সবার উপরে মানুষ সত্য! আমার আগের লেখায় একটি চাকরির জন্য আমি হাঁহাঁকার করেছিলাম। আনন্দের বিষয় হল, অবশেষে আমি একটি চাকরি পেয়েছি। বিগত ২ মাস হল, আমি চট্টগ্রাম প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা’ বিভাগে প্রভাষক পদে কর্মরত আছি। এর মানে দাঁড়ালো যে আমি দেশে ফিরে আসার ৩ মাসের মধ্যেই একটি চাকরির ব্যবস্থা করতে পারলাম!
যাইহোক, এইবার একটা ছোটখাটো গবেষণায় আসা যাক। এই চাকরির ফলে মাস শেষে আমি সর্বসাকুল্যে ১৮ হাজার টাকা পেয়ে থাকি।
এইভাবে ২ মাস যাওয়ার পর, আমি আমার মাসিক আয়-ব্যয় এর একটা হিসাব বের করলাম!
** সকল খরচ বাস্তবিক অর্থে আনুমানিক পূর্ণ সংখ্যায় দেয়া হল:
খাবার খরচ = ৬,০০০ টাকা
যাতায়াত খরচ = ৩,০০০ টাকা
বাড়ি ভাড়া = ২,০০০ টাকা
মোবাইল বিল = ১,৫০০ টাকা
ইন্টারনেট বিল = ১,০০০ টাকা
বিবিধ খরচ = ২,৫০০ টাকা
_______________________________
সর্বমোট খরচ = ১৬,০০০ টাকা
এর মানে হল, মাস শেষে আমার সঞ্চয় মাত্র ২,০০০ টাকা। এইভাবে আরও ১/২ বছর চলতে হবে। এমতাবস্থায়, আমার মস্তিকে কয়েটি নতুন চিন্তা এসেছে:
১. এইভাবে চলতে থাকলে, এই জীবনে আর বিবাহ হইবে না।
২. বাবা-মা অথবা পরিবারের দায়-ভার নেয়া সম্ভব নয়।
৩. আমি কি এই সরকারী চাকরি ছেড়ে দিয়ে অন্য কোন চাকরি খুঁজব?
৪. এই চাকরি দিয়ে জীবনে কিছুই হবে না!
৫. এই চাকরি যদি করতেই হয়, তবে নিয়মিতভাবে আমাকে বিশেষজ্ঞ মতামত-দানকারী ব্যক্তি [কনসালটেন্সি] হিসাবে কাজ করতে হবে।
৬. অথবা আগামী ১৫/২০ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করা, কবে একজন অধ্যাপকের মর্যাদা পাব?
এইরকম হাজারো চিন্তার মধ্যে দিয়ে দিন কাটছে। আগের লেখায় বলেছিলাম যে, “আমি মাসিক ৩০ হাজার টাকার নিচের বেতনে কোন চাকরি করব না”। কিন্তু আফসোস, সেই ১৮ হাজার টাকার বেতনেই চাকরি করতে হচ্ছে। কেননা ক্ষুধার রাজ্যে যে পৃথিবী আজ গদ্যময় হয়ে রয়েছে !!
__________________________________________________________
সেইদিন একটি ‘সিএনজি’তে উঠলাম। মিটারে উঠল ৮০ টাকা, কিন্তু চালক ভাই আমার কাছ থেকে নিলেন ১৫০ টাকা।
আমি বললাম, “ভাই আমি এই অতিরিক্ত ৭০ টাকা আপনাকে কোথা থেকে দিব? আমি একজন সরকারী কর্মকর্তা, আমার তো বেতন খুবই স্বল্প”। উনি বলে উঠলেন, “এইরকম নিয়মকানুনের মধ্যে চললে তো এই দেশটা সোনার বাংলা হয়ে যেত”। আমি হাসি মুখে উনাকে ন্যায্য ভাড়ার চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে চলে আসলাম।
না জানি আমাদেরকে এইভাবে পদে পদে আর কত নিয়ম ভঙ্গের মুখোমুখি হতে হবে? এই অতিরিক্ত টাকা আয় করার কোন উৎস আমার জানা নেই, তবে ব্যয় করার অনেক অনেক সুযোগই আমার সামনে খোলা আছে।
একদিন গরীব আর মধ্যবিত্তের এইভাবে নিষ্পেষিত হবার দিন শেষ হবেই।
একদিন এইদেশ হবে ‘সোনার বাংলা’। সেই দিন হবে আমার দেশে “সূর্যোদয়”। আর সেই সোনালি রঙের আলোক-ছটা যেন আজই ছড়িয়ে পরুক আপনাদের মুখমণ্ডলে......এই কামনায়, সবাই ভাল থাকবেন, ধন্যবাদ।
__________________________________________________________
*** ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও দেশ সেবার আকাঙ্ক্ষা বাদ দিয়ে, উচ্চ-বেতনের নতুন একটি চাকরি খোঁজা শুরু করলাম.........বাঁচতে চাই, বাঁচার মত করে !!!
__________________________________________________________
সবশেষে একটি কবিতা রইল:
"জীবন – পাবলো নেরুদা"
"মাঝে মাঝে যখন তোমার কথা ভাবি
কি যে খারাপ লাগে!
যেহেতু তুমি জানো না
আমার সঙ্গে রয়েছে অগণন বিজয়ী মানুষের মুখ
যা তুমি দেখতে পাও না,
আমার সঙ্গে এগিয়ে চলেছে অগণন পা আর হৃদয়,
তাই আমি একা নই
একা হিসেবে নিজের কোনো অস্তিত্বই নেই,
আমি কেবল রয়েছি যারা আমার সঙ্গে চলেছে তাদের পুরোভাগে,
তাই আমি দুর্বল নই
কেননা আমি কেবল আমার ছোট্ট জীবনটাকেই বহন করে নিয়ে চলিনি
চলেছি সমস্ত মানুষের হৃদয়কে বহন করে
এবং এগিয়ে চলেছি দৃঢ় পায়ে
কেননা আমার যে হাজারো চোখে,
নিমেষে চূর্ণ করে ফেলি ভয়ঙ্কর সব পাথর
কেননা আমার যে হাজারো হাত,
তাই আমার কন্ঠস্বর
প্রতিটা দেশের সমুদ্রতীর থেকেও শোনা যায়
কেননা এ কন্ঠস্বর
যারা কখনও কথা বলেনি তাদের,
যারা কখনও গান গায়নি তাদের,
আর আজ যারা গান গাইছে
চুম্বনে তারা তোমাকে স্পর্শ করছে। " ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।