নিউক্লিয়ার সন্ত্রাস মুক্ত বিশ্ব চাই
আগের দুই পর্বে সত্যানুসন্ধিৎসু এবং বিপ্লবী নাস্তিকদের সম্পর্কে বলেছি যাদের মনোভাব সমর্থন যোগ্য। আজকে আলোচনা করব আর এক ধরনের নাস্তিকদের নিয়ে যারা ঠিক জেনে বুঝে নাস্তিক হয় নি বরং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভ্রান্ত হয়ে নিজেদের নাস্তিক বলে পরিচয় দেয় মাত্র।
ধর্মের বিশেষত ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার অভাবের কারনে কিছু লোক নাস্তিক হয়। যেসব পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে ধর্মীয় আচার-আচরন ইবাদত বন্দেগী থেকে দুরে থাকে, তাদের মধ্যে ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে এক ধরনের শুন্যতা তৈরী হয়। সেই স্থান দখল করে নাস্তিকতা।
তারা এমনিতেই ধর্মীয় বিশ্বাসগুলি সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা পয়নি - কখনও সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনাও করেনি-এই অবস্থায় যদি তাদেরকে প্রশ্ন করা হয় আল্লাহ আছে কি নেই - তখন তারা আছে বলার চেয়ে নেই বলাকেই নিরাপদ মনে করে। কারণ আছে বল্লেই আবার প্রমান চাওয়া হতে পারে। তাছাড়া আল্লাহকে মানলে তার আদেশ নিষেধ মানার বিষয়টি সামনে চলে আসে। যে জীবনে নামাজ-রোজা করেনি, দোয়া কালাম কিছুই জানে না তার পক্ষে শুধুমাত্র আল্লাহ আছে বলতে গিয়ে নতুনকরে সবকিছু শুরু করার ঝুকি নেয়া আসলেই কস্টকর। তারচেয়ে নাই বলেদেয়াই সহজ।
এর সাথে আছে নাস্তিক বন্ধু-বান্ধবদের প্রভাব। বন্ধুদের আড্ডায় বা ব্লগে বা নাস্তিক সাহিত্যে উত্থাপিত প্রশ্নের উত্তর খুজে না পেয়ে অনেকে নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দেয়া শুরু করে।
মানুষ মাত্রই ব্যাতিক্রম পছন্দ করে। নাস্তিক পরিচয় সমাজের সাধারনের চেয়ে ব্যাতিক্রমি - একটু আধুনিকতার ছোয়া আছে - নিজেকে বেশ জ্ঞানী জ্ঞানী মনে হয় - এসব বিবেচনায় যারা নিজেদের নাস্তিক বলে প্রচার করেন তাদেরকেই আমি বিভ্রান্ত নাস্তিক বলি। এদর সাথে জন্মগত বা নামে মুসলমানদের তেমন কোন তফাৎ নেই।
এরা হচ্ছে শ্রতের শ্যাওলা। নাস্তিকতার দিকে শ্রত বেশী পেলেই নাস্তিক আবার কোন ভাল মুরোব্বির সংস্পর্শে আসলে দেখা যাবে এরদের অনেকেই পট্টি কাধে ৪০ দিনের চিল্লায় বেড়িয়ে যাবে।
আজ থেকে ৭-৮ বছর আগে কলকাতা থেকে প্রকাশিত নাস্তিকতার উপর একটি বই পড়েছিলাম। সেই বই এর ভুমিকায় নাস্তিকতা সম্পর্কে সগর্বে ঘোষনা করা হয়েছে - আস্তিক-নাস্তিক বিতর্কের অবসান হয়েছে এবং আস্তিকরা চুড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছে। সুতরাং আস্তিকতার কোন ভিত্তিনেই - নাস্তিকতাই একমাত্র সত্য(হুবহু মনে নেই-তবে কথাটা এরকমই ছিল)।
সেই বইএর নাম বা লেখকের নাম মনেনেই(কেউ জানালে কৃতজ্ঞ হব)-তবে সেখানে নাস্তিকতার ব্যাপারে যেসব যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছিল তা বেশ মনে আছে। এই ব্লগে নাস্তিকদের লেখাগুলো পড়তে গিয়ে আবিষ্কার করলাম যে সেই বইএর কথাগুলোই বিভিন্ন ভাবে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলা হয়েছে। যেমন নাস্তিকের ধর্মকথা ব্লগারের "বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহু দুর" পোস্টের শুরুতে যে গল্পটি দেয়া হয়েছে - আমার স্পস্ট মনে আছে সেই একই ধরনের গল্প ঐ বইএও ছিল। এ'ছাড়া অন্য যেসব কথা তারা বলে তার প্রায় সবগুলোই আমার কাছে পরিচিত মনে হয় - হয়ত নাস্তিক বন্ধুদের সাথে তর্ক করতেগিয়ে শুনেছি অথবা নাস্তিকদের কোন বইয়ে পড়েছি। এই পর্যবেক্ষন থেকে আমার ধারনা এই ব্লগের নাস্তিকদের অনেকেই এই বিভ্রান্ত শ্রেনীর নাস্তিক (নাস্তিক জনগোস্ঠির মধ্যেও সম্ভবত এরাই সংখ্যাগুরু)- এরা নিজেদের পড়াশুনার ভিত্তিতে সত্যানুসন্ধিৎসু বা মানবকল্যানের নিমিত্তে বিপ্লবী নাস্তিক নয়, বরং নাস্তিকদের উত্থাপিত প্রশ্নের জাবাব দিতে না পেরে বা নাস্তিক বন্ধু/সাহিত্যের প্রভাবে নাস্তিক।
এদের ব্যাপারে আমার কথা একটাই - নিজে জানার-বোঝার চেস্টা করুন আপনি কেন নাস্তিক, কেন আল্লাহকে বিশ্বাস করেন না-যে আল্লাহকে অস্বীকার করছেন তার পরিচয় কি-তাঁকে মানলে কি ক্ষতি, না মানলে কি উপকার। শ্রোতে গা-ভাসিয়ে দেয়া কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
আজকে এখানেই শেষ করছি - পরের পর্ব : ভোগবাদী নাস্তিক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।