"মানবিক আর যৌক্তিক" চাকুরী জীবন শুরু করার আগে ফি বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে, ফি বছরই আমাদের ব্যাচের ছেলে-মেয়েরা তীব্র উৎকণ্ঠায় ভুগতাম। এবার কত এ+ পেলো? কি হবে সামনে?
২০০১ সালে প্রথম জিপিএ পদ্ধতি চালু হয়। আমরা সে বছর পরীক্ষা দেই। স্মৃতি ধোঁকা না দিলে যতটুকু মনে পড়ে পরীক্ষার সপ্তাহখানেক আগে আমরা জিপিএ ব্যাপারটা জানতে পারি। জানাই সার, বোঝার পর্যায়ে যেতে পারিনি কেউ।
আমাদের স্কুলের এক শিক্ষক বেশ ভালো বুঝতেন সব, তার কাছে গিয়ে সবিশেষ বুঝতে চাইলাম। তিনি অনেক বললেন, আমরা অনেক শুনলাম, যা বুঝলাম তা হল- আমাদের পরীক্ষার ফল এবার জিপিএ- তেই দেয়া হবে!!!!! বুঝতে আসছিলাম জিপিএ কি। বুঝলাম জিপিএ=জিপিএ।
পরীক্ষা দিলাম, পেলাম ফল। এ গ্রেড।
পুরো দেশে ৭৬ এ+। আমি পাশেই খুশী। বাসায় নাচতে নাচতে আসলাম। ঐচ্ছিক বিষয়ের নম্বর যোগ হত না সে সময়। অনেকে তাই ওই পরীক্ষার সময় হলে এসে আড্ডা দেবার ঘটনাও ঘটেছে!!! এক বন্ধু ৩.৬৩ পেয়েছিল মনে পড়ে, ওরে এক বড় ভাই বললো - পড়ার টেবিলত বইয়েনে বইয়েনে গাঞ্জা খাইয়স দেনা ওডা, আই তো চাইরশ ফার কইজ্জিলাম।
তুইত ইবাও ন পারিলি!!!!
বোঝেন অবস্থা।
এইচ এস সি ও গেল। ভার্সিটি ও গেল। চাকুরীর পরীক্ষা দিব। দেখি সেই ৯-১০ বছর আগের জিপিএ ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু করলো।
সরকার এক রকমের কথা বলে, চাকুরিদাতা প্রতিষ্ঠান বলে অন্যরকম। অনেক বন্ধুই অনেক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারলোনা। তাদের হয়তো মাধ্যমিক অথবা উচ্চ মাধ্যমিকের যে কোন একটিতে সামান্য পা পিছলানো ফলাফল।
এখন ক্যান এই আকাশচুম্বী এ+ জাগরন। শুধু ৭৬ কিভাবে ৯১ হাজার হয়?! মেধার কি এটমিক এক্সপ্লোশন হয়েছে? নাকি আমরা ২০০১ থেকে ২০০৩ এই জাতির গর্দভ সন্তান??? এক যুগ আগে ৯১ হাজার পাশ করাটাও তো একটা ব্যাপার ছিল।
ছোট ভাই আর বোনেরা, আমি তোমাদের ছোট করছিনা, তোমরা অতি অবশ্যই মেধাবী, তোমরা এখনকার জিপিএ পাঁচের যোগ্য বলেই পেয়েছ, অবশ্যই সাধুবাদ।
আমি বলছি সরকারের শিক্ষানীতি প্রনয়নকারী গাধা মগজধারী ঘোড়ার দলটাকে। যারা গত সাত- আট বছর ধরে দেশে মেধা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চলেছেন।
মাইলস্টোন একটা বড় জিনিষ। সেটার মর্যাদা বুঝতে হবে।
আলেকজান্ডার কেও থামতে হয়, মাইকেল সুমাখারকেও, সচিন, মুরালি, পেলে কিম্বা উসাইন বোল্ট। যে কোন ক্ষেত্রে যার যার মাইলস্টোনে এসে সে থামে। তৃপ্তির নিশ্বাস ফেলে একবার হলেও।
আপনি তৃপ্ত, সহজ ভাষায় আপনার তৃষ্ণা আপাতত শেষ। আপনার মাইলফলক পাঁচ ছোঁয়া।
আপনি ছুঁয়েছেন। এবার কি?? ঠিকাছে, সবাই তৃপ্ত হয় না, কিন্তু অনেকেই হবে। পাঁচে এসে ভাববে আমি কি হনুরে?? আর অনেকে ভাববে, এত সহজেই ছুলাম, বাহ এভাবেই চলুক। আর অনেকে ভাববে, কি হল, ভাবতে ভাবতে আরেক টি সোপান চলে আসবে। এবং, পা পিছলানোর সম্ভাবনা প্রচুর।
এতোটা সস্তা করে ফেলা অর্জন, এ ঐ মেধাবী মুখেদের চেয়ে অনেক বেশী রাজনৈতিক অর্জন। গত সরকার করেছে পঞ্চাশ, আমি লক্ষ ছোব। ছুতেই হবে।
হাজার হাজার থেকে লক্ষ ছুতে যাওয়া উল্লসিত 'V'- চিহ্ন নিয়ে যখন কচিকাঁচা মুখ গুলোর উল্লাস দেখি, খুবই ভালো লাগে। কিন্তু, চিন্তা করি জীবনযুদ্ধে এত এত V দেখবো কি আমরা? আজ এরা উল্লসিত, পাঁচের শক্তি এদের নিজেদের মধ্যে অদ্ভুত এক অহমের জন্ম দেবে, কিছু তার যোগ্য, কিন্তু অনেকেই নয়।
যারা নয়, তারা নিজেদের ভুল জানছে, নিজেদের ভুল বুঝে এগুচ্ছে। সাতার না জেনেই লাফ দিচ্ছে অথৈ সমুদ্রে, ডুবে যাওয়ার সময় বুঝছে- আমি তো সাতার শিখিনি।
পরিনাম, নিশ্চিত সলিল সমাধি।
এদের বাঁচান। যারা বুঝেন, জানেন, বাঁচান আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কে।
পড়ালেখায় সর্বোচ্চ শৃঙ্গে ওঠাই সব নয়। যেখানে কষ্ট করে ওঠার কথা, আমরা ওদের সেখানটায় উঠিয়ে দিচ্ছি হেলিকপ্টারে করে।
"এভারেস্টে বিমানে চড়ে নেমে গেলে সেটা কি এভারেস্ট জয় করা হবে??"
তোমার সুপ্ত মেধা রয়েছে হয়তো অন্য কোথাও। সেটা আবিষ্কারের দায়িত্ব তোমার। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাই সব নয়।
সেটা কারো কারো জন্যে সব, সবার জন্যে সব নয়। যাদের জন্যে সব নয়, তাদের জন্যেও পৃথিবীর অন্য কোথাও, অন্য সব অপেক্ষা করছে।
প্রিয় শিক্ষামন্ত্রী, বাঁচান, নিজের গদি না বাঁচিয়ে এই কোমলমতি-দের বাঁচান। ওদের সামনে বিশাল জীবন। আপনার অধিকার নেই, ওদের লোভের মিষ্টি খাইয়ে, পুরো জীবন আপনার বা আপনাদের করে নেবার।
জানি, এ বড় তেঁতো কথা বললাম।
কিন্তু, আমি শক্ত পায়ে দাঁড়ালাম আমার আশেপাশের এই কচি প্রাণগুলোকে বাঁচাবার জন্যে, ওদের বাস্তব দেখাবার জন্যে। আপনি বা আপনারা আছেন কি? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।