আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছেলেবেলার যত মজার খেলা ৪ (মার্বেল খেলা)

বুকের ভেতর বহুদূরের পথ.........
৩য় পর্ব দোগার তেগার সাবকুছ, নো দুর্গী নটকুছ দোগার তেগার সাবকুছ, নো দুর্গী নটকুছ কুড়ি থেকে পঁচিশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলার স্মৃতিগুলো যখন চোখবুজে মনে করার চেষ্টা করি তখন এই লাইনগুলো নার্সারী রাইমের মত মাথার ভেতরে দূরের ঘন্টা ধ্বনির মত টুনটুন করে বাজতে থাকে। যারা মার্বেল খেলেছেন তারা জানেন এই কথাগুলোর মানে কি। আর যারা জানেন না তারা ধৈর্য্য ধরে পড়তে থাকুন। হ্যাঁ, আজকে মার্বেল খেলা নিয়ে লিখবো। এই খেলা কয়েকটি কারণে বিশেষ ভাবে উল্লেখের দাবী রাখে।

প্রথমত: এটা ছিলো এক ধরণের নিষিদ্ধ খেলা। অভিভাবকদের ধারণা এটা বস্তির পোলাপানের খেলা, কোন ভদ্র শিক্ষিত ঘরের ছেলে এটা খেলতে পারেনা। এই খেলার এক্সপার্ট হিসেবে যাদের নামডাক ছিলো তারা সবাই এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। তারপর মার্বেল খেলায় হারজিতের পর মার্বেল হাত বিনিময় হয় যা মোটেই মাগনা জিনিস নয়-কিনতে পয়সা লাগে, কাজেই এর মধ্যে একটা জুয়ার গন্ধ আছে। মার্বেল কেনার জন্য বাপের পকেট মারার প্রচুর উদাহরণ দেখা গেছে।

দ্বিতীয়ত: মার্বেল খেলা মাত্র দুজনেও খেলা যায়। কাজেই 'শাম' যদি বেশী নাও পাওয়া যায় কোন সমস্যা নাই, একা একা খেলেও মজা পাওয়া যায়। মার্বেল খেলার দুটো ভার্শন প্রচলিত ছিলো। একটা হচ্ছে 'ডিপ' খেলা আরেকটার নাম ভুলে গেছি তবে নিয়মকানুন মনে আছে। 'ডিপ' খেলায় দুই থেকে শুরু করে ৮/১০ জন খেলতে পারতো।

বাড়ীর পাশে ছোট খোলা জায়গায় এই খেলা হতো। একটা ছোট গর্ত খোঁড়া হতো যার নাম ডিপ। সবাই একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব হতে মার্বেল ছুঁড়তো। যার মার্বেল ডিপের সবচেয়ে কাছে পড়তো সে সবার আগে খেলার সুযোগ পেতো। প্রথমে ডিপ লক্ষ্য করে আঙ্গুলে মার্বেল ছুঁড়ো, ডিপে ফেলো, তারপর সুবিধামত প্পতিপক্ষের যেকোন মার্রেল লক্ষ্য করে মার্বেল ছুঁড়ো।

লাগলে সেই মার্বেল তোমার। অবশ্য প্রতিপক্ষ অন্য একটি মার্বেলও ইচ্ছা করলে দিতে পারে। দুটি নাম খুব প্রচলিত ছিলো এ খেলায়- ডাগ্গি আর চুঁই। সবচেয়ে গোলাকার এবং সুবিধাজনক মার্বেল, যেটা দিয়ে খেলা সবচেয়ে সহজ তাকে বলা হতো ডাগ্গি। প্রতিটা খেলোয়াড় তার ডাগ্গি কোন ভাবেই হাতছাড়া করতোনা, কারণ এটা দিয়েই সে খেলে।

আর সবচেয়ে ছোট মার্বেলকে বলা হতো চুঁই। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় আমার মার্বেল লক্ষ্য করে মারার আগে আমার কাজ হতো ডাগ্গির বদলে চুঁই বসানো যাতে সহজে লাগাতে না পারে। খেলার শুরুতে যে 'সাবকুছ' বলতো সে মার্বেল সই করে মারার আগে মার্বেলের জায়গাটা পরিস্কার করে নেয়ার অধিকার পেত। আর 'নটকুছ' মানে এই সুবিধা প্রতিপক্ষ পাবেনা। 'দোগার তেগার' মানে এক সাথে দু'তিনটা মার্বেলে মারার অধিকার।

এবার আসি পরের ভার্শনে। এখানে অংশগ্রহণকারীরা সবাই ১/২/৩ টি করে মার্বেল জমা দিত। তারপর লটারি করে ঠিক করা হতো কে আগে মারবে। তারপর একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব হতে সবগুলো মার্বেল ছোঁড়া হতো। প্রতিপক্ষের সবাই মিলে একটি মার্বেল কে ঠিক করতো যেটাকে লাগানো সবচেয়ে সহজ।

তারপর ঐটা ছাড়া অন্য যেকোন মার্বেলে লাগাতে পারলে সব মার্বেল তার।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।