আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাননীয়া প্রধান মন্ত্রী; পারলে ঠেকান, না পারলে আমাদের ক্ষমা করেন!

মাননীয়া প্রধান মন্ত্রী, পারলে ঠেকান, না পারলে আমাদের ক্ষমা করেন। চৌদ্দ পুরুষের কসম খেয়ে বলছি, আর আপনাকে ভোট দিয়ে, প্রধান মন্ত্রী বানিয়ে, জনগনের সেবা করার মত ঝামেলার দায়িত্ব দিব না। আজকের প্রথম আলোয় নিচের খবরটি দ্রষ্টব্য: "" আপনি আমার আত্মীয়, তাই এক হাজার টাকা বেশি দিলাম। অন্যদের টনপ্রতি ছয় হাজার টাকা করে দিই। ’ এক টন গমের বিপরীতে সাত হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে এভাবেই সান্ত্বনা দিয়েছেন মফিদুল ইসলাম।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার আল্লারদরগা জয়ভোগা কবরস্থান উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক খন্দকার জালাল উদ্দিন প্রথম আলোর কাছে এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, কবরস্থান উন্নয়নের জন্য টিআর প্রকল্পের আওতায় এক টন গম বরাদ্দ করা হয়েছিল। তিনি এক টনের দাম পেয়েছেন মাত্র সাত হাজার টাকা। বাকি টাকা মফিদুল সবাইকে ভাগ করে দিয়েছেন। বাজারে প্রতি টন গম ১৫ হাজার টাকা করে বিক্রি হয়।

কে এই মফিদুল? দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের অফিস সহকারী জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মফিদুল ইসলাম দৌলতপুর আসনের সাংসদ আফাজ উদ্দিন বিশ্বাস ও তাঁর ছেলে আরিফ বিশ্বাসের খুব ঘনিষ্ঠ। টিআর-কাবিখাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের চাল-গম উত্তোলনের কাজ তিনিই করে থাকেন। কেউ চাইলেও চাহিদাপত্র (ডিও) দিয়ে চাল-গম উত্তোলন করতে পারেন না। সবই করেন মফিদুল ইসলাম। টনপ্রতি নামমাত্র টাকা তিনি প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকদের হাতে তুলে দেন।

অবশ্য মফিদুল নিজে গম কেনাবেচার কথা স্বীকার করলেও কম দাম দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘টনপ্রতি ১১ থেকে ১৪ হাজার টাকা গমের মূল্য নির্ধারণ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। এসব দাম বর্তমান বাজারমূল্যে করা হয়েছে, কোনো অনিয়ম করা হয়নি। কাউকে কমও দেওয়া হয়নি। ’ জেলার অবস্থা: জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, কুষ্টিয়ার ছয় উপজেলায় গত অর্থবছর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ ছিল।

গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৮০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য। গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কারের (কাবিটা) জন্য নগদ অর্থ বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা। অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচিতে বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ৭৪ লাখ টাকা। গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ খাতে (টিআর) বরাদ্দ ছিল এক হাজার ১৮৮ টন খাদ্যশস্য। টিআরের নগদ অর্থ বরাদ্দ ছিল তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার একটি সূত্র দাবি করেছে, ১০০ টন গমের বিপরীতে প্রকল্প রয়েছে ৩৬টি। আর ৩০ লাখ টাকার বিপরীতে প্রকল্প রয়েছে ৮২টি। গত ২৭ জুন ছিল প্রকল্পের টাকা ছাড়ের শেষ দিন। এ দিন সদর উপজেলার সব কটি প্রকল্পের অর্থ ছাড় করা হয়েছে। তবে টিআর প্রকল্পে কোথাও কোনো কাজ হয়নি।

জানা গেছে, সদর আসনের সাংসদ রশিদুজ্জামান দুদুর ঢাকার বাসায় বসে এসব প্রকল্প ভাগ হয়েছে। সাংসদের পক্ষে তাঁর স্ত্রী এসব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আর নেতারা কুষ্টিয়া ফিরে গিয়ে এসব প্রকল্পের টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। যেসব প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এমন ১০টি প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে কাজের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গত শুক্রবার সকালে সাংসদ রশিদুজ্জামান দুদুর নম্বরে ফোন করা হলে তাঁর স্ত্রী ফোন ধরেন।

তিনি বলেন, সাংসদ অসুস্থ। দুই দিন আগে সিঙ্গাপুর থেকে এসেছেন। তিনি জানান, সাংসদের শারীরিক অবস্থার কারণে দেড় বছর এলাকায় যেতে পারেননি। তাই সব ধরনের উন্নয়নের তদারকি বাসায় বসেই করেন। এলাকার লোকজন ডেকে এনে সব বুঝিয়ে দেন।

তিনি বলেন, সাংসদের পক্ষে তিনিও কিছু কাজ দেখাশোনা করেন। উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতির কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে বসে কী করে এটা ঠেকাব?’ তবে অন্য উপজেলার চেয়ে সদরে কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘দলীয় নেতারা সব প্রকল্প নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নিয়েছেন। বেশির ভাগ প্রকল্পেরই কোনো কাজ হয়নি। ’ দৌলতপুর, ভেড়ামারা ও খোকসা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসনের সভায় জানিয়েছেন, দেরিতে কাজ শুরু করায় বাস্তবায়নের হার কম হয়েছে।

সরেজমিন দৌলতপুর: কুষ্টিয়া-৩ আসনের সাংসদ আফাজ উদ্দিন। বয়সের কারণে চলাফেরা সীমিত। সাংসদের মেজো ছেলে আরিফ আহমেদ বিশ্বাসই এখন বকলমে এলাকায় সাংসদ। স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগ, দরপত্র, টিআর, কাবিখা, কাবিটা, নগদ অর্থ বরাদ্দ, ঘাটের ইজারা, থানায় মামলা নেওয়া থেকে শুরু করে সবকিছুই দেখভাল করেন আরিফ। এলাকায় সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দৌলতপুরে গত অর্থবছরে কাবিখা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৪৬ মেট্রিক টন গম, কাবিটা খাতে বরাদ্দ ছিল ৯০ লাখ টাকা, টিআর বরাদ্দ ছিল ২৯৬ মেটন, নগদ অর্থ বরাদ্দ ৮৭ লাখ টাকা।

অভিযোগ আছে, এসব প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, কোনো প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ পেলে তা থেকে নির্দিষ্ট ভাগ দিতে হয় সাংসদের ছেলে ও অন্য ঘনিষ্ঠদের। ভাগ পান প্রশাসনের কর্মকর্তারও। উপজেলার তেলিগাংদিয়া গ্রামের একটি ইদগাহ মাঠ সংস্কারের জন্য তিন মেট্রিক টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইদগাহ কমিটি তিন মেট্রিক টন গমের মূল্য বাবদ পায় ২০ হাজার টাকা।

এর বাজারমূল্য ৪৫ হাজার টাকা। মানিকদিয়ার জামে মসজিদের উন্নয়নে বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু আজ পর্যন্ত সে টাকা মসজিদে পৌঁছায়নি। পিয়ারপুর ইউনিয়নের কামালপুর বাজারের জন্য চার টন গম বরাদ্দ দেওয়া হলেও কিছুই কাজ হয়নি। বেলতলা মসজিদে দুই টন এবং পচাভিটা কবরস্থানের উন্নয়নে তিন টন গম বরাদ্দ দেওয়া হয়।

ডিজিটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পায়। বৈরাগীর চর জামে মসজিদের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ করা অর্থ বা গম পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংসদ আফাজ উদ্দিন অবশ্য এসব অভিযোগের কথা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, চার-পাঁচটি এ ধরনের ঘটনা ঘটেছিল।

পরে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিজের সন্তানের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সাংসদ বলেন, আরিফ কোনো সরকারি কাজ করে না। তবে সে তাঁর হয়ে সামাজিক কাজগুলো দেখাশোনা করে। তবে আরিফের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আরিফ টাকা নিয়ে দলের একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। এ কারণে দৌলতপুরে কোনো আওয়ামী লীগ নেতা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেননি।

আরিফ অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, দলের কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জিততে পারেনি। একই চিত্র কুমারখালীতে: ২০১০-১১ অর্থবছরে কুষ্টিয়া-৪ নির্বাচনী এলাকায় কাবিটা প্রকল্পের জন্য ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাবিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে কুমারখালী উপজেলার জন্য ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কুমারখালী উপজেলায় যেসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হয়, তাদের কাছ থেকে আগেই এর অর্ধেক টাকা অগ্রিম নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, পানটি ডিগ্রি কলেজে মাটি ভরাটের জন্য ১০ লাখ টাকা, পানটি হাইস্কুলে মাটি ভরাটের জন্য পাঁচ লাখ টাকা, সদকী ইউনিয়নের মালিয়াট ঈদগাহ ও কবরস্থানে মাটি ভরাটের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এসব প্রকল্পে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বেশি কাজ হয়নি। নামমাত্র কাজ করে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক জানান, ১০ লাখ টাকা অনুদান পেতে ৫০ শতাংশ টাকা ভাগ দিতে হয়েছে, তাহলে ঠিকমতো কাজ হবে কী করে? জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মানিকহার রহমান জানান, প্রকল্পের কাজের এখনো সময় আছে। তবে সব প্রকল্প ঘুরে দেখা সম্ভব হয়নি বলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে পারবেন না। আর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তপন কুমার ঘোষ বলেন, আবহাওয়া খারাপের কারণে সব প্রকল্প এখনো দেখা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।

"" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.