আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বঙ্গভবনের সেই দিনগুলো - ১ মোখলেসুর রহমান চৌধুরী



২০০৭ সালের ২২শে জানুয়ারির নির্ধারিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল দল অংশ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটও সেই নির্বাচনে অংশ নেয়। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এখন এ বিষয়ট বর্ণনা করার কারণ কি? হ্যাঁ, অবশ্যই কারণ আছে। যারা সংবিধান অনুযায়ী দায়িত্ব পালনকারী ২০০৬-২০০৭ইং এর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছিলেন তাদের জন্য এই উত্তর দিতে হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে সেই নির্বাচন হলো না কেন? সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মনোয়য়ন বাতিলের ঘটনা ছিল এখানে ট্রাম্পকার্ড।

এ ঘটনাই প্রধান বিরোধী দলকে নিবাচন বর্জন করার সুযোগ করে দেয়। রির্টানিং অফিসাররা দেশের পাঁচটি নির্বাচনী এলাকায় জেনারেল এরশাদের মনোনয়ন বাতিল করার কারণে পরিবর্তিত পরিস্থিতি সৃষ্টির সুযোগ আসে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি যাতে নির্বাচনটি হয় এবং সকল সকল দলের অংশগ্রহনের ভিত্তিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দিন-রাত কাজ করেছি। প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে আমি প্রেসিডেন্টের উপদেষ্ট দুই নেত্রীর সঙ্গে আলদাভাবে একান্ত বৈঠক করে সমস্যা সমাধানের কাছাকাছি উপনীত হই। পরে সেনারগাঁও হোটেল কমপ্লেক্সে প্রধান বিরোধী দলেল দাবিনামা নিয়ে বসে সমাধানযোগ্য বিষয়গুলো নির্ধারণ করি ক্রমাগত তিন দিন বৈঠক করে।

মনোয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন সর্বশেষ আরও দু’দিন বাড়ানোর জন্য আওয়ামীলীগ থেকে বার বার দাবি জানানো হচ্ছিল। বলা হয়েছিল, এটিই তাদের শেষ দাবি। এর আগে একটি দাবি মানতেই আরেকটি দাবি দেয়া হচ্ছিল। তাই আর দাবি মানার ব্যাপারে অনেকের আপত্তি ছিল। কিন্তু আমরা সকল দলের অংশগ্রহনের মাধ্যমে নির্বাচন করতে কাজ করছিলাম।

এইচএম এরশাদ মনোনয়নপত্র বাড়ানোর দাবির এই অবস্থায় অর্থাৎ মনোয়নপত্র প্রত্যাহার প্রথমে নির্ধারিত তারিখের আগের রাতে প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের কাছে তিনবার ফোন করেছিলেন। কাজী জাফর আহমদ করেছিলেন দু’বার। প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন প্রোগ্রাম, খাওয়া ও চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে যখন রিং ব্যাক করা হলো তখন জেনারেল এরশাদ বললেন, মনোয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ আর বাড়ানোর প্রয়োজন নেই। আওয়ামীলীগ নির্বাচন বর্জন করলেও আমরা নির্বাচন করবো।

সারা দেশের সব নির্বাচনী এলাকায় এ জন্যই আমাদের আলাদা প্রাথী দেয়া আছে। কিন্তু আমরা সকলেই চাচ্ছিলাম ১৯৮৮ বা ১৯৯৬ এর ১৫ই ফেব্রুয়ারী মতো নির্বাচন না করতে। সকল দলের অংশগ্রহনে নির্বাচন করতে। ওই রাতে বঙ্গভবনে দুজন উপদেষ্টা মাহবুবুল আলাম ও ড. শোয়েব আহমদ উপস্থিত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপদেষ্টাদের নিয়মিত চা-চক্রের অংশ হিসেবে তারা এসছিলেন।

এছাড়া, মনোয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন বাড়ানোর দাবির পক্ষেও তারা কথা বলছিলেন। অনেক ত্যাগ ও কষ্টের বিনিময়ে যে আওয়ামী লীগকে আমরা নির্বাচনে নিয়ে এসেছিলাম সেই শ্রম সফল করতে ওই রাতেই আমরা মনোনয়নপত্রও জমা দেয়ার শেষ তারিখ দু’দিন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলাম। আওয়ামী লীগ এ সিদ্ধান্তে খুশি হয়েছিল। দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আমরা নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করে এভাবে নির্বাচনের তারিখ বার বার পেছাচ্ছিলাম আওয়ামী লীগের দাবি মানতে গিয়ে। কিন্তু রিটানিং অফিসারদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় এরশাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করার ঘটনা এসব উদ্যোগ আয়োজন তছনছ করে দেয়।

চারটি আসনে রটানিং অফিসার ছিলেন ডিসি। তারা একই রকম সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। আর ঢাকায় রিটার্নিং অফিসার ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার। ঢাকায় এরশাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের যোগ্যতা অর্থাৎ মনোনয়ন গ্রহণ বা বাতিল-এ ব্যাপারে সুস্পস্ট সিদ্ধান্ত ছাড়াই প্রথমে কাগজ পাঠানো হয়েছিল নির্বাচন কমিশনে। ইতিমধ্যে সিলেট, হবিগঞ্জ, রংপুর ও নীলফামারী থেকে রিটার্নিং অফিসারদের পাঠানো সিদ্ধান্ত ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচারিত হচ্ছিল।

নির্বাচন কমিশন ঢাকার রিটার্নিং অফিসারকেই তখন সিদ্ধান্ত দিতে বলেছিল। অন্যান্য রিটানিং অফিসারের সিদ্ধান্ত ফলো করা হয় তখন। এরশাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছিলাম কিন্তুতারা বিধির উল্লেখ করে বলেছিলেন, এ বিষয়ে রিটানিং অফিসারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নির্বাচন কমিশনের কিছু করা নেই। পরে যথারীতি জেনারেল নির্বাচন কমিশনে আপিল করেছিলেন এবং বিধি অনুযায়ী তা খারিজ করে দেয়া হয়।

পুরোটা পড়ুন: http://www.sonarbangladesh.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।