আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গভবনের বিলাসী জীবন ছাড়তে চায়নি ইয়াজউদ্দিনের পরিবার

প্রথম আলো ডেস্ক | তারিখ: ১৩-০৯-২০১১ আড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার আগে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে সরিয়ে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছিল চারদলীয় জোট সরকার। সরে যেতে আপত্তি ছিল না ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদেরও। কিন্তু আপত্তি জানিয়েছিল তাঁর পরিবার। তারা বঙ্গভবনের বিলাসী জীবন ত্যাগ করতে রাজি ছিল না।

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস থেকে ওই সময় ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় এ কথা বলা হয়। ২০০৬ সালের ২১ জুন পাঠানো ওই তারবার্তা গত ৩০ আগস্ট ফাঁস করে দিয়েছে সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস। তারবার্তায় বলা হয়, ১৯ জুন এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তাঁর অন্যতম দুই নীতিনির্ধারক রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনের শারীরিক অবস্থা এবং বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে তাঁকে সরিয়ে কাউকে রাষ্ট্রপতি করা যায় কি না, সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর সরকারের মেয়াদ শেষ হলে এরপর দায়িত্ব নেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। কাজেই এর আগেই রাষ্ট্রপতির বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে সরকার।

তারবার্তায় উল্লেখ করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দূতাবাসের এক কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে আলোচনা করেছেন খালেদা জিয়া। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপতিকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন এবং এ বিষয়ে তিনি তাঁদের, বিশেষ করে খন্দকার মোশাররফের পরামর্শ চেয়েছেন। ২০০২ সালে ইয়াজউদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি করার বিষয়ে খন্দকার মোশাররফই সুপারিশ করেছিলেন। ইয়াজউদ্দিনকে সরিয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই বলে মোশাররফ প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলে জানান সালাউদ্দিন কাদের। কেননা, ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের শারীরিক অবস্থা বেশ খারাপ এবং জানুয়ারির নির্ধারিত নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তিনি দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবেন বলে মনে হয় না।

সে ক্ষেত্রে স্পিকার জমির উদ্দিন সরকারকে রাষ্ট্রপতি করার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন খালেদা জিয়া এবং অন্য কাউকে খুঁজে বের করার কথা বলেছেন তিনি। তারবার্তায় বলা হয়, সিঙ্গাপুরে বাইপাস হার্ট সার্জারির পর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন ২০ জুন দেশে ফিরেছেন। তবে তিনি বঙ্গভবনে না উঠে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আছেন। তাঁর স্ত্রী ও ছেলে চেয়েছিলেন, তিনি বঙ্গভবনেই উঠুন, তাহলে আর রাষ্ট্রপতি পদ হারানোর ভয় থাকবে না। কিন্তু রাষ্ট্রপতি তাঁর চিকি ৎ সকদের পরামর্শ মেনে নিয়ে হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন।

অবশ্য সামরিক হাসপাতালের প্রধান রাষ্ট্রপতির জন্য বঙ্গভবনেই একটি নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র (আইসিইউ) স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোখলেছুর রহমান চৌধুরী জানান, রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়তে ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ অনিচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু তাঁর পরিবার এর বিরোধিতা করছে। রাষ্ট্রপতি পদ ছাড়লেও তিনি মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যরা বঙ্গভবনের বিলাসী জীবন ছাড়তে অনিচ্ছুক।

তিনিও স্বীকার করেছেন, নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা চলছে এবং তিনি মনে করেন, নতুন কাউকে রাষ্ট্রপতি করা হলে তা ক্ষমতাসীন দলের জন্যই ভালো হবে। কেননা, আগামী নির্বাচনে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, নতুন সরকারের পুরো পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবেন নতুন রাষ্ট্রপতি। মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় বলা হয়, গত ২৩ মে রাষ্ট্রপতি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক দিন আগে বঙ্গভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষা ৎ করেন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা অভিযোগ তুলেছেন, খালেদা জিয়া নিজে রাষ্ট্রপতি পদে বসতে চাইছেন, এ জন্য ইয়াজউদ্দিনকে অসুস্থ সাজানো হয়েছে। সবশেষে দূতাবাস মন্তব্য করে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার তিক্ততার এই পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে চারদলীয় জোট ক্ষমতা ছাড়ার আগমুহূর্তে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দেবে।

২০০২ সালে বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অপসারণের পর যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, আবার ফিরে আসবে সেই পরিস্থিতি। বিরোধীরা অভিযোগ তুলবে, নির্বাচনের পর যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, আগামী পাঁচ বছর বঙ্গভবনে নিজেদের পছন্দের কাউকে রাখতেই বিএনপি ইয়াজউদ্দিনকে সরিয়ে দিয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।