আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আড়াই বছরেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত-বিএনপির দুর্গে ছেদ পড়েনি। আওয়ামী লীগের ঘাড়ে জামায়াত-বিএনপির ভূত চড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপাচার্য প্রফেসর ড. শহীদুল্লাহকে আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে ভেতরে সেই জামায়াত-বিএনপিই কলকাঠি নাড়ছে। দিন দিন তারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন কলেজগুলোয় বাস্তবায়ন হয়নি সরকারের কোনো এজেন্ডা।
আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শহীদুল্লাহ এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। এ কারণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের কোনো কিছু বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও অঙ্গীভূত এক হাজার ৭৭৮টি কলেজে ১১ লাখ ১৯ হাজার ২৭৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন। কলেজগুলোর শিক্ষক নিয়োগ, গভর্নিং বডিসহ যাবতীয় কাজ পরিচালনা করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশ শিক্ষকই সরাসরি জামায়াত ও বিএনপির নেতা-কর্মী।
তারা শিক্ষকের চেয়ারে বসে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে কলেজ ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ এবং বিএনপি ও জামায়াতের আদর্শ প্রতিষ্ঠিত করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সিন্ডিকেট সুকৌশলে এ কাজ পরিচালনা করছে। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ সরকারের ভাবমূর্তি এবং এজেন্ডা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এই সিন্ডিকেট। কয়েকজন প্রভাষক জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাসে যথেষ্ট শিক্ষক থাকলেও তাদের কোনো কাজে না লাগিয়ে মফস্বলের চিহ্নিত শিবির নয় তো ছাত্রদল করা শিক্ষকদের দিয়ে প্রশ্ন তৈরি, খাতা দেখাসহ যাবতীয় কাজ করানো হচ্ছে। পক্ষান্তরে আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পার করলেও এখনো সমাবর্তন করতে পারেনি।
এ জন্য ডিগ্রিপ্রাপ্ত ২৫ লাখ শিক্ষার্থী সমাবর্তনের আনন্দ থেকে বঞ্চিত। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় নিয়মিত সমাবর্তন হলেও এখানে না হওয়ার ব্যাপারে কোনো সঠিক জবাব নেই প্রশাসনের কাছেও। শিক্ষার্থীরা বলছেন, দেশের শিক্ষার্থীদের সম্মিলনের মাধ্যমে সমাবর্তন হলে আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি বাড়বে। এ জন্য প্রশাসনের মূল অংশ এটি কখনো চায় না।
উপাচার্য ড. শহীদুল্লাহর মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করলেও তিনি ধরেননি।
প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী বলেন, তারা সমাবর্তনের ওপর নয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষার বিষয়ে জোর দিয়েছেন।
জানা যায়, গাজীপুরের বোর্ডবাজারে ১৯৯২ সালের ২১ অক্টোবর দেশের বিদ্যমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর) উচ্চশিক্ষা অভিলাষী শিক্ষার্থীদের চাপ লাঘব এবং অধিভুক্ত কলেজগুলোর গুণগতমানে পরিবর্তন আনতে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়।
একটি সূত্র জানায়, ২০০৪ সালে মতিউর রহমান নিজামীর পরামর্শে খালেদা জিয়া ড. আফতাব আহমাদকে উপাচার্য নিয়োগ দেন। সে সময় এক হাজার ২২২ জনের মধ্যে ৪৫০ জন শিবির কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কিছু ছাত্রদল কর্মীও নিয়োগ পান।
সূত্রমতে, অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামুল করিমের মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম জামায়াতিকরণ শুরু হয়। এর পর শিবিরের সাবেক সভাপতি আবু মোহাম্মদ ইউসুফকে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সাবেক প্রক্টর মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, সহকারী রেজিস্ট্রার আবদুল করিম, লাইব্রেরিয়ান হারুন অর রশিদ, অর্থ ও হিসাব উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজ, সহকারী চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. মো. নুরুল আলম এবং সেকশন অফিসার আবু হানিফ ছাত্রজীবনে ছাত্রদল ও শিবির ক্যাডার ছিলেন। এ ছাড়া ড. মনজুর মাহমুদ বর্তমানে মর্ডারেশন উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপি আমলে তিনি উপ-রেজিস্ট্রার প্রশাসনের দায়িত্বে ছিলেন।
তাকে এখনো জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন সভা-সেমিনারে দেখা যায় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াত ও বিএনপির এত বেশি সমর্থক থাকায় সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা কঠিন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে হয়তো ভাবছে।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।