বল আমায় সেই সময়ের নেই কেন অস্তিত্ব, বোঝাও আমায় সেই কল্পনার নেই কোন সমাধান.....আমারি স্বপ্ন আজো জেগে রয় আধারো শুন্য চোখে ... ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে: দারোগার ধর্ষণ চেষ্টার বিচার পেতে আদালতে এসেছে আঁখি আক্তার (১৮)। আদালতকে জানিয়েছে তাকে কিভাবে নির্যাতন করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওই এএসআই। এর আগে তাকে নির্যাতনের ঘটনার বিচার চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া হয়েছিল অভিযোগ। কিন্তু দারোগার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বদলে আঁখি আর তার মা পারুল বেগমকে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত
করতে তৎপর হয়ে ওঠে পুলিশ। স্থানীয় বিশিষ্ট লোকজনকে তারা মাদক ব্যবসায়ী বলে সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করায়।
পাশাপাশি পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনায় নানা ভয়ভীতি দেখাতে থাকে তাদের। এ অবস্থায় গৃহবন্দি হয়ে পড়ে আঁখি আর তার পরিবার। শেষ পর্যন্ত বিচার পেতে গতকাল আদালতে আসে আঁখি। আদালতেও গোয়েন্দা পুলিশ ধাওয়া করে আঁখি ও তার মাকে। হুমকি দেয় ঘটনা শেষ করে ফেলার।
শেষ পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই মো. জাহাঙ্গীর আলমকে আসামি করে মামলা করেছেন। আঁখির মা পারুল বেগম। আদালত মামলার অভিযোগ তদন্তের জন্য র্যাব ৯-কে নির্দেশ দিয়েছে। এর আগে আদালত আঁখি ও তার মায়ের বক্তব্য শোনেন। এই সময় আঁখি তার ওপর দারোগার নির্যাতনের বর্ণনা দেয় আদালতের কাছে।
আদালত এ সময় তাদের কাছে মাদক ব্যবসার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আদালতকে তারা বলে, স্যার আমরা মাদক ব্যবসা করি এ রেকর্ড তাদের দেখাতে বলেন। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় মামলাটি আদালতে পেশ করা হয়। এরপরই আদালত দীর্ঘসময় ধরে বাদী ও ভিকটিমের বক্তব্য শুনেন। মামলার আর্জিতে অভিযোগ করা হয়, আসামি এএসআই মো. জাহাঙ্গীর আলম নারীলোভী লোক। গত ৯ই জুলাই রাত সাড়ে ১১টায় সে আরও দু’জনকে নিয়ে ভাদুঘরে তাদের বাসায় এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে।
ঘটনার সময় বাদিনী পারুল বেগম তার চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় ছিলেন। তাদের দরজা ধাক্কানোর বিষয়টি মোবাইল ফোনে আঁখি জানানোর মুহূর্তেই জাহাঙ্গীর ও আরও দু’জন জোরপূর্বক ঘরে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম আঁখিকে জাপটে ধরে। এরপর তার শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে, গোপনাঙ্গে এবং সমস্ত শরীরে অনবরত হাত বুলাতে থাকে। জামার নিচ দিয়ে বুকে, পেটে হাত চালানোর সময় তার কবল থেকে বাঁচার জন্য চেষ্টা করলে জাহাঙ্গীর তাকে চড়থাপ্পড় মারে।
এ সময় আমার ছোট ছেলে আমার মেয়েকে বাঁচাতে গেলে জাহাঙ্গীর তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এ সময় আমার মেয়ে আঁখি দৌড়ে বাড়ির ছাদে উঠে যায়। জাহাঙ্গীরও তার পিছু পিছু ছাদে গিয়ে আবার আঁখিকে জাপটে ধরে ধর্ষণ করতে উদ্যত হয়। আঁখির প্রাণপণ আত্মরক্ষার চেষ্টার মুখে জাহাঙ্গীর একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে হত্যার উদ্দেশে তাকে ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে আঁখির কোমরে ভাঙাসহ সারা শরীরে জখম হয়।
এ সময় আমার ছেলে অটোরিকশা চালক সাকিল মিয়া বাড়ি ফিরে এসে ঘটনার প্রতিবাদ করতে থাকলে এএসআই জাহাঙ্গীর তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে ৫টি ফেনসিডিল ও ১০টি ইয়াবা ট্যাবলেট দিয়ে তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দেয়। এরপর বাদিনীকে হুমকি দেয় ঘটনাটি কাউকে জানালে পরিবারের সবাইকে মামলা দিয়ে জেল খাটাবে। আর্জিতে বলা হয়, পুলিশের কাছে এ অভিযোগ দেয়ার পর কোন বিচার না পাওয়ায় তারা আদালতে মামলা করেছেন। আদালতে বাদী পক্ষে মামলাটি দাখিল করেন এডভোকেট শেখ নাজমুল সাকিব (রিয়াদ)।
এডভোকেট শেখ নাজমুল সাকিব (রিয়াদ) বলেন, আমরা আশা করেছিলাম আদালত জুডিশিয়াল তদন্তের আদেশ দেবেন। এদিকে ডিবি পুলিশকে আদালতে এসেও আঁখিকে হুমকি দিতে দেখা গেছে। বার লাইব্রেরির টিনশেড ঘরে নিজের উকিলের সামনে বসে থাকা অবস্থায় সেখানে আসেন ডিবির দারোগা সহিদ। সঙ্গে আরও দু’জন। দারোগার সহিদ আঁখিকে উদ্দেশে করে বলেন, এইগুলো ভালা না।
শেষ কইরা ফালা। এদিকে আঁখি আর তার মা পারুল বেগম জানান, ঘটনার পর থেকেই নিরাপত্তাহীনতায় বাস করছেন তারা। সারাদিন দরজা এঁটে ঘরে বসে থাকেন। ডিবি নানা লোকজন পাঠিয়ে তাদের হুমকি দিচ্ছে। আঁখি বলে, সে শহরের নাইন-জিরো নামে একটি শপিং মলে চাকরি করে।
আর তার ছোট ভাই অটো চালায়। তার বক্তব্য আমরা যদি মাদক ব্যবসাই করতাম তাহলে তো আর চাকরি করতাম না। মাদক ব্যবসা বা এ সংক্রান্ত মামলা দূরে থাক আমি আর আমার মায়ের বিরুদ্ধে একটা সাদা কাগজে দাগও পাবেন না। আমরা মাদক ব্যবসা করি এমন কোন প্রমাণ নেই। আশপাশের কেউ এই কথা বলবে না।
দারোগা নিজে বিপদ থেকে বাঁচতে আমার ভাইয়েরে ধইরা নিয়া মাদকের মামলা দিছে। আমি একটা মেয়ে অইয়া তারে বিনা অপরাধে দোষতাছি না। আমি হের বিচার চাই। হে ওইদিন আমার সাথে খারাপ কাম করার লাইগাই আমরার ঘরে গেছিল। আঁখি জানায়, ৫ দিন হাসপাতালে চিকিৎসা করে বাড়িতে ফিরেছে সে।
কিন্তু এখনও সে বসতে পারে না। ব্যথায় রাতে ঘুমাতে পারে না। তার মা ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাচ্ছে তাকে প্রতিদিনই। এদিকে তার ভাইকে বিনা অপরাধে ধরে নিয়ে যাওয়ায় তার মা-ও রাতে ঘুমাতে পারেন না। এর মধ্যে আছে হুমকি।
ডিবি লোকজন পাঠিয়ে হুমকি দিচ্ছে। তাই তারা সবসময় ঘরে দরজা বন্ধ করেই বসে থাকেন। এলাকার লোকজনও সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে কোন সময় এরা তাদের বিপদ ঘটাইতে পারে। আঁখি বলে, আমারে যদি মাইরাও ফেলায় তবুও আমি হের বিচার চাই। হে আমার ইজ্জত নষ্ট করছে।
ডিবির সাফল্যগাথা প্রচার: চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা আড়াল করতে ঘটনার ৫ দিন পর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ‘ডিবির সাফল্যগাথা’ শিরোনামে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় স্থানীয় বিভিন্ন সংবাদপত্র এবং জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিকদের মেইলে। এতে পারুল বেগমের বাসায় মাদক ব্যবসার বিষয়ে স্থানীয় বিশিষ্ট লোকজনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালানোর উল্লেখ করা হয়। এ অভিযানে পারুলের ছেলে শাকিলের শয়ন কক্ষে তার হেফাজতে থাকা অবস্থায় ৫ বোতল ফেনসিডিল ও ১০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করার বিষয়টিকে তাদের বড় সফলতা হিসেবে দেখানো হয়। তাতে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে আসামি শাকিলের বোন আকলিমা আক্তার (আঁখি) বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় বলে উল্লেখ করা হয়। পুলিশের এ প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগকারী হিসেবে এলাকার যেসব বিশিষ্ট ব্যাক্তির নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে তাদের একজন এডভোকেট মো. ইসহাক মিয়া।
তার সঙ্গে গতকাল এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, তারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কিনা সেটি তিনি জানেন না। এলাকার ছেলেপুলেরা একটি কাগজ নিয়ে আসার পর তিনি তাতে স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। আরেকজন বিশিষ্টজন বলেছেন, এলাকার কাউন্সিলর ২-৩ দিন আগে গ্রামের এক মিটিংয়ে এ বিষয়টি আলোচনা করেন। তখন আমরা তাকে বলি কেউ মাদক ব্যবসা করলে কাউন্সিলর হিসেবে সেটি তো তুমিই বন্ধ করতে পারো। সূত্র জানায়, কাউন্সিলর মো. আক্তার জাহানকে গত ১২ই জুলাই সকালে ডিবি অফিসে ডেকে নেয়া হয়।
সে সময় অভিযুক্ত এএসআই জাহাঙ্গীর তার ফোন দিয়ে ওই কাউন্সিলরের সঙ্গে সাংবাদিকদের কথা বলিয়ে দেন। কাউন্সিলরকে দিয়ে বলানো হয় তারা মাদক ব্যবসায়ী। ডিবির এ দাবি প্রতিষ্ঠা করতেই কাউন্সিলর এখন এলাকায় সরব
হ্যাল্লো-টুডে ১৭-জুলাই-১৩, (সংগৃহিত)
http://www.hello-today.com/14736#.UeYDXaJHKqY
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।