আজকের দিনটা খুব একটা ভাল যাবে বলে মনে হচ্ছেনা, সকাল থেকেই তিনবার আছাড় খেয়েছি। প্রথমে বাথরুমে পিছলে পড়ে, তারপর লুঙ্গির সাথে প্যাঁচ খেয়ে, সবশেষে দরজার সাথে বাড়ি খেয়ে । তার উপর আবার দিনটি শনিবার, কপালে যে কি ধরনের ‘শনি’ লেখা আছে, আল্লাহ মালুম !
রাশিফলের অলিগলি ঘাঁটতে ঘাঁটতে ঘর থেকে বের হলাম। যাত্রা শুভ, পরিকল্পনা অশুভ । উদ্দেশ্য স্কুলে যাওয়া, তবে মনের গহীন কোনে স্কুল পালানোর একটা ফন্দি উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।
কবিগুরু বলেছেন, " কোথাও আমার হারিয়ে যাবার নেই মানা। " আমি তাঁর সাথে একমত হয়ে হারানোর রাস্তা খুঁজছি। প্রথমে একটা চিপা গলির ভেতরে ঢুকে মাইনকার চিপায় পড়লাম। কিছু ভদ্রলোক (!) মহাসুখে গঞ্জিকা সেবন করছেন। প্রকৃতির পাতা পুড়ানো হাওয়া খেতে খেতে অপ্রকৃতস্থের মত একজন বললেন, " Meaning Meaning Cut Down" বঙ্গানুবাদ করলাম, "মানে মানে কেটে পড়"
অতঃপর ঢুকলাম পার্কে, তবে সেখানে বেশিক্ষন থাকা নিরাপদ নয়, পদে পদে বোরখা পড়া হেডস্যারের ভয়।
আজকাল হেডস্যার বোরখা পরে পার্ক থেকে পার্ক চষে বেড়াচ্ছেন স্কুল ড্রেসে থাকা ভদ্র ছেলেপেলেদের (গার্লফ্রেন্ড সহ) হাতে নাতে পাকড়াও করতে। সুতরাং সাবধানের রিস্ক নাই, কেটে পড়ি !
অনেক ঘুরাঘুরির পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম স্কুল মাঠের ভেতরে। হাঁটতে হাঁটতে ভুল করে স্কুলের ভেতরে ঢুকে পরেছিলাম, আর ঢুকেই দেখি দেড়ঘণ্টা লেট। শরীরচর্চা স্যার শাস্তিস্বরূপ হাঁটুগেড়ে কানধরে মাঠের মাঝখানে অবস্থান করার আদেশ দিয়েছেন। প্রাচীন আমলে রাজা বাদশাহদের সম্মান জানাতে হাঁটু গেঁড়ে বসতে হত, কিন্তু আমার সামনে নির্মাণকাজে ব্যাবহার করা গুটিকয়েক বাঁশ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়লনা।
"হে মহান বাঁশ, তোমার নানাবিধ ব্যাবহারে আমি পুলকিত। চারিদিক থেকে শুধু তোমাকেই খেয়ে যাচ্ছি !"
নানা কায়দা কানুনের পর ক্লাস এ ঢুকতে সক্ষম হলাম। আমার কানধরা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যাথা দেখলাম না। বয়েস স্কুলের এই এক সুবিধা, মেয়ে নাই, তাই অপমান হবার কোনো কাহিনীও নাই। দুইটা বেতের বাড়ির বদলে কান ধরে হাজার বার উঠবস করালেও মনের আনন্দে নাচি ! সিট খালি পাচ্ছিনা, গুগল সার্চ মারার পর পেছনের কোনায় একটা সিট এর আভাস পাওয়া গেল।
যাক, স্যারের চোখ থেকে নিজের মাথা বাঁচানোর মোক্ষম জায়গা ! আশেপাশে আমার প্রতিভাবান বন্ধুদের সমারোহ। দূরে এক জায়গায় কিলার রাকিব কে দেখলাম আমার দিকে কটমট করে চেয়ে আছে। (তাঁর অনেক গুণাবলীর মধ্যে অন্যতম হল পেছনের বেঞ্চে বসে সামনের গোবেচারার পিঠে দশ মিনিট পর পর একটা করে প্রমান সাইজের কিল মারা, ফলে “কিলার” নামে তাঁর বিশেষ খ্যাতি আছে। আর এ প্রক্রিয়াটা অধিকাংশ সময় আমার পিঠের উপর দিয়েই হয়। কিল খেতে খেতে পিঠ আমার জমি চাষের উপযোগী হয়ে গেছে।
) আমি তাঁর দিকে চেয়ে বাংলালিংকের মডেলদের মত দাঁত বের করা হাসি দিলাম। ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকালাম, ক্লাসে যারা ডিস্টার্ব করে, বেশি কথা বলে, তাদের রোল লেখা আছে। বরাবরের মত এবারও আমার রোল সেখানে চিরঅম্লান হয়ে আছে। এতেই শেষ নয়, ক্যাপ্টেন মহোদয় সেখানে স্টার চিহ্ন বসিয়ে আমাকে তারকা খ্যাতি দিয়েছেন।
খাইসে ! এখন গণিতের মিজান স্যারের ক্লাস ! তাঁর মতানুসারে ফাজিলে দেশ ভরে গেছে, আর আমি হলাম ফাজিলের চূড়ান্ত।
একগাদা পড়া দিয়েছিলেন, পড়া করে আসা তো দূরে থাক, কি পড়া দিয়েছিলেন সেটা পর্যন্ত ভুলে গেছি। কি আর করার ! বসে বসে প্রতিক্ষার প্রহর গুনতে লাগলাম। অবশেষে তিনি এলেন। ডুবন্ত মানুষ খড়কুটো কেও আঁকড়ে ধরে, আমি আঁকড়ে ধরলাম বেঞ্চের তলা, আপাতত মাথাটা লুকাই। শেষরক্ষা আর হলনা।
মহানুভব ক্যাপ্টেন তাঁর পোকাধরা দন্তকপাটি বের করে বলল, “ ব্ল্যাকবোর্ডে রোল উঠসে স্যার। ” ( হালা, ছুটির পর তুই খালি বাহির হ, রোল লেখার উপর তোরে পি এইচ ডি করামু )
স্যার ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে হুঙ্কার ছাড়লেন। কি আর করার! কাঁচুমাচু হয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তিনি এমনভাবে আমার দিকে তাকালেন যেন এইমাত্র আমেরিকা মহাদেশ আবিষ্কার করে ফেলেছেন !
“এ, তুই কথা বলচিস?”
“না, মানে স্যার ইয়ে...”
“ ফাইজলামু? এক্ষুনি পিথাগোরাসের উপপাদ্য বল”
আমি মনে মনে পিথাগোরাসের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে লাগলাম। AB²+BC²=AC² , এই সাধারণ জিনিস বুঝাতে স্কেল- পেন্সিল নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-ঢাকা সাতপাক মারার কি দরকার সেটা আমার মাথায় আসেনা।
তাঁর স্থানে আমি হলে একহাতে বেত নিয়ে বলতাম, “ কথা বিশ্বাস হয়না না? এক্ষুনি স্কেল আর কাঁটা কম্পাস দিয়ে মেপে দেখ, ভুল বের করতে না পারলে এই বেত দিয়ে তোর নিতম্ব সমতল বানাবো । ” যাইহোক, স্মৃতির পাতায় হারিকেন দিয়ে খুঁজেও পিথাগোরাসের সন্ধান মিলল না। অবশেষে স্যারের দিকে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলাম। তাঁর মুখে পূর্ণিমার চাঁদের আলো ফুটে উঠেছে।
“পড়া পারিস না আর ডিস্টার্ব করিস ? ফাজলামু, ফাজলামু? এক্ষুনি বারন্দায় গিয়ে কানধরে নীলডাউন হবি, ক্লিয়ার?”
“জি স্যার!”
দ্বিতীয়বারের মত কানধরে নীলডাউন হয়ে আছি।
আমাদের ক্লাসটা তিনতলায় হওয়ায় এখান থেকে গার্লস স্কুলের জানালা দেখা যায়। তারা আমার কানধরার মজাদার দৃশ্য দেখে চব্বিশ পাটি দাঁত বের করেছে। তাদের দিকে তাকিয়ে বিদ্রোহী কবির কবিতায় সংশোধন আনা জরুরী বুঝতে পারলাম।
“সারা বিশ্বে যা কিছু মহান চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার গড়িয়াছে পুরুষ, অর্ধেক তার নর”
বারান্দার অপর প্রান্ত থেকে চৌধুরী স্যার আমার দিকে হেলেদুলে এগিয়ে আসছেন। এসেই আমার কান ধরার কথা জিজ্ঞেস করলেন।
“পড়া পারিনি স্যার”
“মেরে রক্তাক্ত বানিয়ে দেব শয়তান, পড়া পারিসনা তুই মানুষের বাচ্চা? আমি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি, জিলা স্কুলের ছাত্র, বলে পড়া পারিনি ! ছাত্র নামের পাত্র হয়েছিস?.........”
কানের সাথে মস্তিস্কের ব্লুটুথ কানেকশন বন্ধ করলাম। কথা এক কান দিয়ে ঢুকে অপর কান দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। স্যারের হাতে যে বেত আছে, সেটা এতক্ষন খেয়ালই করিনি। তিনি গভীর মনোযোগ সহকারে তাঁর দুর্ভিক্ষপীড়িত শুকনো বেতটা দিয়ে আমার পশ্চাৎদেশে বাড়ি মারার জুতসই জায়গা খুঁজছেন। ফর্মুলা ১২ কাজে লাগালাম।
( স্যারের বেত থেকে বাঁচার জন্য আমাদের ফাজিল ল্যাব এর প্রতিভাবান বিজ্ঞানীরা ১৭ টা ফর্মুলা আবিষ্কার করেছেন, ফর্মুলা ১২ হল: নিজেকে খুবই ভদ্র ছেলে হিসেবে উপস্থাপিত করে এমন ভাব দেখাতে হবে কে এই প্রথম পড়া পারিনি। ) যাক, এ যাত্রায় রক্ষা পেলাম !
ঘণ্টা পড়ার পর ব্যাগ নিয়ে বের হলাম। কথায় আছে, দানে দানে তিন দান। তৃতীয়বার কান ধরার আগেই প্রাচীর টপকিয়ে পালানো ভালো। আর এক ক্লাশ পর টিফিন পিরিয়ড, তখন পালাবো।
এখন আপাতত বাথরুমেই লুকিয়ে থাকি। তাড়াতাড়ি বাথরুমে ঢুকলাম।
“নাই কাজ, তো খই ভাজ” আপন মনে বাথরুমের দেওয়াল পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। ভদ্র, নম্র ও বিনয়ী ছেলেদের সাহিত্যপ্রতিভা ঠিকরে পরেছে বাথরুমের দেয়ালে দেয়ালে। কিছু চিত্রশিল্পীর মহান চিত্রকর্ম দেখা যাচ্ছে, যা লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি কেও হার মানায়।
মহান বিজ্ঞানী নিউটন বলেছেন, “ জ্ঞানের সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আমি কেবল বালুকণাই কুড়িয়েছি। ” জ্ঞানের এই দেয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আমার অবস্থাও তাঁর মতই মনে হল। পেন্সিল বের করে সর্বত্র একটি কথাই শুধু লিখলাম, “আবার তোরা মানুষ হ”
বাথরুমের অতিশয় সুগন্ধের আবেশে মৌ মৌ করা প্রাণ নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম, আর দুই মিনিটও ওখানে থাকা সম্ভব নয়। লাইব্রেরীর দিকে হাঁটা দিলাম। বজ্জাত লাইব্রেরিয়ান দরজা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছে।
এক মাসে মাত্র দুইদিন লাইব্রেরী খোলা পেয়েছি। বেটা ফাঁকিবাজিতে দেখি আমাকেও হার মানায় !
অনেক্ষন দরজার সামনে মাতম করার পর বিদ্যাসাগর দরজা খুলল।
“কি চাই ?”
(তোমার মুন্ডুপাত করতে চাই) বিনয়ের অবতার হয়ে বললাম, “ ভাই একটু বই পড়তাম”
সীমাহীন বিরক্তির সাথে সে আমাকে ভেতরে ঢুকাল।
“আলমারি এখন খোলা যাবেনা, ওইখান থেকে বই নিয়ে পড়ো”
দেখলাম একটা বইই বাইরে আছে।
“তৃতীয় বিশ্বের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটঃ পুঁজিবাদের করাল গ্রাসে স্বল্পোন্নত দেশসমুহ, এর উপর বিশ্বায়নের প্রভাব ও উত্তরণের পথ”
বইয়ের নাম দেখে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে মাথাটা চক্কর দিতে লাগলো।
বইটি নিয়ে টেবিলে বসে লাইব্রেরিয়ানের দিকে তাকালাম, সে তার ড্রয়ার খুলে একটি বই বের করে পড়ছে, উকি মেরে বইটির নাম দেখলাম, “বোরখা পরা সেই মেয়েটি...। ”
ধুর, আরও আধাঘণ্টা কাটাতে হবে। এই বই পড়ে মস্তিষ্কের শিরায় শিরায় গিট্টু মারার চাইতে অন্য কোনও কাজ করে সময় কাটানো ভালো। অবশেষে পেন্সিল দিয়ে বইটির প্রতিটি পাতায় লিখতে লাগলাম , “ প্রেমের নাম বদনা ”
টিফিনের ঘণ্টা পড়ার পর ব্যাগ নিয়ে প্রাচীর টপকাতে গেলাম। আমাদের বিদ্রোহী কবি স্কুল পালাতেন, লোকে বলে, তিনি স্বাধীনচেতা ছিলেন।
আমি স্কুল পালাই, লোকে বলে ছেলেটা এক নম্বরের বদমাইশ, ডানপিটে, বেয়াদব। একেই বলে, “কৃষ্ণ করলে লীলাখেলা, আমি করলে ঢং!” আফসোস, এরা আমার প্রতিভা চিনলনা............।
প্রাচীর বেয়ে নামতে গিয়ে হঠাৎ করে আমি আমার প্রতিভাসহ উল্টে পড়লাম। ধুলো ঝাড়তে ঝাড়তে উঠে দাঁড়ালাম। কিছু পুঁচকে ছেলেপেলে দৃশ্যটা দেখে আনন্দে গদগদ হয়ে গেছে।
এক থাপ্পড় মেরে সবগুলোর দাঁত ভেঙ্গে দেয়া উচিৎ। যাইহোক, বাড়ির দিকে রওনা হলাম। পথিমধ্যে কাকমামা মাথার উপর শান্তি বর্ষণ করলেন। মনের দুঃখে বললাম, “আমি পাইলাম, আমি ইহাকে পাইলাম!!” কপাল ভালো যে গরুরা আকাশে উড়েনা !!
বাসায় ফেরার পথে বাজার হয়ে আসতে হয়। সেখানে দেখি সালাম স্যার পটল কিনছেন।
আরবিতে সালাম অর্থ শান্তি হলেও বিষয়টা আমার জন্য মোটেও শান্তিপূর্ণ নয়, কারন তাঁর সাথে আমার বাপের গলায় গলায় সম্পর্ক। একজন একটা গেঞ্জি কিনলেও আরেকজন কে মোবাইল করে জানান, “ আর বোলেননা ভাই, একটা গেঞ্জি কিনলাম, গেঞ্জির নাম ‘নোকিয়া’, এখন এটা দিয়া কল করা যায় নাকি দেখতেসি ! হেহেহে...। ”
যথাসম্ভব চেষ্টা করলাম তাঁর দৃষ্টি এড়ানোর, লাভ হল না। তিনি হাঁক ছাড়লেন, “কি হে কবি সাহেব, ক্লাস বাদ দিয়া যাও কই?” কাঁচুমাচু হয়ে বললাম, “বাসায় যাচ্ছি স্যার । ”
তিনি আর কিছু বলার আগেই হনহন করে হাঁটতে লাগলাম।
কপালে বহুত খারাবি আছে আজ ! অবশেষে বাসায় ফিরলাম। রাতে ঘুমানোর আগে বাবা দিলেন ডাক। কচ্ছপের গতিতে তাঁর কাছে হাজির হলাম।
“কি ব্যাপার, তুমি নাকি আজকে স্কুল পালিয়েছ?”
(এই ছিল কপালে !) মাথা নিচু করে বললাম “না... মানে... ক্লাস করতে ভালো লাগছিলো না”
“আমি এত কষ্ট করে টাকা খরচ করে পড়াই, আর তোমার ক্লাস করতে ভালো লাগে না? লেখাপড়া করতে না চাইলে বল, লুঙ্গির দোকান দিয়ে দিই, বসে থেকে লুঙ্গি বেচো। অযথা টাকা খরচ করে পড়ানোর কোন মানে হয়না... হেন... তেন... ইয়ো ইয়ো...।
”
মনে মনে বললাম “আসুন আমরা বকাঝকা না করি, বহুত ফায়দা হবে ইনশাল্লাহ। ” লাভ হল না, বকার পরিমাণ জ্যামিতিক আকারে বেড়ে চলেছে...। ”
এই হল আমার একদিনের স্কুল জীবন। কালকে আবার কপালে কি আছে কে জানে !! যাইহোক, আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন।
ধন্যবাদ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।