নিউক্লিয়ার সন্ত্রাস মুক্ত বিশ্ব চাই
গত পোস্টে সত্যানুসন্ধিৎসু নাস্তিকদের সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। আজকের বিষয় আর একধরনের নাস্তিকতা - বিপ্লবী বা বিদ্রোহী নাস্তিক। এই ধরনের নাস্তিকদের মুল চেনতা মানব কল্যান। তারা শ্রমজীবি-কৃষিজীবি স্বাধারণ মানুষকে শোষন নির্যাতন থেকে রক্ষা করতে চায়। সমাজকে শোষনমুক্ত করাই তাদের বিপ্লব বা বিদ্রোহের মুল লক্ষ্য।
এ'দের এই বিপ্লবী বা বিদ্রোহী চেতনাকে আমি এবং আমরা মতে ইসলামও সমর্থন করে। কারণ ইসলামের আবির্ভাবই হয়েছে মানবতার মুক্তির জন্য। বিপ্লবী নাস্তিকদের সাথে আমার মতপার্থক্য হচ্ছে কর্মপদ্ধতিতে। তারা যে ভাবে সমাজকে শোষনমুক্ত করতে চায় তা কিছুতেই গ্রহনযোগ্য নয় এবং তাদের সেই কাজের ফলে সমাজ ষোশনমুক্ত তো হয়ই না বরং আরো হাজারটা নতুন সমস্যা তৈরী হয়।
এরা বিপ্লবী উদ্দীপনায় সমাজের প্রতিস্ঠিত সব নিয়মকানুন, সব সামাজিক ইনিস্টিটিউশন ভেঙ্গেচুরে একাকার করে দিয়ে নতুন ভাবে সমাজকে সাজাতে চায়।
যার মধ্যে সমাজের জন্য, স্বাধারণ মানুষের জন্য সামান্য অকল্যান তাদের চোখে ধরা পরে - তারা সেটাকে সম্পুর্ন বাতিল করে দেয় - অনেকটা মথা ব্যাথার জন্য মাথা কেটে ফেলার মত। কিন্তু তারা বুঝতে চায় না যে ভাঙ্গার চেয়ে গড়া অনেক কঠিন। ফলে তারা সমাজকে, সামাজিক ইনিস্টিটিউশনকে যত সহজে ভেঙ্গেফেলতে পারে - গড়ার ক্ষেত্রে এসে ততটাই ব্যার্থ হয়।
উদাহরন হিসেবে ধরুন সম্পদের ব্যাক্তি মালিকানা। রুশ বিপ্লবের শুরুর দিকে বলশেভিক আন্দোলনের সময় তারা তাদের পর্যবেক্ষনে দেখতে পায় জমিদাররা জমির মালিকানার জোরে কৃষকদের উপর শোষন-নির্যাতন চালাচ্ছে, মিল-রাখানার মালিকরা অত্যাচারে জর্জরিত করছে কারখানা শ্রমিকদের।
সুতরাং তারা সম্পদের ব্যাক্তি মালিকানাকেই সমাজের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এরও যে কিছু ভাল দিক আছে তার দিকে না তাকিয়ে, সম্পদের উপর ব্যাক্তি মালিকানা সম্পুর্ন বাতিল করার পক্ষে অবস্থান নেয়। রুশ বিপ্লবের পর তারা সকল সম্পদ রাস্ট্রীয় মালিকানায় স্থানান্তিরত করে এক নতুন ধরনের অর্থনীতি চালু করে। এর ফলাফলের জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হয় মোটামুটি ৭০ বছর। লক্ষ-লক্ষ মানুষের জীবনের বিনিময়ে - আরো শত কোটি মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে অবশেষে প্রমানিত হল যে শুধুমাত্র রাস্ট্রীয় মালিকায় কোন দেশের অর্থনীতি চলতে পারে না। এখন রাশিয়া চীনসহ প্রায় সব কমিউনিস্ট রাস্ট্র পুনরায় সম্পদের ব্যাক্তি মালিকানার পক্ষে অবস্থান নিয়ে এই সত্যতাই প্রমান করছে।
এই ঘটনা থেকে দুটি শিক্ষা আমরা পেতে পারি-
১. নাস্তিকরা মুখে যতই বলুক- প্রমান ছাড়া কিছু বিশ্বাস করি না - বাস্তবে তারা খাটি মুসলমানের চেয়েও প্রবল ভাবে তাদের নেতাদের কথা কোন প্রমান ছাড়াই বিশ্বাস করে। কার্ল মার্ক্স বা লেনিন যখন বলেছিলেন সম্পদের রাস্ট্রীয় মালিকানার মাধ্যমেই শোষনমুক্ত সমাজ গঠন করা সম্ভব তখন তারা কোন বৈজ্ঞানিক প্রমান হাজির করেন নি - আর যদি এটা বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমানিতই হত তাহলে মাত্র ৭০ বছরের ব্যাবধানে বাতিল হয়ে যেত না। তারা শুধুমাত্র একটা তত্ত্ব দিয়েছিলেন আর নাস্তিকরা সেটাকেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করেছে-সেটাকে বাস্তবায়নের জন্য জীবন কোরবান করে দিয়েছে।
২. যেকোন সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যাবস্থার ভাল খারাপ দুটি দিক থাকে। সম্পদের ব্যাক্তি মালিকানা মেহনতী মানুষের শোষনের জন্য যেমন দায়ী তেমনি এই ব্যাবস্থার কিছু সুফলও আছে।
একই ভাবে সম্পদের রাস্ট্রীয় মালিকানা মেহনতি মানুষের জন্য কিছুটা উপকারী হলেও এর কুফল একেবারে কম নয়। তাই কোন কিছুকে তার কুফলের দিকে তাকিয়ে একেবারে বাতিল করে দেয়া উচিৎ নয়। বরং প্রত্যেকটা বিষয়ের খারাপ দিকগুলো বাতিল করে ভাল দিক গুলো গ্রহন করার চেস্টা করাই বুদ্ধিমানের কাজ। মাথা ব্যাধার জন্য মাথা কেটে ফেলা একটা সমাধান বটে কিন্তু কোন জীবিত মানুষের কাছেই তা গ্রহন যোগ্য সমাধান নয়।
একই ভাবে এই ধরনের বিপ্লবী নাস্তিকরা ধর্মকেও সমুলে উচ্ছেদ করতে চায় শুধুমাত্র এ'জন্য যে ধর্মকে মানুষের শোষনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যাবহার করা হয়।
কিন্তু তারা বুঝতে চায় না যে মানুষ শুধুমাত্র একটি জৈবিক প্রানী মাত্র নয়-মানুষের একটি আধ্যাত্মিক দিকও আছে। ধর্মের খারাপ দিক যেমন আছে-ধর্ম মানুষকে শোষনের কাজে যেমন ব্যাবহ্রিত হয় তেমনি ধর্মের অনের ভাল দিকও আছে। শুধুমাত্র খারাপ দিকে তাকিয়ে ধর্মকে পুরোপুরি বাতিল করে দেয়া কোন ভাবেই সমাজের জন্য কল্যানকর হবে না। আজকের আলোচনা যেহেতু বিপ্লবী নাস্তিকদের নিয়ে তাই ধর্মের ভাল দিকের কথা আরেক দিনের জন্য রেখে চলুন দেখি তাদেরমত করে চিন্তা করা যায় কি না।
ধর্ম কেন বাতিল করতে হবে - কারন ধর্মকে মানুষ হত্যার জন্য ব্যাবহার করা হয় বা ধর্ম মানুষ হত্যা সমর্থন করে এবং ধর্ম মানুষের মাঝে বিভক্তি এবং সংঘাত ছড়িয়ে দেয়।
এই বক্তব্য প্রতিস্ঠিত করার জন্য তারা ইসলামের প্রাথমিক যুগের বিভিন্ন যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করে, ক্রুসেডসহ সবধরনের ধর্মভিত্তিক যুদ্ধকে সামনে নিয়ে আসে। তারা সবসময় একটা কথা বলে - ধর্মের কারণে যত মানুষ নিহত হয়েছে অন্য কোন কারনে তা হয়নি- যদিও স্ট্যাটিস্টিক্যালি বিষয়টা প্রমান করা কঠিন।
এবার আসুন আমরা নাস্তিকদের ইশ্বর বিজ্ঞানের দিকে তাকাই। উল্লেখিত সবগুলো অভিযোগ আরো বড় আকারে বিজ্ঞানের ব্যাপারে উত্থাপন করা যবে। পারমানবিক বোমা, নাপাম বোমা, ক্লাস্টার বোমা, রকেট, মিসাইল, ট্যাঙ্ক, কামানসহ কত অযস্ত্র যুদ্ধাস্ত্র বিজ্ঞান আমাদের উপহার দিয়েছে আর তাতে কত মানুষ নিহত-আহত হয়েছে তার হিসেব কি আপনাদের কাছে আছে? এতো গেল যুদ্ধাস্ত্রের কথা-বিজ্ঞান যা শুধুমাত্র মানুষ হত্যার জন্যই তৈরী করেছে - বিজ্ঞান মানব কল্যানে যা করেছে তাও কি ক্ষেত্রবিষেশে মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী হয় না? যেমন ধরুন প্রতি বছর সড়ক-নৌ-রেল-আকাশ পথের দুর্ঘটনায় বিশ্বব্যাপি যত লোক আহত-নিহত হয় তার জন্য কি বিজ্ঞানের ইঞ্জিন আবিষ্কারকে দায়ী করা যায় না? বিজ্ঞান যদি বিল্ডিং টেকনোলজি উদ্ভাবন না করত - মানুষ যদি সব কাঠের বা ছনের ঘরে থাকত তাহলে ভুমিকম্পে নিহতের সংখ্যা অনেক কম হত।
বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত কল-কারখানা ব্যাপকহারে কার্বন-ডাই-অক্সাইডসহ বিভিন্ন খতিকর গ্যাস নি:সরনের মাধ্যমে পরিবেশের সর্বনাশ করছে-পৃথিবীকে মনুষ্য বাসের অনুপযোগী করে তুলছে। বিজ্ঞানের অবদান শিল্পবিপ্লব ধনী এবং দরিদ্র দেশের মধ্যকার ব্যাবধান বাড়িয়ে দিয়েছে হাজার গুন,বিজ্ঞানের সর্বশেষ অবদান ইনফরমেশন টেকনোলজী তৈরী করেছে ডিজিটাল ডিভাইড। বিজ্ঞানের অবদান আল্ট্রসনগ্রাম ভারত, চীনসহ অনেক দেশের লক্ষলক্ষ মেয়ে শিশুর জীবন কেড়ে নিচ্ছে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই। এ'ভাবে যদি শুধুমাত্র খারাপ দিক নিয়ে চিন্তা করা হয় তাহলে দেখা যাবে বিজ্ঞান মানব সমাজের জন্য শুধুমাত্র ক্ষতিকরই নয় বরং মানব প্রজাতিকে রিতিমত অস্তিত্বের সংকটে ফেলেদেয়ার জন্যও বিজ্ঞানকেই দায়ী মনে হবে। এখন কি আপনারা বলবেন যে বিজ্ঞান চর্চা সম্পুর্ন বন্ধ করে দেয়া উচিৎ? যদি না বলেন তাহলে ধর্ম বিশেষ করে ইসলামকে(যেহেতু মুসলমান হিসেবে শুধুমাত্র এই ধর্মের ব্যাপারেই আমার যৎসামান্য কিছু জ্ঞান আছে তাই এর পক্ষে কথা বলাই নিরাপদ মনে করি।
)সমাজ থেকে সমুলে উচ্ছেদ করার দাবি কিছুতেই গ্রহনযোগ্য নয়। হ্যা ইসলামের অপব্যাবহার যা আছে তা বন্ধ করতে হবে - কিন্তু একই সাথে ইসলামের ভালদিক যা আছে তার চর্চাও অব্যাহত রাখতে হবে। আপনাদের মুল লক্ষ্য যদি হয় মানব কল্যান তাহলে তা কিসের ভিত্তিতে হল তা নিয়ে খুববেশি চিন্তিত না হওয়াই ভাল। একজন মানুষ যদি আল্লাহর ভয়ে চুরি-ডাকাতি-দুর্নিতি-অধিনস্তদের উপর শোষন নির্যাতন থেকে বিরত থাকে, গরীব দু:খিদের যাকাত - সদকা হিসেবে সাহায্য সহযোগিতা করে - তাতে তো কোন ক্ষতি নেই- বরং তা নি:সন্দেহে সমাজের জন্য উপকারী। সুতরাং ঢালাও ভাবে কোন সামাজিক প্রতিস্ঠানকে বাতিল করে দিয়ে নয় বরং প্রতিটি সামাজিক উপাদান থেকে খারাপদিক বাদ দিয়ে ভাল বিষয় আহরনের চেস্টাই পারে শোষন-নির্যাতনমুক্ত সুন্দর সমাজ গড়েতুলতে।
এই সত্য যেদিন তারা উপলব্ধি করতে পারবে আমার ধারনা সেই দিন ইসলামের সাথে তাদের সকল সংঘাতের অবসান হবে।
প্রত্যেক পোস্টের আগে চিন্তা করি যথাসম্ভব কম কথায় শেষ করার জন্য - কিন্তু কিছুতেই পারছি না-কারণ অসম্পুর্ন আলোচনা অনেকসময় বিভ্রান্তির জন্মদেয়- এজন্য পাঠকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা এবং আজকের আলোচনার উপর সুচিন্তিত মতামত কামনা করে শেষ করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।