আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অবসরে আড্ডা

এ জগতে তাই যত কিছু পায় তৃপ্তি আমার নাই অন্যের ধন দেখে কেন আমি করি শুধু হায়হায়! আড্ডা মানে রঙ তামাশা আড্ডা মানে ঠাট্টা নয় আড্ডা মানে কখনো-বা জীবন গড়ার পন্থা হয়! আড্ডা দিতে কার না ভাল লাগে। আড্ডা আমাদের জীবনের-ই অংশ । আড্ডা দিয়ে আমরা অনেক সময় জীবনের অনেক গুরত্বপুর্ন সময় নষ্ট করি তেমনি আড্ডায় খুজে পায় প্রানের উচ্ছাস, কাজের গতি, তাই আড্ডাও হতে পারে এক জীবনের স্মরনীয় মহুর্ত । এই তো গত শুক্রবাররে কথা, হঠাৎ মনে হলো বন্ধুরা সবাই এক জায়গায় হব । ভাবলাম সবাইকে খবর দেয়া দরকার ।

সাত সকালে ছুটে গেলাম মামুনের বাসায় । বাসার ঠিক নীচ থেকে শুনতে পেলাম বন্ধু আমার রীতিমত রেয়াজ করছে । বাসায় ঢুকেও কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম না । আমি অনেক কষ্টে করে ওর বেসুর কন্ঠে আছড়ে পড়া সুরের মুর্ছনায় অভিভুত হতে চেষ্টা করলাম । বললাম বন্ধু তুইতো খুব ভাল গাইতে পারিস ।

ওর মুখে তৃপ্তির হাসি দেখতে পেলেম । ও আমাকে সুর্, তাল, লয় সম্পর্কে জ্ঞান দান করলো । ও গাইতে ছিল আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখেছি, আমায় আর কান্নার ভয় দেখিয়ে কোন লাভ নেই । এবার আমি ওর গান নিয়ে প্রশ্ন করলাম । দোস্ত সব রেখে তুই বৃষ্টির কাছ থেকে কাঁদতে শিখলি কেন? আজকাল খুব কম মাত্রার বৃষ্টি হতে দেখা যায়, তুইতো সারা জীবনে ও কাঁদতে পারবি না ।

অগ্নেয়গীরির কাছ থেকে জ্বলতে শিখে কি করবি বল, এমন কি ভাত রান্নার মত আগুন পাবি বলেও মনে হয় না । ইচ্ছা ওকে রাগিয়ে দেয়া । দেখলাম ও নরেচরে বসল, বলল শোন বৃষ্টি হচ্ছে আমার কাজিন একটু কিছু হলেই কান্নাজুরে দেয় । দেখতে অসাধারন, তবে সমস্যা একটাই তা হলো আমাকে পছন্দ করে না । তবে আমি জানি এটা বেশি দিন থাকবে না ।

সুবীরনন্দি নিজেও ওকে দেখলে পাগল হয়ে যেত । তোর কি ধারনা সুবীরনন্দি তোর কাজিনের জন্য এই গান গেয়েছেন? ওকে নিয়ে গায়নি তবে কোন এক বৃষ্টি নামের মেয়েকে নিয়ে গেয়েছে । এটা ঠিক , উনি খুব দারুন গায়, তাছাড়া ভদ্রলোকের সাথে আমার একটা মিল খুজে পায় । জানতে চাইলাম তুই আবার কি মিল খুজে পেলি? ভদ্রলোক ১০০০ বার ছ্যাঁকা খেয়েছেন আর আমি ক্রমাগত ঐ দিকেই ধাবতি হচ্ছি । সেকি তুইতো দেখি ওনার বেশ কাছের মানুষ ও বটে , একবারে ঘরের খবর ও জানিস ! ও আবার বিজ্ঞদের মত বলল- শোন যখন কোন গান শুনবি মন দিয়ে শুনার চেষ্টা করবি, উনি হাজার মনরে কাছে প্রশ্ন করে ও প্রেম পাননি মানে শ্রেফ ছ্যাকা ।

আমি বললাম ও আচ্ছা। আমি আবার বললাম আচ্ছা দোস্ত তুই ক্লোজআপ-১ এ গেলি না কেন? ও বলল আগে বুঝিনি এটা এত হিট করবে ভেবেছিলাম ভুয়া কিছু একটা হবে । পরে কোন সুযোগ পেলে দেখবি ঠিক-ই মাত করে ফেলব। আমি বললাম তুই কোন চিন্তা করিস না আগামী মাসইে আবার আসছে দ্বিতীয় পর্ব ও সাথে সাথইে বলে উঠলো ইয়াহু...! তো দোস্ত এবার কারা আয়োজন করছে? আমি বললাম হারপিক -১ । ও আমার উপর রেগে গেল, আমি ওকে থামাবার চেষ্টা করলাম, বললাম দোস্ত এক কাপ চা খাওয়া না ।

ও সোজা উত্তর দিল বাসায় চিনি নেই । বললাম বিকেল পাঁচ টায় টিএসসিতে আসবি । ও বলল আমার হাতে বিন্দুমাত্র সময় নেই । আমি বললাম দ্যাখ সেটাকি ঠিক হবে! শর্মিলী তোকে বাসায় এসে বলতে বলছে কারন তোর মোবাইল রাতে বন্ধ ছিল, ওষুধে কাজ দিল । ও বলল দোস্ত দ্বারা আমি ও নিচে নামব জানতে চাইলাম কোথায় যাবি বলল আমি ও সকালে চা খাইনি ।

আমরা এক সাথে চা খেয়ে আমি শুভদের বাসায় গেলাম । আমার দেখা খুবই ভাল একটা ছেলে । লেখা পড়ার ফাকে ফাকে কাব্য চর্চার অভ্যাস আছে । আমি বললাম কিরে তোর খবর কি? ও কাব্যের ঢঙে বলল আমি কবিয়াল, শুধু করি পয়মাল । আমি বললাম দাদা জটিল! বললাম তুই আসলেই জলন্ত জিনিয়াস, ও বলল সে আর পারলাম কোথায়? তোর কাব্য চর্চা কেমন চলছে? ও আমাকে পেয়ে ওর কাব্যের ডায়েরী খুলে বসল একের পর এক কবিতা দেখাতে শুরু করল।

আমি ভাল শ্রোতাদের মত আচারন করলাম। ওর ডজন খানিক কবিতার প্রতিটি ছন্দ, লাইন তরজমা করে শুনালো আমি দু-একটা লাইন সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জানতে চাইলাম । ও প্রায় ঘন্টা খানিক ক্লাস নিল। আমি অবাক হবার চেষ্টা করলাম, বললাম তুই তো অসাধারন লিখিস । আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে ও আবার শুরু করল শোন কবিতা আসলে দুর্বল শিল্প, এটা বুঝতে হলে মস্তিকে বিশেষ কিছু সেল থাকতে হয়।

ওর ওখান থেকে বের হয়ে জামিলেরে কাছে ফোন করলাম। আমার জীবনে বিশেষ কিছু বন্ধু পেয়েছি যারা গুনেমানে অতুলনীয়, যাদুঘরে রাখা যায় এমন। জামিল তার মধ্যে অন্যতম, চমৎকার ছেলে প্রানবন্ত ও বটে । ওকে যদি অপারটিং সিষ্টেম বলি অবশ্যই এক্স,পি বলতে হবে। যে কোন ডিভাইস প্রবশে করালেই নিউ হার্ডওয়্যার ফাউন্ড ।

ওর জীবন্ত চিত্র নাট্যের দর্শক ছিলাম আমি এবং মাসুদ। ওকে খুব মিস করি। এবার নাহিদকে ফোন করলাম প্রচন্ড গুনি ছেলে কোন মেয়ে বিপদে পরলে প্রয়োজনে কলিজা কেটে শিক কাবাব বানিয়ে খাওয়ায় । জানতে চাইলাম বন্ধু কেমন আছিস ও বলল- লাইফ ব্লু-টুথ এ চলছে। জানতে চাইলাম সেটি কেমন ও বলল ব্লু-টুথ মানে প্রেম কিন্তু একটু দুরে , আর ইনফারেড হলো রোমান্টিক প্রেম অর্থাৎ বেশি ঘনিষ্ট, একবারইে কাছে ।

আর ডাটা ক্যাবল মানে শেষ পরিনতি অথাৎ বিয়ে। বন্ধু রাজের কথায় আসি চেহারা ‘মাইডিয়ার টাইপের’। এ ধরনের ছেলেরা খুব মজার হয়, ও তার ব্যতিক্রম নয়। ওর বিশাল নেটওয়ার্কে কখনো শুনতে হয়না এই মুহুর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব না, কিংম্বা একটু পরে আবার ডায়াল করুন। ফোন করে আমার এই ‘আই,এস,ডি বন্ধুকে’ আসতে বলে ফোন রাখলাম।

এর মধ্যে গুরুকুলের সভাপতি মিঃ কুল বয় জুয়েল আসল, ওকে নিয়ে তাপসের বাসায় গেলাম। তাপস খুবই মজা করতে পারে, জানতে চাইলাম এর রহস্য ও বলল খুব সোজা, মিথ্যা কথা বলবি মনখুলে, সব কথা নিজের মত করে বানিয়ে বলবি। হঠাৎ ও ভিতরে গেল, ছোট ভাইকে ও বলছে সামনে পরীক্ষা লেখাপড়া কর, সেরা না হলে কোথাও দাম নেই । সব কিছুতেই সেরাদের দামই আলাদা, বেঈমান হলে মীরজাফররে মত হতে হবে, ভাই হলে হবি বাংলা ভাইয়ের মত, ভন্ড হবিতো লালসালুর মজিদের মত, ভাল হবিতো মানুষের মত মানুষ হবি। ওর ভাই বলল ভাইয়া সাদ্দামের মত বাঘ হওয়ার চেয়ে বুশেরে মত বিড়াল হওয়া ভাল, তাপস ওর ভাইকে বাংলা কষান দিল।

যাহোক বিকেলে আড্ডাটা ভালোই জমল। শুরু হলো বন্ধুদের বিভিন্ন রকম প্যাচাল। বন্ধু রাসেল বলতে থাকল তার মালুকে নিয়ে। মালুর নাম আদৌ জানা হয়নি । শুধু এতটুকু জানি হিন্দু বলে ও তাকে মালু বলে।

জামিল ফ্লোর পাওয়ার পর বলতে থাকল জীবন নাকি কেবল শুরু, প্রভাতের রবি কিরন হৃদয়রে দ্বারে সবে মাত্র উঁকি দিচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সস্তা নাকি প্রেম। মেয়ে পটানো নাকি আজকাল খুব সহজ কাজ। আজকের দিনে টিটুকে খুব জ্ঞানী মনে হল। ওকে এর আগে কখনও সাহত্যি আওড়াতে দেখনি।

সেকি ভয়াবহ অবস্থা, কেউ যেন কাউকে কথা বলার সুযোগই দিতে চায়না। সবাই খুব ভালো বক্তা। আমি কথা বলার মত কোন সাহস করলাম না। আমাকে চুপ দেখে হঠাৎ ওরা বলল দোস্ত তুই কিছু বল। আমি বললাম কি বলা যায় বলতো।

ওরা বলল সুখ-দুঃখ নিয়ে কিছু বল। মনে পড়ে গেলো হুইলের বিজ্ঞাপনের কথা। ভদ্রমহিলাকে কথা বলার সুযোগই দেয়া হচ্ছিল না, যিনি হঠাৎ সুযোগ পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে অনেক কথা শেষ করলন। আমিও বোধহয় সেই স্টাইলেই অনেকটা শুরু করলাম। বললাম শোন, দুঃখটা হল অনেকটা বানরের মত।

একে কখনো প্রশ্রয় দিতে নেই। প্রশ্রয় দিলে দুঃখ বানরের মতই মাথায় ওঠে। তখন শুধু দুঃখকে নিয়েই ভাবতে হয়। সুখ দুঃখ মানুষের জীবনেরই অংশ। তাই দুঃখকে এত প্রশ্রয় দেয়ার মানেই হয় না।

বন্ধু নাহিদ আমাকে বলল দোস্ত তোর বয়ান লম্বা হয়ে যাচ্ছে না ? আমিও দেখলাম ব্যপারটা তাই। ও বলল চল এবার কিছু খাওয়া যাক । খাওয়ার ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই । শুধু আগের দিনের সোনালী স্মৃতির দেখা পেতে, বন্ধুরা সবাই ফিরে গেলাম আবাহানী মাঠের সুস্বাদু চাপ এবং লুচিতে । (লেখাঃ ২৬শে এপ্রিল ২০০৬ইং ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।