একলা মানুষ মাতৃ গর্ভে একলা মানুষ চিতায় একলা পুরুষ কর্তব্যে একলা পুরুষ পিতায় আর, মধ্যে খানে বাকিটা সময় একলা না থাকার অভিনয় ""একটা রুমের বেলকনির দরজা খুলতে খুলতে বলছিলেন, যা কখনই করবেনা তা হচ্ছে, নগ্ন অথবা অর্ধ নগ্ন কোন মেয়েকে সান বাথ করতে দেখলে এমন ভাবে তাকাবে না যাতে মনে হয় তুমি তাকে পর্যবেক্ষণ করছ। গেস্ট যদি অভিযোগ করে তাহলে চাকরি চলে যাবে" কথাটা শেষ করার আগেই দরজা খুলে গেল আর আমরা পাঁচ জনেই অর্ধ নগ্ন একটি মেয়েকে হা করে দেখতে লাগলাম""
******************* পর্ব - ৫ ************************
ভদ্র মহিলা বললেন তুমি বাহিরে আপেক্ষা করো। আমি করিডোরে চেয়ারে বসে আছি। রাকিব ভাইকে ফোনে ঘটনা বললাম। উনি বললেন আল্লাহর নাম নাও আর ভায়ের কেরামতি দেখ।
১০ মিনিট পর এডভোকেট সাহেব এসে বললেন,
"HBs positive রে মাই ফ্রেন্ড " আমি বললাম, জি এটা সত্য । উনি ইমিগ্রেশন চিফের কক্ষে ঢুকলেন। কিছুক্ষণ পর আমার ডাক পরলো। ফর্ম ফিলাপ করে, ফিংগার প্রিন্ট দিয়ে "এলিয়েন বুক" হাতে বীরদর্পে বের হয়ে এলাম। এলিয়েনের সার্টিফিকেট পেয়েছি কিন্তু চার মাস পর এই প্রথম মনে হচ্ছে আমি এখন আর কোন ভিন গ্রহের বাসিন্দা নই।
যেই HBs এর অজুহাতে কলেজ আমাকে দেশে ফেরত পাঠাতে চাইছিল সেই HBs এর দ্রুত চিকিৎসার কথা আমলে নিয়ে আমাকে একদিনেই স্টে পারমিট দিয়ে দিল।
আমার পিছু পিছু কয়েকটা ছেলে বের হয়ে এসে ঘিরে ধরলো। "ভাই কেমনে কি, এক সপ্তাহ ধইরা ঘুরতেছি ফিংগার প্রিন্টই দিতে পারলাম না। আর বই পাইতে তো একমাস লাগবো কইতাছে। আপনে একদিনেই এলিয়েন বুক পাইলেন?" ইত্যাদি বলতে লাগল।
আমি চাপাবাজি করে ওদেরকে রাকিব ভাইয়ের ফোন নাম্বার দিয়ে গাড়িতে উঠে পরলাম। রাকিব ভাই বললেন, তোমার উপরে ইনভেস্ট করলাম তোমার কাজে আমি অতীব আনন্দিত। উনার মোবাইলে কল আসতে লাগল। উনি রিসিভ করে ওপাশের কথা শুনে, 'পরে ফোন দেন' বলে কেটে দিচ্ছিলেন। গাড়িতে গান ছাড়লেন "চুমকি চলেছে একা পথে সঙ্গী হলে দোষ কি তাতে ......." ।
তিন দিনের মাথায় উনার ব্যবসা তুংগে উঠে গেল। বলা বাহুল্য সত্যিই উনি আমার থেকে কোন টাকা নেননি।
রাকিব ভাই আর আমার বন্ধু রিপনের মধ্যে ব্যবসায়িক দ্বন্ধ বাদল। বিপাকে পড়লাম আমি। আমাকে নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে গেল।
কোনদিকে যাই। রাকিব ভাই কে বললাম ভাই আমি আর নিকসিয়া থাকতে চাইনা। রাকিব ভাই মনে হয় খুশিই হলেন। রাজধানী নিকসিয়া থেকে আমি পাফসে চলে গেলাম । একটা পাঁচ তারকা হোটেলে রাকিব ভাই এর রেফারেন্সে যার কাছে আসলাম তিনি ইসলাম ভাই, তার সাথে নিকসিয়াতে আগেই পরিচয় হয়েছিল।
ইসলাম ভাই বললেন তুমি NIIT থেকে ডিপ্লোমা করে হাউজ ম্যান এর কজ করবে? আমি বললাম আমি কাজ করব।
Coral Beach Hotel & Resort এ আমরা ৫ জন বাংলাদেশী একসাথে হাউজ ম্যান হিসেবে যোগ দিলাম। সমুদ্র সৈকতে নির্মিত এক বিশাল হোটেল।
Coral Beach Hotel & Resort , Paphos, Cyprus.
প্রথম দিনের একটা ছোট ঘটনা বলি, আমাদের ডিপার্টমেন্ট প্রধান মিসেস কেটি, আমাদেরকে সম্পূর্ণ হোটেল ঘুড়িয়ে দেখাচ্ছিলেন আর ব্রিফ করছিলেন। একটা রুমের বেলকনির দরজা খুলতে খুলতে বলছিলেন, যা কখনই করবেনা তা হচ্ছে, নগ্ন অথবা অর্ধ নগ্ন কোন মেয়েকে সান বাথ করতে দেখলে এমন ভাবে তাকাবে না যাতে মনে হয় তুমি তাকে পর্যবেক্ষণ করছ।
গেস্ট যদি অভিযোগ করে তাহলে চাকরি চলে যাবে" কথাটা শেষ করার আগেই দরজা খুলে গেল আর আমরা পাঁচ জনেই অর্ধ নগ্ন একটি মেয়েকে হা করে দেখতে লাগলাম। আল্লাহ বাচিয়ে ছিলেন আমি খুব দ্রুতই রাতের শিফটে ট্রান্সফার হয়ে ছিলাম।
দশ ঘন্টার ডিউটি ছিল। গেস্ট রুমের প্রয়োজনীয়- টাওয়েল, টয়লেট্রিজ, এক্সট্রা বেড, বেবি কট ইত্যাদি সরবরাহ আর পাবলিক এরিয়া পর্যবেক্ষণ ও ক্লিনিং করা ছিল আমার কাজ। একটা কথা না বললেই নয় সাইপ্রাস আমাকে কাজের মুল্যায়ন করতে শিখিয়েছে।
একজন ব্যাংক ম্যানেজারের সাথে পরিচয় হয়েছিল যিনি মাসে ছুটির আট দিন রংমিস্ত্রির কাজ করে ব্যাংকের বেতনের প্রায় সমান আয় করতেন।
সাইপ্রাসে একটা গল্প প্রচলন ছিল। কঠিন সময় গুলোতে আমরা এই গল্প টা মনে করে ধৈর্য্য ধারণ করতাম। গল্পটা হচ্ছে
" একটি জাহাজ গভীর সমুদ্রে দুঃখের ভাঁড়ে নিমজ্জিত প্রায়। আরেকটি সুখের জাহাজ তাকে অতিক্রম করছিল।
দুঃখের জাহাজ টি সুখের জাহাজ কে বলল, ভাই আমার থেকে কিছু দুঃখ তুমি তুলে নিলে আমি হয়ত তীরে পৌছাতে পারব। সুখের জাহাজ বলল, না না ভাই আমার সুখের জাহাজে আমি এক বিন্দুও দুঃখ নিব না। সে চলে গেল। এবার আরেকটি জাহাজ এল যেটা সুখ এবং দুঃখ মিলিয়ে কোন রকমে পার হয়ে যাচ্ছিল। দুঃখের জাহাজ এটিকেও বলল, ভাই আমার থেকে কিছু দুঃখ তুমি তুলে নিলে আমি হয়ত তীরে পৌছাতে পারব।
এই জাহাজ টিও বলল না না ভাই আমি আর এক বিন্দু দুঃখও নিতে রাজি নই। দুঃখের জাহাজ টি অত্যন্ত ক্লান্ত ও প্রায় অচেতন অবস্থায় তীরে এসে পৌছাল।
প্রশ্ন হচ্ছে জাহাজটিকে, কে বাচাল? উত্তর হচ্ছে 'সময়'। জাহাজ টি আল্লাহ তালার নির্ধারিত তার দুর্ভোগের সময় অতিক্রম করে সু সময়ে পৌছাতে সক্ষম হয়েছিল"
মার্চ মাস, ২৫ দিনের মত হয়েছে হোটেলে কাজ করছি। আমার দুঃখের জাহাজ
যেন তীরের দেখা পেতে চলেছে।
দেশে আমার 'বিবি নাম্বার ওয়ান' তার যুদ্ধে জয়ী হয়েছে। আঁকা আমার বোন রুবিকে দিয়ে আমার বাবা মা কে রাজি করিয়েছে ওদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যেতে। আর আপা-দুলাভাই ওর মার কাছেও আমাদের ভালবাসার ব্যপারটা জানিয়েছেন। আমার শাশুড়ি আমাদের ভালবাসাকে মেনে নিয়ে বিয়েতে রাজি হয়েছেন, যার কিছুই আমি জানতাম না। মার্চের ১৪ তারিখ আমি হোটেল থেকে ফিরে ডাইনিংয়ে রাতের খবার খেয়ে টিভি দেখছি।
রাত ১০ টায় দেশ থেকে ফোন এল।
আমার দুলাভাইঃ
- কবুল সুনতে ও বলতে তৈরী হয়ে যাও।
- মানে? আমি অবাক।
- Get ready to say কবুল।
- ভাইয়া আমি কিছু বুজতে পারছিনা।
মানে কি?
- উনি বললেন আমরা তোমার শ্বশুর বাড়ি। আজ তোমার আর আঁকার বিয়ে।
আমি এক দৌড়ে ওজু করে আসলাম। আমাকে আবার ফোন দেয়ার কথা। তিন ঘন্টা হতে চলেছে ফোন আসছেনা।
ভাবছিলাম ভাইয়া মনে হয় আমার সাথে ফান করলেন। দুলাভাই আমার বন্ধুর মত, মনে মনে খুব বকছি - "হারামজাদা, তুই ও তো প্রেম করে বিয়ে করেছিস তোর সাথে যদি কেও ফান করত?!" নিজে থেকে ফোন করছিনা, আবার যদি গাধা, পাঠা হয়ে যাই এই ভয়ে।
রাত ১ টায় ফোন বেজে উঠল-
- হ্যাল ? আঁকার কণ্ঠ ।
- হ্যাল।
- বলো গো স্বামী।
- ব্যপারটা কি বলত?
-আঁকা বলল, তোমার মোবাইলে অনেক চেষ্টার পরেও কল ঢুকল না। তার পর এই আধা ঘন্টা আগে আমার কবুল নিয়ে কাজী বললেন ছেলে দেশে এসে কবুল বললেও হবে (যদিও তার কোন দরকার নেই)
- আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম। জান আই লাভ উ............
{দুই রাকাত শুকরানা নামাজও পরেছিলাম কিন্তু। কারণ পালিয়ে বিয়ে করার পর শুকরানা নামাজ পরা হয়নি}
চলবে.....
জীবন থেকে নেয়া, আমি এবং আঁকা - সম্পূর্ণ (পর্ব- ১ থেকে পর্ব-৭)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।