আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মধ্যরাতের আগন্তুক

পড়ুন কীভাবে নিতান্তই কপালগুণে এক ক্রমিক খুনির হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিল শিয়া নামের যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরী ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই। আর দশটা রাতের মতো ছিল না সেদিনের রাত। একটু অন্য রকম, একটু অস্বস্তিকর। ম্যাসাচুসেটসের বাসিন্দা জেনি আর তাঁর স্বামী কেভিন শুয়ে ছিলেন নিজেদের বেডরুমে। কেভিন নাক ডেকে ঘুমালেও ঘুম আসছিল না জেনির।

তাঁদের বেডরুমের এসিগুলো কেন জানি সেদিন কাজ করছিল না ঠিকমতো। কেবল গেস্টরুমের এসিটাই ঠিক ছিল। এ দম্পতির ১৫ বছর বয়সী মেয়ে শিয়া গিয়ে শুয়েছিল গেস্টরুমেই, আর তার বড় ভাই রায়ান তখনো বাড়িতেই ফেরেনি। গেছে এক বন্ধুর বাড়িতে। ঠিকমতো ঘুম আসছিল না শিয়ার।

খানিকক্ষণ টিভি চালিয়ে দেখল, অপেক্ষা করল রায়ানের ফেরার জন্য। রায়ান হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবে—এই ভেবে বাড়ির পেছনের দরজাটাও খুলে দিয়ে এল। সাধারণত চাবি নিতে ভুলে গেলে রায়ান পেছনের দরজা দিয়েই ঢোকে। শিয়া জানতেই পারল না, এই খোলা দরজা দিয়ে সে আসলে ডেকে আনছে মৃত্যুকেই! রাত আনুমানিক তিনটা ৪০। বাড়ির সবাই তখন ঘুমে অচেতন।

রান্নাঘরের পেছনের দরজা দিয়ে শিয়াদের বাসায় ঢুকল এক মুখোশধারী। হাতে ছোট্ট টর্চলাইট। রান্নাঘরে টেবিলের এক কোণে রাখা জেনি আর শিয়ার পার্স থেকে সব টাকা বের করে নিয়ে পুরল পকেটে। এরপর বেডরুম পেরিয়ে সোজা গিয়ে ঢুকল গেস্টরুমে, নিঃশব্দ পায়ে, বেড়ালের মতো। বিশালদেহী সেই মুখোশধারী তার গ্লাভস পরা শক্ত হাত দিয়ে প্রথমেই গিয়ে চেপে ধরল শিয়ার মুখ।

শিয়া প্রথমে প্রচণ্ড ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণে ধরে নিল, এটি তার বড় ভাই রায়ানের কাজ। নিশ্চয়ই দুষ্টুমি করছে! শিয়ার ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগল না। মুখোশধারী অন্য হাতে ধরা চাকুটা শিয়ার গলায় ঠেকাল। অন্ধকারেও চকচক করে উঠল ধাতব ছুরিটা। খসখসে কণ্ঠে বলে উঠল, ‘চুপ! একদম চুপ।

টুঁ শব্দটি করেছ কি শেষ করে ফেলব!’ মৃত্যুভয় ভুলে শিয়া প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল মুক্তি পাওয়ার। এদিকে ফোঁপানির মতো শব্দ শুনে জেগে গেল জেনি। চোখ মেলতেই জেনি দেখল ঘুম ভেঙে গেছে কেভিনেরও। ‘যাই, আমি ও ঘরে দেখে আসি। ’ বলল কেভিন।

‘না, আমিও তোমার সঙ্গে যাব’ বলেই স্বামীর সঙ্গে মেয়ের ঘরের দিকে রওনা দিলেন জেনি। গেস্টরুমে ঢুকতেই ঘুমচোখেই সেই অপ্রত্যাশিত দৃশ্যটা দেখলেন এই দম্পতি। ‘হেই, কী করছ, সরে যাও আমার মেয়ের কাছ থেকে। ’ ধারাল ছুরিকে অগ্রাহ্য করেই মুখোশধারীর দিকে ছুটে গেলেন কেভিন। ওজনে তাঁর চেয়ে কমপক্ষে ৩৮ কেজি বেশি বড় বিশালদেহীর সঙ্গে এমনিতে হয়তো পেরে উঠতেন না।

কিন্তু আজ কেভিন মুখোমুখি তাঁর সন্তানকে বাঁচাতে। ঐশ্বরিক শক্তিই যেন ভর করেছিল তাঁর ওপর। এক ধাক্কায় সেই বিশালদেহীকে ওপাশের ছোট বিছানায় শুইয়ে ফেললেন তিনি। হাত থেকে ছিটকে গেল ছুরি। দ্রুত সেটা তুলে নিতে গিয়ে হাতটাই কেটে ফেললেন জেনি।

মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হতবিহ্বলতা কাটিয়ে নিজের মোবাইল থেকে ৯১১-এ ফোন করল শিয়া। কিন্তু পুলিশ পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত ওই বিশালদেহীকে এভাবে আটকে রাখা যাবে না। কেভিন একটা চাল চাললেন, ‘শিয়া, যাও তো, আমার পিস্তলটা নিয়ে আসো। ’ শিয়া ছুটে গেল পাশের ঘরে। অথচ তাদের কোনো পিস্তলই নেই! কিন্তু মুখোশধারী তো আর সেটা জানে না।

পিস্তলের কথা শুনতেই ভয়ে কুঁকড়ে গেল সে। খানিকক্ষণ পরেই পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল মুখোশধারীকে। অবৈধভাগে অন্যের বাড়িতে প্রবেশ আর হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হলো অ্যাডাম লেরয় লেন নামের পেশায় দূরপাল্লার ট্রাকচালক ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। এফবিআইয়ের তদন্তে বেরিয়ে এল আরও ভয়ংকর তথ্য। শিয়াদের বাড়িতে সহজেই ধরা পড়লেও লেন আসলে ভয়ংকর প্রকৃতির এক ক্রমিক খুনি।

এক বছর ধরে মামলা চলার পর ২০০৮-এর অক্টোবরে রায় ঘোষিত হলো। সব মিলে ৫০ বছরের জেল হলো লেনের। বোঝা গেল, নিতান্তই কপালগুণে বেঁচে গেছে শিয়া। একটু দেরি হলেই হয়তো এই ক্রমিক খুনির শিকার হতো সেও! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।