একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয় ""দেশে ফেরার কয়েক মাস পর এক বন্ধু ফোন দিয়ে আবেগ জরান কণ্ঠে বলেছিল, " আজ ৭ বছরের সাইপ্রাস জীবনে প্রথম বারের মত বাংলাদেশী হিসেবে সম্মান ও সমাদর পেলাম, আমি তোমার বস মিঃ জর্জ এর বাসায়, AC লাগাতে এসেছি। " আমার চোখে পানি এসে পরেছিল । আসলে দেশের বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা না থাকলে কেও উপলব্ধি করতে পারবেনা দেশের প্রসংশা করলে হৃদয়ে কতটা দোলা দেয় আর দেশ নিয়ে গালি দিলে কতটা পুড়ে যায়। ""
********************** পর্ব - ৬**********************
মাস খানেক যেতেই আমার এক কলিক জানাল একটা ইন্টারনেট ক্যাফে পার্ট টাইম সপ কিপার চাচ্ছে। তুমি চেষ্টা করে দেকতে পার।
আমি ক্যাফের মালিকের কাছে গেলাম জানলাম সপ্তাহে ৩ দিন কাজ, দুই দিন সকালে এক দিন বিকেলে। আমি হোটেলের সিডিউল এর সাথে মেলাতে পারছিলাম না। মিসেস কেটি কে বললাম আমি রাতে কাজ করতে চাই । উনি আমাকে রাতের শিফটে দিয়ে দিলেন। আবার ক্যাফের মালিক জর্জের কাছে গেলাম।
বললাম, জর্জ আমি হোটেলর কাজ এখন থেকে রাতে করবো তুমি আমাকে কাজটা দাও। আমি নিজে ইন্টারনেট প্রোভাইট করেছি, ক্যাফে চালিয়েছি। তোমার চাহিদা আনুযায়ী আমি কম্পিউটার রক্ষণাবেক্ষণ আর গেস্ট কে এসিস্ট করতে পারব। জর্জ বলল- আমি দুঃখিত, দেখ তোমার দেশে, বিদেশী গেস্ট ছিলনা। তাছাড়া আমি আসলে রেসপনসিবল কাও কে চাচ্ছিলাম মানে আরেকটু বেশি বয়সের কাও কে ।
এতবড় ক্যাফে একা ম্যানেজ করতে হবে তুমি পারবেনা। আমি ভনিতা না করে বললাম, তাহলে তুমি আমাকে আমার যোগ্যতা প্রমাণ করার কোন সুযোগই দিচ্ছনা? জর্জ কিছুক্ষণ ভেবে বলল, কাল সকাল দশটায় আমার ক্যাফেতে আসবে। তোমাকে ৩ দিন পর্যবেক্ষণ করব।
প্রথম দিনেই পৌঁছতে দেরি হয়ে গেল জর্জ সাবধান করে দিলেন। এটাকে ঠিক ইন্টারনেট ক্যাফে বলা যাচ্ছেনা, ভিডিও গেম, পুল সাথে রেস্টুরেন্ট।
বিভিন্ন সুভেনিয়র দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজান ।
সারা রাত হোটেলে কাজ করে সোজা এখানে চলে এসেছি বিকেল ৪ টা বাজে, ক্ষুধায় পেট কামড়াচ্ছে কিন্তু বলতে পারছিলাম না। অবশেষে মিসেস জর্জ একটা স্যান্ডউইচ তৈরী করে দিলেন। খেতে পারলাম না ভিতরে পর্ক ছিল বলে।
দুদিনের মাথায় আমার জব পার্মানেন্ট হয়ে গেল।
তবে আমার কাজ এই ক্যাফেতে নয়। 'পাফস' সৈকতের কাছে ওদের আরেকটা ক্যাফে আছে। জর্জ আমাকে ওখানে নিয়ে গেল। এই ক্যাফেটা আরও সুন্দর, অনেক গেস্ট ই "Beautiful cafe I ever seen" লিখে গেছেন মন্তব্য বইতে। সত্যি বলতে আমিও।
আমি দায়িত্ব বুঝে নিলাম। আমার সবচাইতে বড় পাওনা হচ্ছে আমি সুপার ফার্স্ট ইন্টারনেটে কাজ করতে পারব। দুদিন পর জর্জ আমার কাজ দেখতে এলো। টাকা পয়সা নিয়ে একটা আপত্তিকর কথা বলল। আমি ভিষণ রেগে গিয়ে বললাম, জর্জ তুমি যদি আমকে বিশ্বাস করতে না পার আমি তোমার কাজ করবো না।
অসৎ পন্থায় টাকা আয় করতে চাইলে তা আমার দেশেই পারতাম তোমার দেশে আসার প্রয়োজন হত না।
আমি দেশে ফেরার পূর্বের দিন পর্যন্ত টানা প্রায় ৫ বছর ওখানে কাজ করেছি। আর কখনই জর্জ আমাকে তদারকি করেনি। দেশে আসার কয়েক মাস পর এক বন্ধু ফোন দিয়ে আবেগ জরান কণ্ঠে বলেছিলেন, " আজ ৭ বছরের সাইপ্রাস জীবনে প্রথম বারের মত বাংলাদেশী হিসেবে সম্মান ও সমাদর পেলাম, আমি তোমার বস মিঃ জর্জ এর বাসায়, AC লাগাতে এসেছি। " আমার চোখে পানি এসে পরেছিল ।
আসলে দেশের বাইরে থাকার অভিজ্ঞতা না থাকলে কেও উপলব্ধি করতে পারবেনা দেশের প্রসংশা করলে হৃদয়ে কতটা দোলা দেয় আর দেশ নিয়ে গালি দিলে কতটা পুড়ে যায়।
আমার দিন কাল ভালই কেটে যেতে লাগল। বৌ এর সাথে নিয়মিত ফোনে কথা হচ্ছে, ৫০-৬০ হাজার টাকা প্রতি মাসে দেশে পাঠাতে পারছিলাম। আর সেই সাথে ওয়েব সাইটের কাজ করে যাচ্ছি। বেশ ভাল একটা ল্যাপটপ কিনেছি।
২০০৫ এ আমি দুইটা অনলাইন সার্ভিস চালু করি। একটা গিফ্ট সপ সাইট আরেকটা মোবাইল ক্রেডিট রিচার্জ সার্ভিস(ফর দা ফার্স্ট টাইম ইন বিডি)। হোটেলে রাতের কাজটাও বেশ চলে যাচ্ছিল। শুধু সপ্তাহে তিন দিন ঘুমানোর খুব কম সময় পেতাম। গ্রীসের অলিম্পিকের সময় হোটেলে কাজের খুব চাপ পরলো।
ওভার টাইম করতে হচ্ছিল। আমি কখন ইভিনিং শিফটে কাজ করিনি। ওভার টাইম করাতে ইভিনিং শিফটে এক বন্ধুর বিরাট গোপন বিষয় জনসম্মুখে নিয়ে এলাম। আমি আর ঐ বন্ধু ইভিনিং টার্ন ওভার সার্ভিস দিচ্ছিলাম মানে রুমের পর্দা টেনে দেয়া, AC, লাইট , টেলিভিশন, টেলিফোন ইত্যাদি চেক করা। সাধারণত এই সময় রুমে গেস্ট থাকেনা।
একটা রুমের সামনে এসে ও বলল, তুমি একা কর এই রুমটা। আমি কাজ করে বের হতেই দেখি ও একটি মেয়ের সাথে কথা বলছে, বুঝলাম মেয়েটা এই রুমেরই গেস্ট। আমার সন্দেহ হল। অনেক চাপাচাপির পর জানতে পারলাম বন্ধু আমার গত তিন দিন যাবত ধর্ষণের শিকার (সানন্দে)। অনেক হুমকি ধমকির পরেও আমি জীবন বাজি রেখে এই ব্রেকিং নিউজ গনমাধ্যম প্রচার করে দিয়েছিলাম।
আমরা ক্যাফেতে তিন জন কাজ করতাম। একজন স্কটিস যুবক 'ড্যাড়েন', আর একজন ব্রিটিস যুবতি 'মিসেল'। দুজনেই আমর থেকে ৫-৭ বছরের বড় ছিল। আমি ওদের হলিডে কাভার করতাম। আমার সাথে দুজনেরই খুব সখ্যতা ছিল।
হোটেলে ওভার টাইম আর ঘুমের সল্পতার কারণে আমি প্রায়ই ২/১ ঘন্টা দেরিতে আসতাম। ওরা আমাকে মেনে নিত, কিন্তু একে অপরকে ছাড় দিত না। ড্যাড়েন এর স্কটিস ইংলিস বুজতে আমর প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হত, কোন শব্দই ও পূরটা উচ্চারণ করত না। তাই মাঝে মাঝে ও রেগে গেলেও আমি কিছুই বুঝতাম না। কিন্তু মিসেল কখনই রাগ করেনি খুব ভালবাসত ছোট ভাইয়ের মত।
একটা ব্যাপার খুব চোখে পরছিল , এখানে মেয়েরা স্মার্ট এবং শিক্ষিত ছেলেরা বেশিরভাগই বকলম। কারণটা হয়ত ছেলে মেয়ের অনুপাত ১:২.৫ । ইন্টারনেট ব্যাবহার করতো মেয়েরা আর সাথে যদিও কোন ছেলে থাকত সে বসে গেম খেলত। ব্যাংক বা অফিস গুলোতেও ৯০ শতাংশ মেয়ে দেখা যায়
প্রচলিত ধারণা আনুযায়ী গ্রীক বা সাইপ্রাসের ছেলে গুল কিছুটা বোকা টাইপ। ওদের নিয়ে একটা মজার গল্প আছে।
গল্প এ রকম,-
" সৃষ্টি কর্তা একজন ছেলে তৈরী করলেন। ছেলেটি হটাৎ উঠে চলে যাচ্ছিল, সৃষ্টি কর্তা ডেকে বললেন যাচ্ছ কোথায় তুমি তোমার মাথায় এখনও ঘিলু দেয়া হয়নি। ছেলেটি পেছনে ফিরে বলে(এই পর্যন্ত ইংরেজিতে বলতে হবে বাকিটা গ্রীকে) 'এনিসি প্রবলেমা' (অর্থাৎ, 'কোন সমস্যা নেই')। (আবার ইংরেজিতে বলতে হবে)এবার প্রশ্ন ছেলেটা কোন দেশী? "
ওদেরকে খুব ক্ষ্যাপানো যেত গল্পটা বলে।
আলো ঝলমলে আকাশে আবার মেঘের ঘনঘটা দেখা দিল।
১১ মাস হয়েছে মাত্র চাকরি করছি। ই ইউ থেকে নির্দেশ এসেছে "Refujee" অথবা "political seltere " এ যারা আছে তারা কোন কাজ করতে পারবেনা। প্রতি মাসে ১২০ ডলার অনুদান পাবে। মানে এক কথায় আন্তর্জাতিক ভিক্ষা। হোটেলের ম্যানেজার বললেন, আমি জানিনা কাজটা তোমাদের কতটা দরকারি, এটা জানি হোটেল তোমাদের অনুপস্থিতি বহুদিন উপলব্ধি করবে।
আমি দুঃখিত........।
চলবে....।
জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা - সম্পূর্ণ (পর্ব- ১ থেকে পর্ব-৭)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।