা একা কথা বলবি না। আমি লাউড স্পিকার দিয়ে দিচ্ছি। তুই কথা বলবি। নাহলে আমি আম্মুকে ডাক দিয়ে সব বলে দেবো। আমি শুকনা গলায় বললাম "আচ্ছা!" কিছুক্ষন পরে মিতু আসলো।

আমি বুঝলাম মিস্টার খামোশ লাউড স্পিকার অন করেছে। - আমি বললাম। মিতু, প্রিয় বড় আপু আমার, ভালো আছেন? ওপাশ থেকে মিতু বললো "জি ছোট ভাইয়্যা ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?" - জ্বি আপু আমি ভালো আছি। কালকে দেখা করবেন? - বুঝতে পারছি না ছোট ভাইয়্যা।

আজ রাখি। মিস্টার খামোশ সব শুনছে। তোমাকে অনেক অনেক আদর। উম্মাহ! উম্মাহ!! আমিও বড় আপুকে উম্মাহ দিতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু ওপাশ থেকে শুনলাম খাজা মোহাম্মদ শমশের-এর কন্ঠ - "এই তোমার এত্তো বড় সাহস! ঐ ব্যাটাকে উম্মাহ দিলা কেনো? দাঁড়াও আম্মুকে বলছি" আমি কাহিনি খারাপ ভেবে ফোন কেটে দিলাম।

সেদিন ছিলো ঐ পিচ্চির বার্থডে। এই উপলক্ষে আমি আর আমার প্রেমিকা মিলে একটা প্ল্যান করলাম। বার্থডে পার্টিতে আমি সেদিন প্রথম বারের মতো মিতুদের বাসায় যাবো। সমস্যা হলো মিতুর মা। একটা অপরিচিত ছেলে বাসায় গেলে হাজারটা প্রশ্ন করবেন উনি।

আমি আর মিতু প্ল্যান করলাম- আমি যাবো মিতুর বেস্ট ফ্রেন্ড সেজে। মিতু আমাকে বাসায় যাবার পর "তুই" করে বলবে। আমিও বলবো "তুই" করে। তখন মা আর সন্দেহ করবেন না। পরিকল্পনা মোটামোটি ফাইনাল হয়ে গেলো।

জন্মদিনের দিন সন্ধ্যায় সেজেগুজে চলে গেলাম মিতুদের বাসায়। প্রেমিকার বাসায় প্রথম গমন। স্বাভাবিকভাবেই হার্ট বিট বেড়ে গেলো। আমি দুরুদুরু বুকে গিয়ে সোফায় বসলাম। আশে পাশে অনেক গেস্ট।

একটু পর আমার সামনে এসে দাড়ালো খাজা মোহাম্মদ শমশের। আমি আদুরে গলায় বললাম, - "এই যে বাবু! কেমন আছো?" - হ্যা ভালো। তুমি? - আমিও ভালো। বুঝলাম আজ পিচ্চির মেজাজ ভালো। আমাকে "তুই" করে বলছে না।

আমি পিচ্চিকে বললাম, -"তা বাবু আজকে তোমার বার্থডে। তাই না? একটা একটা করে বার্থডে যাবে আর তুমি বড় হতে থাকবা। একদিন আমার মতো বড় হয়ে যাবা। আমার মতো বড় হলে তোমার শক্তি হবে অনেক। বুঝেছো?" - "তোমার শক্তি এখন আমার চেয়ে বেশি?" খামোশ আমাকে কড়া গলায় প্রশ্ন করলো।

- ইয়ে মানে ... - চলো মাইর করি। দেখি কার শক্তি বেশি। বলেই খাজা এক লাফে আমার ঘাড়ে উঠে গেলো। আমার গালে দিলো কামড়। পিঠে শুরু করলো ধুমাধুম কিল দেয়া।

আমার মনে হচ্ছিলো পিচ্চিকে ধরে একটা আছাড় দেই। কিন্তু সেটা সম্ভব না। পিচ্চিই আমাকে ধরে আছাড় দিচ্ছে প্রায়। আমি কিছুক্ষনের মধ্যেই কপোকাত হয়ে গেলাম। গেস্টরা পিচ্চির কান্ড দেখছে হা করে।

খাজা মোহাম্মদ শমশেরে ধস্তাধস্তি শুনে ছুটে এলেন তার মা। এসে তাকে ছূটালেন। বললেন, "ব্যাথা পাওনি তো বাবা? আমার ছেলেটা একটু দুষ্টই। বসো তুমি" আমি মুখ যথা সম্ভব হাসি হাসি করে বললাম "না আন্টি একটুও ব্যাথা পাইনি। একটুও না।

হে হে হে। " এমন সময় রুমে আসলো মিতু। আহা!! মিতুকে বেশ সুন্দর লাগছে আজ! মিতু আমাকে দেখে পরিকল্পনা মোতাবেক বললো, "কি রে কেমন আছিস? আসতে এতো দেরী করলি যে!" আমি বলতে যাচ্ছিলাম "আর বলিস না। রাস্তায় জ্যাম" কিন্তু আমাকে কথা বলার সুযোগ দিলো না খাজা মোহাম্মদ শমশের। সে হঠাৎ জোরে জোরে বলা শুরু করলো, "আম্মুউউউউউ।

এই সেই ছেলে যেটাকে আপু জানু বলে ডাকে। সারা রাত ফোনে কথা বলে" আমি তখন পুরা তব্দা। মিতুর চেহারায়ও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসলো। মিতুর মা একবার তাকাচ্ছেন আমার দিকে, একবার মিতুর দিকে। আমি ফ্যাশফ্যাশে গলায় মিতুকে বললাম, "ইয়ে! তোমাদের বাথরুমটা কোন দিকে? আমার বমি বমি লাগছে।

" মিতুর মা এগিয়ে আসলেন, "বলো কি বাবা! আমার সাথে আসো। বাথরুম দেখিয়ে দিচ্ছি" আমি হা করে আন্টির দিকে তাকিয়ে রইলাম। ### লেখার প্রতিটা লাইনই কাল্পনিক। ** এক কপি রেখে দিলাম পার্সোনাল ব্লগে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.