ব্লগে ইদানিং নাস্তিকতা একটা ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। কারণটাও একদমই স্বস্তা দরের। কোন ব্লগার হয়তো মাসের পর মাস লিখে চলেছেন, কিন্তু কেউ তাকে চিনেও না জানেও না। ভাল উন্নতমানের লেখা লিখে চলেছেন একের পর এক, কিন্তু কেউ কোন মন্তব্য লিখেনা। তবে এই টপিকটি ব্যবহার করলেই সকল ব্লগার একদম হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
ব্যাস, মহুর্তের মধ্যেই সুপার হিট ব্লগার। এই ধরণের স্বস্তা মন-মানসিকতার ধারকগণই মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে এই কুপথটি বেছে নিয়ে থাকেন। এদের লেখার মান বিবেচনা করলেই খুব সহজে বুঝা যায় এদের জ্ঞানের দৌড়। দু’একটা তথাকথিত বই পড়ে আর দু’একজন ওস্তাদ নাস্তিকের সাথে উঠ্বস্ করে, দু’চারটি খড়া যুক্তি শিখে মহা পন্ডিত বনে যায়। এদের বয়কট করাটাই সকল বিশ্বাসী ব্লগারের অবশ্য কর্তব্য।
এইসব স্বস্তা দরের লেখায় কোন মন্তব্য লেখা, উলুবনে মুক্তা ছড়ানোর সামিল। আর যারা মন্তব্য লিখে তাদের দৌড় সম্পর্কেও আমি স্বন্ধিহান। আপনার যদি ভাল জ্ঞান থেকেই থাকে, তাহলে এদের লেখায় কোন মন্তব্য না লিখে, প্রতিউত্তর হিসাবে আপনি কেন একটি সুন্দর পোষ্ট লিখতে পারেননা? কেন শুধূ শুধু এদের লেখায় মন্তব্যের কলেবর বাড়িয়ে এদেরকে জনপ্রিয় করে তুলেন?
অনেক বুদ্ধিমান বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ে নাস্তিকতা বিষয়ে ছবক দেন, কিন্তু তিনি আবার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজও পড়েন। এটা আসলে অনেকটা দুই হাত ভরে ঘুষ খাওয়া, মাগীবাজি করা, আবার নামাজও পড়ার মতো আরকি। কেন জানি আমাদের সমাজে এই শ্রেণীর লোকই বেশি।
এটা আসলে ইন্টেলেক্চুয়াল ডিজঅনেস্টি।
নাস্তিকতা আসলে পুরুটাই ভুয়া একটি ফ্যাশন, এটা এখন প্রমাণিত সত্য। এটা সবাই বুঝে। কিন্তু যুক্তি-তর্ক দিয়ে তাদের মোকাবেলা করার মতো সাহস হয়ে উঠেনা অনেকেরই। ব্লগে নাস্তিকতা মতবাদের পক্ষে কেউ কোন কিছু লিখলে, সবাই রেগে গিয়ে খিস্তি-খেউর আউরাতে থাকে।
এতে নাস্তিকরা আরো মজা পেয়ে যায়। অনেকটা ঐ গল্পের মতো যে- এক দেহপসারিনী বুড়ি হয়ে গেলে সে আর কোন খদ্দের পায়না। ধীরে ধীরে তাকে আর কেউ বেশ্যা, খানকি এসব বলে গালিও দেয়না। এসব গালি না শুনলে তার আবার ঘুম আসতে চায়না। তো সে কি করল, প্রতি রাতে রাস্তায় পায়খানা করে রাখে আর সকাল বেলা রাস্তা দিয়ে কেউ যাওয়ার সময় পায়খানা দেখে ইচ্ছে মতো গালিগালাছ করে।
এতেই সে মহানন্দ পায়। তাই সে প্রদিদিনই এই কাজটিই করে চলে। তার ঘুমও ভাল হয়। তো ঐসব তথাকথিত নাস্তিকরা আসলে ঐ বুড়ি বেশ্যার মতো।
ঐসব তথাকথিত নাস্তিকদের প্রতি আমার প্রশ্নঃ আপনি কি চাকুরী করেন? বিসিএস বা এজাতীয় কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন? যদি করে থাকেন তাহলে, সেখানে আপনার ধর্র্মীয় পরিচয় কি মুসলীম লিখেছেন? হিন্দু লিখেছেন? নাকি নাস্তিক? চাকুরীর ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন।
যদি মুসলিম বা হিন্দু লিখে থাকেন, তাহলে বলতে হয়, আপনি আপনার নিজের সাথে এখনও প্রতারনা করে চলেছেন। আর যদি নাস্তিক লিখে থাকেন তাহলে তার প্রমাণ তুলে ধরবেন, আশা করি।
মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া এই ধরণের তথাকথিত নাস্তিকের সংখাই বাংলাদেশে বেশি লক্ষ্য করা যায়। সেই নাস্তিকের উদ্যেশ্যে বলি- একটা সময় আপনার মনের ভিতর অসংখ্য প্রশ্ন উঁকি ঝুঁকি মারতে থাকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা সম্পর্কে, যেগুলো আপনার কাছে নিতান্তই কুসংস্কার বলে মনে হতে থাকে। আপনি শত গবেষনা করেও তার সঠিক জবাব বের করতে পারেননি।
জবাব জানার জন্যে দৌড়ে গেছেন কোন কাঠমোল্লার কাছে। আমাতা আমতা করে তোতা পাখির মতো কিছু মূখস্ত বুলি আউরে দিল, কিন্তু আপনি তাতে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। কেউ আপনাকে সঠিক জবাব দিতে পারেনি। ধীরে ধীরে শুধু এর ক্ষতিকারক দিকগুলোই আপনার কাছে প্রকাশিত হতে থাকে। আর তাই আপনাকে ইসলাম বিদ্বেশী হয়ে উঠতে সহায়তা করে আপনার চিন্তা ধারা।
এটা যদি হয়ে থাকে তাহলে এতে আপনার জ্ঞানের দৈন্য দশাই প্রকাশিত হয়েছেমাত্র। কেমন করে? তার জবাব দিচ্ছি একটু পরে।
ব্লগের অনেক নাস্তিক দাবীদার, ডাঃ জাকির নায়েককে তার জ্ঞানের ভান্ডার দিয়ে একজন মূর্খ্য হিসাবে আখ্যায়িত করে ধরাসায়ী করে। এমনকি ব্যাঙ্গ করতেও ছাড়েনা। চরমভাবে লাঞ্ছিত করে।
কিছু বাহ্বাও কুড়ায়। কিছু চেলাও জুটে যায় বেশ। বেশ ভাল! আল্লাহ আপনাকে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন, আপনি তার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে জ্ঞানের অপব্যবহার করে চলেছেন। আপনার জ্ঞান আছে একথা ঠিক, কিন্তু জ্ঞানের গতিপথ উল্টোমূখী। সেটা কিরকম?
পেথিডিন চিকিৎসা জগতের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।
১৯৬০ সালে ডাঃ পল জনসেন প্রথম ইহা চিকিৎসা বিজ্ঞানে ব্যবহার করেন এবং তাই পেথিডিনের আবিষ্কারক হিসাবে ইতিহাসের পাতায় তার নামটি সোনালী হরফে লেখা হয়ে যায়। আপনার মতো আরেক মহাজ্ঞানী আরো একধাপ এগিয়ে আবিষ্কার করলেন পেথিডিনকে একটি নেশার উপকরণ হিসাবে। সেই মরণ নেশা আজ মানব জাতির জন্য অভিশাপ। দুই আবিষ্কারকই জ্ঞানী সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, কিন্তু একজন জ্ঞান প্রয়োগ করেছেন মানব কল্যাণে আরেক জন প্রয়োগ করেছেন মানব জাতি ধ্বংসের কাজে।
ঠিক তেমনি ডিনামাইট আবিষ্কারও ছিল আলফ্রেড নোবেলের একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।
মানব কল্যাণেই ডিনামাইটের আবিষ্কার। কিন্তু আপনার মতো আরেক মহাজ্ঞানী আবিষ্কার করলেন এটাকে কিভাবে বোমা হিসাবে ব্যবহার করে মানব জাতি তথা স্থাপনা ধ্বংসের মাধ্যমে যদ্ধ-বিগ্রহ সৃষ্টি করা যায়।
একজন ঘুষখোর সব সময় চিন্তা করে, গবেষনা করে, কিভাবে, কত সুক্ষ্মভাবে ঘুষ খেলে সে ধরা পড়বেনা। একজন চোর সব সময় চিন্তা করে, গবেষনা করে, কোন প্রক্রিয়ায়, কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চুরি করলে সে ধরা পড়বে না। আর একজন ভাল মানুষ সব সময় চিন্তা করে, গবেষনা ব্যস্ত থাকে কি করে মানব কল্যাণে ভূমিকা রাখা যায়।
একজন মুমিন সবসময় গবেষনা করে কিভাবে নিজে ও সকল মুসলমানগণ দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি লাভ করবে। আপনি কোন কল্যাণে গবেষনা করছেন মিঃ মুশফিক? কেন আপনার জ্ঞান গবেষনা দ্বারা রোজার উপকারী দিকগুলো বের না হয়ে ক্ষতিকারী দিকগুলো বের হল, এবার বুঝা গেল।
ডাঃ জাকির নায়েকের চেযে আপনি মহাজ্ঞানী সেটা আপনি প্রমাণ করেছেন। খুব ভাল কথা। আমিও মেনে নিচ্ছি আপনি মহা জ্ঞানী।
তাহলে আপনার কি উচিৎ ছিলনা, যেখানে জাকির নায়েক ঠেকে গেলেন, ব্যার্থ হলেন, সমাধান দিতে পারলেন না, সেই বাকী কাজটুকু এগিয়ে নেওয়ার গবেষনা কাঝে আপনার জ্ঞানকে ব্যবহার করা? তাহলেইতো আপনার জ্ঞানের মহিমাম্বিতা প্রকাশ পেত। কিন্তু আপনি তা না করে আপনার জ্ঞানকে সেই পেথিডিন বা ডিনামাইটের অপব্যবহারের মতো বিপরীতমূখী কাঝে ব্যবহার করলেন। এই একটি কারণেই আপনি আপনার মনে জেগে উঠা প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে পাননি। আপনার মতো মহাজ্ঞানী আর ঐ মহাজ্ঞানীর মধ্যে পার্থক্য কোথায়, যে মহাজ্ঞানী পেথিডিনকে নেশাকারক হিসাবে আবিষ্কার করেছে, যে মহাজ্ঞানী ডিনামাইটকে বোমা হিসাবে ব্যবহার করে কোটি কোটি মানুষের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে? পার্থক্য কোথায় আপনার মাঝে আর ঐ ঘুষখোর বা চোরের মাঝে?
ধর্ম মানব জাতির মধ্যে সামাজিক শৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, আর আপনি সেই সামাজিক শৃঙ্খলাকে ভাঙতে আপনার জ্ঞানকে ব্যবহার করছেন। জ্ঞানতো আপনার আছে, কিন্তু জ্ঞানটাকে আপনি কি কাজে লাগাচ্ছেন সেটা নিয়ে ভাবতেও জ্ঞানটাকে একটু কাজে লাগান।
প্রশ্ন থাকে, আপনার মৃত্যুর পর লাশ কোন ধর্ম মতে সৎকার করা হবে? হয়তো আপনি অতি সহজ একটি সমাধান দিয়ে দিবেন- লাশটি সৎকার করার কোন প্রয়োজন নাই। লাশটি মেডিক্যালে দান করে যাবেন, ভবিষ্যত শিক্ষার্থীদের জন্য। বাহ্ কি সুন্দর সমাধান। কিন্তু আপনি এই গ্যারান্টি কি করে দেন যে মৃত্যুর পর মেডিক্যালে আপনার লাশটি কোন কাজে আসবে? এমনও তো হতে পারে আপনার মতো জ্ঞানীদের আবিষ্কার কোন বোমা আপনার লাশটির এমন দশা করল যে, কয়েকটি পোড়া মাংসের টুকরা ছাড়া আর কোন কিছুই অবশিষ্ট নাই। তখন মেডিক্যাল ঐ কয়েকটি পোড়া মাংসের টুকরা কি কাজে লাগাবে? আবার এমনও তো হতে পারে মৃত্যু আপনাকে এমন এক জায়গায় টেনে নিয়ে গেল যে, আপনার লাশটি পড়ে থাকল কোন আগাড়ে-বাগাড়ে।
শিয়াল, কুকুর আর শকুন টেনে ছিঁছড়ে খাবে। কোন মেডিক্যালের এজেন্টের সাধ্যে কি কুলাবে আপনার লাশটির হদিস বের করতে? আরো কত কিছুইতো ঘটতে পারে। নাকি নিজের ভবিষ্যৎ নিজেই দেখতে শুরু করেছেন?
নাকি মরার পরও আরেক দফা যন্ত্রনার বিদগ্ধ কারণ হয়ে দাড়াবেন মানব জাতির এই বলে যে, মরার পর আমার লাশ সৎকার করার দরকার নাই। পাছায় বাঁশ ঢুকিয়ে তিন রাস্তার মোড়ে দাড় করিয়ে রাখবে।
মনে আছেতো আপনাদের ঐ তথা কথিত গুরু হুমায়ুন আজাদকে।
তিনি আজ কোথায়? আপনি কি জানেন তার লাশটি কিভাবে সৎকার করা হয়েছে?
ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাস। বিশ্বাসে কোন যুক্তি প্রমাণের প্রয়োজন পড়েনা। আর কিছু দুর্বল ঈমানদার যারা নাস্তিকের কিছু যুক্তি তর্কের টোপে পড়ে খেই হাড়িয়ে দ্বিধায় পড়ে যান, আসলেইতো কথায় যুক্তি আছে। অথবা অনেক বিশ্বাসীও যুক্তি তর্কের খাতিরে তামাশা করার জন্য নাস্তিকদের যুক্তিগুলোর পক্ষে লড়তে থাকে। ঐ উভয় শ্রেণী সবাই আসলে অবিশ্বাসীদের দলে।
তারা মুহম্মদ (সাঃ) এর সুন্নত থেকে বহু দুরে। তথাপি কোরআন একটি প্রমাণিত সত্য। যে বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে নাস্তিকতার সৃষ্টি সেই বিজ্ঞান কি প্রমানিত সত্য? কিন্তু বিশ্বের সকল বিজ্ঞানীগণ এই কোরআনের তথ্য নিয়েই আবিষ্কারের নেশায় মেতে উঠেন। কোরআনের বিভিন্ন তথ্য সব মিলিয়ে প্রায় ৮০% তথ্য এযাবৎ সত্য প্রমাণ করেছে বিজ্ঞানীগণ। কিন্তু ১% ও মিথ্যা প্রমাণ করতে পারেনি।
তার মানে হচ্ছে বাকি ২০% ও সত্য।
আর হ্যা! আরেকটি কথা, আপনি নাস্তিক। আপনি যেহেতু আল্লাহ (যিনি আপনার কাছে অলীক), রাসুলুল্লাহ সাঃ (যিনি ইতিহাসে বাস্তব) কোনটাতেই আপনি বিশ্বাস করেননা, সেহেতু আপনার বাবাকে পরের বার বাবা ডাকার আগে ডিএনএ টেষ্ট করে নিতে ভুলে যাবেন না যেন। কেন খামোখা শুধু শুধু আপনার মায়ের কথার উপর আন্দাজে বিশ্বাস করে কোন এক পুরুষকে বাবা বলে ডাকতে যাবেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।