আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খেলা শিখি--পিলো পাসিং/ মিউজিক্যাল চেয়ার; এবং প্রয়োগ করি

তোমারে যা দিয়েছিনু-সে তোমারি দান,গ্রহণ করেছ যত-ঋণী তত করেছ আমায় পিলো পাসিং এবং মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা দুটি ভিন্ন ভিন্ন নামের একই খেলা। নিয়ম কানুন সব একই। তাই আপনাদের শিখতে খুব একটা কষ্ট হবে না। শুধু তাই নয়, আপনি খেলা চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারলে, আপনি আপনার পরিবারের সদস্য, বন্ধু, স্বজন, শ্বশুর বাড়ি, বেয়াই বাড়ি, ইত্যাদি ইত্যাদি চেনা জানা সব সদস্য দেরকেও এই খেলায় অন্তর্ভুক্ত করে ফেলতে পারবেন যখন তখন। কোন প্রকার যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ছাড়াই।

এই খেলা খেলতে খেলতে এক সময় এটি আপনার নিজের বাপ দাদার সম্পত্তি মনে হবে! কোন সমস্যা নাই! [sb]** পিলো পাসিং এর মূলে আছে একটা বালিশ! না, ঘুমানোর জন্য মাথার বালিশ না, এমনকি কোল বালিশও না। এই বালিশ আকারে একটু ছোট আর হালকা। সোফায় থাকে যে পিলো ওটা। ছোট- হালকা জিনিস কে তুলাধুনা করতে সুবিধা হয়, তাই এই ব্যবস্থা। এই বালিশ নিয়ে কিছু খেলোয়াড় গোল হয়ে থাকে।

সবার দৃষ্টি থাকে ঐ নিরীহ বালিশের দিকে। খেলোয়াড়ের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই। আপনার ইচ্ছে মতো সংখ্যা নিয়ে আপনি খেলতে পারেন। তবে সাধারণত দেখা যায়, একই বিশ্বাসে বিশ্বাসী বোকা, চালাক, সুবিধাবাদী, চাটুকার, আহাম্মক, শিক্ষিত, কু- শিক্ষিত সব মিলিয়েই খেলোয়াড় নির্বাচিত করা হয়। সবার জন্যই এটি উন্মুক্ত।

অনেক সময় নিয়ে- আরাম আয়েশে এই খেলা চালিয়ে নেয়া যায়। তবে দেশীয় সংস্করণের হিসাব অনুযায়ী সাধারণত আমাদের দেশে এই খেলার সময় সর্বোচ্চ চার বছর! কিভাবে খেলবেনঃ একটা মিউজিক চলতে থাকবে। আপনি কান থাকবে ঐ মিউজিকের দিকে, কে কি বলল, ঐ দিকে আপনার কান দিলে চলবে না। চামড়া গণ্ডার হতে হবে! মনে রাখতে হবে, ঐ মিউজিক তাই আপনার সব। তারপর একসময় আপনার হাতে একটা বালিশ আসবে, আপনি বালিশ পেয়ে ওটাকে ধরে থাকার চেষ্টা করবেন না যেন! যদি দায়িত্ব স্বীকার করে নিরীহ বালিশ তাকে জড়িয়ে ধরেন, তবে হার সুনিশ্চিত।

আপনি আউট! আপনাকে দল ছাড়া হয়ে যাবেন, এবং অন্য একজন আপনার স্থলাভিশিক্ত হবেন। যেটা করতে হবে, বালিশ টা পাওয়া মাত্র সেটা আপনাকে অন্যের ঘাড়ে ঠেলে দিতে হবে। যত তাড়াতাড়ি আপনি আপনার বালিশ খানা অন্যের ঘাড়ে ঠেলে দিতে পারবেন, তত তাড়াতাড়ি আপনি বিপদ মুক্ত। মিউজিক যখন বন্ধ হবে, বালিশ তখন যার হাতে থাকবে, সেই আউট। এভাবে সুরের তালে তালে, চারপাশের দিকে না তাকিয়ে- গুঞ্জন/গঞ্জনা না শুনে, অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে, যে যার যত বেশী দায়িত্ব, (থুক্কু) বালিশ অন্যের দিকে ঠেলে দিতে পারবে, সেই একজন নন্দিত/ নিন্দিত জনপ্রতিনিধি, আমলা কিংবা মন্ত্রী, (অপস! আবার থুক্কু) সেই এই খেলার বিজয়ী!! পুরস্কার স্বরূপ আপনি নানা আকর্ষণীয় এবং গোপন পুরস্কার পেতে পারেন।

বালিশ খানাও শেষে বগলদাবা করে নিয়ে যেতে পারেন লেমেন্তো হিসেবে! ** মিউজিক্যাল চেয়ার এটিও পিলো পাসিং এর মতন। স্থান, খেলোয়াড় সংখ্যা, খেলার সময়, খেলার ধরণ সব প্রায় একই। পার্থক্য হল, এখানে বালিশ এর পরিবর্তে একখানা চেয়ার/ কেদারা অর্জন করতে হয়। কিভাবে খেলবেনঃ খেলোয়াড় অনুপাতে এখানে একটি আসন মানে একটি চেয়ার কম দেয়া হয়। যাতে খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা প্রতিযোগিতা ময়, দারুণ একটা উত্তেজনা থাকে! বরাবরের মতো মিউজিকের তালে তালে আপনাকে চেয়ারের পাশে মাছির মতো ঘুরঘুর করতে হবে।

অতি ধুরন্ধর হয়ে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে, লক্ষ্য রাখতে হবে, কখন মিউজিক বন্ধ হয়। যেই মিউজিক বন্ধ হবে, সেই আপনাকে চেয়ারে বসে যেতে হবে তড়িৎ গতিতে। চাইলে আপনি আপনার আগে থাকা খেলোয়াড় কে ধাক্কা মেরেও তার চেয়ারে বসে যেতে পারেন। চেয়ারে বসতে পারাটাই আপনার জীবন লক্ষ্য! মিউজিক বন্ধ হয়েছে, অথচ আপনি দাঁড়িয়ে আছেন, চেয়ারে বসতে পারলেন না, তার মানে আপনি আউট। এভাবে একে একে একজন একজন করে আউট হতে থাকেন।

শেষ পর্যন্ত কেবল একটা চেয়ার থেকে যায়। চেয়ার একটি কিন্তু খেলোয়াড় দু জন!! টান টান উত্তেজনা! যে যার মতো করে যত বেশী সময় ধরে দর্শক কে বোকা, বুদ্ধু বানিয়ে রাখতে পারবে, যার চোখ- কান যত বেশী ধারালো, যার চামড়া যত বেশী শক্ত, অবশেষে সেই পায় চেয়ারের দখল! সেই অমূল্য চেয়ারে সেই বসতে পারে! ছিনিয়ে নেয় তার বিজয়! পুরষ্কার হিসেবে সারা জীবন নিজে এবং নিজের চৌদ্দ গোষ্ঠী মিলে আরাম আয়েশ করে লুটে পুটে খেয়ে চলে যেতে পারবেন। দেশ ভালো না লাগলে বিদেশ গিয়েও আস্তানা গড়তে পারবেন। সতর্কতা (দুটি খেলার জন্য একই) আপনি আপাতদৃষ্টিতে বিজয়ী হলেও, অন্য খেলোয়াড় যারা আপনার মতো সু কৌঁসুলি নয়, মানে যারা বিজয়ী যতে পারেননি, এবং এক বিশাল সংখ্যক দর্শক, যাদের শুধু খেলা দেখে যাওয়া ছাড়া এবং হজম করা ছাড়া আর কোন কিছু করার ক্ষমতা নাই; তারা কিন্তু আপনাকে গালি গালাজ করতে পারে, ধিক্কার করতে পারে, অভিশাপও দিতে পারে, এমনকি ঘেন্নাও করতে পারে! এসব সব সহ্য করে নির্লজ্জের মতন, (থুক্কু) ধৈর্য নিয়ে পরবর্তী টার্মের জন্য নিজেকে আবার প্রস্তুত করতে হবে! চিন্তার কোন কারণই নাই। আহাম্মক দর্শক কূল আবারো সেই ঘুরে ফিরে আপনাদের কারও না কারও খেলা এরকম একই ভাবে উপভোগ করতে থাকবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.