স্বপ্ন ছুঁয়ে এর আগে আমি এই শিরোনামে একটা লেখা লিখেছিলাম। কিছু কমেন্ট, কিছু আগ্রহ তখন দেখেছিলাম লেখাটায়। ভাবি নি এই লেখার আরেকটা সিক্যুয়াল আমাকে লিখতে হবে। কিন্তু বাধ্য হচ্ছি লিখতে। এখন দেশের যে অবস্থা কিছু বলতে, লিখতে ভয় করে।
কারন নিতান্ত নিরীহ ফেসবুকের স্ট্যাটাস এর কারনেও মানুষের নামে রুল জারি হয়ে যায়, প্রশাসনিক নিপীড়ন শুরু হয়ে যায়। কিন্তু কতক্ষন চুপ করে থাকা যায়? কত অন্যায় সহ্য করা যায়?
আগেরবার লেখাটার ফোকাস ছিল ভিকারুন্নিসায় ছাত্রী নির্যাতন নিয়ে। এবারো তাই নিয়েই লিখতে হচ্ছে। কারনটা হচ্ছে সাম্প্রতিকতম একট খবর। ভিকারুন্নিসার ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় যে মামলা হয়েছিল তাতে নাকি পুলিশ একমাত্র আসামি করেছে পরিমল কে! বাদ দেয়া হয়েছে হোসনে আরা এবং লুতফর রহমানের নাম! খবরটা পড়ে প্রথমে নিজেকে জিজ্ঞাসা করলাম এটা কি সত্যি দেখছি? হ্যাঁ, সত্যি দেখছি।
এর আগে ব্লগে আমি অনেককেই বিশেষত আওয়ামীপন্থীদের বলতে শুনেছি এই ঘটনার নাকি বিচার হবেই, দোষীরা শাস্তি পাবে! কিন্তু বিচারের কি নমুনা তা তো দেখতেই পাচ্ছি! একজন স্বেচ্ছায় পতিতা (ক্ষম করবেন আমাকে, এই মহিলাকে আমি এর চেয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারি না) যে কিনা স্বীকৃত ধর্ষককে বাঁচানোর জন্য তার ক্ষমতার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছে,চেষ্টা করেছে আমার নির্যাতিত বোনটিকে দোষী বানানোর জন্য , ধর্ষককে নিজের আঁচলের তলে ছায়া দেয়ার জন্য "মিউচুয়াল সেক্স" তত্ত্বের আমদানি করেছে , নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী পরিচয় দিয়ে পরিমলের মত জানোয়ারকে নিজের বাসায় রেখে রক্ষার চেষ্টা চালিয়েছে , আর শেষ পর্যন্ত বাচ্চা মেয়েদের জুতার বাড়ি খেয়ে পালিয়েছে স্কুল থেকে, তাকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হল!তাহলে কি বেশ্যা হোসনে আরা প্রধানমন্ত্রীর বান্ধবী সত্যি সত্যি? এ কারনেই তার এই চরমতম অনৈতিক অনুকম্পা লাভ?
যে নিজে স্বীকৃত ধর্ষককে বাঁচানোর জন্য প্রকাশ্য চেষ্টা করেছে সে কি অপরাধী নয়? প্রশ্নটা রইল আমাদের রাজনীতিবিদের কাছে। আজ এই প্রশ্ন আমরা ব্লগে কয়েকজন হয়ত করছি, কিন্তু যেদিন দেশের সাধারন মানুষ এই প্রশ্নের জবাব আপনাদের কাছে চাইবে, সেদিন আপনারা কিন্তু জবাব না দিয়ে পালাতে পারবেন না, আমাদের সম্মানিত(!) রাজনীতিবিদেরা।
লুতফর রহমান নিজেই যৌন নিপিড়নের অভিযোগে অভিযুক্ত! তার নামে আছে অনেক অভিযোগ, স্বয়ং শিক্ষিকাদের পক্ষ থেকে! পরিমলের ঘটনা ধামা চাপা দেয়ার সর্বচ্চ চেষ্টাও তিনি চালিয়েছিলেন। কিন্তু সেই লুতফর রহমানের বিচার দূরে থাক, তিনি আসামিই নন! বাহরে বাহ! রাজনৈতিক উচ্ছিষ্ট ভোগী শূকর ছানা হবার কত সুবিধা!
এই হচ্ছে পরিমলের বিচারের নমুনা! ঘটনার ধারাবাহিকতায় আমরা আশা করতে পারি নিশ্চয় পরিমলের ও লঘু শাস্তির ব্যবস্থা উপর মহল থেকে করা হবে এবং যথাসময়ে সেই শাস্তি ক্ষমা করা হবে আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতির দ্বারা!
একদিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে যাচ্ছেন মুক্তমনে খুনিদের, অন্যদিকে বিচার ব্যবস্থা ব্যস্ত কে ফেসবুকে কি স্ট্যাটাস দিল তা নিয়ে রুল জারিতে, আর আমাদের রাজনিতিবিদরা ব্যস্ত হোসনে আরা -পরিলদের রক্ষায়! কি সুন্দর! এই না হলে রাজনীতিবিদের আসল পরিচয়! ভিকারুন্নিসার ঘটনায় আমাদের প্রধানমন্ত্রী একবারও বলেন নি তিনি দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। শিক্ষা মন্ত্রী তো হোসনে আরাকে প্রিন্সিপাল রাখার জন্য ম্যানেজিং কমিটিকেই বিলুপ্ত করে দিলেন!ঘোষন দিলেন, আইন অনুযায়ী হস্নে আরাই প্রিন্সিপাল! কিন্তু এই স্বাধীন দেশে পশুদের হাত থেকে বেঁচে থাকার জন্য সারাদিন না খেয়ে স্কুলে বসে থাকা বাচ্চা মেয়েগুলোর মাথায় তারা কেউ হাত বুলিয়ে বলেন নি, ভয় নেই, আমরা আছি।
তারা পরিমলকে রক্ষায়, শিক্ষিকারুপী পতিতাকে রক্ষায় তাদের শক্তি নিয়োগ করেছেন।
জানি না, কি ভয়াবহ যন্ত্রনা নিয়ে এই খবরটা পড়ছে ভিকারুন্নিসার আমাদের সেই বোনটা। কতট অপমান নিয়ে সে নিজের ভেতর কুকড়ে যাচ্ছে । নির্যাতিতা আজ অসহায় আর নরপশুরা আইনের চোখে আসামিই না! কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী সহ আমাদের মহান (!) রাজনীতিবিদেরা আপনার মনে রাখবেন , যে অন্যায় আজ আপনারা করছেন তার জবাব আপনাদেরকে দিতেই হবে। মানুষের কাছেই দিতে হবে।
কিন্তু সেই বোধ যে আপনাদের নেই তা আমাদের জানা হয়ে গেছে। কারন আপনারা মানুষ না, আপনারা রাজনীতিবিদ। কিন্তু মানুষ যেদিন জবাব চাইবে, তার জন্য তৈরি থাকুন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।