আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহানবী (সাঃ) কি মিথ্যা নবী ছিলেন ? তিনি কেন মিথ্যা কথা বলবেন ? ইতিহাস কিন্তু তা বলে না ।

আল্লাহ ছাড়া আর কোন সৃষ্টিকর্তা নেই । হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল । যারা মহানবী (সাঃ) কে নবী হিসেবে স্বীকার করেন না, তাদের নিকট প্রশ্ন মহানবী (সাঃ) কেন নবূয়তের মিথ্যা দাবী করবেন ? উনার নবূয়তের পূর্ববর্তী জীবন কি বলে উনি একজন মিথ্যাবাদী ছিলেন ? উনার নবূয়ত দাবীর পর কি উনার জীবন সূখের ও আনন্দের হয়ে ছিলো ? উনি কি নবূযতের দাবী ত্যাগ করলে কুরায়শদের নিকট থেকে ধন সম্পদ ও সুন্দরী নারী পাওয়ার প্রস্তাব পাননি যখন উনি মাত্র নবী হিসেবে ইসলামের প্রচার শুরু করেছেন ? কই তিনি তো তা গ্রহণ করেন নি । তাহলে কেন একটা মানুষ পুরো সমাজের বিরুদ্ধে এভাবে রুখে দাড়াবে ? আবার কিভাবেই বা আল্লাহর সাহায্য ব্যতিরেকে এরকম অসম্ভব প্রতিকূল পরিবেশে বিজয়ী হবেন ? নিম্নে মহানবী (সাঃ) এর আমলের একটি ঘটনার বিবরণ দেয়া হলো , যা থেকে শিক্ষা ও চিন্তুা করার অনেক বিষয়ই রয়েছে । ধন্যবাদ ।

=================================== আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন যে আবু সুফিয়ান ইবনে হারব আমাকে জানালেন যে, তিনি যখন কুরাইশদের এক কাফেলা নিয়ে গিয়েছিলেন, হিরাক্লিয়াস তার কাছে এক সংবাদবাহক পাঠালেন। তারা শাম দেশে (সিরিয়া, প্যালেস্টাইন, লেবানন, জর্ডান) ব্যবসা করছিলেন, এবং সেই সময়ে আল্লাহর রাসূলের সাথে আবু সুফিয়ান ও কুরাইশদের সন্ধি চুক্তি ছিল। অতএব আবু সুফিয়ান ও তার সঙ্গীরা ইলিয়াতে (জেরুসালেমে) গেলেন হিরাক্লিয়াসের সাথে দেখা করতে। হিরাক্লিয়াস তাকে দরবারে ডেকে পাঠালেন যেখানে সব উচ্চ পদমর্যাদার রাজপুরুষেরা ছিল। তিনি তার দোভাষীকে ডেকে পাঠালেন, যে হিরাক্লিয়াসের প্রশ্ন শুনে তাদেরকে শোনাল: “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তির সবচেয়ে নিকটাত্মীয় কে যে নবী বলে দাবী করেছে?” আবু সুফিয়ান উত্তর দিলেন: “আমি তাঁর নিকটাত্মীয়।

” হিরাক্লিয়াস আদেশ দিলেন: “একে আমার কাছে আন এবং তার সঙ্গীদের তার পিছনে দাঁড় করিয়ে দাও। ” হিরাক্লিয়াস তার দোভাষীকে বললেন আবু সুফিয়ানের সঙ্গীদের বুঝিয়ে দিতে যে, তিনি ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে আমাকে কিছু প্রশ্ন করবেন, যদি আমি মিথ্যা বলি তাহলে সঙ্গীরা যেন তার প্রতিবাদ করে। আবু সুফিয়ান আরো যোগ করলেন: “আল্লাহর কসম, যদি আমি আমার সঙ্গীরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলবে এই ভয় না করতাম, নবী সম্পর্কে আমি মিথ্যা বলতাম। ” প্রথম যে প্রশ্ন তিনি তাঁর সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তা ছিল: “তোমাদের মাঝে তাঁর বংশ মর্যাদা কিরূপ?” আমি উত্তর দিলাম, “তিনি আমাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান। ” হিরাক্লিয়াস আরো জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমাদের মধ্যে থেকে তাঁর পূর্বে আর কেউ কি নবুওয়াতের দাবী করেছে?” আমি উত্তর দিলাম: “না।

” তিনি বললেন: “তার পূর্বপুরুষের কেউ কি রাজা ছিল?” আমি বললাম: “না। ” হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞাসা করলেন: “তাঁর অনুসরণকারীরা কি ধনী না দরিদ্র?” আমি উত্তর দিলাম: “দরিদ্ররাই তাঁর অনুসরণ করে। ” তিনি বললেন: “তার অনুসারীদের সংখ্যা বাড়ছে না কমছে?” আমি উত্তর দিলাম: “তারা বাড়ছে। ” তিনি তখন জিজ্ঞাসা করলেন: “তার ধর্ম গ্রহণকারীদের কেউ কি এই ধর্মে অখুশী এবং পরে পরিত্যাগ করেছে?” আমি উত্তরে বললাম: “না। ” হিরাক্লিয়াস বললেন: “তোমরা কি তাঁর দাবীর পূর্বে তাঁকে কখনও মিথ্যার দায়ে অভিযুক্ত করেছো?” আমি বললাম: “না।

” হিরাক্লিয়াস বললেন: “তিনি কি তাঁর প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেন?” আমি উত্তর দিলাম: “না। আমরা তাঁর সাথে চুক্তিবদ্ধ, তবে আমরা জানি না এ ব্যাপারে তিনি কি করবেন। ” আমি তাঁর বিরুদ্ধে বলার কোন সুযোগ পাইনি তখন ছাড়া যখন হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞাসা করলেন: “তোমরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছ কখনো?” আমি উত্তর দিলাম, “হ্যাঁ। ” তখন তিনি বললেন, “এই যুদ্ধের ফলাফল কি ছিল?” আমি বললাম, “কখনো তিনি জিতেছেন, কখনো আমরা। ” হিরাক্লিয়াস বললেন, “তিনি তোমাদের কি করতে বলে থাকেন?” আমি বললাম, “তিনি আমাদের শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদাত করতে বলেন, তাঁর সাথে আর কাউকে ইবাদাতে শরীক করতে নিষেধ করেন, এবং আমাদের পূর্বপুরুষেরা যা বলেছেন তা সবই পরিত্যাগ করতে বলেন।

তিনি আমাদের সালাত আদায় করতে বলেন, সত্য কথা বলতে, পবিত্র থাকতে ও আত্মীয়স্বজনের সাথে ভাল ব্যবহার করতে বলেন। ” হিরাক্লিয়াস দোভাষীকে বললেন পরবর্তী বক্তব্য আমাকে জানিয়ে দিতে: “আমি তোমাকে তাঁর বংশমর্যাদা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তুমি বলেছ যে তিনি অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান। আসলে প্রত্যেক নবীই নিজ জাতির সম্ভ্রান্ত পরিবার থেকেই হয়ে থাকেন। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি তোমাদের মধ্যে আর কেউ এ দাবী করেছে কিনা, তোমার উত্তর ছিল না বোধক। যদি উত্তর হ্যাঁ বোধক হতো, আমি সন্দেহ করতাম যে এই লোকটি তার পূর্বের লোকের দাবীর অনুসরণ করছে।

তারপর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি যে তার পূর্বপুরুষেরা রাজা ছিল কিনা। তোমার উত্তর না বোধক ছিল ; এবং যদি তা হ্যাঁ বোধক হতো, আমি মনে করতাম সে তার রাজত্ব ফিরে পেতে চাইছে। আমি আরো জিজ্ঞাসা করেছি তার দাবীর পূর্বে কখনো সে মিথ্যাবাদী হিসাবে অভিযুক্ত হয়েছে কিনা। এবং তোমার উত্তর ছিল না বোধক। সুতরাং আমি অবাক হচ্ছি কিভাবে একটি লোক আল্লাহর সম্পর্কে মিথ্যা বলতে পারে যে কখনো মানুষের সম্পর্কে কোন মিথ্যা বলেনি।

আমি তারপর তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তাকে ধনীরা বা দরিদ্ররা, কারা অনুসরণ করে। তুমি বলেছে দরিদ্ররাই তাঁর অনুসারী, এবং আসলে নবীদের অনুসরণকারীরা দরিদ্র শ্রেণী থেকেই হয়ে থাকে। তারপর আমি জিজ্ঞাসা করেছি তাঁর অনুসারীরা সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে, তুমি উত্তর দিয়েছ বাড়ছে, এবং সত্য হচ্ছে যে এটাই সত্য বিশ্বাসের লক্ষণ, যতক্ষণ না তা সবদিকে পরিপূর্ণ হবে। আমি আরো জিজ্ঞাসা করেছি এমন কেউ আছে কি না, যে তাঁর ধর্ম গ্রহণ করে অখুশী হয়ে তা পরিত্যাগ করেছে। তোমার উত্তর ছিল না বোধক, এবং আসলে এটাই সত্য বিশ্বাসেরই লক্ষণ, যখন তার আনন্দ অন্তরে প্রবেশ করে এবং তা সম্পূর্ণভাবে সত্তায় মিশে যায়।

আমি জিজ্ঞাসা করেছি তিনি কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন কিনা, তুমি না বোধক উত্তর দিয়েছ এবং সত্যিই নবীরা কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করেন না। তারপর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছি তিনি তোমাদের কি করতে বলেন। তুমি উত্তরে বলেছ যে তিনি তোমাদেরকে শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদাত করতে বলেন এবং তাঁর সাথে কোন কিছু শরীক করতে এবং মূর্তিপূজা করতে নিষেধ করেন এবং সালাত আদায় করতে, সত্য বলতে, অবৈধ উপায়ে ব্যভিচার না করতে বলেন। যদি তুমি যা বলেছ তা সত্যি হয়, তিনি খুব শীগগিরই আমার পায়ের নীচের এই ভূমি দখল করবেন এবং আমি কিতাব থেকে জানি যে তাঁর আসার সময় হয়েছে, তবে আমি জানি না যে তিনি তোমাদের মধ্য থেকে আসবেন, এবং আমি যদি নিশ্চিত হতে পারতাম যে আমি তাঁর কাছেই যাচ্ছি, তাহলে আমি এখনি তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য যেতাম এবং যদি আমি তাঁর সাথে থাকতাম, আমি নিশ্চয়ই তাঁর পা ধুয়ে দিতাম। ” তথ্যসুত্রঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর ১৩তম খন্ড ৩১০ পৃষ্ঠা ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.